সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দেয় তখন, যখন হাল ফ্যাশন শালীনতার সীমা অতিক্রম করে। পোশাক, ভাষা বা আচরণে যদি এমন কিছু দেখা যায়, যা অন্যকে অস্বস্তিতে ফেলে, তখন প্রশ্ন উঠে সভ্যতার নামেই।

সময় যতই এগোচ্ছে, মানুষের রুচি, পোশাক ও আচরণে ততই নতুনত্ব আসছে। এই পরিবর্তনের ধারায় গড়ে উঠছে ফ্যাশন নামে একটি চলমান ধারা। প্রতিটি যুগে, প্রতিটি সমাজে ফ্যাশন ছিল এবং আছে- কখনো সংস্কৃতির বাহক হয়ে, কখনো ব্যক্তিত্বের প্রকাশ হিসেবে। আর এরই সমসাময়িক রূপকে বলা হয় হাল ফ্যাশন। অর্থাৎ বর্তমান সময়ে সমাজে যা জনপ্রিয়, যা মানুষ অনুসরণ করছে সেটিই হয়ে উঠছে হাল ফ্যাশন।

ফ্যাশনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো নিজেকে প্রকাশ করা, নিজের রুচি ও দৃষ্টিভঙ্গিকে অন্যদের সামনে তুলে ধরা। অনেকে ফ্যাশনের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পান, নিজেদের আলাদা করে উপস্থাপন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আবার ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি শুধু সৌন্দর্যের ব্যাপার নয়, এটি একটি বড় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রও। দেশে-বিদেশে লাখ লাখ মানুষ এর সাথে যুক্ত, আর তাদের সৃষ্টিশীলতা ও কাজের মাধ্যমে সমাজে নতুন নতুন ধারা তৈরি হচ্ছে। তাই ফ্যাশনের কার্যকারিতা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

তবে ফ্যাশনের পাশাপাশি এখন যে হাল ফ্যাশন দেখা যাচ্ছে, সেখানে কিছু প্রশ্নও উঠছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবে তরুণ প্রজন্ম এখন যেকোনো নতুন ট্রেন্ড খুব দ্রুত গ্রহণ করছে। অনেক সময় তারা বুঝে উঠতে পারছে না, কোনটি আসলেই প্রয়োজনীয় আর কোনটি নিছক প্রদর্শনের খাতিরে। যখন ফ্যাশন হয়ে ওঠে কেবল ব্র্যান্ড দেখানো বা অতিরিক্ত আকর্ষণ সৃষ্টি করার মাধ্যম, তখন সেটি ফ্যাশনের গণ্ডি ছাড়িয়ে যায়। এ ধরনের হাল ফ্যাশন অনেক সময় সমাজে বিভাজন তৈরি করে কারণ সবাই তো আর দামি জামা, বিদেশী ট্রেন্ড বা কৃত্রিম সৌন্দর্যচর্চা মেনে চলতে পারে না।

সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দেয় তখন, যখন হাল ফ্যাশন শালীনতার সীমা অতিক্রম করে। পোশাক, ভাষা বা আচরণে যদি এমন কিছু দেখা যায়, যা অন্যকে অস্বস্তিতে ফেলে, তখন প্রশ্ন উঠে সভ্যতার নামেই। কারণ সভ্যতা শুধু আধুনিক প্রযুক্তি বা অবকাঠামো নয়, সভ্যতা মানে একটি সমাজের মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও সহাবস্থানের মানসিকতা। সভ্য সমাজ কখনোই এমন কিছু মেনে নিতে পারে না যা একাংশের ‘স্টাইল’ অন্য অংশের জন্য হয়ে দাঁড়ায় ‘উসকানি’।

তবে সভ্যতা মানেই কি রক্ষণশীলতা? মোটেও নয়। সভ্যতা মানে উদারতা কিন্তু দায়িত্বের সাথে। হাল ফ্যাশনও সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, যদি তা হয় রুচিসম্মত, শালীন ও পরিপূর্ণতার প্রতীক। আমরা যদি ফ্যাশনের মাধ্যমে নিজের সংস্কৃতি, চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে নতুনভাবে উপস্থাপন করি, তাহলে তা সভ্যতাকে সমৃদ্ধই করবে। কিন্তু যদি আমরা কেবল অনুকরণের মাধ্যমে অন্ধভাবে ফ্যাশনের পেছনে ছুটে যাই, তবে তা আমাদের শিকড় থেকে বিচ্যুত করবে।

ফ্যাশন ও সভ্যতা এই দু’টি যদি পরস্পরের সাথে ভারসাম্য বজায় রেখে চলে, তাহলে তা আমাদের ব্যক্তিজীবন থেকে সমাজজীবন- সবখানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই হাল ফ্যাশনকে গ্রহণ করার আগে ভাবতে হবে, এটি কেবল বাহ্যিক রূপ বদলাচ্ছে, না কি ভেতরের মূল্যবোধেও আঘাত করছে। কারণ আধুনিক হওয়া মানে শিকড় ভোলা নয়; বরং শিকড়কে শক্ত রেখে ডালপালা মেলাই আসল প্রগতির চিহ্ন।

শিক্ষার্থী, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর।

সূত্র, নয়া দিগন্ত