জাতিসংঘের ইতিহাসে এবারের ৮০তম অধিবেশন শুধুই ফিলিস্তিন ইস্যুর জন্য খ্যাত হয়ে থাকবে বলে তথ্যাভিজ্ঞরা মনে করেন। ইহুদি দখলদার রাষ্ট্র ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান বিগত ৭৭ বছরের দ্বন্দ্ব ও সংঘাত কাটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ অতীতে কখনো ফলপ্রসূ হয়নি। লাগাতার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন এবং বিশেষ করে অর্থ ও সমরাস্ত্র দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের সংঘর্ষ বা দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে। কিন্তু প্রায় ৭ দশক পেরিয়ে এখন শান্তিকামী বিশ্ববাসী তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।

জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ১৫৭টি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ (৮১ শতাংশ) মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার একটি দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের জন্য এ পর্যন্ত ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দিয়েছে। এর মধ্যে এবার নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডাও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও পূর্ণ সদস্যপদের জন্য তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে। এ ক্ষেত্রে সারাবিশ্ব এখন একদিকে আর অন্যদিকে শুধু যুক্তরাষ্ট্র ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষাবলম্বন করে রয়েছে। তবে ইসরাইল ও তার প্রতিরক্ষাকারী যুক্তরাষ্ট্র এখন দৃশ্যতই একঘরে হয়ে পড়েছে। সে কারণে বিশেষ করে জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশনকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিন সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের বিষয়টি অগ্রাধিকার পেয়েছে।

বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতির গুরুত্ব টের পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ‘মতলববাজ’ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্বের আটজন আরব ও মুসলিম নেতার সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন। সৌদি আরব, কাতার, তুরস্করসহ আটটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে অবিলম্বে বন্দিমুক্তি, গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেটিকে তিনি একটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা বলে উল্লেখ করেছেন। তবে সে আলোচনা থেকে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বেরিয়ে এসেছে।

আর তা হলো গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন নিয়ে। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে একটি অসমর্থিত খবর ছড়িয়ে পড়েছে যে, ভবিষ্যতে গাজা প্রশাসনের জন্য অন্তর্বর্তী প্রধান হিসেবে যুক্তরাজ্যের লেবার দলীয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে নিয়োগ করা হতে পারে। এ বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে যথেষ্ট সন্দেহ এবং বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন আরব কিংবা গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) নেতারা ও জনগণের কাছে টনি ব্লেয়ার একজন অত্যন্ত বিতর্কিত ব্যক্তি বা রাজনীতিক। ব্লেয়ার ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত দীর্ঘ এক দশক যুক্তরাজ্যের বাম ঘরানার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় অর্থাৎ ২০০৩ সালে ব্লেয়ার মধ্যপ্রাচ্যের ইরাক আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি সমর্থন দেন এবং ইরাকে গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র থাকার মিথ্যা অভিযোগে সাদ্দাম হোসেনকে শেষ পর্যন্ত হত্যা করতে সর্বাত্মক সাহায্য করেন। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে অত্যন্ত শক্তিশালী অভিযোগ রয়েছে, তিনি একজন ইহুদি রাষ্ট্রের সমর্থক এবং এজেন্ট। তিনি আগাগোড়া ইসরাইলের পক্ষ হয়ে ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরবদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। অথচ এর আগেই অর্থাৎ ২০০২ সালে ইসরাইল-আরব (ফিলিস্তিন) সংকট নিরসনে জাতিসংঘের মাদ্রিদ সম্মেলনে গঠিত ‘কোয়ার্টেট’-এ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়। জাতিসংঘ গঠিত সেই ‘কোয়ার্টেট’-এর সদস্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ ও রাশিয়া। জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব বান কি মুনের কাছে টনি ব্লেয়ারের বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ জমা পড়তে থাকে। তাছাড়া রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য সমস্যা সমাধানে টনি ব্লেয়ারের মধ্যস্থতার পক্ষপাতী ছিল না।

এমন একটি অবস্থায় ২০০৭ সালের জুনে যুক্তরাজ্য প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপে গর্ডন ব্রাউন ও অন্যদের চাপে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান টনি ব্লেয়ার। তারপর তিনি ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ফিলিস্তিনের সার্বিক পরিস্থিতি এবং ইসরাইল সৃষ্ট বেআইনি বসতি নির্মাণ ও অন্যান্য কারণে সম্পূর্ণ মধ্যপ্রাচ্যে পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত উত্তপ্ত। ইতোমধ্যে ব্লেয়ারের কিছু পক্ষপাতমূলক কাজ প্রকট হয়ে ওঠে ফিলিস্তিনবাসীর কাছে। তারা এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্য আরবরা জাতিসংঘের কাছে ব্লেয়ারের পদত্যাগ দাবি করতে থাকে এবং ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরের রামাল্লাহ, হেবরন, বেথলেহাম কিংবা পূর্ব জেরুসালেম সফরে গেলে বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে তাড়া করে। গাজার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে তখন। অন্যদিকে পশ্চিমতীরে ইসরাইলের শাসকদের বিশেষ করে অ্যারিয়েল শ্যারন ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অবৈধ বসতি নির্মাণ এবং ফিলিস্তিনবাসীর ওপর ধারাবাহিক নির্যাতনের কারণে লেবাননের হিজবুল্লাহ প্রতিরোধ আন্দোলনের যোদ্ধারা তৎপর হয়ে ওঠে। এর পাশাপাশি তেল আবিব থেকে গাজা অবরোধের পাঁয়তারা চলতে থাকে। টনি ব্লেয়ার সে পরিস্থিতি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক ও প্রতিকূল ভেবে কোয়ার্টেটের অর্পিত দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। এ পর্যন্ত ছয় লাখের অধিক বহিরাগত ইহুদি ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে গড়ে তোলা বিভিন্ন অবৈধ বসতিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। অন্যদিকে ১৯৪৮ এবং বিশেষ করে ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের পর প্রায় সাত লাখের মতো উচ্ছেদকৃত ফিলিস্তিনি শরণার্থী জর্ডান, লেবানন ও সিরিয়ার ৬৮টি শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। তাদের স্বদেশে ফিরে আসা এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য জাতিসংঘের নির্ধারিত ভূখণ্ড ক্রমে ক্রমে দখল করে নেওয়ার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনি সংগ্রামী নেতা ইয়াসির আরাফাত যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড রাজ্যের ক্যাম্প ডেভিডে ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত আলোচনা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এর আগে ১৯৯৩ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের উপস্থিতিতে ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের লজে ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীর ও গাজার সীমিত স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারে অসলো চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন।

কথা ছিল অসলো চুক্তি স্বাক্ষরের পাঁচ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৯৯৯ সাল শেষ হওয়ার আগে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে যাবতীয় অসমাপ্ত সীমানা দ্বন্দ্ব কিংবা মতবিরোধ নিষ্পত্তি করে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বৈধভাবে আত্মপ্রকাশ করা। কিন্তু অসলো চুক্তি স্বাক্ষরের পর ইসরাইল ফিরে যাওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রবিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তারপর ইহুদিবাদী শাসকরা বিভিন্ন চুক্তি কিংবা দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষ থেকে ক্রমে ক্রমে সরে দাঁড়ান। তাদের মধ্যে ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইহুদ বারাক ছিলেন কিছুটা ব্যতিক্রম। তিনি ২০০০ সালে অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের ক্ষমতা ছাড়ার প্রাক্কালে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন সমস্যার একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে, কিন্তু পারেননি। ফিলিস্তিনের জন্য বরাদ্দকৃত ভূখণ্ড দখল এবং বিশেষ করে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে শেষ পর্যন্ত সবকিছু ভেস্তে যায়। তারপর দেখা দেয় সম্পূর্ণ এক ভিন্ন পরিস্থিতি। প্রধানমন্ত্রী ইহুদ বারাকের পর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন কট্টরপন্থি ও ইহুদিবাদী নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। নেতানিয়াহু ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯, ২০০৯ থেকে ২০২১ এবং ২০২২ থেকে এ পর্যন্ত ক্ষমতায় রয়েছেন। বর্তমান চরম ইহুদিবাদী দক্ষিণপন্থিদের সমর্থনে অনেকটা ছলে-বলে-কৌশলে তিনি ক্ষমতায় টিকে রয়েছেন। বিভিন্ন মেয়াদে এই কট্টরপন্থি ইহুদিবাদী নেতা প্রায় ১৮ বছর ইসরাইলের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছেন, যিনি ফিলিস্তিনের স্বাধীনসত্তা কিংবা অস্তিত্বে মোটেও বিশ্বাস করেন না। তার শাসনামলে বারবার গাজা উপত্যকা বা ভূখণ্ড আক্রান্ত হয়েছে, দখল হয়েছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য নির্দিষ্ট করা জাতিসংঘের ভূমি এবং গড়ে তোলা হয়েছে হাজার হাজার বসতি, অবৈধ স্থাপনা। ইরান ও তার সমর্থিত ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস, লেবাননের হিজবুল্লাহ গেরিলা বাহিনী এবং ইয়েমেনের আনসারাল্লাহ ইসলামি বাহিনী হচ্ছে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের আপসহীন প্রধান শত্রু। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সামরিক কৌশলে হত্যা করা হচ্ছে ইরানের প্রথম কাতারের সেনাপতি, বিজ্ঞানী ও অন্যদের। তাছাড়া অকাতরে হত্যা করা হয়েছে হামাস, হিজবুল্লাহ ও আনসারাল্লাহর নেতা এবং যোদ্ধাদের। সে ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং তাতে প্রশ্নাতীত সহযোগিতা ও সমর্থন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সব পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের। সেটি পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণ করে (প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে) আমেরিকান ইসরাইলি পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (এআইপিএসি)। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজেট তাদের। কংগ্রেস ও সিনেট নির্বাচন থেকে সর্বত্র সবকিছু নিখুঁতভাবে পরিকল্পনা করে তারা ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইলের স্বার্থে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ইহুদি ধনকুবেরদের শক্তিশালী হাত কিংবা প্রভাব-প্রতিপত্তি সর্বত্র বিস্তৃত। সে প্রভাব বলয়ের বাইরে থাকা কারো পক্ষে সহজ নয়।

ইসরাইলের সম্প্রসারণবাদী ইহুদি নেতারা বিভিন্ন কৌশলে ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনের ৫০ শতাংশ ভূমি জবর দখল করেছে। ইসরাইলের শান্তিবাদী আন্দোলন ‘পিস নাও’ বলেছে, ইহুদিবাদী সরকার পশ্চিমতীরের প্রায় ২৪ শতাংশ ভূমি একমাত্র ২০২৪ সালেই দখল করেছে। তাছাড়া ‘স্টেটল্যান্ড’ হিসেবে সরকার পশ্চিমতীরে আরো ২৬ শতাংশ ভূমি গ্রাস করেছে। উল্লিখিত ভূখণ্ড বাদ দিয়ে কোথায় প্রতিষ্ঠিত হবে ভবিষ্যৎ স্বাধীনরাষ্ট্র ফিলিস্তিন? সে জবাব যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের কাছে নেই। একটি রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলেই সব শেষ হয়ে যাবে না। ইহুদিবাদীদের জর্ডান নদীর পশ্চিমতীর থেকে ভূমধ্য সাগরের উপকূল কিংবা নীল নদী থেকে ফোরাত নদী পর্যন্ত বিস্তৃত বৃহত্তর ইসরাইল গড়ে তোলার স্বপ্নে ইহুদিবাদীরা বিভোর। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত কিংবা নীলনকশা থেকে দূরে সরে যাবে সেটি ভাবলে অত্যন্ত বড় ভুল করা হবে। কারণ এ অবস্থায়ও তারা ডেকে আনছে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে গাজার অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রধান হিসেবে। এ যেন বানরের কাছে পিঠা ভাগ করার দায়িত্ব দেওয়া। এ কথা ঠিক যে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিকে কেন্দ্র করে বর্তমানে আরব ও মুসলিম রাষ্ট্র কিংবা শান্তিকামী বিশ্বে যে পরিবর্তন এসেছে, সে প্রত্যয় ও দৃঢ়তাকে কঠোর সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ধরে রাখতে হবে। সেটা সম্ভব হলে ফিলিস্তিনকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির সুবাতাস বয়ে যাওয়ার একটি ক্ষীণ সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় সৌদি আরব ও ইরানকে একটি শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে যেতে হবে। মিসরকে তার নিজস্ব উদ্যোগে একটি ইসলামি যৌথবাহিনী গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। পাকিস্তানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তাঁবেদারি থেকে দূরে থাকতে হবে। তুরস্কের দিকে এখন মার্কিনিদের শ্যেনদৃষ্টি রয়েছে। তারা আরব কিংবা ইসলামি ঐক্যে ফাটল ধরাতে বদ্ধপরিকর। নতুবা পৃথিবী থেকে তাদের অর্থনৈতিক কিংবা সামরিক আধিপত্য শেষ হয়ে যাবে, সেটা তাদের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। বিশ্বকে শাসন করার ইহুদিবাদীদের যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সেটি তারা কোনো মতেই নিষ্ফল হতে দেবে না। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে তারা এখন অনেকটা একঘরে হয়ে পড়েছে। সে কারণেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্মত হয়েছেন আরব কিংবা মুসলিম নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে। তার অবস্থান কিছুটা শক্তপোক্ত হলে আগামী সপ্তাহেই তিনি হয়তো সবকিছু ভুলে আবার নেতানিয়াহুকে কাঁধে তুলে নিতে বাধ্য হবেন। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই নেতানিয়াহুকে আর এগোতে দেওয়া যাবে না। যেকোনো অবস্থায় আরব ও মুসলিম বিশ্বকে ফিলিস্তিন এবং তাদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সেখানে শিয়া-সুন্নি কিংবা আরব-অনারব কোনো অর্থহীন ব্যবধান যেন অনৈক্য সৃষ্টি করতে না পারে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের যে ধারাটি সূচিত হয়েছে, তাকে যেকোনো ত্যাগের বিনিময়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস), সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক

সূত্র, আমার দেশ