যেহেতু আমাদের দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ তাই দেশের অধিকাংশ পরিবারে ইসলামী বিধানের আলোকে অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে সমাজে কোনো ঘাটতি বা অভিযোগ থাকবে না। সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, সত্যিকার অর্থে নারীদের ভাগ্যোন্নয়নের ইচ্ছা থাকলে সব ধর্মের অভিজ্ঞ জ্ঞানী ব্যক্তি এবং সমাজের আস্তিক শিক্ষিত মহিলা ও পুরুষদের নিয়ে সংস্কার কাজ করুন
বাংলাদেশে প্রায় ১৮ কোটি মানুষের বাস। তাদের মধ্যে প্রায় ৯২ শতাংশ এক আল্লাহতে বিশ্বাসী। মুসলমান হোক বা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সবাই তাদের প্রভুকে বিশ্বাস করেন। বিশ্বাসের দিক থেকে পার্থক্য থাকলেও অধিকাংশই আস্তিক। তাই আমাদের যেকোনো কমিশনকে বিশ্বাসী লোকদের সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে।
ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের বিভিন্ন বিভাগের সংস্কারে বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে বিভিন্ন শ্রেণীর অভিজ্ঞ ও বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন লোক সমন্বয়ে। কমিশনগুলো অভিজ্ঞতার আলোকে সুচিন্তিত সংস্কারের প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের বিষয়বস্তুর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেশের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের জনশক্তির প্রায় অর্ধেক নারী। তাই নারীদের উন্নয়ন-অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে দেশের সার্বিক উন্নয়ন। নারী সংস্কার কমিশনের সব সদস্যের পরিচয় আমাদের জানা নেই। তবে তারা যে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না, তার প্রমাণ তাদের কিছু প্রশ্নবিদ্ধ প্রস্তাব।
নারী সংস্কার কমিশনের একপেশে প্রস্তাবের বাস্তবায়ন এ দেশে বাস্তবতাবিবর্জিত বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। যারা এসব প্রস্তাব লিপিবদ্ধ করেছেন, তাদের ঘরের অবস্থা আমাদের জানা নেই। আমরা আমাদের ঘরের অবস্থা বলতে পারব। ব্যক্তিগত জীবনে আমি গত ৭৩ বছরের জীবনে শিশুকাল, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে কর্মজীবন ৪৫ বছর এবং বিবাহিত জীবন ৪৩ বছর পার করলাম। কোথাও আমাদের বৈষম্যের শিকার হতে হয়নি। বঙ্গভবন, গণভবন থেকে শুরু করে কাবাঘর, ভ্যাটিকান, ইউরোপ, আমেরিকার প্রাচ্যের দেশগুলোয় সফরের সুযোগ হয়েছে। ভ্যাটিকানের প্রবেশ পথে ছোট পোশাক পরিহিতা মেয়েদের প্রবেশ পথে রক্ষিত সাদা অ্যাপ্রোন পরে প্রবেশ করতে হয়। অন্যান্য দেশেও যার যার ধর্ম-মতের পোশাক পরে তারা চলাফেরা করেন। সব পরিবেশ থেকে শিক্ষা নেয়ার সুযোগ হয়েছে অনেকের। তাদের কাছে ইসলামী জীবনবিধান মানবজাতির জন্য বাস্তব হিসেবে মনে হয়েছে। কয়েক দিন আগে নারী সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে ঢাকায় যারা মিছিল করেছে, তারা কি এ দেশের সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন? তাদের কিছু প্ল্যাকার্ডের ভাষা সর্বজনীন নয়। আমার শরীর আমার স্বাধীনতা! তাহলে কি পোশাকবিহীন ঘুরতে হবে? বেশ্যাবৃত্তির হিস্যা বুঝে নিতে হবে? তাহলে কি নিজের সন্তানকে বেশ্যাখানায় প্রেরণ করতে হবে বা নিজের শরীর স্বামী ছাড়া অন্য পুরুষের ভোগের বস্তু বানাতে হবে? বাংলাদেশের কোনো ধর্মের বা বর্ণের সভ্য মানুষ এসব কথা ও কাজ মানবেন? নিশ্চয় আমাদের সমাজে এসব পরিত্যাজ্য ও প্রত্যাখ্যাত।
নারী কমিশন বলেছে, পুরুষ নারীর সমান অধিকার। কোনো নারী যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন তাহলে তিনি কি তার জন্মদাতা মা-বাবার ভরণপোষণ করেন? নাকি তার ভাই ভরণপোষণ করেন? নারী স্বামীর সম্পত্তিতে ভাগ পাবেন, আবার মা-বাবার সম্পত্তির ভাগ পাবেন। এমনকি সন্তানের সম্পত্তিরও ভাগ পাবেন। নারীদের অসুবিধা কোথায়? যেহেতু ইসলামের অনুসারী নন, তাই আপনার মনে জ্বালা। মহান আল্লাহ নারীকে পুরুষের চেয়ে বেশি মর্যাদা দিয়েছেন। আল-কুরআনের ১১৪ সূরার মধ্যে একটি সূরার নামকরণ হয়েছে নিসা যার অর্থ নারী। তাই এ দিক-সে দিক চিন্তা না করে হয় আস্তিক হোন, না হয় নাস্তিক থাকেন কোনো চিন্তা নেই। তবে বিদেশী অর্থায়নে এনজিও পরিচালনা করে এ দেশের মানুষদের বিপথে ডাকবেন না।
নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব প্রকাশ হওয়ার পরপর দেশের সচেতন মানুষ ফুঁসে উঠেছেন। মিডিয়ায় টকশোতে নারী-পুরুষ সবাই একে অবাস্তব, কয়েকটি প্রস্তাব অসভ্য বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাই আপনারা যারা নারী সংস্কার কমিশনের সদস্য আছেন, তারা স্বেচ্ছায় এ প্রস্তাবগুলো প্রত্যাহার করে নিন, না হলে আইনিভাবে এবং জনগণের প্রত্যাশার আলোকে সরকার বাধ্য হবে এ প্রতিবেদন বাতিল ঘোষণা করতে।
নারী কমিশনকে আমরা বলতে চাই, পতিতার স্বীকৃতি না চেয়ে তাদের সমাজে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিন। কারণ কোনো নারী বা মেয়ে স্বেচ্ছায় পতিতালয়ে যান না। নানা চক্রান্তে পড়ে তারা সমাজ ঘৃণিত জায়গায় যেতে বাধ্য হন। সমাজও তাদের গুরুত্ব দেয় না। তারা যে অসহায় হয়ে পতিতালয়ে অমানবিক জীবন পার করছেন আমাদের সরকার, সমাজপতি ও নারী সংগঠনগুলোকে দায়িত্ব পালন করতে হবে তাদের পুনর্বাসনে। পতিতালয়ে নারীর সংখ্যা খুব বেশি নয়। আমরা ইচ্ছা করলে সহজে তাদের পুনর্বাসন করতে পারি। এটি করতে পারলে দেশের জন্য বড় কাজ হবে। বেহায়াপনা, নগ্নতা কোনো জাতিকে সামনে নিয়ে যেতে পারে না। যদি তাই হতো তা হলে পশ্চিমা দুনিয়ায় পরিবারপ্রথা ভেঙে পড়ত না। পরিবার হলো সমাজ ও রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভ। পরিবার যদি সঠিকভাবে গঠন করা যায়, তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে কোনো বাধা থাকে না। তাহলে বর্তমানে এবং পরবর্তী প্রজন্মের সংসারেও অধিকারের কোনো ঘাটতি থাকবে না।
যেহেতু আমাদের দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ তাই দেশের অধিকাংশ পরিবারে ইসলামী বিধানের আলোকে অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে সমাজে কোনো ঘাটতি বা অভিযোগ থাকবে না। সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, সত্যিকার অর্থে নারীদের ভাগ্যোন্নয়নের ইচ্ছা থাকলে সব ধর্মের অভিজ্ঞ জ্ঞানী ব্যক্তি এবং সমাজের আস্তিক শিক্ষিত মহিলা ও পুরুষদের নিয়ে সংস্কার কাজ করুন।
ইতোমধ্যে দেশের আলেম সমাজ এবং জামায়াতে ইসলামীসহ রাজনৈতিক দল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রীসহ সমাজের অনেকে এ কমিশনের কাজ বাতিলে সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে এবং টকশোতে অংশগ্রহণ করে তাদের গঠনমূলক মতামত তুলে ধরেছেন। যেহেতু যারা নারী সংস্কার কমিশনে কাজ করেছেন, তারা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশ্বাসী জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না; তাই তাদের প্রতিবেদন বাতিল করে নতুনভাবে কমিশন করা হোক।
লেখক : সাবেক সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।