স্বপ্নকে এক ধরনের প্রতীকী ভাষা (symbolic language) হিসেবেও দেখা যেতে পারে। এই প্রতীকগুলো ব্যক্তিগত মানসিক উপাদানকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। তারা অস্তিত্বের উচ্চতর স্তরের (ontological levels) বার্তা বহন করে এবং অপর জগতের (mundus imaginalis) ইঙ্গিত নিয়ে হাজির হয়। স্বচ্ছতর হৃদয়ের উচ্চতর স্বপ্ন আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি বা মহাজাগতিক সত্যের ছায়া বহন করতে পারে। স্বপ্নের এই যে ঊর্ধ্বগামী ব্যাখ্যা, আধুনিকতা একে জানে না। সে কেবল স্বপ্নকে ক্ষেত্রবিশেষের মানসিক বিশ্লেষণে সীমায়িত রেখেছে স্বপ্নের গুরুত্ব একটি গভীর ও বহুস্তরীয় দার্শনিক প্রসঙ্গ। প্লেটো এবং পরবর্তী নিও-প্লাটোনিস্টদের কাছে স্বপ্ন হচ্ছে আত্মার এক অন্তর্মুখী গতি, যেখানে উচ্চতর সত্য ধরা দেয় প্রতীকের মাধ্যমে। ফরাসি দার্শনিক আঁরি বার্গসঁ ও গাস্টন বাশেলার স্বপ্নকে দেখান সম্ভাব্য সত্তার (possible being) অভিব্যক্তি হিসেবে, যা দৈনন্দিন বাস্তবতার বাইরে নতুন বাস্তবতার সম্ভাবনা উন্মোচন করে। স্বপ্নে এমন অনেক কিছু সম্ভব, যা জাগ্রত অবস্থায় অসম্ভব। এই বিচারে স্বপ্ন আমাদের এমন এক সম্ভাব্য অস্তিত্বের জগতে নিয়ে যায় যেখানে স্থান, সময় ও শরীরের নিয়মগুলো ভিন্ন। স্বপ্নের অস্তিত্ব আছে, সে আত্মা ও বাস্তবতার মধ্যবর্তী এক বাস্তবতার এলাকা। তার অস্তিত্ব আমাদের বাহ্য জগতের মতো দৃঢ় নয়। স্বপ্ন একপ্রকার মনোজাগতিক প্রতিচ্ছবি, যা চেতনার গভীরে জন্ম নেয় এবং সেখানে নিজস্ব বাস্তবতা সৃষ্টি করে। স্বপ্নে আমরা কখনো এমন পরিচয় গ্রহণ করি যা আমাদের জাগ্রত অবস্থায় নেই। এ কারণে কিছু দার্শনিক বলেন, সত্তা কোনো নিরবচ্ছিন্ন পরিচয় নয় বরং বিভিন্ন অভিজ্ঞতায় ভাঙা-গড়া অংশের সমষ্টি। স্বপ্ন এক ধরনের অদৃশ্য বাস্তবতা যেখানে অনুভূতি, প্রতীক ও ইচ্ছা একত্র হয়ে একটি দৃশ্যমালা সৃষ্টি করে। জর্জ বার্কলির মতো আদর্শবাদীরা মনে করেন, বাস্তব জগতও স্বপ্নের মতোই; মন বা চেতনাই সব কিছুর উৎস। স্বপ্ন এবং জাগরণ উভয়ই চেতনার ভিন্ন ভিন্ন রূপ। অর্থাৎ স্বপ্ন যেহেতু চেতনার মধ্যে ঘটে, ফলে স্বপ্নও অস্তিত্বশীল। রেনে দেকার্ত বলেন, আমরা জেগে আছি নাকি স্বপ্ন দেখছি এই পার্থক্য নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। আমরা জেগে থাকার সময় যে জিনিসগুলো দেখি ও অনুভব করি, সেগুলো প্রায় একইভাবে স্বপ্নেও অনুভব করতে পারি। তাহলে যখন জেগে আছি, তখন কিভাবে বুঝব, আমি স্বপ্নে নই? যখন স্বপ্নে আছি, তখন কীভাবে বুঝব আমি আসলে সজাগ নই? রিয়ালিস্ট ব্যাখ্যা স্বপ্নকে দেখে মস্তিষ্কের একটি মানসিক প্রক্রিয়া হিসেবে, যা ঘুমের সময় ঘটে। স্বপ্নকে সেখানে বাস্তব অস্তিত্ব হিসেবে গণ্য করা হয় না, বরং সে হচ্ছে নিউরন ও স্মৃতির অর্গানিক প্রতিফলন। কিন্তু নিও-সিমুলেশনবাদী চিন্তাবিদরা বাস্তবজগতকে স্বপ্নের মতোই একটি সিমুলেশন হিসেবে ভাবতে চেয়েছেন। তারা দেখান, স্বপ্ন যদি এক ধরনের অভিজ্ঞতামূলক বাস্তবতা হয়, তাহলে জাগতিক বাস্তবতা ও স্বপ্নের বাস্তবতার মাঝখানের সীমানাটা কী? উভয়ের মধ্যকার পার্থক্য কি ঝুঁকিপূর্ণভাবে অস্পষ্ট নয়? ইসলামী দর্শনে স্বপ্নের অস্তিত্ব ও স্বরূপ একটি গভীর ও বহুস্তরবিশিষ্ট বিষয়। ইসলামী দর্শন স্বপ্নকে কেবল মনের কল্পনা বা ঘুমের অচেতনতা হিসেবে দেখে না বরং আধ্যাত্মিক, মনস্তাত্ত্বিক ও নৈর্ব্যক্তিক বাস্তবতার সংযোগস্থলে স্বপ্নের অবস্থান। স্বপ্নের মাধ্যমে আত্মা এমন এক বাস্তব জগৎ থেকে বার্তা পায়, যে জগৎ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়। তবে সেই জগতের নিজস্ব রূপ রয়েছে। স্বপ্নের সাথে যুক্ত থাকে তিন জগতের বাস্তবতা। প্রথমত, আলামুল হিস বা ইন্দ্রিয় জগৎ। যেখানে আমরা বস্তুগত বাস্তবতা অনুভব করি। দ্বিতীয়ত, আলমে মিসাল বা ইমেজ-প্রতিতুলনার জগৎ। এটি এমন এক মধ্যবর্তী জগৎ, যা বাস্তব, কিন্তু বস্তুগত নয়। এই জগতে অস্তিত্বগুলো ইমেজ বা ফর্ম আকারে বিদ্যমান। এটি ইন্দ্রিয়নির্ভর জগতের ঊর্ধ্বে, কিন্তু নিরঙ্কুশ আধ্যাত্মিক জগতের নিচে একটি অন্তর্বর্তী জগৎ। যেখানে যুক্তির প্রভাব আছে, আত্মিকতারও প্রভাব আছে। এখানে আলমে হিস তথা ইন্দ্রিয় জগতের অস্তিত্ব ও কর্ম প্রতীকী অবয়বে বিদ্যমান, যা স্বপ্নে ধরা পড়ে। সেখানে জ্ঞানকে দুধের রূপকে রাখা হয়েছে। দুধ যেমন পুষ্টির উৎস, তেমনি জ্ঞান আত্মার পুষ্টি। ইহজাগতিকতাকে সেখানে রাখা হয়েছে লাস্যময়ী রূপময়ী নারীর রূপকে। কেউ স্বপ্নে দেখলেন এক অতি সুন্দরী রমণী, যিনি কখনো হাসছেন, কখনো কাঁদছেন। এর অর্থ হতে পারে দুনিয়ার বিভ্রান্তিকর প্রকৃতির রূপায়ণ। সুফিদের কাছে দুনিয়া অনেক সময় এক জড় জীবন্ত রূপসী হিসেবে ধরা দেয়, যা নিজের সৌন্দর্যে মানুষকে মুগ্ধ করে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ধ্বংসের দিকে টানে। আলমে মিসালে সত্য কথা বা জিহাদের মনোভাব তরবারির অবয়বে প্রকাশ পায়। ইবনে ‘আরাবীর মতে, অনেক সময় কঠিন সত্যকে তলোয়ারের আকারে দেখা যায়, যা মিথ্যার গলা কেটে দেয়। সেখানে রূহকে প্রায়ই দেখা যায় পাখির অবয়বে। বিশেষ করে সাদা পাখি বা কবুতরের প্রতীকে। মৃত্যু বা আত্মশুদ্ধির পরের রূহ অনেক সময় পাখির রূপে ধরা দেয়। হাদিসে দেখানো হয়েছে শহীদের রূহ সবুজ পাখিরূপে বেহেশতের বৃক্ষে বিচরণ করে। আলমে মিসালের পাখি আত্মার ঊর্ধ্বগমন ও স্বাধীনতার প্রতীক। হিংসা বা রাগকে সেখানে প্রায়ই আগুনের অবয়বে দেখানো হয়। কেউ স্বপ্নের মধ্যে আলমে মিসালের জ্বলন্ত আগুন বা আগুনের গহ্বরে নিজেকে পড়তে দেখল। এর মানে হতে পারে দুনিয়ার পাপ, হিংসা বা ঈর্ষার চিত্রায়ণ। সুফিদের অভিজ্ঞতা হলো, হৃদয়ে লুক্কায়িত রাগ বা কুপ্রবৃত্তির প্রতিচ্ছবি আগুনের মতো ধরা পড়ে। সেখানে কুমন্ত্রণা বা শয়তানি প্রবণতা সাপ বা বিচ্ছুর অবয়বে ধরা পড়ে। হাদিসেও উল্লেখ আছে : কেউ যদি স্বপ্নে সাপ দেখে, তা হতে পারে শয়তানি কুমন্ত্রণা বা শত্রুতা। সুফিদের মতে, অনেক সময় আত্মিক অবস্থার বিপর্যয় বা নফসের ছলনাও সাপের অবয়বে প্রকাশ পায়। কারো ঈমান দুর্বল হলে, আলমে মিসালে তাকে একটি বদ্ধ, অন্ধকার ঘরের মধ্যে আটকে থাকা অবস্থায় দেখা যেতে পারে। কারণ এটি আত্মিক অজ্ঞতা ও বিচ্ছিন্নতার প্রতীক। অপর দিকে আলমে মিসালে ইলহাম বা রুহানি উন্নতিকে আলোররূপে দেখা যায়। আধ্যাত্মিক অগ্রগতি ও পবিত্রতা হচ্ছে ‘নূরুন আলা নূর’ মানে আলোর উপরে আলোর মতো। এক আধ্যাত্মিক বোধ আরেকটি আধ্যাত্মিক স্তরের উপর প্রকাশিত হয়। স্বপ্নের সাথে যুক্ত তৃতীয় জগৎ হলো আলমুল আমর। এটি আল্লাহর আদেশ বা ইচ্ছার তাৎক্ষণিক প্রকাশের জগৎ- যা সময়, স্থান, পদার্থের সীমাবদ্ধতার বাইরে। যেখানে কেবল আল্লাহর ইরাদা (ইচ্ছা), কালাম (বাণী) এবং তাঁর নৈকট্যপ্রাপ্তদের রূহ (আত্মা) বিদ্যমান থাকে। কেবল পবিত্র ও মহান আত্মারা এই জগতের বাস্তবতা থেকে আলোক লাভ করেন। যখন ঘুমে শরীর নিষ্ক্রিয় থাকে, পবিত্র আত্মা তখন বস্তুজগৎ ছেড়ে এমন এক অস্তিত্বের জগতে প্রবেশ করে যা আল্লাহর আদেশের তাৎক্ষণিক ও অপার্থিব বাস্তবতা প্রকাশ করে। এতে যে স্বপ্নগুলো ধরা পড়ে, এর মাধ্যমে মানুষ কখনো সত্য, প্রতীক, ভবিষ্যদ্বাণী অথবা আত্মিক দিকনির্দেশনা লাভ করে। যারা রূহানি শুদ্ধতার মাধ্যমে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেন, তারা এই জগতের ইশারা বা ‘দৃশ্যাবলি’ উপলব্ধি করতে পারেন। এসব দৃশ্য চোখে দেখা বিষয় নয়, বরং কালব বা রূহের চেতনায় তা উদ্ভাসিত হয়। ইবনে আরবী রহ. বলেন. ‘এই জগতে রূপ আছে, কিন্তু তা বস্তু নয়। শব্দ আছে, কিন্তু তা শ্রুতি নয়।’ আলমে আমরে আল্লাহর অলিরা যা অর্জন করেন, তা অন্তরে এক ধরনের ইলহাম ও কাশফ হিসেবে প্রকাশিত হয়। নবীদের আত্মা এই জগতে পূর্ণ ও নিরঙ্কুশভাবে বিচরণ করে বলে তাঁদের স্বপ্নও ওহি। অলিদের রূহও সেখানে যেতে পারে। কিন্তু নিরঙ্কুশ নয়, আবার যাওয়াটাও সব সময় অসংশয় নয়। ফলে তাদের স্বপ্ন সাধারণত সম্ভাবনার অর্থ বহন করে। অতএব স্বপ্নের সত্যতা নির্ভর করে স্বপ্নদ্রষ্টার আত্মিক অবস্থা ও ইলহামের যথার্থতার ওপর। উচ্চতর আত্মার স্বপ্ন অলৌকিকতার একটি জানালা এটি কল্পনা নয়, বরং এক ধরনের উচ্চস্তরের অস্তিত্বে প্রবেশের মাধ্যম। স্বপ্নের এই উচ্চতর রূপ বিরল। একে বলা হয় রূহানি স্বপ্ন। সাধারণত মানুষ যেসব স্বপ্ন দেখে, তা দুই প্রকার। এক. নফসানি, দুই. মিসালি। নফসানি স্বপ্ন সাধারণত মানুষের নিজের অন্তর্জাগতিক অবস্থা, চিন্তা, ভয়, কামনা, চাপ, অথবা স্মৃতির প্রতিফলন হয়ে দেখা দেয়। এগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত কোনো বার্তা নয়, বরং মানুষের নিজের নফস বা মন থেকে উঠে আসে। মিসালি স্বপ্ন বা রূপকাত্মক ও অর্থবহ স্বপ্ন। এটা সাধারণত মানুষের অন্তর্জগৎ, আত্মিক স্তর এবং রূহানিয়াতের বিভিন্ন মাত্রা অনুযায়ী নানা ধরনে বিভক্ত হয়। এগুলোকে সাধারণত কয়েকটি ভাগে বিবেচনা করা যায়। যেমন : ১. রূপক বা প্রতীকী স্বপ্ন : এগুলো এমন স্বপ্ন, যেখানে কোনো বস্তু, চরিত্র বা ঘটনা বাস্তব অর্থে নয়, বরং কোনো গভীর তাৎপর্য বা ইশারা বহন করে। স্বপ্নে কেউ দেখল, সে একটি মরা সাপকে হত্যা করেছে। এর মানে রয়েছে। মরা সাপ মানে পুরনো ভয় বা শত্রুতা; তাকে হত্যা করা মানে সেই ভয় অতিক্রম করা। ২. রূপক মানসিক বা মিসালি নফসি স্বপ্ন : এমন একটি শ্রেণীর স্বপ্ন যা ব্যক্তির মানসিকতা, আত্মিক অবস্থা এবং অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রতিফলন। এটি মিসালি বা প্রতীকী স্তরে ব্যক্তির নফস বা প্রবৃত্তি, ভয়, আশা, সঙ্কট, আকাক্সক্ষা ইত্যাদির প্রতীকী প্রকাশ ঘটায়। এ ধরনের স্বপ্ন সাধারণত প্রতীক ও দৃশ্যকল্পের মাধ্যমে আত্মা ও মনের বাস্তব অবস্থা প্রকাশ করে। যেমন কেউ দেখল, একটি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু নিজের মুখ দেখতে পাচ্ছে না- আয়নাটি ধোঁয়াটে বা ফাটা। এটি তার আত্মপরিচয় নিয়ে অনিশ্চয়তা, আত্ম-অবিশ্বাস বা নিজেকে গ্রহণ করতে না পারার প্রতীক। নফস যখন দ্বিধাগ্রস্ত, তখন এরকম প্রতিচ্ছবি আসে। ৩. ইলহামি বা অনুপ্রেরণামূলক স্বপ্ন : এ ধরনের স্বপ্নে কোনো সিদ্ধান্ত, পথনির্দেশ বা হৃদয়কে জাগ্রত করার বার্তা এসে থাকে, কখনো সরাসরি, কখনো পরোক্ষভাবে। এটি কখনো ব্যক্তিগত হিদায়াত, কখনো সমাজ-সম্পর্কিত। একজন স্বপ্নে দেখলেন, এক দরজা খুলে যাচ্ছে, আর কেউ বলছে : ‘তোমার সময় এসেছে। এর অর্থ হতে পারে আত্মিক পরিবর্তন, দায়িত্ব গ্রহণ বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শুরু হওয়ার ইঙ্গিত। ৪. ইলহামি তাওজিহি : এমন স্বপ্ন যা দ্বারা ব্যক্তি কোনো সৎ কাজের প্রতি অনুপ্রাণিত হন, অথবা কোনো ভুল কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ পান। সাধারণত কোনো ইলহাম বা অভ্যন্তরীণ অনুভবের মাধ্যমে এমন স্বপ্ন দৃশ্যরূপে আসে। ৫. কাশফি বা উন্মোচনমূলক স্বপ্ন : এ ধরনের স্বপ্নে বাস্তবতা বা সত্যের পর্দা আংশিক উন্মোচিত হয়। এটি কখনো কোনো ঘটনার পূর্বাভাস, কখনো অদেখা জগতের দর্শন। যেমন কেউ দেখল, এক অদৃশ্য আগুন পৃথিবীকে ঘিরে আছে, আর কিছু মানুষ আগুনের মধ্যেও নিরাপদ। এটি হতে পারে কোনো আগত বিপদের ইঙ্গিত। এ সেই বিপদে রক্ষা পাওয়ার জন্য যথাযথ আশ্রয় কাজে লাগানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এতে সুরক্ষা অর্জিত হবে, তারও ইশারা আছে। মানুষের আত্মা ইমাজিনাল স্তরে দৃশ্য তৈরি করতে সক্ষম। ঘুমের সময় আত্মা যখন ইন্দ্রিয়তন্ত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, তখন এটি নিজের তাখাইয়ুল বা Imaginative faculty ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে সে ইমাজিনাল বাস্তবতা সৃষ্টি করে। স্বপ্ন দিন শেষে আমাদের আত্মতারই উন্মোচন যা সময়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ অথবা অতীতের সত্তাগত সারাংশের বোধ সৃষ্টি করে। এটি কোনো কল্পনা নয় বরং অস্তিত্বের মধ্যম স্তরে ঘটে যাওয়া একটি বাস্তবিক উপলব্ধি। কিন্তু স্বপ্নকে আমরা শুধুমাত্র মনস্তাত্ত্বিক বা স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছি না, বরং এর মধ্যে নিহিত আছে চেতনার উচ্চতর স্তরেরও প্রকাশ। স্বপ্নকে এক ধরনের প্রতীকী ভাষা (symbolic language) হিসেবেও দেখা যেতে পারে। এই প্রতীকগুলো ব্যক্তিগত মানসিক উপাদানকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। তারা অস্তিত্বের উচ্চতর স্তরের (ontological levels) বার্তা বহন করে এবং অপর জগতের (mundus imaginalis) ইঙ্গিত নিয়ে হাজির হয়। স্বচ্ছতর হৃদয়ের উচ্চতর স্বপ্ন আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি বা মহাজাগতিক সত্যের ছায়া বহন করতে পারে। স্বপ্নের এই যে ঊর্ধ্বগামী ব্যাখ্যা, আধুনিকতা একে জানে না। সে কেবল স্বপ্নকে ক্ষেত্রবিশেষের মানসিক বিশ্লেষণে সীমায়িত রেখেছে।

লেখক : কবি, গবেষক

[email protected]

সূত্র, নয়া দিগন্ত