এখনো ক্ষীণ আশার কথা হলো- মুসলিম বিশ্বের সাধারণ মানুষের প্রায় সবাই ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের জন্য আহাজারি ও দোয়া করেন। কিন্তু মুসলিম দেশের শাসকরা তাদের গোষ্ঠীস্বার্থ বজায় রাখতে উম্মাহর নির্যাতিত-নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। গাজার বুভুক্ষু মানুষের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতে যখন বিশ্বের তাবৎ শক্তিধর রাষ্ট্র ও মুসলিম দুনিয়ার বিত্তবান দেশসমূহ নির্বাক, তখন আলজেরিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়া ও লিবিয়ার হাজারো মানবাধিকারকর্মী ইসরাইলি অবরোধের বিরুদ্ধে মিসরের রাফা সীমান্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। তাদের এ প্রচেষ্টা কার্যকর কিছু বয়ে না আনলেও একটি প্রতীকী গুরুত্ব এর রয়েছে। ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফটিসি) সম্প্রতি গাজায় ত্রাণ পৌঁছানের একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করে। এটি হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ের একটি আন্তর্জাতিক আন্দোলন যার উদ্দেশ্য হচ্ছে অহিংস পন্থা ও সংহতি প্রকাশের মাধ্যমে গাজায় ইসরাইলের অমানবিক অবরোধের অবসান ঘটানো। ২০১০ সালে মূল ফ্রিডম ফ্লোটিলার ওপর ইসরাইলি আক্রমণের পর এ সংস্থার জন্ম। এরপর থেকে এ আন্দোলনের কর্মীরা বিশ্বব্যাপী ইসরাইলের অমানবিক অবরোধের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছেন। সংস্থাটি একেবারে অরাজনৈতিক ও নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে নিছক মানবিক বিবেচনায় গাজায় জরুরি খাদ্যপণ্য, ওষুধ ও মৌলিক চাহিদা পূরণকারী ত্রাণ সরবরাহের চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন সুইডেনের জলবায়ু-বিষয়ক মানবাধিকার আইনজীবী গ্রেটা থুনবার্গ ও ফ্রান্সের ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসান। সম্প্রতি ইতালির কাতালান থেকে যুক্তরাজ্যের পতাকাবাহী জাহাজ মাদলিন সুইডেন, ফ্রান্স, স্পেন, ব্রাজিল ও তুরস্কের কয়েকজন অ্যাক্টিভিস্ট ও আল জাজিরার একজন সাংবাদিকসহ মোট ১২ জন অসম সাহসী নারী-পুরুষ বেশ কিছু পরিমাণসামগ্রী শিশুখাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য জরুরি ত্রাণসামগ্রী নিয়ে গাজার কাছাকাছি পৌঁছালে ইসরাইলি সেনারা তাতে বাধা দেয়। আন্তর্জাতিক নৌসীমানার ১০০ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে থাকা সত্ত্বেও তারা জোরপূর্বক জাহাজটি কব্জা করে এবং এর মানবাধিকারকর্মীদের অপহরণ ও আটক করে ইসরাইলে নিয়ে যায়। স্মরণ করা যেতে পারে, মাদলিন জাহাজের নামকরণ করা হয়েছিল ফিলিস্তিনের এক নারী জেলের নামে- যিনি পিতাকে হারিয়ে বাঁচার তাগিদে নিজে সমুদ্রে মাছ ধরে জীবন বাঁচানোর সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। জাহাজটির নামকরণের আগে ওই নারীর অনুমতি নেয়া হয়েছিল। তিনি অনুমতি দিয়ে বলেছিলেন, তারা যেন গাজায় আসার জন্য জীবনের ঝুঁকি না নেন। তিনি আরো বলেছিলেন, ‘এ জাহাজের আগমন যেন যুদ্ধ অবসানের সুসংবাদ নিয়ে আসে।’ কিন্তু বাস্তবে তেমনটি ঘটেনি; বরং আরো নির্মম নাটকীয়তা দেখছেন বিশ্ববাসী। মাদলিনের স্বপ্ন পূরণ হওয়া দূরের কথা, অধিকতর তীব্র সংগ্রামী জীবনের আশঙ্কা তার সামনে। ইসরাইলি সেনারা আন্তর্জাতিক নৌসীমানার ১০০ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে থাকতে ইউরোপের এসব মানবাধিকারকর্মীকে অপহরণ করে এবং কয়েক জনকে কারাগারে পাঠায়। অন্যদিকে, গ্রেটা থুনবার্গকে জোরপূর্বক ফ্রান্সে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অন্যদের নির্জন প্রকোষ্ঠে আটক রাখা ও তাদের উপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ করেছেন বিখ্যাত টিকটক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাক্টিভিস্ট নিকোল জোনস। তিনি সামাজিক মাধ্যমে বলেন, আটক ক্রুদের উপর মানবাধিকার লঙ্ঘন করে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। কয়েক জনকে যার যার দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইসরাইলি বর্বরতার প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু ইসরাইলি বর্বরতার মোকাবেলায় পুরো বিশ্ব যেন অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে। মিডিয়াও বিষয়টি ভালোভাবে প্রচার করেনি। আসলে ইসরাইলের উন্নাসিকতার পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের শক্তিশালী অনেকগুলো রাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহসহ বিবিধ সহযোগিতা। এর আগে ২ মে ২০২৫ মাল্টা থেকে আরেকটি জাহাজ কনসাইন্স একইভাবে কিছু ত্রাণসামগ্রী নিয়ে গাজার উদ্দেশে রওনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ইসরাইল সেটিকে মাল্টার আন্তর্জাতিক পানিসীমায় ড্রোন দিয়ে আক্রমণ করে এবং তার যাত্রা ভঙ্গ করে। অন্যদিকে, স্থলপথে ত্রাণবাহী যানবাহন গাজায় যাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে চলেছে। কিন্তু ইসরাইলি কসাইরা কোনোভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার অনুমতি দিচ্ছে না। মিসর সরকার নীরব দর্শক ছাড়া আর কিছু বলছে না। দুই-একবার দেখা গিয়েছিল, বিমান থেকে জর্দান সরকারের খাদ্যপণ্য ফেলার দৃশ্য; তাও এখন আর দেখা যাচ্ছে না। ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের ছোট ইয়াট মাদলিনে ত্রাণসামগ্রীর পরিমাণ ছিল যৎসামান্য। সেটি বড় কথা নয়; কারণ তারা গাজাবাসীর পক্ষে মানবাধিকারের প্রতি সহমর্মিতার একটি প্রতীকী উদ্যোগ নিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল গাজার অবরোধ ভেঙে ফেলা এবং বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা, যাতে সবাই ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। আশার কথা হচ্ছে, পশ্চিমা বিশ্বের বিশাল জনগোষ্ঠী ইসরাইলি পাশবিকতা ও পশ্চিমা সরকারগুলোর দ্বিমুখী নীতির প্রতি ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চলেছে। প্রায়শই নিউ ইয়র্ক, ডাবলিন, লন্ডন, প্যারিস, মাদ্রিদ, বার্লিন থেকে শুরু করে অস্ট্র্রেলিয়ার শহরগুলোতে গাজায় গণহত্যা বন্ধ ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সমর্থনে বিশাল বিশাল মিছিল ও সমাবেশ সংঘটিত হচ্ছে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প বা নেতানিয়াহু গংয়ের কানে পানি যাচ্ছে না। প্রাচীনকাল থেকে ফিলিস্তিনে বসবাসকারী একটি জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে গাজায় এখন রক্তের হোলিখেলা চলছে। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা নানা উদ্যোগ নিলেও তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর লাগে যখন দেখা যায়, নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্য গাজায় যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তার কোনো প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দিচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র সবার বিরুদ্ধে তাতে ভেটো দিচ্ছে। প্রতীয়মান হচ্ছে, নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতা যেন জালিমের পক্ষে অন্যায্য কাজকে সমর্থনে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বৃত্তপনা এবং ধৃষ্টতা কি নিছক অস্ত্র ব্যবসার খেলা? মোটেই তা নয়। এর পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও ধর্মীয় বিশ্বাসের একটি উপাদান। যদিও জুডাইজম ও জায়নিজম সমার্থক নয়। এর কারণে মাঝে মধ্যে দেখা যায়, ইহুদি ধর্মের কিছু অনুসারী ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সমর্থন করে সমাবেশ করে থাকে এবং তারা অভিযোগ করে যে, ইসরাইল রাষ্ট্র গাজায় যে বর্বরতা চালাচ্ছে তা ইহুদি ধর্মের শিক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তারা আরো বলেন, জায়নিজম হচ্ছে একটি উগ্র জাতীয়তাবাদী আদর্শ যার সাথে ইহুদি ধর্মের সম্পর্ক নেই। তাহলে ইসরাইল তার মিত্রদের নিয়ে কী উদ্দেশ্যে গাজায় এথনিক ক্লিনজিং তথা গণহত্যা চালাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিয়মিত যুদ্ধাপরাধ করে চলেছে? কারণ একটিই এবং তা হচ্ছে- ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী পুরো ফিলিস্তিন ও আরব উপত্যকা হচ্ছে তাদের জন্য ঈশ্বর প্রদত্ত উপহার, সেটি পুনরুদ্ধার করা। লক্ষণীয়, পশ্চিমা বিশ্বের সচেতন জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছে। কিন্তু তাদের সরকারগুলো নির্বিকার। আবার এটিও সত্য যে, পাশ্চাত্য জনগোষ্ঠীর মধ্যে ইসরাইলের সমর্থক জনগোষ্ঠীও একেবারে কম নয়। পশ্চিমা মিডিয়া এক্ষেত্রে অনেকটা দায়ী। তারা বিকৃত বা খণ্ডচিত্র দর্শকদের সামনে তুলে ধরে। ফলে অনেকে বিভ্রান্ত হন। সাধারণভাবে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন যুদ্ধকে নিছক মুসলিম-অমুসলিম বিরোধ বলে বিবেচনা করা হলে তা ঠিক হবে না। কারণ ইউরোপ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার বেশ কিছু অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। পক্ষান্তরে, বেশ কিছু মুসলিম রাষ্ট্র ইসরাইলের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করতেও সাহস পাচ্ছে না। আসলে এই মুসলিম রাষ্ট্রগুলো এবং তাদের সংস্থা আরব লিগ ও ইসলামী সম্মেলন সংস্থা যেন পঙ্গু হয়ে গেছে। মুসলিম শাসকরা নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আমেরিকার গোলামি করে চলেছে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরব, কাতার ও আরব আমিরাত সফরকালে তাকে যে অভূতপূর্ব সংবর্ধনা ও অতি মূল্যবান উপহারসামগ্রী দেয়া হয়েছে তা দেখে এটি মনে করার জোরালো যুক্তি রয়েছে যে, তারা আসলেই আমেরিকার হাতের পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যখন গাজার মুসলিম নারী, শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ লোকেরা ক্ষুধার তাড়নায় দিগি¦দিক ছুটে বেড়াচ্ছেন এবং খাবারের পরিবর্তে বোমার আঘাতে জীবন দিচ্ছেন, তখন আরবদের বিলাসিতার বহর দেখে মানবজাতি লজ্জিত হচ্ছে। মিসর, জর্দান তো আগেই ইসরাইলের কাছে দাসখত দিয়ে বসে আছে। সেই সাথে মৃতপ্রায় রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তারা যেন বিড়ালের মতো মিঁউ মিঁউ করার সাহসও হারিয়ে ফেলেছে। সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অস্ত্রশস্ত্র ও আর্থিক দিক দিয়ে বেশ শক্তিশালী। তারা আরো অস্ত্র কিনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোকে বাণিজ্যিক সুবিধা দিচ্ছে; আর নিজেদের রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার একমাত্র কৌশল নিয়েছে। এসব আরব দেশ ইসরাইল থেকে বছরে দুই বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ক্রয় করে। আর তারা সবাই মিলে ফিলিস্তিনে মাত্র ১২৫ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দেয়। কাতার মার্কিন প্রেসিডেন্টকে যে বিলাসবহুল বিমান উপহার দিয়েছে তা আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মতে- তার মূল্যের চার ভাগের এক ভাগও বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী গাজার জন্য বরাদ্দ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরোপীয়দের সম্মিলিত উদ্যোগে ইরাক ও সিরিয়াকে আগেই নিস্তেজ করে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, তুরস্কের ব্যাপারেও অনেকে এখন হতাশা ব্যক্ত করছেন। প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা বিবেচনা করা হয়। কিন্তু তিনি মাঝে মধ্যে ইসরাইলের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিলেও বাস্তবে কিছু দেখা যাচ্ছে না। এমনকি ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বহাল রেখে চলেছেন। মালয়েশিয়ার প্রভাবশালী ইসলামপন্থী নেতা আনোয়ার ইবরাহিম এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়ার পক্ষ থেকে চোখে পড়ার মতো কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। পাকিস্তান মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পরমাণু বোমার অধিকারী দেশ হয়েও নিজ অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য চেষ্টা করছে। আমরা সাধারণ মানুষ বুঝতে একেবারে অক্ষম যে, ইউরোপের অমুসলিম দেশের মানবাধিকারকর্মীরা গাজাবাসীর সমর্থনে ছোটখাটো হলেও কিছু করছে, সেখানে শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্রগুলো মানবিক সাহায্য পাঠাতেও কেন ব্যর্থ হচ্ছে? রাসূল সা: বলেছেন, ‘মুসলিম উম্মাহ হচ্ছে একটি শরীরের মতো, তার এক অংশে ব্যথা হলে অন্য অঙ্গেও তা অনুভুত হয়।’ আবার ইসলাম যেখানে প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে ঘুমাতে নিষেধ করা হয়েছে, সেখানে গাজার নিকটতম প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলো বিলাসিতা ও খাবার অপচয়ে মগ্ন রয়েছে। জানি না, এরা আখিরাতে আল্লাহর কাছে কিভাবে জবাব দেবে? ঈমানের সামান্য চেতনা থাকলেও এরূপ আচরণ তারা কিভাবে করছে? তাদের আচরণ মুসলিম উম্মাহকে ক্ষুব্ধ ও লজ্জিত করছে। মুসলমানদের এরূপ দুরবস্থার সুযোগে হিন্দুত্ববাদী ভারতের উগ্র সাম্প্রদায়িক বিজেপি সরকারও মুসলিমবিদ্বেষী অসহনীয় আচরণ করছে। কাশ্মির ও ভারতের মুসলমানরা এখন খুব দুঃসময় অতিক্রম করছে। মুসলিম বিশ্বের মধ্যে একমাত্র ইরান ও দরিদ্র ইয়েমেন সক্রিয়ভাবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সীমিত প্রচেষ্টা জারি রেখেছে। ইয়েমেনের হুতি বাহিনী দু’-চারটি মিসাইল ছুড়ে হলেও প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ মাঝে মধ্যে সীমিত শক্তির মহড়া দিয়ে থাকে। একমাত্র ইরান এখনো অমিত তেজ নিয়ে আমেরিকা ও ইসরাইলের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে চলেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মোকাবেলায় তারা তাদের পরমাণু কেন্দ্র রক্ষা করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ লেখার সময় আজকের (১৩ জুন, ২০২৫) খবর হলো- ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে ইসরাইল মিসাইল/বোমা হামলা চালিয়েছে এবং তাতে ইরানের সেনাবাহিনী প্রধান, ইসলামী বিপ্লবী গার্ড প্রধান ও ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। এর আগেও ইসরাইলি হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড প্রধান কাসেম সুলাইমানি, লেবাননের হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নসরুল্লাহ, হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া ও হামাস কমান্ডার সিনাওয়ারও নিহত হয়েছেন। ইসরাইলি সামরিক প্রযুক্তি যে কত নিখুঁত এ ঘটনা তার প্রমাণ। বিস্ময়কর যে, ভ্রাতৃপ্রতিম আরব রাষ্ট্রগুলো ইরানকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দিতে চায় না। তারা মুসলিম ভাইদের চেয়ে মার্কিন বন্ধুত্বকে বেশি প্রাধান্য দেয়। অন্যদিকে, নেলসন মেন্ডেলার দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা একটি অমুসলিম দেশ হয়েও ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে মামলা দায়ের করেছে। স্পেন, আয়ারল্যান্ড মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ না হয়েও ফিলিস্তিনের পক্ষে সোচ্চার। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়া, কলোম্বিয়া ও নিকারাগুয়া ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। পক্ষান্তরে, মুসলিম দেশ মিসর, আরব আমিরাত, কাতার, জর্দান, তুরস্ক ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে। এখনো ক্ষীণ আশার কথা হলো- মুসলিম বিশ্বের সাধারণ মানুষের প্রায় সবাই ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের জন্য আহাজারি ও দোয়া করেন। কিন্তু মুসলিম দেশের শাসকরা তাদের গোষ্ঠীস্বার্থ বজায় রাখতে উম্মাহর নির্যাতিত-নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। কারণ হলো- তারা কেউ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় বসেননি। তাই তারা জনগণের উপর নির্ভর না করে প্রভুরাষ্ট্রের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে ক্ষমতায় টিকে আছেন। ফলে ফিলিস্তিনের সংগ্রামী নারী মাদলিনের স্বপ্ন আদৌ পূরণ হবে কি-না তা কেউ জানেন না। তবে মনে হয় মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর চেষ্টায় নয়, পাশ্চাত্যের বিবেকবান কণ্ঠস্বর যত বেশি জোরালো হবে, গাজাবাসীর দুঃখের অবসান ততটাই ত্বরান্বিত হবে।

লেখক : গবেষক ও সাবেক সচিব

[email protected]

সূত্র, নয়া দিগন্ত