বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য শিক্ষা একটি রাজনৈতিক ঝড় বইছে যুক্তরাষ্ট্রে-যে ঝড়ে জড়িয়ে পড়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, দেশটির সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে এটি শুধু প্রেসিডেন্ট ও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যকার আলোচিত সংঘাত নয়। এটি আরো গভীর একটি লড়াই। উচ্চশিক্ষা আদৌ মতপ্রকাশ, অনুসন্ধান ও সমালোচনামূলক চিন্তার স্থান হতে পারবে কি না, নাকি এখন থেকে শুধু ক্ষমতার প্রতিধ্বনি বহন করবে-এটি তারই যুদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রে যা ঘটছে, তা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্যও এক বড় সতর্কবার্তা। এটি মনে করিয়ে দেয়—নিয়ন্ত্রণ, সেন্সরশিপ, প্রতিবাদ দমন—এসব শুধু পাশ্চাত্যের সমস্যা নয়। আমরাও প্রায়ই এগুলোর মুখোমুখি হই। এই মুহূর্তটি এক আয়না, যেখানে শুধু মার্কিন কর্তৃত্ববাদ নয়, আমাদের নিজেদের ব্যর্থতাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যখন প্রতিবাদই হয়ে ওঠে রাজনৈতিক টার্গেট এক মার্কিন ফেডারেল বিচারক সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণাকে সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন, যার মাধ্যমে হার্ভার্ডে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। বিচারক একে প্রতিহিংসাপরায়ণ ও অসাংবিধানিক হিসেবে আখ্যা দেন। ট্রাম্প প্রশাসন জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত উপস্থাপন করে, কিন্তু হার্ভার্ড বলছে, এটি আসলে রাজনৈতিক প্রতিশোধ; কারণ তারা সরকারপ্রদত্ত চাপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান যুক্তরাষ্ট্র সংকটের শুরু ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে। হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর গাজায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকে, তার বিরুদ্ধে আমেরিকার ক্যাম্পাসজুড়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ শুরু করে। হার্ভার্ড ছিল প্রথম সারির প্রতিবাদীদের অন্যতম। প্রতিক্রিয়াও ছিল তীব্র। ডানপন্থি মিডিয়া, দাতারা, রাজনীতিকরা এই বিক্ষোভগুলোকে ‘ইহুদিবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ ও শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে। এই বর্ণনা টিভি স্ক্রিনে সীমাবদ্ধ থাকেনি। এটি রূপ নেয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর একটি পূর্ণমাত্রার রাজনৈতিক হামলায়। হার্ভার্ডের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ক্লডিন গে কংগ্রেসে হাজির হন। তার বিবৃতি, যা ছিল এক ভারসাম্যপূর্ণ পথচলার চেষ্টা, তা-ই হয়ে ওঠে তার বিরুদ্ধে আগুন জ্বালানোর পাথেয়। তিনি পদত্যাগ করেন। তার স্থলাভিষিক্ত হন অ্যালান গারবার, ঠিক সেই সময়েই ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে। ফিরেই ট্রাম্প শুরু করেন ‘ডব্লিউওকেই বিশ্ববিদ্যালয় (woke universities)’ দমন অভিযান। তিনি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। ডিইআই (DEI : diversity, equity, and inclusion) প্রোগ্রাম বন্ধ করে দেন। যে প্রতিষ্ঠানগুলো ‘লাইন’ মেনে চলেনি, তাদের ফেডারেল অর্থায়ন বন্ধ করে দেন। মার্চে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি সরকারের চাপ মেনে নেয়—নিরাপত্তা নজরদারি সরকারের অন্যায্য দাবি পূরণের ব্যবস্থা করে; কিন্তু হার্ভার্ড তা করেনি। এপ্রিল নাগাদ, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে ‘সিভিল রাইটস ভায়োলেশন’-এর তদন্ত শুরু করে, অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে ইহুদি বিরোধিতার অভিযোগ। তাদের দাবি ছিল—DEI প্রোগ্রাম বন্ধ করো, ‘অ্যান্টি-আমেরিকান’ হিসেবে চিহ্নিতদের নিষিদ্ধ করো, মধ্যপ্রাচ্য ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের তথ্য হস্তান্তর করো। হার্ভার্ড এসব অস্বীকার করলে আগ্রাসন আরো তীব্রতর হয়—অনুদানে ভাটা পড়ে, নন-প্রফিট স্ট্যাটাস বাতিলের হুমকি আসে এবং সবচেয়ে নির্মম খড়্গ নেমে আসে ২২ মে; হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি লাইসেন্স বাতিল করার মাধ্যমে বাতিল করা হয়। ফলে, ৬ হাজার ৭০০-এর বেশি শিক্ষার্থী, যা প্রায় হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এক-তৃতীয়াংশ; আইনি অনিশ্চয়তায় পড়ে। তাদের জীবন ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়, ডিগ্রি প্রশ্নের মুখে পড়ে। তাদের একমাত্র অপরাধ? একটি প্রতিষ্ঠানকে সমর্থন করা, যারা রাজনৈতিক চাপে মাথা নত করেনি। হার্ভার্ড প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বাড়ে উত্তেজনা হার্ভার্ড মাথা নত করেনি। তারা সরকারকে নিয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও সাংবিধানিক ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনে আদালতে টেনে এনেছে । একটি অস্থায়ী আদালতের আদেশ আপাতত শিক্ষার্থীদের দেশছাড়া হওয়া থেকে রক্ষা করেছে, কিন্তু লড়াই এখানেই শেষ নয়। এখন হার্ভার্ড নিজের অর্থভাণ্ডার ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করছে। শিক্ষক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং নাগরিক সমাজ একত্র হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে। এটি এখন আর শুধু একটি ক্যাম্পাসের ইস্যু নয়, বরং এটি প্রশ্ন তোলে; আদৌ কি বিশ্বে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিহিংসার শিকার না হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে? এর ক্ষতি কিন্তু অপূরণীয় এবং দৃশ্যমান বাস্তব। গবেষণা বন্ধ হয়ে গেছে, ল্যাবগুলো অর্থ হারিয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। চিকিৎসা, জনস্বাস্থ্য, ও প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্র ক্ষতির সম্মুখীন। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা; যারা প্রতিবছর আমেরিকার অর্থনীতিতে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলার অবদান রাখে, তারাও রাজনৈতিক দাবা খেলার গুটি হয়ে গেছে। একজন শিক্ষার্থীর কথায় তা-ই স্পষ্ট : ‘আমরা শুধু একটা ভূরাজনৈতিক দাবা খেলার গুটি’। হার্ভার্ড বনাম ট্রাম্প হার্ভার্ডের মামলার দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয় যখন তারা ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের গবেষণা অনুদান মুক্ত করার দাবিতে তারা এই মামলাটি করে। বিশ্ববিদ্যালয় অভিযোগ তোলে, ‘এই অনুদান আটকে দেওয়া অবৈধ হস্তক্ষেপ এবং একাডেমিক স্বাধীনতার সরাসরি লঙ্ঘন। এই অনুদান গবেষণা, নিরাপত্তা, ক্যানসার চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ’। কিন্তু এটি শুধু একটি মামলাই নয়, বরং এক বৃহত্তর আক্রমণের অংশ। প্রশাসন দ্রুত অনুদান কেটে দেয়, সিভিল রাইটস তদন্ত চালায় এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের চেষ্টা করে। একটি স্পষ্ট সংঘাত দেখা যায় হার্ভার্ড ল রিভিউ ঘিরে, যেখানে এক প্রাক্তন সম্পাদক, যিনি বর্তমানে ট্রাম্প উপদেষ্টা স্টিফেন মিলারের ঘনিষ্ঠ; তিনি জার্নালটির বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ তোলেন। বিচার বিভাগে এই অভিযোগের আইনি ভিত্তি দুর্বল হলেও, বিষয়টিকে ফেডারেল তদন্তে রূপ দেওয়া হয়। হার্ভার্ডের অভ্যন্তরীণ নথি থেকে জানা যায়, ওই ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল গোপনীয়তা লঙ্ঘনের কারণে, যা কোনো হুইসেলব্লোয়িং নয়। তবু ট্রাম্পের দল হার্ভার্ডকে চাপ দেয় সেই শাস্তি প্রত্যাহার ও নথি মুছে ফেলতে। এটি কোনো জবাবদিহি নয়, এটি ছিল ভয় দেখানো। এই প্রেক্ষাপট এক বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত তৈরি করে যে, রাষ্ট্র যদি আইন ও অর্থনৈতিক হাতিয়ার ব্যবহার করে আদর্শগত আনুগত্য আদায় করে, তাহলে একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ কোথায়? প্রশাসনের দাবি ছিল : ডিইআই (DEI) প্রোগ্রাম বাতিল করো, কারিকুলাম পরিবর্তন করো, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে যাচাই করো। সমালোচকদের মতে, এটি একাডেমিক মতপার্থক্য দমন ও অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজনৈতিক অনুগত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের প্রচেষ্টা। সমর্থকরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক আগে থেকেই বামঘেঁষা ও জবাবদিহিহীন। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—যদি হার্ভার্ডের মতো ৫৩ বিলিয়ন ডলারের তহবিলওয়ালা প্রতিষ্ঠানও মাথা নত করতে বাধ্য হয়, তাহলে বাকিরা কোথায় দাঁড়িয়ে? একজন প্রাক্তন ছাত্রের ভাষায় : ‘যদি হার্ভার্ডের সঙ্গে এমনটা হতে পারে, তাহলে দেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেই হতে পারে’। বাংলাদেশের জন্য আয়নার সামনে দাঁড়ানোর সময় যদি হার্ভার্ড; যার পেছনে এত বিশাল তহবিল ও ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট, তারা সরকারি প্রতিশোধের শিকার হতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কী আশা আছে? এখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্তশাসন এক ধরনের খাতা-কলমের বিষয়। উপাচার্য নিয়োগ হয় রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে, যার পেছনে সরকারদলীয় সুপারিশ থাকে। উচ্চপদগুলো হয়ে থাকে দলীয় আনুগত্যের পুরস্কার। হলগুলো ছাত্র সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং যাদের কাজ-ই হয় প্রতিবাদ দমন। সমালোচনামূলক চিন্তা লালিত হয় না, বরং দমন করা হয়। শিক্ষকরা মুখ বন্ধ রাখলেই বাঁচেন। আমাদের নেই হার্ভার্ডের মতো আইনি নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য। কিন্তু তাই বলে এই গল্প আমাদের নয়, এমন ভাবার সুযোগ নেই। বরং এটি দেখিয়ে দেয়, প্রকৃত স্বায়ত্তশাসন আসলে কী এবং তা রক্ষা করতে কী মূল্য দিতে হয়। বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা হার্ভার্ড বনাম ট্রাম্পের সংঘাত দেখায়, যখন শিক্ষা রাজনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়; তখন কী বিপদ তৈরি হয় এবং এতে অন্তত বেশ কিছু শিক্ষা রয়েছে, যেগুলো উপেক্ষা করা আমাদের জন্যই আত্মঘাতী হবেÑ ১. স্বায়ত্তশাসন কাগজে নয়, বাস্তবে প্রয়োজন যদি সরকারদলীয় পছন্দে উপাচার্য আসেন, তাহলে একে স্বাধীন বলা চলে না। দরকার স্বাধীন সার্চ কমিটি। শিক্ষক নেতৃত্বাধীন প্রশাসন। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত সিদ্ধান্ত। ২. একাডেমিক স্বাধীনতার জন্য দরকার প্রতিরোধ, শুধু টিকে থাকার মানসিকতা নয় হার্ভার্ড লড়েছে। আমাদের শিক্ষকরা মুখ খোলার সাহস পান না, ক্ষেত্রবিশেষে। এই নীরবতা কাউকে রক্ষা করে না, বরং পচন গভীর করে। শিক্ষক সংগঠন ও ছাত্র সংগঠন যেন নির্ভয়ে সংগঠিত হতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। ৩. আন্তর্জাতিকীকরণ : সংযোগই শক্তি হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের হারানো বিশাল ক্ষতি। অথচ বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে। আমাদের প্রয়োজন বিদেশি শিক্ষক-শিক্ষার্থী টানার জন্য বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা । এতে মর্যাদা যেমন বাড়বে, তেমনি সংযোগও বাড়বে। ৪. স্বচ্ছতা আস্থা তৈরি করে হার্ভার্ড-ট্রাম্প লড়াই জনগণের সামনে স্পষ্ট। বাংলাদেশে সব সিদ্ধান্ত হয় অন্ধকারে। শিক্ষক নিয়োগ, বাজেট, পাঠ্যক্রম সংস্কার ও শাস্তিÑসবকিছুর জন্য স্পষ্ট নিয়ম, রোডম্যাপ লাগবে। গোপনীয়তা ও অন্ধকার মানেই দুর্নীতির সুযোগ। ৫. আর্থিক স্বাবলম্বিতা একাডেমিক সততার ভিত্তি হার্ভার্ড সরকারের ‘না’ বলতে পারে কারণ তাদের নিজস্ব অর্থায়ন আছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিকল্প অর্থায়নের উৎস খুঁজতে হবে; প্রাক্তন ছাত্রদের নেটওয়ার্ক, অংশীদারি, গবেষণা তহবিল। শুধু সরকারি অর্থে চলা মানেই অদৃশ্য শক্তিতে রাজনৈতিক শর্ত মেনে চলা। এটা শুধু হার্ভার্ডের লড়াই নয়—আমাদের লড়াইও হার্ভার্ড নিখুঁত নয়, কিন্তু তারা বিপদের সময় নীরব থেকে যায়নি। এটা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে বিশ্ববিদ্যালয় শুধু ডিগ্রি অর্জনের জায়গা নয়, বরং এমন স্থান যেখানে মানুষ মুক্তভাবে ভাবতে পারে, কঠিন প্রশ্ন তুলতে পারে এবং নতুন কল্পনা করতে পারে। তাহলে, আমাদের জন্য এর অর্থ কী? নতুন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, বিশেষ করে স্বায়ত্তশাসিতগুলো এখন এক কঠিন সিদ্ধান্তের সামনে। আমরা কি ওপরের স্তরে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে ভেবে নীরবতা বেছে নেব? নাকি সময় এসেছে সত্যিকার অর্থে স্বীকার করার—কীভাবে নীরবতা, ভয় ও রাজনৈতিক চাপ আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেতর থেকে ক্ষয় করেছে? পরিবর্তন শুধু নেতৃত্ব বদলানোর মাধ্যমে আসবে না। দরকার বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ধরনে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় এবং একাডেমিক সংস্কৃতির গভীরে মৌলিক পরিবর্তন। যদি হার্ভার্ডও রাজনৈতিক দাবির চাপের মুখে পড়ে, তাহলে কম সম্পদ ও সুরক্ষা পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা কেমন হবে? কতদিন আমরা নীরব ক্যাম্পাসকে স্থিতিশীল ভাবতে থাকব? সত্যি কথা হলো, হয়তো ট্রাম্প ও হার্ভার্ড কিছু সমঝোতায় পৌঁছাবে। কিন্তু এই টানাপোড়েনের মধ্যেও উভয় পক্ষ নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করছে। এ থেকেও আমাদের শেখার অনেক কিছু আছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি এমন আলোচনায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়? আর কতদিন আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘স্বায়ত্তশাসিত’ বলে চালিয়ে যাব, যখন বাস্তবে তা নয়? একসময় স্লোগান আর যথেষ্ট নয়। যদি আমরা সত্যিই উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি, তাহলে সংস্কার আর বিলম্ব সহ্য করা যাবে না।
লেখক : গবেষক
Email: [email protected]
বিষয়: ডোনাল্ড ট্রাম্প হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়