মহান আল্লাহর অলৌকিকত্ব অনুভব করতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি প্রজ্ঞাবান মানুষের জন্য বিরাট দৃষ্টান্ত হতে পারে। আল কুরআনের একটি আয়াত উদ্ধৃত করে শেষ করছি :‘কেবল তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের উপর জুলুম করেছে এবং জমিনে অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করে বেড়িয়েছে। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব।’ (সূরাহ আল কাসাস-৪২) এক. এ টি এম আজহারুল ইসলাম অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন। ১৪টি বছর কারাগারের জিন্দানখানায় এবং সাতটি বছর কনডেম সেলে মৃত্যুর প্রহর গুনেছেন। তিনি সম্ভবত জামায়াতের একমাত্র শীর্ষ নেতা যাকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে বারবার আদালতে হাজির করা হয়েছিল। অবশেষে তিনি ফিরে এলেন স্বাভাবিক জীবনে, স্বাধীন-মুক্ত জীবনে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক আদালত জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে আপিল রিভিউয়ের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস দিয়েছেন এটি শুধু বিচার জগতের নয়, রাজনৈতিক ইতিহাসেও একটি বিস্ময়কর ঘটনা। যে শাহবাগ এলাকা মাত্র কয়েক বছর আগে জামায়াত নেতাদের ফাঁসির দাবিতে ছিল উত্তাল, সেই শাহবাগে আজহারুল ইসলামকে কারাগার থেকে মুক্তির পর সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। যারা একদিন শাহবাগের পাশে যেতেও সাহস পাননি, তারা এখন সেখানে আনন্দ মিছিল করছেন; আর যাদের হুঙ্কার ও দাম্ভিকতার পদভারে শাহবাগ ফাঁসির রায় দেয়াকে ত্বরান্বিত করেছিল তারা আজ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মহান আল্লাহর কুদরত মানুষের পক্ষে হৃদয়ঙ্গম করা সত্যিই সম্ভব নয়। দুই. মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আদালত ও সংশ্লিষ্ট আইনগুলোও ছিল বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধের বিচার হয়েছে ২০১০ সালে প্রণীত আইন অনুযায়ী। যে অপরাধ সংঘটনকালে আইনটির অস্তিত্ব ছিল না, সেরূপ আইনের আওতায় বিচার করা ছিল মানবতাবিরোধী। তা ছাড়া দেশে বিদ্যমান পেনাল কোড এবং সাক্ষ্য আইন এ মামলায় অকার্যকর বলে গণ্য করা হয়। বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক আদালত ও তার আইন-কানুন যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রক্ষা করেনি সে মর্মে দেশ-বিদেশের বহু আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞ বহুবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও তা কর্ণপাত করা হয়নি। সাক্ষীদের গুম করা এবং তাদের জোরপূর্বক সাক্ষ্য দেয়ানোর বহু প্রমাণ রয়েছে। বিচারকদের ফোনালাপ তথা স্কাইপি কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়ে ট্রাইব্যুনালের নাটকটি স্পষ্ট হয়ে যায়। এটি কি ভাবা যায়, দেশের আদালতের রায় বিদেশে বসে অন্য কেউ লিখে দিচ্ছেন। আবার দেশের বিচারপতি লাথি-চড় খেয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান। প্রধান বিচারপতির অফিসের দরজায় লাথি মারা হয়। সব কিছু বাংলাদেশ তো বটেই, বিশ্বেও একটি বিরল ঘটনা। তিন. বাস্তবিকপক্ষে, সাম্প্রতিক বাংলাদেশে এমন সব ঘটনা ঘটে গেছে যা রীতিমতো বিরল ও বিস্ময়কর। ২০০৯ থেকে ২০২৪-এর ৪ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনা ও তার সরকার স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী স্টাইলে দেশ শাসন করেছে তাও ছিল বিরল ঘটনা। এর আগে বাংলাদেশের কোনো শাসককে ‘ফ্যাসিবাদী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়নি। ব্যাপারটি এমন নয় যে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলো শুধু তার বিরোধিতায় তা বলেছে। প্রকৃতপক্ষে ফ্যাসিবাদের সব বৈশিষ্ট্য তার চরিত্রে বিদ্যমান ছিল। তার ফ্যাসিবাদী শাসনের মাত্রা অনুভব করতে গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা ও আয়নাঘর নামক নির্যাতনের বন্দিশালাই যথেষ্ট। গণতন্ত্রের যে প্রত্যাশা নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা হয়েছিল সেই মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলটির হাতে বারবার গণতন্ত্র ও মানবতা ভূলুণ্ঠিত হওয়া বিস্ময়কর বৈকি। মামলা, হামলা ও প্রতিহিংসার এমন কোনো উপায় অবশিষ্ট ছিল না যা নির্মমভাবে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়নি। লাখ লাখ মামলার আসামি হয়ে বিরোধী দলের কয়েক কোটি নেতাকর্মী বাড়িঘর ছেড়ে বন-বাদাড়ে ও বিদেশে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। চার. অহঙ্কারী শেখ হাসিনা ও তার পদলেহী সাধারণ সম্পাদক দম্ভের সাথে বলেছিলেন, তারা দেশ ছেড়ে পালাবেন না কিন্তু নিয়তির কী নির্মম পরিহাস তারা ঝড়ের গতিতে পালিয়েছেন। তাও আবার তাদের প্রভুরাষ্ট্র ভারতে। এখন তারা তাদের চেহারা পর্যন্ত দেখাতে সাহস পান না। যে শেখ হাসিনা জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে দীর্ঘকাল জেলে পুরে রেখেছিলেন, তাকে পদ্মা নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন, এমনকি বিদেশে চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে দেননি, সেই বেগম জিয়া ঠিকই মুক্ত হয়ে বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছেন। বেগম জিয়া বলেছিলেন, বিদেশে তার কোনো ঠিকানা নেই, বাংলাদেশই তার ঠিকানা। তিনি কথা রেখেছেন এবং মহান আল্লাহ তাকে তার উপর জুলুমকারীর নির্মম পতন দেখতে পেয়েছেন। পক্ষান্তরে, শেখ হাসিনা ও তার দলের চেলা-চামুণ্ডারা ঠিকই বিদেশের মাটিতে পালিয়ে আছে। পাঁচ. ইতিহাসে অনেক স্বৈরাচারী শাসকের পতনের বিচিত্র ঘটনা রয়েছে। কিন্তু একটি শাসকগোষ্ঠীর প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রিসভার সব সদস্য, পার্লামেন্টের প্রায় সব সদস্য এমনকি জাতীয় মসজিদের খতিব পর্যন্ত পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ইতিহাসে একেবারে বিরল। ছয়. ৫ আগস্ট ২০২৪ সারা দেশে কারফিউ জারি, রাজপথে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো প্রতিবাদকারীর দেখা নেই। একটি থমথমে পরিস্থিতি। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগও বন্ধ। সব মানুষ প্রচণ্ড উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগের মধ্যে টেলিভিশনের পর্দায় তাকিয়ে আছে যদিও এটি জানা যে, টিভিতে সরকারের ইচ্ছার বাইরে কিছু প্রচার করতে দেবে না। টিভিতে শুধু শূন্য রাজপথে সেনাবহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের কঠোর অবস্থান দেখানো হচ্ছে। হঠাৎ করে দেখা গেল, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীর দিক থেকে লাখো মানুষের মিছিল ধেয়ে আসছে রাজধানীর কেন্দ্রবিন্দুর দিকে। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে কোথা থেকে এত মানুষ সংগঠিত হলেন এবং নির্ভয়ে কারফিউ ভঙ্গ করে রাজপথ কাঁপিয়ে তুললেন তা ছিল এককথায় অলৌকিক। অনেকে বিশ্বাস করেন, মহান আল্লাহর গায়েবি মদদে এমনটি ঘটেছে। সাত. আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে নির্মমতার পরিচয় দিয়েছে তাও ছিল এক কথায় বিরল। দেশের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে পুলিশ এরূপ আচরণ করতে পারে তা কারো ভাবনায় ছিল না। পুলিশ রীতিমতো যুদ্ধের ভঙ্গিমায় প্রতিবাদী জনতার উপর গুলি চালিয়েছে। পুলিশের কাছে এত মারণাস্ত্র থাকার কথা নয়। কিন্তু শেখ হাসিনা পুলিশকে বিরল ক্ষমতা দিয়েছিল। একজন পুলিশ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ভিডিও দেখাচ্ছিল যে, একটি গুলি করলে শুধু একটি লোক মারা যায়, বাকিরা সরে না। এটিও ছিল আরেক বিস্ময়। হেলিকপ্টার থেকে সাধারণ মানুষের উপর গুলি করার ঘটনাও দেশে প্রথম। বাংলাদেশের প্রতিবাদী জনতা এতটা বিক্ষুব্ধ ছিলেন যে, তারা জীবন বাজি রেখে হাসিনাকে হটাতে মাঠে নেমে এসেছিলেন। ছাত্র, কিশোর, তরুণ-তরুণী, গৃহিণী, রিকশাওয়ালা, শ্রমিক থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ জীবনপণ লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। মাত্র দু’-তিন দিনের মধ্যে দেড় হাজার লোককে হত্যা এবং ৩০ হাজার লোককে আহত করার ঘটনা ছিল ব্যতিক্রমী। আট. অবশেষে উপায়ান্তর না দেখে মাত্র ৪৫ মিনিটের প্রস্তুতি নিয়ে শেখ হাসিনা পালাতে বাধ্য হন। লাখো জনতা যখন গণভবনের দিকে বীরদর্পে এগিয়ে আসছিলেন তখন হাসিনার হৃদয়ে কম্পন শুরু হয়। তিনি ভেবেছিলেন তার সাম্রাজ্যে কেউ তাকে আঘাত হানতে পারবে না। দেশের রাষ্ট্রপতি, আদালত, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবÑ সব তার সাজানো ছিল। নিজের জন্য যে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন তারা যেন নিমিষে ফুৎকারে মিলিয়ে যায়। আশা ছিল হয়তো ভারতীয় বাহিনী তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসবে কিন্তু তারাও আসেনি। অগত্যা দুপুরের রান্না করা খাবার না খেয়ে হেলিকপ্টারে উড়াল দিতে হয়। বাস্তিল দুর্গের মতো জনতা গণভবন আক্রমণ করে এর সুদৃঢ় দেয়ালগুলো ভেঙে তছনছ করে দেয়। এসবই ছিল ইতিহাসের অনন্য নজির। নয়. শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আক্রোশ ছিল নোবেলবিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি। তাকে তিনি শুরু থেকে সহ্য করতে পারতেন না। কথিত আছে, হাসিনা নিজে নোবেল পেতে বহু টাকা ব্যয়ে লবি করেও পুরস্কারটি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। বিপরীতে প্রফেসর ইউনূসের নোবেল প্রাপ্তিকে তিনি মেনে নিতে পারেননি। কারণ পরশ্রীকাতরতা। প্রফেসর ইউনূসের বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা ও ভাবমর্যাদা হাসিনার অন্তর্জালা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। তিনি এটি শুধু মনে মনে রাখেননি, তাকে বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রান করা হয় এবং ৮৪ বছরের এই বৃদ্ধকে আদালত ভবনের ছয়তলায় লিফট ছাড়া সিঁড়ি বাইতে বাধ্য করা হয়। একবার তাকে পদ্মা সেতুর পানিতে টুপ করে চুবিয়ে আনার খায়েশও ব্যক্ত করেছিলেন হাসিনা। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, সেই প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসই এখন ক্ষমতায় বসে আছেন এবং তার ভয়ে হাসিনা ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা এখন লুকিয়ে আছে বা কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে অশ্রুপাত করছে। দশ. ভারতের ইঙ্গিতে শেখ হাসিনা সরকার ইসলামপন্থীদের নির্মূল করতে তথাকথিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ফাঁসি দিয়েছিল, সেই আদালতে এখন শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটিও ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। হয়তো মানুষ একদিন দেখতে পাবে যে, একই আদালতে তাদের বিরুদ্ধে একইরকম রায় হচ্ছে। এগার. আলেমদের উত্থান ও তাদের প্রতিবাদকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে যে নির্যাতন ও নির্মম হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল তা ইতিহাসে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের মতো কলঙ্কিত হয়ে থাকবে। সেদিনের বর্বর হত্যাকাণ্ডের যারা হুকুমদাতা ও ঘাতক তারা আজ কোথায়? পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর, মনিরুল, আসাদুজ্জামানদের আস্ফালন আর আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না। পুলিশের তিনজন সাবেক আইজিপি এখন কারাগারে বসে নিজ নিজ কর্মের জন্য আফসোস করছেন। দরবেশ বলে খ্যাত ধনকুবের টাকার গরমেও কিছু করতে পারছেন না। মেনন আর ইনুর অহঙ্কারপূর্ণ বয়ান আর শোনা যাচ্ছে না। বারো. মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কারাগারে যাওয়ার আগে বেশ কিছু আবেগপূর্ণ কথা বলেছিলেন, যার প্রতিটি কথা যেন সত্য হয়ে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। তিনি যা বলেছিলেন তার মূল কথা ছিলÑ যারা তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে অপরাধী বানাতে চাইছে আল্লাহ তাদের অপমানিত করবেন। ঠিক তাই ঘটেছে। তেরো. ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি একটি ছোট, অথচ ঐতিহাসিক স্থাপনা। এর সাথে শেখ মুজিব ও তার দলের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা জড়িয়ে আছে। ১৯৬৯-৭০ সালের সংগ্রামী দিনগুলোতে শেখ মুজিব ছিলেন রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। তাকে ঘিরে রাজনীতির অনেক ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ তার নামে পরিচালিত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের মধ্য দিয়ে তিনি স্বৈরশাসকে পরিণত হয়েছিলেন। তাকে তার দলের লোকেরা মৃত্যুঞ্জয়ী করে রাখার খোয়াব দেখেছিল। কিন্তু ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তার পতন ঘটে। তিনি নায়ক থেকে খলনায়কে পরিণত হন। শেখ হাসিনা তার পিতাকে একমাত্র জাতীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরতে যারপরনাই চেষ্টা করেছিলেন। সারা দেশে হাজার হাজার ভাস্কর্য/মূর্তি ও ম্যুরাল বানিয়ে অমর করে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন। কংক্রিটের অবকাঠামোর মধ্যে তাকে চিরস্থায়ীভাবে জাগরূক রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের বজ্রপাতে তা খান খান হয়ে ভেঙে পড়ে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটিও তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে। প্রচণ্ড ঝড়ের গতিতে যা ঘটে যায় তাকে ঠেকানোর মতো কোনো শক্তি সেদিন বাংলাদেশের মাটিতে কেউ দেখতে পায়নি। শেখ হাসিনা তার মানসম্মান হারানোর পাশাপাশি পিতার মান-ইজ্জতও ভূলুণ্ঠিত করার পথ তৈরি করেছিলেন। চৌদ্দ. শেখ হাসিনা তার বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরকে প্রধান শত্রুজ্ঞান করতেন। দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর তাদের উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছেন। তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন নাম দিয়ে ৩ আগস্ট নিষিদ্ধ করেছিলেন। ইতিহাসের কী মজার খেলা যে, মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হয়ে গেল। পনেরো. শেখ হাসিনার শাসনামলে ব্যাংক লুটপাট ও বিদেশে অর্থপাচারের যে ঘটনা ঘটেছিল তাও এককথায় ইতিহাসের বিরল ঘটনা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ প্রায় এক ডজন ব্যাংকের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে অবলীলায় পাচার হয়ে গেল। সরকার যেন চোখ বুজে সব সহ্য করল। মহান আল্লাহর অলৌকিকত্ব অনুভব করতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি প্রজ্ঞাবান মানুষের জন্য বিরাট দৃষ্টান্ত হতে পারে। আল কুরআনের একটি আয়াত উদ্ধৃত করে শেষ করছি : ‘কেবল তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের উপর জুলুম করেছে এবং জমিনে অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করে বেড়িয়েছে। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব।’ (সূরাহ আল কাসাস-৪২)
লেখক : গবেষক ও সাবেক সচিব