বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটির প্রতি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী সমর্থন জানিয়ে আসছে। বিশেষ করে ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী জনগণ বিএনপির প্রতি আস্থা রাখে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বিএনপির কিছু নেতার বক্তব্য এবং কার্যকলাপ দলটির আদর্শ এবং মূল নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছে। ফলে বিএনপির জনপ্রিয়তা কমে যাচ্ছে এবং দলটির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
বিভিন্ন দল বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এবং বাম দল থেকে বিএনপিতে যোগ দেওয়া কিছু নেতা এ জন্য দায়ী। এরা আওয়ামী লীগের ভাষায় কথা বলে এবং আওয়ামী বয়ান প্রচার করে বেড়ায়। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ বিএনপির মুখে আওয়ামী লীগের বয়ান এই দেশের মানুষ কিছুতেই গ্রহণ করবে না। বিএনপিকে বিএনপির রাজনীতিই করতে হবে। তা না হলে বিএনপি ধ্বংস হয়ে যাবে।
রিয়্যালিটি মেনে নেওয়াই মঙ্গলরিয়্যালিটি মেনে নেওয়াই মঙ্গল
বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি একাধিকবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি একাধিকবার দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদের বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার নেতৃত্বে বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ সংগ্রাম করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেগম খালেদা জিয়া এবং তার পরিবার রাষ্ট্রীয়ভাবে চরম জুলুম-নির্যাতনের শিকার হন। তাকে সেনানিবাসের বাসভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়, মিথ্যা মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়, দুই ছেলে তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমানকে নির্যাতন করা হয়। পরে আরাফাত রহমান মারা যান এবং তারেক রহমান দীর্ঘদিন থেকেই লন্ডনে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। তিনি অসুস্থ অবস্থায় জেল খেটেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার তাকে যথাযথ চিকিৎসার সুযোগও দেয়নি। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া কখনোই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস করেননি। ফলে তিনি আজ পুরো জাতির অভিভাবক এবং আস্থার ঠিকানায় পরিণত হয়েছেন।
খলিফা হাফতার বিপ্লবী না সিআইএ এজেন্ট?খলিফা হাফতার বিপ্লবী না সিআইএ এজেন্ট?
বিএনপির কিছু নেতা লাগামহীন বক্তব্য দেন, যা বিএনপির মূল আদর্শ, নীতি ও দর্শনের বিরোধী। তারা পতিত আওয়ামী লীগের ভাষায় কথা বলেন, যা এই দেশের সাধারণ মানুষকে আহত করেছে। অথচ আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপির শত শত নেতাকর্মী খুন এবং গুম হয়েছেন। অনেকে বছরের পর বছর জেল খেটেছেন। ডজন ডজন নেতার বিরুদ্ধে কয়েকশ মামলা হয়েছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় নেতা ইলিয়াস আলীসহ অনেকেই গুম হয়ে এখনো নিখোঁজ। তাছাড়া জিয়া পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের কটাক্ষ এবং তুচ্ছ্য-তাচ্ছিল্য ব্যবহার ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং গণতন্ত্র ছিল আওয়ামী লীগের মূলনীতি এবং দর্শন। এই দেশের জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশ বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্রকে সমর্থন করেনি। ফলে রাজনীতিতে একটি আদর্শিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও আস্থা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা বিএনপির মূলনীতি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজন করেন। ফলে বিএনপি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
মূলত আওয়ামী লীগের বিকল্প এবং ভারতবিরোধী শক্তি হিসেবেই বিএনপির জন্ম এবং এ কারণেই বিএনপি ব্যাপক জনসমর্থন পায়। বিএনপি ছাড়াও বাংলাদেশে আরো কিছু দল রয়েছে, যারা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এবং ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে যেখানে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে অধিকতর ঐক্যের প্রয়োজন ছিল, সেখানে বিএনপির কিছু নেতা জামায়াতকে নিয়ে এখন আওয়ামী লীগের ভাষায় কথা বলে। এরা এখন জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের চেয়ে বড় বিএনপি হয়ে গেছে।
চাকসু নির্বাচনে যারা আলোচনায়চাকসু নির্বাচনে যারা আলোচনায়
বিএনপির মুখে আওয়ামী বয়ান বিএনপিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এতে তাদের জনপ্রিয়তা কমে যাবে। একই সঙ্গে পতিত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনে সহযোগিতা করবে। সুতরাং বিএনপিকে এসব কাজ এখনই বন্ধ করতে হবে। তার জন্য বিএনপিতে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। অন্য দল থেকে যোগ দেওয়া হাইব্রিড নেতারা আসলেই কি বিএনপির আদর্শ ধারণ করেন, নাকি বিএনপিকে ব্যবহার করে অন্যদলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে, এর তদন্ত করুন। এরা বিএনপিকে ধ্বংসের জন্য বিএনপিকে ব্যবহার করছে কি না, তা যাচাই করুন। অন্য দল থেকে যোগ দেওয়াদের শুরুতেই পদপদবি দেওয়া বন্ধ করুন।
যারা বিএনপির নীতি আদর্শকে ধারণ করে না, তাদের দল থেকে বাদ দিন। দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করুন এবং তাদের নেতৃত্বে নিয়ে আসুন। সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত নেতাকর্মীদের দল থেকে বহিষ্কার করুন। দলে শৃঙ্খলা এবং চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠা করুন। অভ্যন্তরীণ কোন্দল, গ্রুপিং এবং দলাদলিতে জড়িতদের দল থেকে বহিষ্কার করুন।
সুশৃঙ্খল দল এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ছাড়া রাজনীতিতে টিকে থাকাও যায় না এবং এগিয়েও যাওয়া যায় না। নেতিবাচক রাজনীতি পরিহার করে গঠনমূলক এবং ইতিবাচক রাজনীতি করতে হবে। ছলচাতুরীর রাজনীতি এবং বেফাঁস কথাবার্তা বন্ধ করতে হবে। বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামপন্থি সব—দলকে নিয়ে ইস্পাত কঠিন ঐক্য করতে হবে। বিএনপিকেই এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে, তা না হলে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নেবে।
লেখক : প্রকৌশলী