অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘদিন ধরে দেশে, বিশেষত রাজধানীতে অগ্নিকাণ্ডের যেসব ঘটনা ঘটে চলেছে, বৃহস্পতিবারের ঘটনাটি তারই ধারাবাহিকতা মাত্র। ৭ তলা ভবনের সপ্তম তলায় অবস্থিত গুদামে আগুনের সূত্রপাত হয়, পরে পুরো কারখানায় তা ছড়িয়ে পড়ে। কারখানার ভেতর থেকে বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা পর্যন্ত অর্থাৎ শুক্রবারের জন্য রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত দাউদাউ করে জ্বলছিল আগুন। আগুন নেভানো এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে রাতে যুক্ত হয়েছেন বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এর আগে অবশ্য নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেছিলেন। রাতেই আশপাশের ভবনের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ সম্পাদকীয় লেখার সময় তথ্য বলছে, ১৭ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বটে, তবে তা পুরোপুরি নেভাতে আরও সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে।

স্মরণ করা যেতে পারে, মাত্র দুদিন আগে রাজধানীর মিরপুরে এক অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। অর্থাৎ আমরা দেখছি, বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড এক নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আমরা স্মরণ করতে পারি, গত কয়েক বছরে তাজরিন গার্মেন্টস থেকে শুরু করে অনেক গার্মেন্টস এবং কেমিক্যাল গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে দেশের মিডিয়া এবং নাগরিক সমাজ ক্রমাগত কথা বলে আসছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে বড় বড় শিল্পকারখানার মালিকরা অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন না। এমনকি পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের গুদাম সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আদালতের নির্দেশ থাকলেও সে আদেশ মানা হচ্ছে না। অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। কারখানাগুলোর অগ্নিনির্বাপণের জন্য ব্যবস্থা থাকলেও সে ব্যবস্থা দ্বারা আগুন কীভাবে নেভানো যাবে, সে ব্যাপারে যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই। অনেক ক্ষেত্রে দ্রুত এক্সিটের বিকল্প সিঁড়ি বা পথ নেই। যেসব কারণে আগুন লাগতে পারে, সে কারণগুলোও দূর করা হয়নি। বস্তুত, রাজধানী ঢাকা একটি অপরিকল্পিত জনবহুল শহর। এখানকার কাঠামোর অধিকাংশই নিয়ম মেনে তৈরি হয়নি; হলেও সেগুলো নিয়মনীতি মেনে পরিচালিত হচ্ছে না। প্রতিবারই অগ্নিকাণ্ড ঘটার পর দু-একদিন ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা হয়, মৃতদের জন্য শোক প্রকাশ করা হয়, একটা তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়; কিন্তু ওই পর্যন্তই। এরপর সবাই সবকিছু ভুলে যায় এবং যথারীতি আরেকটি অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

স্বস্তির বিষয় যে, চট্টগ্রামের অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে সবাই নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। কিন্তু সম্পদের ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। আমরা চাইব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করা হবে এবং কেউ দোষী প্রমাণ হলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আগামীতে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি রোধেও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাবধান থাকতে হবে।

সূত্র, যুগান্তর