ধর্মনিরপেক্ষতা হচ্ছে এমন একটি বিশ্বাস, যা ধর্মকে প্রত্যাখ্যান করে, অথবা এই মতবাদ বিশ্বাস করে যে, ধর্ম রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের কোনো অংশ হওয়া উচিত নয়। চার্চকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের একটি উদাহরণ। এটি এমন একটি রাজনৈতিক বা সামাজিক দর্শন, যা সব ধরনের ধর্মীয় বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করে। অতএব ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের অর্থ যদি হয় ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করা, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কোনোটিতেই ধর্মনিরপেক্ষতার কোনো অস্তিত্ব নেই।

পশ্চিমা বিশ্বের বেশ কিছু গণতান্ত্রিক দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা হচ্ছে ধর্মের আবরণে মোড়া রাষ্ট্রের রাজনৈতিক চরিত্রকে ঢাকার একটি খোলস মাত্র। ধর্মকে যখনই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করা হয়, তখনই মানুষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সামনে চলে আসে—ধর্ম ও রাজনীতি উভয়ই ধারাবাহিকভাবে পরস্পরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকেছে ইতিহাসের পুরো সময়জুড়েই। তাহলে ধর্মের মতো একটি শক্তিশালী গতিশীল শক্তি থেকে রাজনীতি আলাদা বা পৃথক থাকে কী করে? মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কে ধর্মের যে দৃষ্টিভঙ্গি বা অবস্থান, তাতে মানবসমাজ ও রাজনীতির বিষয়গুলো নিয়ে ধর্ম অনাগ্রহী বা উদাসীন থাকে কী করে?

মানুষের মনস্তত্ত্ব ও সংস্কৃতির সঙ্গে ধর্মের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। জীবন থেকে দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক অর্থ খুঁজে নেওয়ার জন্য মানুষের অনুসন্ধানের যে ইতিহাস, তা সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্য, চিন্তাভাবনা, ইতিহাসের দর্শন, স্থাপত্য, শিল্প ও সংগীতের অধিকাংশ রসদ সরবরাহ করে থাকে।

ধর্ম আমাদের মূল্যবোধ, আকাঙ্ক্ষা ও জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি, আমাদের অভিজ্ঞতার অর্থ খুঁজে বের করার আমাদের প্রচেষ্টা, আমাদের নৈতিকতা সম্পর্কে আমাদের ভয়, এই পৃথিবীতে কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল তা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্তিত্ব গঠনে নৈতিক মূল্যবোধকে কার্যকর করার আমাদের আকাঙ্ক্ষা, দৈনন্দিন জীবনের জটিল পথে আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা লাভের জন্য আমাদের অনুসন্ধান, আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষের অনুভূতি এবং আমাদের নারী ও পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এবং সবশেষে সৃষ্টির প্রতি আমাদের বিস্ময়ের অনুভূতিকে অন্তর্ভুক্ত করে বা জড়িয়ে রাখে। জীবনে সব মানুষই এসব সমস্যার মুখোমুখি হয়, এমনকি যারা নিজেদের ধার্মিক বলে মনে করে না, তারাও এসবের ব্যাপারে নিজেদের কাছেই কিছু উত্তর দিতে বাধ্য হয়।

বিপরীত দিকে, আমেরিকানদের মধ্যে ধর্মের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নিয়ে বোধগম্য একটি দ্বিধাবোধ রয়েছে। তবে আমেরিকান ধর্মনিরপেক্ষ এই ঐতিহ্য জীবনে ধর্মের ভূমিকার বিষয়ে দেশটির নাগরিকদের উদাসীনতার কারণে তৈরি হয়নি; বরং এটি ধর্মের প্রতি আবেগপ্রবণতা এবং এর বৈচিত্র্যময় রূপ সংরক্ষণের উদ্বেগ থেকে উদ্ভূত হয়েছিল, যা এর অনুসারীদের প্রথম দিকে আমেরিকা মহাদেশে নিয়ে এসেছিল; তাদের লক্ষ্য ছিল তাদের বিশ্বাস এবং এর প্রকাশকে সেই রাষ্ট্রের শক্তি থেকে রক্ষা করা, যারা দেশে ফিরে ধর্মকে নিপীড়ন করেছিল।

বর্তমানে আমেরিকা শিল্পোন্নত বিশ্বের সবচেয়ে ধর্মীয় দেশ, যদিও ধর্ম ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য এ দুটিকে তারা আলাদা রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ ব্যাপারে তারা যথাসম্ভব চেষ্টা করছে। কিন্তু তার পরও আমেরিকান রাজনীতির সবচেয়ে আবেগপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে সেগুলোই, যা ধর্মীয় উদ্বেগগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে, এমনকি সেগুলো যদি স্পষ্টভাবে ধর্মীয় পরিভাষায় প্রকাশ নাও করা হয়, তবুও তা আমলে নেয়। আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতা পিতাদের সবাই মনে করতেন, ন্যায়সংগত ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজের জন্য বাইবেল অপরিহার্য। জর্জ ওয়াশিংটনের বিদায়ী ভাষণে চমৎকারভাবে এমন সব স্বভাব ও অভ্যাসের সংক্ষিপ্তসার করা হয়েছে, যা দেশকে এমন একটি রাজনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে, যেখানে ধর্ম ও নৈতিকতার সমর্থন অপরিহার্য। এমনকি জেফারসন ও ফ্র্যাঙ্কলিনও বাইবেলের প্রিজমের মাধ্যমে এই নীতিকে উপলব্ধি করেছিলেন। ইতিহাসবিদ জন ফে উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যে একটি খ্রিষ্টান জাতি—এ ধারণাটি সবসময় আমেরিকান জাতিসত্তার পরিচয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।

আমেরিকানরা এতটাই ধার্মিক যে তারা তাদের ‘ফসল উৎসব’কে ‘থ্যাঙ্কসগিভিং’ নাম দিয়ে এটাকে খ্রিষ্টীয় মূল্যবোধে পরিপূর্ণ একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করেছে। ‘ফসল উৎসব’ থেকেই এর উৎপত্তি। জর্জ ওয়াশিংটন কংগ্রেসকে অনুরোধ জানানোর পর ১৭৮৯ সাল থেকে ‘থ্যাঙ্কসগিভিং’ জাতীয়ভাবে ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ১৮৬৩ সাল থেকে প্রতি বছর এটি ফেডারেল বা কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত ছুটির দিন হিসেবে উদযাপন করা হয়।

আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ‘স্বর্গে বসবাসকারী আমাদের পরম দয়ালু পিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা’ জানাতে এই জাতীয় দিবস ঘোষণা করেছিলেন, যেটি প্রতি বছর নভেম্বরের শেষ বৃহস্পতিবার উদযাপন করা হয়। বর্তমানে বড়দিন ও নববর্ষের সঙ্গে ‘থ্যাঙ্কসগিভিং’ যুক্তরাষ্ট্রে বৃহত্তর শরৎ/শীতকালীন ছুটির মৌসুমের একটি অংশ।

যুক্তরাষ্ট্রে ডলার বিলের স্বাক্ষরে লেখা আছে—‘ঈশ্বরে আমরা বিশ্বাস করি,’ যা খ্রিষ্টীয় দেবতার প্রতি বিশ্বাসের প্রতিফলন। ২০০৭ সালে প্রকাশিত একটি গ্যালপ জরিপে দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট পদে একজন নাস্তিককে ভোট দিতে রাজি নন। গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মীয় হিসেবে বিবেচিত প্রার্থীদের বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে করা হয়।

অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যে রানি বা রাজা ইংল্যান্ডের চার্চেরও প্রধান। এমনকি ইউনিয়ন জ্যাক বা যুক্তরাজ্যের জাতীয় পতাকাও যাজকদের প্রতিনিধিত্ব করে। যেমন, ইংল্যান্ডের জন্য লাল ক্রসসহ সেন্ট জর্জ, আয়ারল্যান্ডের জন্য তির্যক সাদা ক্রসসহ সেন্ট প্যাট্রিক এবং স্কটল্যান্ডের জন্য তির্যক লাল ক্রসসহ সেন্ট অ্যান্ড্রু। তাই যুক্তরাজ্যের জাতীয় পতাকার নকশাও খ্রিষ্টধর্মে মিশে আছে।

এটা সত্য, বর্তমানে যুক্তরাজ্যের সমাজ আগের চেয়ে কিছুটা বেশি ধর্মনিরপেক্ষ, কিন্তু তাই বলে এটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র নয়। রাজা (রাষ্ট্রপ্রধান) খ্রিষ্টধর্মকে সমুন্নত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। চার্চ অব ইংল্যান্ডের নেতারা সংসদে আইন প্রণয়নের জন্য ভোট দিতে পারেন। বাছাই ও নিয়োগের ক্ষেত্রে ধর্মীয় স্কুলগুলোকে বৈষম্য করার অনুমতি দেওয়া হয়।

ধর্ম ও রাজনীতির এই মিলন ভারতীয় রাষ্ট্রব্যবস্থায়ও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। ভারতের সামাজিক-ধর্মীয় পরিবেশ ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি পুরোপুরিই প্রতিকূল বা বৈরী। কিন্তু তারপরও প্রাথমিকভাবে দেশটির জাতীয়তাবাদী নেতারা ভারতকে একটি আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এরপরও হিন্দুধর্মের প্রতি তাদের একটা টান সবসময়ই ছিল।

বর্তমানে ভারতীয় রাজনীতিতে উগ্র হিন্দুত্ববাদ শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে গেছে এবং ভারত কখনোই ধর্মনিরপেক্ষতাকে তাদের বৈচিত্র্যময় জাতিসত্তার ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। এটা কেবল তাদের ‘চেষ্টার’ পর্যায়েই রয়ে গেছে। এর কারণ হচ্ছে, ভারত মূলত একটি হিন্দু রাষ্ট্র। কাগজে-কলমে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ভারতের হিন্দুত্ববাদী আদর্শ বর্তমানে এতটাই অপ্রতিরোধ্য যে, এটি মন্তব্য করার যোগ্য কোনো বিষয় বলে মনে হয় না। ভারতের প্রতিটি পদক্ষেপে ও সব ক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদের স্পর্শ অনুভব করা যায়।

সম্রাট অশোক হলেন ভারতের জাতীয় গর্বের প্রতীক ও তাদের অনুপ্রেরণা এবং ক্ষমতার প্রয়োজনীয়তার উৎস। স্বাধীনতার সময় কংগ্রেস দল নতুন ডিজাইন করা জাতীয় পতাকায় চরকাকে ‘চক্র’ দিয়ে প্রতিস্থাপন করে, যেটি খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর সম্রাট অশোকের ‘চক্র’ বা চাকা থেকে নেওয়া হয়েছে। অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধের পরে হিন্দুত্ব ছেড়ে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন।

‘চক্র’ দুটি সিংহ দ্বারা বেষ্টিত, যা স্তম্ভের উপরে অবস্থিত। এটি ভারতের একটি জাতীয় প্রতীকও। পতাকার গেরুয়া রঙ হিন্দুধর্মেরও প্রতীক। ভারতের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠই হিন্দু, তাই হিন্দুধর্মে ভারতীয় হিসেবে গর্ব করায় কোনো ভুল নেই। ভারতীয় সমাজের মূল সুর হিসেবে হিন্দু নীতিমালার আবির্ভাবও অনিবার্য।

বিশ্বের প্রধান ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশগুলোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ধর্মীয় ভাবধারা বজায় রাখা হচ্ছে। বিশ্বের সব উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবাক্য ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে অথবা ধর্মগ্রন্থের আয়াতের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। যদি কখনো এর বিষয়বস্তু ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, তবে তারা তা সাধারণত উপেক্ষা করে থাকে। এ ব্যাপারে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। যেমন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবাক্য হচ্ছে—‘ডোমিনাস ইলুমিনাতিও মেয়া’, যা হিব্রু বাইবেল থেকে বেছে নেওয়া একটি পদ, যার অর্থ ‘প্রভু আমার আলো’। এই শব্দগুলো গীতসংহিতা-২৭-এর সূচনা বাক্য।

কেবল অক্সফোর্ডই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় নয়, যারা তাদের নীতিবাক্য হিসেবে গীতসংহিতা ব্যবহার করে। ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবাক্য গীতসংহিতা (১২১:২)—‘শুইলে টোগাম সুয়াস’ থেকে এসেছে, যার অর্থ, ‘আমি আমার চোখ তুলে দেখব।’ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইন লুমিন টিউ ভিডেবির্নাস লুমেন’ ব্যবহার করে, যার অর্থ, ‘তোমার আলোতে আমরা আলো দেখতে পাই।’ (গীতসংহিতা ৩৬:৯)।

অ্যাবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবাক্য হলো ‘ইনিটিয়াম স্যাপিয়েন্টাইন টিমোর ডোমিনি’, যার অর্থ, ‘প্রভুর ভয় জ্ঞানের সূচনা।’ (গীতসংহিতা ৩:১০)। ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইন ডিও স্পেরামাস’ ব্যবহার করে, যার অর্থ ‘ঈশ্বরে আমরা আশা করি।’ (গীতসংহিতা ২৭:১৪)। আমেরিকান মুদ্রায় ‘ঈশ্বরে আমরা বিশ্বাস করি’ থেকে এর উৎপত্তি বলে মনে হয়।

দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদি ধর্মগ্রন্থ ‘পেন্টাটিউক’ থেকে পদ ব্যবহার করে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় লাতিন ভাষায় ‘ফিয়াট লাক্স’ ব্যবহার করে, যার অর্থ, ‘আলো হোক।’ (আদিপুস্তক ১:৩)। ক্যানসাস বিশ্ববিদ্যালয় ‘ভিডেবো ভিশনেম হ্যাঙ্ক ম্যাগনাম কোয়ার নন কমবুরাতুর রুবাস’ ব্যবহার করে, যার অর্থ, ‘আমি এই মহান দৃশ্যটি দেখব, ঝোপ কীভাবে পুড়বে না।’ (যাত্রাপুস্তক ৩:৩)। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও এই নীতিবাক্য ব্যবহার করে।

নর্থ ক্যারোলিনার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় মেথোডিস্ট চার্চের সঙ্গে একটি সহায়ক সম্পর্ক বজায় রাখে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবাক্য হিসেবে ‘এরোডিটো এট রিলিজিও’ ব্যবহার করে, যার অর্থ, ‘পাণ্ডিত্য ও ধর্ম।’ ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় হিব্রু শব্দ ‘উরিম এবং থুম্মিম’ থেকে ‘লাক্স এট ভেরিটাস’ ব্যবহার করে। হিব্রু শব্দের সঙ্গে ইহুদি ধর্মের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবাক্য হলো ‘দেই সাব নুমিন ভিগেট’, যার অর্থ ‘ঈশ্বরের সুরক্ষার অধীনে।’ আরো অনেক পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ আছে, যাদের নীতিবাক্য ইহুদি-খ্রিষ্টান ধর্মের বই থেকে নেওয়া হয়েছে।

সবশেষে, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোটি দেখা যাক। এই লোগোতে একটি হাতি, পদ্ম ফুল ও খোলা বই দেখানো হয়েছে। হাতিটি হিন্দু দেবতা ‘গণেশ’-এর প্রতীক, যা বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞার ইঙ্গিত দেয়। হিন্দুধর্মের গণপত্য ঐতিহ্যে গণেশ হলেন সর্বোচ্চ দেবতা।

যদি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নীতিবাক্য এবং লোগো তাদের ধর্ম থেকে নেওয়া হয়, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একসময়কার প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্য—‘রাব্বি জিদনি ইলমা’, যা কোরআন থেকে নেওয়া হয়েছে এবং যার অর্থ ‘হে প্রভু আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন’ বাক্যটি অপসারণের যুক্তি কী?

বাংলাদেশের শিক্ষাবিদ এবং ‘টক-শো’ পণ্ডিতদের কেউ কি বলতে পারেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবাক্য হিসেবে ‘রাব্বি জিদনি ইলমা’ সন্নিবেশ করা কীভাবে রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির প্রতি অবমাননাকর বা বৈরী হয়, যখন ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমা দেশগুলোর অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের ধর্মগ্রন্থ থেকে আয়াত ব্যবহার করে?

বিশ্বের সব বড় বড় গণতান্ত্রিক দেশ যদি ধর্মনিরপেক্ষতা অক্ষুণ্ণ রেখে নিজ নিজ ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ও অন্যান্য কার্যক্রমে ব্যবহার করতে পারে, তাহলে ৯০ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যার বাংলাদেশ কেন ইসলামি নীতিমালা ও চরিত্র অনুসরণ করতে পারবে না?

লেখক : গবেষক

সূত্র, আমার দেশ