বাংলাদেশের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত অপেক্ষা করছে। জাতিসংঘ প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ত্রাণ সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ যেন যোগাযোগ পথ খুলে দেয়। রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধ আর বিপর্যয় বহু মিলিয়ন মানুষকে দুর্দশায় ঠেলে দিয়েছে। অনেকে এতে করিডোর বলছেন। যদিও বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা এ ধরনের আলোচনার কথা নাকচ করে দিয়েছেন। অভাবী মানুষকে সাহায্য করা আর বাংলাদেশের নিজের স্বার্থরক্ষাÑএ দুয়ের মধ্যে এখানে দ্বন্দ্ব লেগে যেতে পারে। এই সিদ্ধান্ত শুধু বাংলাদেশের ওপরেই নয়, বরং চীন, ভারত এবং জাতিসংঘের মতো আঞ্চলিক খেলোয়াড়দের ওপরও প্রভাব ফেলবে।
মানবিক লাইফলাইন নাকি কৌশলগত ঝুঁকি?
রাখাইনে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ আটকা পড়ে আছে। তারা ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছে। মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ আর সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে বহু মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে। তাদের সাহায্য করতে রাজি হলে বাংলাদেশ বহু প্রাণ বাঁচাতে পারবে। নিজেদের নেতৃত্বের যোগ্যতা দেখাতে পারবে। কিন্তু এখানে একটা সমস্যা আছে। এটা শুধু খাবার আর ওষুধ সরবরাহের বিষয় নয়। অনেকে মনে করেন, যদি মানবিক করিডোর চালু করা হয়, তাহলে বাংলাদেশকে মিয়ানমারের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে টেনে নিতে পারে। দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা উসকে দিতে পারে। চীন ও ভারতের মতো প্রতিবেশীর সঙ্গেও সমস্যা তৈরি হতে পারে। ত্রাণ হিসেবে যেটার শুরু হচ্ছে, সেটা শেষ পর্যন্ত ভূরাজনৈতিক ফাঁদ হয়ে উঠতে পারে।
বিপর্যয়ের মুখে রাখাইন : উন্মোচিত হচ্ছে মানবিক বিপর্যয়
রাখাইন রাজ্য কার্যত ধসে পড়ছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়ছে। তারা ওই অঞ্চলে বেসামরিক নাগরিকদের খাবার, ওষুধ এবং অন্যান্য জরুরি সরবরাহ আটকে দিচ্ছে। ২০২৫ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প পরিস্থিতিকে আরো কঠিন করে দিয়েছে। বহু ঘরবাড়ি সেখানে ধ্বংস হয়েছে। রাখাইনের মুসলিম ও বৌদ্ধসহ ১ দশমিক ২ মিলিয়নের বেশি মানুষ সেখানে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে বাস করছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ কঠিন হয়ে উঠেছে। মানুষ ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছে। সমস্যার কোনো শেষ দেখতে পাচ্ছে না তারা।
বাংলাদেশ এমনিতেই নানা চাপে আছে। আগে থেকেই তারা প্রায় ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে জায়গা দিয়েছে। ২০১৭ সালে এরা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছিল। কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পগুলো উপচে পড়ছে। সেখানে রোগব্যাধি, ক্ষুধা এবং অস্থিরতা বাড়ছে। আবার যদি মিয়ানমার থেকে শরণার্থীদের ঢেউ আসে, তাহলে বাংলাদেশ ভেঙে পড়ার উপক্রম হবে। জাতিসংঘ যে প্রস্তাব দিয়েছে, সেটার উদ্দেশ্য হলো রাখাইনের দুর্দশা কমানো। কিন্তু এটা একই সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বারপ্রান্তে নতুন সমস্যা নিয়ে আসতে পারে।
অভ্যন্তরীণ বিভক্তি : মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বনাম রাজনৈতিক মতানৈক্য
করিডোরের ইস্যুটি বাংলাদেশে উত্তপ্ত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সবাই এটাকে ভালো পরিকল্পনা মনে করছে না। ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জাতিসংঘের প্রস্তাবকে সতর্ক ভাষায় সমর্থন করেছিলেন। সঙ্গে তিনি এটাও বলেছিলেন, এখানে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং সুস্পষ্ট মানবিক লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে হবে। কিছুদিন পর প্রধান উপদেষ্টার প্রধান প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম শক্ত কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। এতে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এই মিশ্র বার্তা থেকে মনে হয়েছে সরকার হয়তো এই ইস্যুতে বিতর্ক এড়ানোর চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এবং হেফাজতে ইসলামের মতো রাজনৈতিক দলগুলো করিডোরের বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নেয়। তাদের আশঙ্কা, এই করিডোর বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে দুর্বল করে দেবে। তারা মনে করছেন, বিদেশি শক্তিগুলো এই করিডোরকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর চেষ্টা করবে। কেউ কেউ এটাকে অতীতের বিভিন্ন হস্তক্ষেপের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ১৯৯৯ সালে ন্যাটো কসোভোতে অভিযান শুরু করেছিল। শুরুটা মানবিক ত্রাণকার্যক্রম হিসেবে হলেও সেখানে শেষ পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। অনেকে সিরিয়ায় তুরস্কের করিডোরের দিকেও ইঙ্গিত করেছে, যেটা আঙ্কারার কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করছে। এই উদাহরণগুলো চরম পর্যায়ের হলেও এগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের সত্যিকারের আশঙ্কা প্রকাশ পেয়েছে।
যে সময়ে এই প্রস্তাব এসেছে, সেটাও উপযুক্ত নয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার একটা ভঙ্গুর রাজনৈতিক পালাবদলের সময় পার করছে। যেকোনো ভুল পদক্ষেপ এ সময় বিরোধিতা উসকে দেবে এবং তাদের কর্তৃত্ব দুর্বল করে দেবে। এই করিডোর এখন আরো বড় বড় প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। বাংলাদেশের এই অঞ্চলে ভূমিকা কী হবে এবং বাংলাদেশ তার নিরপেক্ষ থাকার সক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে কি নাÑএই প্রশ্নগুলো এখন সামনে আসছে।
করিডোর সমালোচনার পেছনের ভণ্ডামি
করিডোরের সমালোচকরা এখন বেশ সরব। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশ যখন ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেছিল, তখন তারা ছিলেন নীরব। ওইসব চুক্তির কারণে ভারত বাংলাদেশের সড়ক, বন্দর এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযোগকারী রেলওয়েগুলো ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে। চট্টগ্রাম আর মোংলা বন্দর ভারতীয় কার্গোর জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ভারতের ব্যবসা সেখানে বাড়তি সুবিধা পেয়েছে। এই পদক্ষেপগুলোও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করে। কিন্তু তখন প্রায় কেউই প্রতিবাদ করেনি। এখন মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য যখন করিডোরের প্রশ্ন উঠেছে, তখন সেই মানুষগুলোই শোরগোল শুরু করে দিয়েছে। এই ভণ্ডামির কারণে তাদের যুক্তিগুলো গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। বোঝা যাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য হলো রাজনীতি, কোনো নৈতিক জায়গা থাকে এটা তারা বলছে না। বাংলাদেশ যদি ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য দরজা খুলে দিতে পারে, তাহলে মানবিক কারণে কেন সেটা করতে পারবে না?
আইন যেখানে অস্পষ্ট
মানবিক করিডোরের আইনের জায়গাটা খানিকটা ঘোলাটে। যুদ্ধের সময় ত্রাণ আটকে দেওয়াটা একটা অপরাধ। কিন্তু কোনো আন্তর্জাতিক আইনেই ক্রসবর্ডার করিডোর স্থাপনের সুস্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া নেই। সাধারণত কঠোর দর-কষাকষির মাধ্যমে সাময়িকভাবে এ ধরনের করিডোরের জন্য চুক্তি হয়। বাংলাদেশকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যাতে এই করিডোর নিরপেক্ষ হয় এবং সুনির্দিষ্টভাবে ত্রাণ সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত হয়। সুস্পষ্ট নিয়ম ছাড়া এই করিডোর মিয়ানমারের সংঘাতে জড়িয়ে যাবে এবং অন্যান্য দেশের সমালোচনার মুখে পড়বে।
মিয়ানমারের প্রতিক্রিয়া
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এই করিডোরের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। এটাকে তারা তাদের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হিসেবে অভিহিত করেছে। তাদের আশঙ্কা, ত্রাণ পেলে আরাকান আর্মির শক্তি বাড়বে। বিদ্রোহীরা সতর্কতার সঙ্গে করিডোর প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে, তারা প্রতিশ্রুতি চাচ্ছে, যাতে এই করিডোরের মাধ্যমে জান্তা সরকারকে বা বিদেশি শক্তিকে সাহায্য করা না হয়। উত্তেজনা এরই মধ্যে তুঙ্গে চলে গেছে। বাংলাদেশ সীমান্তে ক্রসবর্ডার শেল নিক্ষেপ ও ছোটখাটো সংঘাতের মাত্রা বেড়ে গেছে। পরিস্থিতি যাতে আরো অবনতির দিকে না যায়, সে জন্য ঢাকাকে অবশ্যই সমবেদনা ও সতর্কতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে পদক্ষেপ নিতে হবে।
চীন ও ভারত : নীরব কৌশলগত অংশীদার
রাখাইনে চীন আর ভারতের বড় স্বার্থ আছে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের অধীন কিয়াউকফিউ বন্দর চীনকে ভারত মহাসাগরে প্রবেশের সুবিধা দিয়েছে। ভারতের কালাদান প্রকল্প তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে বঙ্গোপসাগরকে যুক্ত করেছে। নিজেদের বিনিয়োগকে রক্ষার জন্য দুদেশই রাখাইনে স্থিতিশীলতা দেখতে চায়। তারা মিয়ানমারের জান্তাকে ক্ষুব্ধ করতে চায় না বা পশ্চিমা প্রভাবের বিস্তারও দেখতে চায় না। ফলে বাংলাদেশ এখানে একদিকে মানবিক দায়িত্ব, অন্যদিকে শক্তিধর প্রতিবেশীগুলোর কৌশলগত খেলার মাঝখানে আটকা পড়ে গেছে।
রোহিঙ্গা সংকট : একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা
রোহিঙ্গারা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম। মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। ফলে তারা কার্যত রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে এখন তারা শরণার্থী ক্যাম্পে ঠাসাঠাসি করে বাস করছে। সেখানে তাদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বা চলাফেরার স্বাধীনতা খুবই সীমিত। তাদের মধ্যে মানসিক রোগের প্রকোপও বাড়ছে। রোহিঙ্গা শিশুদের একটা পুরো প্রজন্ম বড় হচ্ছে কোনো ধরনের আশা-ভরসা ছাড়াই।
বাংলাদেশের ওপর চাপ : চাপের মধ্যে একটি জাতি
এক মিলিয়নেরও বেশি শরণার্থীকে জায়গা দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের সম্পদের ওপর চাপ বাড়ছে। কক্সবাজার এলাকায় শরণার্থী আর স্থানীয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। অপরাধের মাত্রা বেড়ে গেছে। শরণার্থীদের চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ার ঝুঁকিও বাড়ছে। আন্তর্জাতিক ত্রাণের মাত্রা কমে আসছে। ফলে শরণার্থীদের বোঝা পুরোটাই এখন বাংলাদেশকে বহন করতে হচ্ছে। বিশ্বের অনেকেই এই সংকটের জন্য সমবেদনা দেখালেও কোনো সমাধান দেয়নি। এদের প্রত্যাবাসন বা অন্য কোথাও স্থানান্তরের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
কার্যকর অগ্রগতির পথ : কৌশলগত প্রতিকূলতা এড়িয়ে চলার পরিকল্পনা
বাংলাদেশ এই করিডোরকে সমর্থন দিতে পারে, যদি সেটা সতর্কতার সঙ্গে করা হয়। নিচের পরামর্শগুলো অনুসরণ করে সেটা করা যেতে পারে—
১. নিরপেক্ষতা ও নিরাপদ প্রবেশাধিকারের জন্য ত্রিপক্ষীয় চুক্তি : জাতিসংঘ, মিয়ানমার সরকার এবং আরাকান আর্মিকে অবশ্যই চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে হবে, যাতে এই করিডোরের নিরপেক্ষতা নষ্ট করা না হয়। এই চুক্তিতে নিরাপদ রুট হিসেবে করিডোরের ব্যবহার, স্থানীয় পর্যায়ে অস্ত্রবিরতি এবং ত্রাণের অপব্যবহার বন্ধের মতো ধারাগুলো অবশ্যই থাকতে হবে।
২. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে তৃতীয় পক্ষের তদারকি : করিডোরে আসিয়ান বা নরওয়ের মতো দেশগুলোর মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদারকির ব্যবস্থা থাকতে হবে। এই পর্যবেক্ষকরা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে এবং জাতিসংঘের কাছে রিপোর্ট করবে। এতে করিডোরের ব্যাপারে আস্থা তৈরি হবে।
৩. চীন ও ভারতের কৌশলগত আশ্বাস : এই দুদেশের কাছ থেকে বাংলাদেশকে প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতি পেতে হবে, তারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করবে। এই প্রতিশ্রুতিই শুধু এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় থাকতে পারে এবং মিয়ানমারের জান্তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতে পারে।
৪. মানবিক সহায়তাকে প্রত্যাবাসন পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করা : এই করিডোরকে অবশ্যই বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ করতে হবে, যাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নিরাপদে ফিরে যেতে পারে। মিয়ানমারকে অবশ্যই এদের নাগরিকত্ব ও অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আর রাখাইন রাজ্যের পুনর্গঠনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে অর্থায়ন করতে হবে।
এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে মানবিক সমবেদনা আর সতর্কতার মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব। এতে বাংলাদেশকে কোনো ধরনের সংঘাতে না জড়িয়েও বিপর্যস্ত মানুষকে সাহায্য করা সম্ভব হবে।
শেষ কথা : খাদের কিনারে দাঁড়ানো অঞ্চলে নেতৃত্বের জন্য এক পরীক্ষা
বাংলাদেশ এখন একটা ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে আছে। রাখাইন করিডোর শুধু লজিস্টিক্স চ্যালেঞ্জ নয়। এটা দেশের মূল্যবোধ আর শক্তির জন্য পরীক্ষা। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই যাচাই করে দেখতে হবে যে এই সাহায্য করতে গিয়ে সেটা নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। মানবিক ত্রাণের বিষয়টি প্রায়ই রাজনীতির জটাজালে আটকা পড়ে। কিন্তু সুস্পষ্ট চিন্তাভাবনা এবং শক্তিশালী কূটনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশের পক্ষে এই ফাঁদ এড়ানো সম্ভব। স্বচ্ছতা, নজরদারি এবং প্রত্যাবাসনের লক্ষ্য ঠিক রেখে পদক্ষেপ নেওয়া হলে বাংলাদেশ নিজেদের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখেই একটা মানবিক কাজে নেতৃত্ব দিতে পারবে। এই মুহূর্ত শুধু বাংলাদেশের ভবিষ্যৎই ঠিক করবে না, বরং দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে বৈশ্বিক মানবিক প্রচেষ্টাও একটা সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
লেখক : সাউথ এশিয়া জার্নালের প্রকাশক