জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশ আশার সঞ্চার করেছিল দেশের ১৮ কোটি মানুষের হৃদয় কোণে। সব ঠিকঠাকই চলছিল। হঠাৎ কেন রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশে! রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে কিছুটা অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। একদিকে সিভিল সোসাইটি, অন্যদিকে সরকার। চারদিকে টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে গেল এক সপ্তাহ। অবশেষে আশা ও নিরাশার দোলাচলে ফুটে উঠেছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। দেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে মিলেছে স্বস্তিও।

সাড়ে পনেরো বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনে প্রশাসনসহ দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাফিয়াতন্ত্রের যে ঘুণপোকা ধরেছে, দু-চার দিনে তা অপসারণ করা সম্ভব নয়। তবু আশায় বুক বেঁধেছে দেশবাসী। বৈশ্বিক রাজনীতি ও ভূ-আঞ্চলিক বাস্তবতায় নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. ইউনূস বড় ভরসা জাতির জন্য। সম্প্রতি দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ও করিডর সংক্রান্ত বক্তব্য দেন সেনাপ্রধান।

সম্প্রতি নির্বাচনের রোডম্যাপসহ কিছু ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির এক ধরনের টানাপোড়েন চলছে। শেষ পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের ইস্যুকে সামনে এনে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে দলটির নেতাকর্মীরা। রাজধানীবাসীর দৈনন্দিন জীবনে যার নেতিবাচক প্রভাব প্রকট হয়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমারের রাখাইনে ত্রাণ পাঠানোর জন্য মানবিক করিডর স্থাপন কিংবা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের দায়িত্ব অর্পণ নিয়েও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়। এমন বাস্তবতায় প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের ইচ্ছা পোষণ করার খবর প্রচার হয় গণমাধ্যমে। সেই প্রক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর।

লিখিত বক্তব্যে বিএনপি বলেছে, গণতন্ত্রে উত্তরণে নির্বাচনের রোডম্যাপ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সংস্কার কার্যক্রম অবিলম্বে সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দ্রুত একটি রোডম্যাপ দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে দলটি।

তবে বিএনপি কখনই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি। বরং, প্রথমদিন থেকেই এই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে। আমরা আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার সব দলের সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটা সংস্কার প্রস্তাব দেবে, যা চলমান থাকবে। বৈঠক শেষে জামায়াতের আমির বলেছেন, ‘যে পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা পদ ছাড়তে চেয়েছেন, আমরা তাকে সে অবস্থান থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছি।’ নির্বাচন, সংস্কার ও রোডম্যাপ ইস্যুতে দলীয় অবস্থান সুস্পষ্ট করেছেন তিনি। সে অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার এবং সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু অবস্থানে পোঁছানো গেছে, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে যা ছিল অত্যাবশ্যক। ফলে রাজনৈতিক টানাপোড়েন শেষে স্বস্তি এসেছে।

সূত্র, জনকন্ঠ