জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ সাতটি রাজনৈতিক দল আন্দোলনে নেমেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ও শুক্রবার বিভাগীয় শহরে একযোগে বিক্ষোভ সমাবেশ করে তারা জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও দাবি জানায় তারা। যুগপৎ কর্মসূচি পালন করা দলগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জাগপা, নেজামে ইসলাম পার্টি ও খেলাফত আন্দোলন।
জামায়াতে ইসলামী বলেছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার বিষয়ে সফলতা আসছে না বলেই তারা মাঠের কর্মসূচিতে গেছে। সরকার আলোচনার টেবিলে শুভঙ্করের ফাঁকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তাদের এই আন্দোলনটা যে ‘রাজনীতির অংশ’ সেটাও উল্লেখ করতে ভোলেননি তিনি। ইসলামী আন্দোলন পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রশ্নে ‘গণভোট’ দাবি করে বলেছে, জনগণ না চাইলে তারা এ দাবি থেকে সরে যাবে। অন্য পাঁচটি দল নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিলেও বহুল আলোচিত পিআর পদ্ধতির ওপর অতটা জোর দেয়নি।
জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো নিজেদের সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিএনপি এ আন্দোলন কর্মসূচির সমালোচনা করে বলছে, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় এ আন্দোলন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র। আন্দোলনে নামা সাত দলের মূল দাবিগুলো হলো—আগামী নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল আছে—আন্দোলন নিয়ে কতটুকু এগোবে জামায়াত। দাবি পূরণ না হলে জামায়াত কি পয়েন্ট অব নো রিটার্নে যাবে, নাকি শেষ পর্যন্ত আংশিক প্রাপ্তি নিয়ে নির্বাচনমুখো হবে, সেটাই দেখার বিষয়। তবে তাদের ঘোষিত আন্দোলন নির্বাচন বর্জনের মতো কঠিন পথে যে গড়াবে না, তা আঁচ করা যায়। বৃহস্পতিবার ঢাকার বিক্ষোভ সমাবেশে সবচেয়ে কঠোর হুঁশিয়ারিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি বুলবুল বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করছিলেন। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে শোনা যায়, তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলছেন, ‘প্রয়োজনে আমরা আপনার বাসা ঘেরাও করব। তখন পালানোর পথ পাবেন না।’
চব্বিশের ৮ আগস্টে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন দাবিতে প্রায় ১ হাজার ৭০০ আন্দোলন মোকাবিলা করতে হয়েছে ড. ইউনূস সরকারকে। এর মধ্যে অনেক আন্দোলনকারীই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পালানোর পথ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন। তবে জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব-পর্যায় থেকে এ ধরনের হুঁশিয়ারি বা হুমকি সম্ভবত প্রথম শোনা গেল। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির বড় জয় ঘরে তুলেছে। তার প্রভাবে জামায়াত নেতা-কর্মীদের অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ও চাঙ্গা দেখা যাচ্ছে। নুরুল ইসলাম বুলবুলের হুঁশিয়ারিমূলক বক্তব্যে তার আছর পড়ে থাকতে পারে।
যেসব দাবি নিয়ে জামায়াত মাঠে নেমেছে, তার কোন কোনটি পূরণ করার বা হওয়ার সুযোগ রয়েছে, তাতে নজর দেওয়া যাক। প্রধান দাবি হচ্ছে—ঐকমত্য কমিশন প্রণীত জুলাই সনদ নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়ন। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এখন পর্যন্ত এক বিন্দুতে আসতে পারেনি। বিএনপি বলছে, যেগুলো সাধারণ আইনের মাধ্যমে বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন করা হোক। আর সংবিধানের মৌলিক সংস্কার বা সংশোধনের সঙ্গে যুক্ত সংস্কার আগামী জাতীয় সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। আপাতত রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকারে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বিএনপির সঙ্গে ডান-বাম ঘরানার আরো কয়েকটি ছোট রাজনৈতিক দল একই অবস্থান ব্যক্ত করেছে।
অন্যদিকে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপিসহ তাদের সমমনা রাজনৈতিক দল চায় ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত হওয়া সব সংস্কার নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়িত হোক। সাধারণ আইনে বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়নের পাশাপাশি সংবিধান-সংশ্লিষ্ট সংস্কার একটি ‘সাংবিধানিক আদেশ’-এর মাধ্যমে বাস্তবায়নের ব্যাপারে তারা অনড় অবস্থানে রয়েছে। এনসিপি গণপরিষদ নির্বাচন আগে অনুষ্ঠানেরও দাবি করে আসছে। আর পিআর পদ্ধতিসহ যেসব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি সেসব বিষয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগেই একটি গণভোটের আয়োজন করে জনমত যাচাই করার ওপরও জোর দিচ্ছে তারা। জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনির ঐকমত্য কমিশনের সভা ও বিভিন্ন প্লাটফর্মে সাংবিধানিক আদেশ জারির আইনগত দিক ও যৌক্তিকতা তুলে ধরে জনমত অনুকূলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার বিএনপির আইনজীবীরা তা প্রত্যাখ্যান করে ‘উদ্ভট চিন্তা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। শিশির মনিরের যুক্তি মেনে নিলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় ১৪ মাসের কার্যক্রমের বৈধতা বড় প্রশ্নের মুখে পড়বে বলেও দাবি করছেন বিএনপি ঘরানার আইনজ্ঞরা।
এই পরস্পরবিরোধী অবস্থানের সুরাহা কীভাবে হবে, তা এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হলে ঘোষিত সাড়ে চার মাস পরের নির্বাচনও অনিশ্চয়তায় পড়বে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে হলে ডিসেম্বরের শুরুতেই বিস্তারিত তপশিল ঘোষণা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে হাতে সময় আছে মাত্র দু’মাস—অক্টোবর ও নভেম্বর। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট আরো অনেক কাজ রয়েছে সরকারের সামনে। তপশিল ঘোষণার পর নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিবিধানের সংশোধনের কোনো সুযোগ থাকবে না। গণভোটের মতো একটি বড় আয়োজন করা দু’মাসের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে আদৌ সম্ভব কি না, সে প্রশ্ন উপেক্ষণীয় নয়। আবার গণভোটে প্রাপ্ত জনরায় বাস্তবায়নেও অনেকটা সময়ের প্রয়োজন হবে।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের প্রশ্নেও নির্বাচন কমিশন বলছে, সংবিধান বা নির্বাচনি আইনে যেহেতু এ ধরনের বিধান নেই, সে কারণে তেমন পদ্ধতি মাথায় নেওয়ার সুযোগও তাদের নেই। তবে পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন নির্বাচনের পরেও সম্ভব। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঐকমত্যই যথেষ্ট। নতুন সংসদে সংবিধান সংশোধন করে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে (পিআর পদ্ধতিতে) উচ্চকক্ষ গঠনের সুযোগ থাকবে। নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন থেকে জামায়াত সরে এলে এবং উচ্চকক্ষের বিষয়ে বিএনপি মেনে নিলে আপাতত ‘পিআর জটিলতা’ নিরসন হতে পারে। পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের দাবি তরুণদের দল এনসিপিও করে আসছে।
নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন স্বল্প সময়ের মধ্যে যেমন বাস্তবসম্মত নয়, তেমনি কিছু ঝুঁকির দিকও রয়েছে। ব্যক্তির পরিবর্তে প্রতীকে ভোট দেওয়ার পিআর পদ্ধতিতে বাড়তি সুবিধা পাবে বলে আশা করে জামায়াত। বাংলাদেশে সুনির্দিষ্ট প্রার্থী দেখে ভোট দেওয়ায় ভোটাররা অভ্যস্ত। মার্কায় ভোট দেওয়ার পর জনপ্রতিনিধি হিসেবে ঠিক কাকে পাবে, তা আগে জানতে পারবে না ভোটাররা। নতুন এ পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য আগে ভোটারদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। সেজন্য কিছুটা সময় দরকার। আবার পিআর পদ্ধতি পতিত আওয়ামী লীগকে ভিন্নরূপে ত্রয়োদশ সংসদে বসার সুযোগ করে দিতে পারে।
পিআর-এর অনেকগুলো মডেল রয়েছে বিশ্বে। সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের উপযোগী যে পদ্ধতিটি গ্রহণ করা সম্ভব, তাতে জামায়াতেরই সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদ্যমান পদ্ধতিতে আওয়ামী লীগবিহীন নির্বাচনে অভাবনীয় কোনো রাজনৈতিক মেরূকরণ বা নাটকীয় ফলাফল না হলে বিএনপি সরকার গঠন করবে। শক্তিশালী প্রধান বিরোধী দল হওয়ার সম্ভাবনা জামায়াতের ক্ষেত্রে প্রবল। কিন্তু পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে ভিন্ন কিছু ঘটার সম্ভাবনা থাকবে। ধরা যাক, জাতীয় পার্টির সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সব ভোট লাঙ্গলে পড়ল। অথবা জাতীয় পার্টি, ১৪ দল, সিপিবি-সহ আওয়ামী লীগের পুরোনো মিত্ররা পিআর পদ্ধতির আওতায় একটি মার্কায় ভোট দিল। সেক্ষেত্রে ফলাফল জামায়াতের জন্য সুখকর নাও হতে পারে। অন্তত এবারের সংসদ নির্বাচনে এমন শঙ্কা রয়েছে। কিন্তু প্রচলিত পদ্ধতির নির্বাচনে বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগ, ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে সশরীরে প্রচারণা চালিয়ে ভালো ফলাফল করা কঠিন হবে।
জামায়াতসহ সাত দলের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ন্যায্য দাবি। এ দাবি অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সমান আচরণ পেতে হবে। সিভিল প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সামরিক-আধা সামরিক বাহিনী নির্বাচনি দায়িত্ব পালনকালে যাতে কোনো দলের প্রতি সহানুভূতিশীল না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দলবিশেষের প্রতি আনুকূল্য দেখালে সে নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হতে বাধ্য। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন ও বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার শক্তভাবে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন। তা সহজ হয়েছিল, কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের যেকোনোটির বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ফলে প্রশাসন কোনো দিকে হেলে পড়ে ঝুঁকি নিতে চায়নি।
কিন্তু এবারের অবস্থা একটু ভিন্ন। একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হওয়ায় অতিউৎসাহী কর্মকর্তারা সে দলের প্রতি আনুকূল্য দেখিয়ে নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে পারেন। সে বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে সজাগ থাকতে হবে। এছাড়া পতিত আওয়ামী লীগের অনুগত কর্মকর্তারাও নির্বাচন ভন্ডুল করতে স্যাবোটাজ করতে পারেন। এসব বিবেচনায় রেখে নির্বাচনি প্রশাসন সাজাতে হবে। নির্বাচনি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে অপারগতা ও অবহেলাজনিত অপরাধের শাস্তি বাড়িয়ে এ-সংক্রান্ত আইনের সংশোধনী গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন করা হয়েছে। সংশোধিত আইনের যথাযথ প্রয়োগ হলে সুফল মিলতে পারে।
সাত দলের উত্থাপিত অন্যান্য দাবির মধ্যে গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ দাবিও জনআকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালে কয়েকটি মামলার বিচারে গতি সঞ্চার হলেও নিম্ন আদালত ও জেলা পর্যায়ে আওয়ামী খুনি, দুর্বৃত্ত ও লুটেরাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো এখনো বিচারের পর্যায়ে যায়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তদন্তই শেষ হয়নি। তদারকিতেও ঘাটতি রয়েছে। মাঠপর্যায়ে আওয়ামী লীগের অনুগত পুলিশ কর্মকর্তারা এখনো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বহাল থাকায় এবং অভিযুক্তদের অবৈধ অর্থের দাপটে মামলাগুলো গতি পাচ্ছে না। এ-সংক্রান্ত দাবি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
আরেকটি দাবি হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সহযোগী জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। এ ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান বিপরীতে। ক্ষমতার দাবিদার দলটি বলছে, এত দল নিষিদ্ধ করলে নির্বাচন কাদের নিয়ে করবে। এটা খুব হালকা যুক্তি মনে হয়। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের সব অপকর্মের সহযোগী ছিল জাতীয় পার্টিসহ অন্যরা। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধে বিএনপি সায় দিয়েছে। প্রায় সম-অপরাধে অপরাধী জাতীয় পার্টি দল হিসেবে নিষিদ্ধ না হলেও আওয়ামী লীগের মতো তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকতে সমস্যা কোথায়?
প্রতিবেশী দেশের ডিপ স্টেট-নিয়ন্ত্রিত দল জাতীয় পার্টিকে অন্তত আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরে রাখা উচিত। কোনো ম্যানডেট ছাড়াই তারা প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা ভোগ করেছে। জিএম কাদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে ফ্যাসিজম ও লুটের বড় অংশীদার ছিলেন। তাদের রাজনীতি যে দিল্লি থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়, তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। জিএম কাদের দিল্লির অনুমতি ছাড়া কথা বলতে অপারগতা জানিয়ে তার স্পষ্ট প্রমাণ দিয়েছেন। ভোটের বাজারে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে উপনীত দলটি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পেলে তার অপব্যবহার করে গোটা নির্বাচনকে নানাভাবে কলুষিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত বা বিদ্রোহীদের ঠিকানাও হতে পারে যোগ্য প্রার্থীর তীব্র সংকটে থাকা দলটি। তাছাড়া যে দল গণঅভ্যুত্থানের পর প্রকাশ্যে সামরিক শাসন চেয়েছে, তাদের জন্য গণঅভ্যুত্থানের শক্তির সমান সুযোগ থাকা কতটা যৌক্তিক?
বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোকে দাবির বহর দীর্ঘ না করে, আন্দোলন করে জনভোগান্তি না বাড়িয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচনের পথে হাঁটতে হবে। অনড়, অনমনীয় ও হঠকারী মনোভাব পরিহার করতে হবে। ড. ইউনূসের পালানোর পথ বন্ধ করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে—পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ফেরার পথ রুদ্ধ রাখা। তারা যে ক্রমেই মাথা তুলছে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করে নির্বাচন ভন্ডুল করতে চাচ্ছে, তা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে। তা না হলে সবাইকে চড়া মূল্য চুকাতে হবে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনীতি বিশ্লেষক