অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে এই উদ্যোগকে একটি সরকারের সীমিত মেয়াদের পদক্ষেপ হিসেবে না দেখে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে স্থায়ী করতে হবে। দেশের উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা এবং জনগণের অর্থনৈতিক অধিকার সুরক্ষার জন্য বিদেশে পাচার হওয়া প্রতিটি টাকার হিসাব নেয়া এবং সম্ভব হলে তা ফেরত আনার বিকল্প নেই। এটি শুধু অর্থনৈতিক দায় নয়, নৈতিক ও রাষ্ট্রিক কর্তব্যও বটে। এই পথ দীর্ঘ হতে পারে কিন্তু সুসংগঠিত পরিকল্পনা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা থাকলে বাংলাদেশের হারানো সম্পদ ফেরত আনা অসম্ভব নয়; বরং আজকের সাহসী পদক্ষেপ ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ উন্মোচন করতে পারে।Traditional print newspaper

২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মোট ২৪০ বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচার হয়েছে। টিআইবি ও বিভিন্ন গবেষণার মতে, বছরে গড়ে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। এই বিশাল অর্থ পাচার দেশের মুদ্রা স্থিতিশীলতা, ব্যয়ক্ষমতা, শিক্ষাবিনিয়োগ, স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিল্পে বিনিয়োগে অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে দেশের অর্থনীতিতে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ পড়েছে। মূলত মিস ইনভয়েসিং, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ভিসা-দুর্ব্যবহার, হুন্ডি প্রভৃৃতি উপায়ে এই টাকা পাচার হয়েছে। এই তথ্য ও বিশ্লেষণী ভূমিকা সরকারের ন্যায়নিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বিধিবদ্ধ অনুসন্ধান-প্রক্রিয়া জোরদার করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পাথেয় হবে।Traditional print newspaper

এই অর্থ পাচারে ম্যাক্রো ইকোনমিক অস্থিরতার ফলে মুদ্রানীতি ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হওয়া এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুর্বলতা সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের কর-চাপ ও মূল্যবৃদ্ধিকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। যদি এই টাকা দেশে ফেরত আনা যেত, তবে তা দিয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন, কৃষিবান্ধব অবকাঠামো, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানে বিপুল অগ্রগতি সাধন করা যেত। অতএব, পাচার হওয়া ওই বিপুল অর্থের পুনঃউদ্ধার কেবল অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয় নয়; এটি সামাজিক ন্যায্যতার ও নৈতিক দায়িত্বের বিষয়ও বটে।

অর্থ ও সম্পদের পাচারের অন্যতম সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) এবং আলজাজিরা ও ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের অনুসন্ধান মতে, তার ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ লন্ডন, নিউইয়র্ক, দুবাই ও ফ্লোরিডায় লুকানো প্রায় ৪৮২টি যার মূল্য প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। শুধু যুক্তরাজ্যেই তার মালিকানাধীন বা সংশ্লিষ্ট নামের অধীনে থাকা ৩১৮ থেকে ৪২২টি সম্পত্তি ফ্রিজ করে দেয়া হয়েছে, যেগুলোর অনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় ১৩৪ থেকে ১৮৫ মিলিয়ন পাউন্ড। ইতোমধ্যে এই সম্পত্তির বিরুদ্ধে ব্রিটিশ আদালতের মাধ্যমে সিভিল রিকভারি আদেশ জারি করা হয়েছে।

গার্ডিয়ান ও ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের মতে, পতিত প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধেও ব্রিটেন ও সিঙ্গাপুরে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে লন্ডনে অন্তত ৮৫ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ফ্ল্যাট ও রিয়েল এস্টেট রয়েছে। দেশের ব্যাংক খাত থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে বিদেশে আনুমানিক ৫০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েছে, যার বিষয়ে বিআইইউএফ ও দুদকের অনুসন্ধানও চলমান রয়েছে।

এস আলম গ্রুপ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে প্রায় দুই লাখ কোটি ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরে ২১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি প্রাইভেট ম্যানশনসহ প্রায় ৪৬৯ মিলিয়ন ডলার মূল্যের হোটেল ও বাণিজ্যিক সম্পদ প্রতিষ্ঠা করেছে। এ ছাড়া সাইপ্রাস ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে কোম্পানি ও নির্বাচিত সম্পত্তি সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ রিপোর্টে প্রতীয়মান হয়েছে। সিঙ্গাপুরের ম্যানশনসহ ৪৬৯ মিলিয়ন ডলারের হোটেল ও অন্যান্য অফশোর সম্পদ ফেরত আনতে আইনি চ্যালেঞ্জ অব্যাহত রয়েছে।

এ ছাড়া পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে বাংলাদেশের অন্তত ৬০-৭০ জন ধনাঢ্য ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীর নাম উঠে এসেছে, যারা মূলত অফশোর কোম্পানি খুলে ট্যাক্স ফাঁকি এবং অবৈধ অর্থপাচার করেছেন। যদিও আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান সাংবাদিক সংস্থা (ICIJ) এর তথ্য মতে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬৭ মিলিয়ন ডলারের সম্পদ পুনরুদ্ধারের কথা জানা যায়।Traditional print newspaper

পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে আইনি কাঠামো

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থ ও সম্পদ ফিরিয়ে আনার জন্য ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় আয় রক্ষা ও অর্থপাচার প্রতিরোধে ন্যায়সঙ্গত আইনি কাঠামো এবং আন্তর্জাতিক সংগ্রামের প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ১৮৫ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার সম্পত্তি বর্তমানে ফ্রিজ করেছে এবং ২৩৪ বিলিয়ন ডলারের অভিযোগ রয়েছে, যার একটি অংশ ব্রিটেনে সন্ধান মিলেছে। আবার ৮৫৪ মিলিয়ন ডলারের এক ফিন্যান্সিয়াল স্ক্যাম মামলা চলমান। Traditional print newspaper

এই অর্থ ফেরত প্রক্রিয়ায় সময়সীমা, প্রমাণ সংগ্রহ, বিচারিক জটিলতা ছাড়াও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সঠিক কর্মপন্থায় এগোলে ধাপে ধাপে টাকা ফিরে আসবে, বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিসি সেই ইঙ্গিত সেই পথ ও মূলনীতি দিয়েছে।

বর্তমানে দেশে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধিত ২০১৫ ও ২০১৯), দুর্নীতি দমন কমিশন আইন (২০০৪) বিদেশী মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন (১৯৪৭) এবং দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো কার্যকর রয়েছে। এসব আইনের মাধ্যমে অর্থ পাচারকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এবং তদন্ত, মামলা ও দণ্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে (BFIU, ২০২২; ACC, ২০২৩)। এ ছাড়া আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-তেও অঘোষিত বৈদেশিক সম্পদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান আছে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ ২০০৭ সালে জাতিসঙ্ঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনে (UNCAC) স্বাক্ষর করেছে, যা পাচারকৃত অর্থ ফেরতের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সুযোগ দেয় (UNODC, ২০২৩)। এ ছাড়া BFIU ইগমন্ট গ্রুপের সদস্য হওয়ায় দেড় শতাধিক দেশের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে (Annual Report, ২০২২)। যদিও কিছু দেশ যেমন- ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে পারস্পরিক আইনি সহায়তা (MLA) চুক্তি থাকলেও উন্নত দেশের সাথে এ ধরনের চুক্তি এখনো সীমিত। Traditional print newspaper

সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অগ্রগতি হয়েছে, যেমন- ২০২২-২৩ অর্থবছরে BFIU প্রায় ১২৭৬টি সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্ত করেছে এবং ৭৬টি বিদেশী ব্যাংকে বাংলাদেশী অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করেছে (BFIU, ২০২৩)। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অ্যাকাউন্ট বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে এবং কানাডা, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে টাকা পাচারের বিষয়ে তদন্ত চলছে।

সম্পদ পুনরুদ্ধারে সেটেলমেন্ট প্রক্রিয়া

সেটেলমেন্ট প্রক্রিয়া হলো- অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে সরকারি/আদালত নির্দেশিত একটি চুক্তি যার মাধ্যমে পাচারকৃত টাকা পাচারকারী পুরোটা বা আংশিক ফিরিয়ে দেবে। এর ফলে তার বিরুদ্ধে বিচার হতে পারে বা হতে নাও পারে, কোনো জরিমানা ধার্য হতে পারে এবং কখন, কীভাবে, কোন ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা ফেরত আসবে তা নির্ধারিত হয়। অধিকাংশ দেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরতের জন্য MLAT অনুযায়ী কাজ করতে হয়। যদি এই চুক্তি না থাকে, তবে সেটেলমেন্ট আরো জটিল হয়, তখন soft diplomacy বা আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা করা হয়। অর্থ পাচারকারী দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ফেরত আনা অর্থ বাজেটে যুক্ত হয়। মাঝে মধ্যে বিশ্বব্যাংক, UNODC বা OECD এর Stolen Asset Recovery Initiative সহায়তা করে।

বাংলাদেশের পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে এখন পর্যন্ত কার্যকর সেটেলমেন্ট প্রক্রিয়া খুব দুর্বল। তবে কিছু দেশ যেমন- কানাডা, মালয়েশিয়া, দুবাই, সুইজারল্যান্ড, এই দেশগুলোর সাথে MLAT বা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সেটেলমেন্টের পথ খোলা থাকতে পারে। ২০২৪ সালে দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন), বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) কিছু মামলায় সেটেলমেন্টের সম্ভাব্য পথ খুঁজেছে, তবে সেগুলো এখনো কার্যকর হয়নি। Traditional print newspaper

বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার যে ১০০ কোটি টাকার মতো আইনি ও প্রশাসনিক ব্যয় ধরে ১১টি মামলার জন্য পরিকল্পনা করছে, সেটি মূলত আন্তর্জাতিক লিটিগেশন ফান্ডিং মডেলের অনুসরণে করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকার এই ফান্ডের মাধ্যমে এক থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয়ের মামলা চালিয়ে এক থেকে দুই হাজার কোটি পর্যন্ত সম্পদ ফেরত আনার উচ্চাভিলাষ ব্যক্ত করা হয়েছে। যদি লিটিগেশন ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয় এবং মাত্র এক হাজার কোটি টাকা ফেরত আনা যায়, তা হলে রিটার্ন রেশিও হবে প্রায় ১০ অনুপাত ১, যা আর্থিক দক্ষতার দৃষ্টিতে যথেষ্ট ভালো। এই উদ্যোগের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- বহু বছরের নিষ্ক্রিয়তা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার পর সরকার এখন পাচারকৃত অর্থ ফেরতের ক্ষেত্রে সক্রিয়, সঙ্ঘবদ্ধ এবং কৌশলগতভাবে একমুখী। এতে আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়া যায় যেমন- UK NCA ইতোমধ্যে ১৩-১৯ জুন ২০২৫ তারিখে ১৮৫ মিলিয়ন পাউন্ডের অর্থ ও সম্পদ ফ্রিজ কার্যক্রম চালিয়েছে। Traditional print newspaper

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে অনেক সময় তৃতীয়পক্ষ অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান মামলা চালানোর খরচ বহন করে এবং মামলা জিতলে সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ পায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একটি আন্তর্জাতিক ফান্ডের সাথে আলোচনা চলছে, যারা এই ১১টি মামলায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।

এ পদ্ধতির সুবিধা হলো- সরকারের নিজস্ব বাজেট থেকে বিপুল অর্থ খরচ না করে বৈশ্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে দ্রুত মামলা পরিচালনা করা সম্ভব। তবে এই ফান্ডিংয়ের শর্তাবলি স্বচ্ছভাবে নির্ধারণ না করলে দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রের অংশ কমে যেতে পারে। অসুবিধা হলো- আইনি প্রক্রিয়া ধীরগতি, কারণ- প্রমাণ সংগ্রহ, দরকার যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল বিশেষ করে পতিত সরকারের লোকজন এই পদক্ষেপকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলছে, যা আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটেও নেতিবাচক ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা যদি সম্পদ পাচারের প্রমাণ অস্বীকার করেন এবং প্রমাণপত্র সংগ্রহ দুর্বল হয়, তা হলে সেটেলমেন্ট চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া রাজনৈতিক পরিবেশ যদি প্রতিশোধপ্রবণ হয় বা মামলা নির্বাচনী উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বিবেচিত হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক আদালত বা প্রতিষ্ঠানগুলো সহযোগিতায় গড়িমসি করতে পারে।Traditional print newspaper

বিশ্বের অনেক দেশ যেমন- পাকিস্তানের রিয়াজ হুসেইন ২০১৯ সালে ব্রিটিশ NCA-এর সাথে একটি সমঝোতা চুক্তির আওতায় ১৯০ মিলিয়ন পাউন্ড ফেরত দিতে সম্মত হন। নাইজেরিয়ার সামরিক শাসক সানি আবাচার পরিবারের কাছ থেকে সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার ফেরত আনা হয়। মালয়েশিয়ায় এক অর্থ কেলেঙ্কারির পর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার সম্পদ জব্দ ও পরবর্তীতে ফেরত আনা হয়েছে। এ ধরনের উদাহরণ বাংলাদেশকেও আশা জাগায়, যদি যথাযথ তথ্যপ্রমাণ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা যায়।

অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে এই উদ্যোগকে একটি সরকারের সীমিত মেয়াদের পদক্ষেপ হিসেবে না দেখে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে স্থায়ী করতে হবে। দেশের উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা এবং জনগণের অর্থনৈতিক অধিকার সুরক্ষার জন্য বিদেশে পাচার হওয়া প্রতিটি টাকার হিসাব নেয়া এবং সম্ভব হলে তা ফেরত আনার বিকল্প নেই। এটি শুধু অর্থনৈতিক দায় নয়, নৈতিক ও রাষ্ট্রিক কর্তব্যও বটে। এই পথ দীর্ঘ হতে পারে কিন্তু সুসংগঠিত পরিকল্পনা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা থাকলে বাংলাদেশের হারানো সম্পদ ফেরত আনা অসম্ভব নয়; বরং আজকের সাহসী পদক্ষেপ ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ উন্মোচন করতে পারে। Traditional print newspaper

লেখক : অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট

সূত্র, নয়া দিগন্ত