ফ্যাসিবাদ এবং নাজিবাদ শব্দ-যুগল আমাদের দেশে একই অর্থে, একইভাবে ব্যবহৃত হয়। আসলে বিষয়টি দুটো ভিন্ন ভিন্ন দেশের রাজনৈতিক আদর্শ সম্পর্কিত বিষয়। একই সঙ্গে উচ্চারিত হওয়ার কারণ এই যে দুটো আদর্শ বা তত্ত্বই একই উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে পরিচালিত। গুরুত্ব ও ব্যাপকতার দিক দিয়ে ফ্যাসিবাদের চেয়ে নাজিবাদ বা নাৎসিবাদই প্রাধান্য পাওয়ার কথা। কিন্তু কী কারণে ফ্যাসিবাদ আমাদের কাছে অগ্রাধিকার পেল, তা বোধগম্য নয়। আমরা কথায় কথায় বলি—একই বৃন্তে দুটো ফুল। দুটো মতবাদের ইতিহাস-ভূগোলই বিভীষিকাময়। তাই ফুল শব্দটি যথার্থ নয়। বরং বলা যায় একই বৃন্তে দুটো বিষাক্ত কাঁটা। দীর্ঘকাল ধরে আমাদের কাছে ফ্যাসিবাদ বলতে যা উপস্থাপিত হচ্ছে, তা মূলত একটি দর্শন। প্রতিটি দর্শনের যেমন একটি তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিক থাকে, এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নেই। মনীষী প্লেটো ইতিবাচক অর্থে রাষ্ট্রের জন্য নাগরিক সাধারণকে নিবেদিত হতে বলেছেন। সেই তত্ত্বটির অনেক আবর্তন-বিবর্তন হয়ে নেতিবাচক অর্থে জার্মানিতে আবির্ভূত হয়। ফ্যাসিবাদের তত্ত্ব কথায় বলা হয়, ‘জনগণের জন্য রাষ্ট্র নয়, রাষ্ট্রের জন্য জনগণ’। এর মানে হচ্ছে, এই যে সভ্যতার অগ্রায়নের সঙ্গে সঙ্গে রাজার পরিবর্তে যে প্রজার কর্তৃত্ব তথা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা অস্বীকার করা। তারা মহৎ সব শব্দাবলি উচ্চারণ করে। জাতি, রাষ্ট্র, দেশপ্রেম ও বিশুদ্ধ রক্তের মতো উগ্র এবং উৎকট তত্ত্ব দ্বারা জনগণকে সম্মোহিত করতে চায়।

ফ্যাসিবাদের ক্ষেত্রভূমি জার্মানি। নাজিবাদের উৎস ইতালিতে। দুটো শব্দ যেহেতু একই রাজনৈতিক তাৎপর্য ধারণ করে, সে জন্য বাংলাদেশের মানুষ দুটোকে একই তাৎপর্যে ব্যাখ্যা করে। এই নিবন্ধে এবং অন্যত্র—‘যাহাই নাজিবাদ, তাহাই ফ্যাসিবাদ’, এরূপ সাধারণ অর্থে ব্যবহার করব।

ফ্যাসিবাদ শব্দটি ইতালির ‘Fasicsmo’ শব্দ থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ ‘লৌহ শলাকার বান্ডিল’। এটি প্রাচীন রোমান প্রতীক ‘লৌহ বান্ডিল’-কে নির্দেশ করে। এই প্রতীকের সঙ্গে একটি কুড়ালও রয়েছে। এটিকে একক কর্তৃত্বের প্রতীক বলে মনে করা হয়। এটি শক্তি এবং জাতীয় ঐক্যের কথাও বলে। মুসোলিনি ক্ষমতা কাঠামোকে একক এবং সর্বাত্মক করার জন্য প্রাচীন রোমান ঐতিহ্যের অপব্যবহার করে ক্ষমতা আরোহণের কৌশল অবলম্বন করেন। ১৯১৫ সালে বেনিতো মুসোলিনি ইতালিতে ‘Fasces of revolutionary action’ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৯ সালে তিনি আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক ধরনের ‘Fascis of combat’ গঠন করেন। জোর-জবরদস্তি করে তারা নির্বাচন জিতে যান। ক্ষমতায় গিয়ে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিকে নির্মূল করেন। একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম হয় সেখানে। জাতীয়তাবাদের অতি উগ্র আদর্শই ছিল নাৎসিবাদ তথা ফ্যাসিবাদের মূল বৈশিষ্ট্য। একক শক্তি ও শৃঙ্খলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এরা, মানুষের স্বাভাবিক স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে। এক নেতা, এক দল, এক দেশ তাদের অনুসৃত নীতি হয়ে দাঁড়ায়। ফ্যাসিবাদ তথা উগ্র দেশপ্রেমের যাত্রা ইতালিতে শুরু হলেও এটি পুরো ইউরোপকে প্রভাবিত করে। ইউরোপের অন্যান্য দেশেও নিজ নিজ নামে ও ধামে এই মতবাদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জন করলেও জার্মানিতে এটি নিরঙ্কুশতা অর্জন করে। ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানি এই মতবাদে আক্রান্ত ছিল। এর একক নেতৃত্বে ছিলেন এডলফ হিটলার। তিনি ছিলেন এক নেতা, এক দল, এক রাষ্ট্রের ‘ফুয়েরার’ বা ত্রাণকর্তা। ফ্যাসিবাদ নাজিবাদের যেসব প্রবণতার কথা আগে যা বলা হয়েছে, তা হিটলারের জার্মানিতে ব্যবহারিক রূপ লাভ করে। হিটলার ১৯৩৩ সালে নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেন। যেহেতু তিনি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেননি, সে জন্য জার্মান প্রেসিডেন্ট পল ভন হিন্ডেনবার্গ তাকে সরকার গঠনে আমন্ত্রণ জানাতে দ্বিধান্বিত ছিলেন। আন্দোলন আর অরাজকতা দিয়ে তিনি ক্ষমতা দখল করেন। ১৯৩৪ সালের ২ আগস্ট প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ মারা গেলে রাষ্ট্রিক ক্ষমতা সর্বতোভাবে দখল করার সুযোগ পান। তিনি একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট এবং চ্যান্সেলর বা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওই বছরের ১৯ আগস্ট এক তথাকথিত গণভোটের মাধ্যমে তিনি একমাত্র আইনগত ফুয়েরার বা সর্বাত্মক কর্তৃত্বের মালিক হন। এভাবে রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার পর তিনি হয়ে দাঁড়ান ‘আমিই রাষ্ট্র’ ধরনের অধিপতি। হিটলারের জার্মানিতে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা বা প্রতিকার অবশিষ্ট ছিল না যে, প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে। বৈশ্বিক মহামন্দার সময় হিটলার মিশ্র অর্থনীতি প্রচলন করে আর্থিক ভারসাম্য বিধানে সমর্থ হন। জাতীয় আয়ের এক বিপুল অংশ সামরিক বাহিনী সমৃদ্ধকরণে ব্যয় করেন। রাস্তাঘাট, উড়াল সড়ক, উচ্চগতির পথ এবং অন্যান্য কাঠামোগত উন্নয়ন দেখিয়ে জনগণকে তুষ্ট রাখেন।

এই উন্নয়নের চমক দেখিয়ে নাগরিকদের ন্যূনতম স্বাধীনতাও অস্বীকার করা হয়। ভিন্নমত পোষণের ন্যূনতম স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়। বরং বিরোধীদের নির্মূল করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। জাতীয় ঐক্যের নামে জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করা হয়। সে সময় ইহুদিরা ছিল জার্মান জাতির ভাগ্যনিয়ন্তা। তাদের হাতেই ছিল রাজনীতি, অর্থনীতি এবং গণমাধ্যম। চিরকাল ষড়যন্ত্রপ্রিয় এবং বিশ্বাসঘাতকতায় অভ্যস্ত ইহুদি জাতি গোপনে হিটলারবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত হয়। হিটলার তাদের ওপর মহাক্ষিপ্ত হন। সেখানে বসবাসরত ইহুদিদের এক রকম নিপাত করেন। অগণিত ইহুদিকে গ্যাস চেম্বারে বা অন্যভাবে হত্যা করা হয়। হিটলারের পতনের পর ইহুদিরা এই অন্যায়-অত্যাচারকে সম্বল করে বিরোধী পক্ষের সহানুভূতি লাভ করে। এই সহানুভূতি সম্বল করে পরবর্তীকালে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বিতাড়ন করে। সে আরেক করুণ কাহিনি। অনুসৃত ফ্যাসিবাদের আদর্শ অনুযায়ী উদারপন্থি, মার্কসবাদী ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। গুম, খুন ও নিপীড়নের পথ বেছে নেওয়া হয়। বিরোধী জনগোষ্ঠীকে হামলা-মামলা দিয়ে উৎখাত করা হয়। নয়তো দেশান্তরী হতে বাধ্য করা হয়। সেখানে খ্রিষ্ট ধর্মের চার্চগুলোও আক্রান্ত হয়। বহু ধর্মীয় নেতাকে আটক করা হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে বর্ণবাদী জীববিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান, জনসংখ্যানীতি অনুসরণ করা হয়। সামরিক বাহিনীতে ভর্তির ব্যাপারেও রক্তের উত্তরাধিকার বিবেচিত হয়। যাবতীয় ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি বিনোদনও পর্যটনের মতো বিষয়ও গোষ্ঠী বিবেচনায় পরিচালিত হয়। গণমাধ্যমের কর্তৃত্ব সরকারের হাতে নিয়ে নেওয়া হয়। তখন তথ্যমন্ত্রী জোসেফ গোয়েবলস মিথ্যাকে সত্য ও সত্যকে মিথ্যা করার কারিগর হয়ে দাঁড়ায়। রাস্তায় রাস্তায় হিটলারের মূর্তি স্থাপন করা হয়। জ্বালাময়ী ভাষণ প্রচার করা হয়। কারণে-অকারণে বিশাল বিশাল মিছিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে জনগণকে অংশগ্রহণে বাধ্য করা হয়। তথ্যচিত্র, নাটক ও সিনেমায় নাৎসিবাদের জয়জয়কার ঘোষিত হয়। হিটলারবিরোধী প্রকাশিত সাহিত্য সংস্কৃতি তথা গ্রন্থ রচিত হলে তা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।

দুটো দেশের দুটো আদর্শ প্রায় একই ধরনের কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করে। ইতালি ও জার্মানির কথা জোরেশোরে বলা হলেও ইউরোপের অন্যান্য অংশেও ফ্যাসিবাদের প্রবল ছোবল লক্ষ করা যায়। এর মধ্যে ছিল স্পেনের ফ্যালাঞ্জিস্ট, হাঙ্গেরির অ্যারো ক্রস এবং ফরাসি অ্যাকশন ফ্রানসাইজ। যদিও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পতনের সঙ্গে ফ্যাসিবাদ-নাজিবাদের পতন ঘটে। কিন্তু পৃথিবীব্যাপী আজ পর্যন্ত এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া অনুভূত হয়। ইউরোপের পর এশিয়া আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার সদ্য স্বাধীন দেশগুলোয় নামে-বেনামে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রকোপ লক্ষ করা যায়। খোদ ইউরোপে সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের পতনের পর। ফ্যাসিবাদ ধরনের উগ্রমতবাদের প্রকাশ ঘটে। রাশিয়ায় প্যামুয়াট নামে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে। এখন পুতিনের রাশিয়ায় প্রকারান্তরে জনপ্রিয়বাদ বা পপুলিজমের নামে বস্তুত ফ্যাসিবাদের চর্চা চলছে। বিস্ময়ের ব্যাপার, একই সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত দখলের পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোয় খ্রিষ্টবাদ, জনপ্রিয়তাবাদ ইত্যাদির নামে ফ্যাসিবাদের চর্চা চলছে। আমাদের দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও মিয়ানমারে ফ্যাসিবাদের আরেক রূপ লক্ষ করা যাচ্ছে। ভারত উগ্র হিন্দুত্ববাদে আক্রান্ত। মিয়ানমার যারা বলে ‘অহিংস পরম ধর্ম’, তারা আজ রোহিঙ্গা নামের লাখ লাখ মানুষকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে।

উপর্যুক্ত আলোচনা-পর্যালোচনার পর এ কথা নিশ্চয়ই স্পষ্ট হয়েছে, বাংলাদেশে যে ফ্যাসিবাদ জেকে বসেছিল, এই সেদিন তাদের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য শাসনব্যবস্থার ধরন-ধারণের সঙ্গে জার্মানির নাজিবাদ ও ইতালির ফ্যাসিবাদের সঙ্গে অপূর্ব মিল রয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যুদয়টি ছিল উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রমাণ। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের ওপর যে জুলুম, অন্যায়, অত্যাচার করেছে, তার একমাত্র ব্যাখ্যা বাঙালি জাতীয়তাবাদে ছিল না। সেখানে বাম ধারার দলগুলো বাংলাদেশের মানুষের শোষণ থেকে মুক্তির কথা বলেছে। পাকিস্তানি ২২ পরিবারের শোষণের কথা বলেছে। হিটলার ও মুসোলিনির মতো গণতন্ত্রের লেবাস নিয়ে একই কায়দায় গায়ের জোরে তারা নির্বাচনগুলোয় জিতে যায়। নিজস্ব সংবিধান অস্বীকার করে হিটলারি কায়দায় বাকশাল কায়েম করে তারা। হিটলার যেমন গণমাধ্যমকে বানিয়ে ফেলেছিল প্রশংসা ও প্রশস্তির ক্ষেত্র হিসেবে তেমনি আওয়ামী লীগের শাসন আমলগুলোয় তাই হয়েছে। বক্তৃতা শুরু হতো বন্দনা দিয়ে আর শেষ হতো প্রশস্তি দিয়ে। হিটলার যেমন অন্যায়-অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন, হামলা-মামলা ও গুম-খুন দিয়ে তার শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করেছে, সেই একই কায়দায় আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করেছে। তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ীকরণের জন্য প্রথমদিকে তারা জাসদের চল্লিশ হাজার কর্মীকে গুম করেছে, একজন শিরাজ শিকদারকে এবং অনেক মানুষকে হত্যা করেছে। তেমনি অবশেষে তারা হেফাজতে ইসলামের একটি রক্তক্ষরণের মধ্য দিয়ে জামায়াত নেতাদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পূর্বক্ষণে গণহত্যায় ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এ যেন হিটলারের গণবিরোধী শক্তিকে রক্তপাতের মধ্যে নির্মূল করার একই চিত্র।

ফ্যাসিবাদ মূলগতভাবে গণতন্ত্র, নিয়মতন্ত্র, উদারতাবাদ ও মানবাধিকারবিরোধী। কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা, নিকৃষ্ট অর্থ লোলুপতা এবং স্বেচ্ছাচার তাদের বৈশিষ্ট্য। তাদের মানসিকতায় ভালো কিছু নেই। অন্যকে গ্রহণ করার মানসিকতা তাদের মধ্যে একেবারেই অনুপস্থিত। তারা নিজেদের উত্তম মনে করে। তাদের ভাষায় তারাই একমাত্র সিরাজউদ্দৌলা আর সবাই মীরজাফর। তারাই স্বাধীনতার একমাত্র সপক্ষ শক্তি। তাদের নেতা বাদে আর কেউ কিছু নয়। একজন তাজউদ্দীন অথবা একজন জিয়াউর রহমান কেউ কিছু নন। হিটলারের মতোই হিটলার মুসোলিনির মতোই পথে-প্রান্তরে এমনকি গ্রামগঞ্জে তাদের মূর্তি স্থাপিত হয়েছিল। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে জনগণ তা সমূলে উৎপাটন করেছে। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে তারা ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শে গড়ে তুলতে চেয়েছে। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে মানুষ উচ্চারণ করেছে ‘আল্লাহু আকবার’। কেউ তাদের তা শিখিয়ে দেয়নি। চরমবাদের পরিবর্তে অভ্যুত্থানের পরতে পরতে ধ্বনিত হয়েছে ‘মধ্যবর্তী জাতির প্রতিজ্ঞা’। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের সমন্বয়তা দৃশ্যমান হয়েছে। সেদিন জুলাই ঘোষণাপত্রে ঘোষিত হয়েছে এই জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য। দূরের ও কাছের সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জাতির সম্মিলিত ঐক্য নিশ্চিতভাবেই ফ্যাসিবাদের মৃত্যুঘণ্টা নিশ্চিত করবে।

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ফ্যাসিবাদের কবর দিয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিবাদ শুধু একটি শাসনব্যবস্থাই নয়, এটি একটি মানসিকতা। গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা যেমন নির্ভর করে এর প্রায়োগিকতার ওপর, তেমনি ফ্যাসিবাদের অবসান নির্ভর করে রাজনৈতিক নেতৃত্বের মানসিকতার ওপর। ক্ষমতার নিরঙ্কুশতা আমাদের ফ্যাসিবাদের দিকে ঠেলে দেয়। যেমন সার্বিক ক্ষমতা সার্বিকভাবেই দুর্নীতির দিকে ঠেলে দেয়। স্থান-কাল-পাত্রভেদে তার রকমফের হতে পারে। ফ্যাসিবাদমুক্ত হতে হলে আমাদের গণতান্ত্রিক তথা নির্বাচনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। ব্যক্তি থেকে সমষ্টি, কর্মী থেকে নেতা এবং নিম্ন থেকে শীর্ষ রাষ্ট্রকৃত্যকদেরও আচরণে ও কর্মে ফ্যাসিবাদী মানসিকতা মুক্ত হতে হবে।

লেখক : রাজনীতি বিশ্লেষক, সাবেক অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাবি

সূত্র, আমার দেশ