বর্তমানে রাজধানীতে কিশোর গ্যাং বা কিশোর অপরাধীদের তৎপরতা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। একসময় এই বয়সের ছেলেমেয়েরা বইপত্র, খেলা ও সংস্কৃতিচর্চায় ব্যস্ত থাকলেও এখন অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে। এদের বেশিরভাগই স্কুল-কলেজপড়ুয়া, যারা বখে যাওয়া বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়ে অপরাধের পথে পা বাড়াচ্ছে। কিশোর গ্যাংগুলো সাধারণত নিজেদের ‘গ্রুপ’ বা ‘দল’ হিসেবে পরিচিত করে এবং আধিপত্য বিস্তার, প্রতিপক্ষকে হুমকি দেওয়া, এমনকি খুন পর্যন্ত করতেও দ্বিধা করে না। এই কিশোর গ্যাংগুলো নিজেদের আলাদা নাম, পোশাক ও আচরণ দিয়ে আলাদা পরিচিতি তৈরি করছে। এদের মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ, এলাকা দখলের লড়াই, প্রেমঘটিত দ্বন্দ্ব বা ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তারা নিজেদের ‘হিরো’ ভাবতে ভালোবাসে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাপট দেখিয়ে অন্যদের ভয় পাইয়ে দেয়াকে গর্বের বিষয় মনে করে। এই পরিস্থিতির জন্য অভিভাবকদের উদাসীনতা, সামাজিক অবক্ষয়, বিনোদনের অভাব ও মাদক সহজলভ্যতাকেই দায়ী করা যায়। পাশাপাশি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে কিশোর অপরাধ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতির ঘাটতিও লক্ষ করা যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক সময়েই এসব অপরাধী কিশোরদের বয়স বিবেচনায় কঠোর ব্যবস্থা নিতে পিছপা হয়, ফলে তারা অপরাধ করে পার পেয়ে যায় এবং আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, যেন কিশোর বয়সকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কেউ অপরাধ করে পার না পায়। সমাধান হিসেবে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। শিশুদের মনোভাব গঠনে নৈতিক শিক্ষার ভূমিকা জোরদার করতে হবে। খেলাধুলা, সংস্কৃতি ও সৃজনশীল কাজে তাদের যুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি আইন সংশোধন করে কিশোর অপরাধের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে।

মো. মাহমুদুল হাসান

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা।

সূত্র, ইনকিলাব