ইসলাম প্রকৃতির ধর্ম, মানবতার ধর্ম, ভালোবাসা ও শান্তির ধর্ম, মহান আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ধর্ম। ইসলামের পূর্ণতা দানের জন্য আল্লাহ তাআলা সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মহামানব, মানবতার সর্বোত্তম আদর্শ, শেষ নবী ও সর্বশেষ রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে প্রেরণ করেছেন। তিনি ইনসানে কামিল তথা পরিপূর্ণ মানুষ। মানবীয় অবয়বে আল্লাহর গুণাবলি যতটুকু সম্ভব প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর মধ্যেই। তাঁর জীবন ছিল বাস্তব কোরআনের প্রতিচ্ছবি।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তাঁর রাসুলকে পথনির্দেশ ও সত্য ধর্মসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি এটিকে সব ধর্মের ওপর বিজয়ী করেন। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা ফাতহ, ৪৮: ২৮)

আল্লাহ তাআলা মহানবী (সা.)–এর মধ্যে যে সুমহান আদর্শ ও চরিত্র দিয়েছেন, তার মাধ্যমে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অধিষ্ঠিত।’ (সুরা কলম, ৬৮: ৪)

‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে এক রাসুল এসেছেন। তোমাদের যেকোনো কষ্ট তাঁর জন্য দুঃসহ, তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী; মুমিনদের প্রতি তিনি অতি স্নেহশীল ও দয়ালু। অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলুন, “আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। আমি তাঁরই ওপর ভরসা করি এবং তিনি মহান আরশের অধিপতি।”’ (সুরা–৯ তাওবা: ১২৮-১২৯)

ইসলামের বিজয় অনিবার্য। কোরআন কারিমে রয়েছে, ‘তারা (অবিশ্বাসীরা) তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূর নির্বাপিত করতে চায়, কাফেররা অপ্রীতিকর মনে করলেও আল্লাহ তাঁর নূরের পূর্ণতা দান ব্যতীত অন্য কিছু চান না। মুশরিকরা অপ্রীতিকর মনে করলেও তিনি পথনির্দেশ ও সত্য ধর্মসহ তাঁর রাসুল প্রেরণ করেছেন।’ (সুরা-৯ তাওবা, আয়াত: ৩২-৩৩)। ‘অপরাধীরা অপ্রীতিকর মনে করলেও আল্লাহ তাঁর বাণী অনুসারে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ (সুরা-১০ ইউনুস, আয়াত: ৮২)। ‘সুতরাং আল্লাহকে ডাকো তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে, যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ১৪)।

ইসলামের শিক্ষা হলো ‘উত্তম আচরণ’। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মন্দের প্রতিবাদ করো উত্তম দ্বারা, তারা যা বলে আমি সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৯৬)। ‘ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত করো উৎকৃষ্ট দ্বারা, ফলে তোমার সহিত যার শত্রুতা রয়েছে, সে–ও তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো হয়ে যাবে।’ (সুরা-৪১ হা–মীম সাজদাহ, আয়াত: ৩৪)।

বিশ্বজগতের রহমত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক। কোরআন মাজিদে রয়েছে, ‘(হে প্রিয় হাবিব!) আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাও, তবে আমাকে অনুসরণ করো, তবেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন; আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)।

আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবী (সা.)–কে উম্মতের প্রতি মায়া মমতা ও প্রেম দিয়ে পাঠিয়েছেন। কোরআন কারিমে আছে, ‘তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে একজন রাসুল এসেছেন, যিনি তোমাদের বিপন্নতায় কষ্ট পান, তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা-৯ তওবা, আয়াত: ১২৮)। ‘ওই সব লোক ইমান আনছে না, এ কারণে কি তাদের চিন্তায় ও পেরেশানিতে আপনি নিজেকে শেষ করে দেবেন?’ (সুরা-৪২ শুরা, আয়াত: ৩)।

উহুদের যুদ্ধে নবীজি (সা.)-এর দাঁত মোবারক ভেঙে যায়, মাথা ফেটে যায়; খন্দকের যুদ্ধে পাথর বহন করতে করতে শরীরে দাগ পড়ে যায়; তায়েফে ইসলাম প্রচারে গেলে তাঁকে দুষ্ট লোকেরা উপহাস করে, গালি দেয়, পাথর ছোড়ে। তবু তিনি হাসিমুখে সব সহ্য করেছেন, উম্মতের হিদায়াত ও মুক্তির জন্য দোয়া করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমার এই জাতিকে হিদায়াত দিন। তারা জানে না, তারা বোঝে না।’ (শু’আবুল ঈমান, সুনানে বায়হাকি)

● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

সূত্র, প্রথম আলো