ট্রাম্পের নতুন অর্থনৈতিক টিম প্রথমে রয়েছেন স্কট বেসেন্ট, যিনি নতুন ট্রেজারি সেক্রেটারি এবং অতি ধনী হেজ ফান্ড ম্যানেজার। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ভাঙতে জর্জ সরোসের সঙ্গে কাজ করার জন্য তিনি বিখ্যাত। এরপর আছেন স্টিভেন মিরন, ট্রাম্পের নতুন শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এবং হেজ ফান্ড স্ট্র্যাটেজিস্ট। উভয় অর্থনীতিবিদই মার্কিনশিল্পের দুর্বলতা নিয়ে বিশেষভাবে আলোকপাত করেছেন। তাদের মতে, ১৯৫০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি ম্যানুফ্যাকচারিং পাওয়ার হাউস ছিল এবং ম্যানুফ্যাকচারিং ভ্যালু অ্যাডেড আউটপুট ছিল ২৮ শতাংশ, যা বর্তমানে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি বড় সমস্যা মূলত দুটি কারণে—প্রথমত, শিল্পায়ন হ্রাস আমেরিকার ম্যানুফ্যাকচারিং হটল্যান্ড বা শিল্পপ্রবণ এলাকাকে ধ্বংস করে দিয়েছে, যা মূলত ট্রাম্পের ভোটব্যাংক। দ্বিতীয়ত, মার্কিন ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাপাসিটি অন্যান্য শক্তির তুলনায় অনেক পিছিয়ে, বিশেষ করে চীনের তুলনায়। যুদ্ধকালীন সময়ে ঐতিহাসিকভাবেই বেসামরিক কারখানা এবং জ্ঞান দ্রুত সামরিকীকরণের জন্য অপরিহার্য। প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এই বাণিজ্য ব্যবস্থা তৈরি করার পরও কেন অসন্তুষ্ট?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উত্থান দুটি প্রধান বিশ্বব্যবস্থার মাধ্যমে সূচিত হয়েছে। প্রথমটি, ব্রেটন উডস সিস্টেম (১৯৪৪-১৯৭৩), দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ডলারকে স্বর্ণের সঙ্গে বেঁধে একটি স্থিতিশীল আন্তর্জাতিক আর্থিক কাঠামো তৈরি করে। এ ব্যবস্থায় মিত্র দেশগুলো ডলারের সঙ্গে মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করে মার্কিন নিরাপত্তা, মার্শাল প্ল্যানের অধীনে অর্থনৈতিক সহায়তা ও মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকার লাভ করে। এই কাঠামোর অধীনে মার্কিন ডলার বিশ্বব্যাপী রিজার্ভ মুদ্রার মর্যাদা লাভ করে। তবে, জাপান ও ইউরোপের মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর উত্থান এবং ডলারের চাহিদা বাড়ায় স্বর্ণের স্থিতিশীল সরবরাহ অর্থনৈতিক দ্বৈধতা (ট্রিফিন ডিলেমা) সৃষ্টি করে, যা এই ব্যবস্থার পতনের কারণ হয়।
পরে, ১৯৭১ সালে নিক্সনের ঘোষণার মাধ্যমে স্বর্ণের সঙ্গে ডলারের রূপান্তরযোগ্যতা স্থগিত হলে ব্রেটন উডস সিস্টেমের সমাপ্তি ঘটে এবং নব্য উদারবাদী বিশ্বব্যবস্থার সূচনা হয়। এই ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য ছিল বাণিজ্য উদারীকরণ (নিম্ন শুল্ক), বিশ্বব্যাপী পুঁজি প্রবাহের অবাধ সুযোগ, নমনীয় বিনিময় হার এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রদান। ডব্লিউটিওর মাধ্যমে দেশগুলো মার্কিন বাজারে অবাধ প্রবেশাধিকার, মার্কিন ডলার ব্যাংকিং সুবিধা এবং বিশ্বব্যাপী পরিবহনের জন্য মার্কিন নৌবাহিনীর সুরক্ষা লাভ করে। তবে, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন ব্যয়বহুল হয়, কর্মসংস্থান কমে ও বৈষম্য বাড়ে। ২০১৬ সালে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ নব্য উদারবাদী ব্যবস্থার সমাপ্তির ইঙ্গিত দেয়। বাইডেন প্রশাসন ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে শিল্প পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলেও, এর ফলে বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধি পায়।
বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই সৃষ্ট নব্য উদারবাদী ব্যবস্থা থেকে ক্রমেই সরে আসছে, যা ডলারের মূল্যস্ফীতির মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও শক্তিশালী জাতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু এর ফলে এত দ্রুত শিল্পায়ন হ্রাস পেয়েছে যে, এটি এখন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এই প্রেক্ষাপটে তারা একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থার জন্য মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন মাস্টার প্ল্যান’ নিয়ে এসেছে। এমন একটি পরিকল্পনা, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আবার শিল্পায়নে সাহায্য করার পাশাপাশি ডলারকে বিশ্বব্যাপী রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে টিকিয়ে রাখতে চায়। স্টিভেন মিরান একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি এর সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন, যদিও সেটি কোনো স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিকল্পনা নয়, বরং এটি বিভিন্ন বিকল্পের একটি তালিকা মাত্র। তবে তিন ধাপে মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন মাস্টার প্ল্যানটি উপস্থাপন করা যেতে পারে : প্রথম ধাপ—শুল্ক বিশৃঙ্খলা। এই ধাপে আমরা বর্তমানে অবস্থান করছি। মার্কিন প্রশাসন দেখাচ্ছে, তারা তাদের লক্ষ্যে অবিচল, এমনকি শেয়ারবাজার ধসের বিষয়েও তারা আর চিন্তিত নয়। সাময়িকভাবে অর্থনীতির নিম্নগতিকেও তারা আর গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো দর-কষাকষির সুবিধা তৈরি করতে মিত্র ও শত্রু নির্বিশেষে সবার ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা। প্রাথমিকভাবে শুল্ককে আলোচনার হাতিয়ার হিসেবে না দেখলেও, ট্রাম্প এতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। মিরান ও বেসেন্ট উভয়েই ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে বর্তমান শুল্ক বিশৃঙ্খলা মূলত একটি কৌশলগত সুবিধা তৈরির প্রচেষ্টা, যা পরিকল্পনার অবশিষ্ট অংশ বাস্তবায়নের সময় কাজে লাগানো হবে।
Trump
দ্বিতীয় ধাপে আসে পাল্টাপাল্টি শুল্ক । আগে দেখা গেছে, চীন ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় তাদের নিজস্ব শুল্ক ক্রমাগত বাড়িয়েছে। কিন্তু যদি পারস্পরিক শুল্কব্যবস্থা চালু থাকে, তবে সেই প্রভাব তাত্ত্বিকভাবে আর কার্যকর হবে না। নীতিটি এমন হবে যে, কোনো দেশ শুল্ক বৃদ্ধি করলে, আমেরিকার পক্ষ থেকেও সমপরিমাণ শুল্ক বৃদ্ধি করা হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে একটি প্রতিযোগিতার সমান ক্ষেত্র তৈরি হবে। এটি শুল্কের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য—বাণিজ্য ক্ষেত্রকে এমনভাবে সমতায় আনা, যাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থা উদ্ভাবনী ক্ষমতা, নিরাপত্তা, আইনের শাসন ও স্থিতিশীলতাকে পুরস্কৃত করে এবং মজুরি দমন, মুদ্রা কারসাজি, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি চুরি, অশুল্ক বাধা ও কঠোর নিয়ন্ত্রণের মতো অনৈতিক কার্যকলাপ নিরুৎসাহিত হয়। অর্থনীতিবিদরা প্রায়ই প্রশাসনকে এ ধরনের অলীক কল্পনার জন্য সমালোচনা করেছেন, কারণ ঐতিহাসিকভাবে ১৯৩০-এর দশকের বাণিজ্যযুদ্ধের মতো ঘটনাগুলো শুধু সবার অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরো খারাপ করেছে এবং শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের দিকে ধাবিত করেছে। কিন্তু এখানে মিরানের যুক্তি হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই বৃহত্তম ভোক্তা বাজার এবং অন্য দেশগুলোর কাছে এর কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং, এই শুল্কের বোঝা মূলত তাদেরই বহন করতে হবে। তিনি মূলত বোঝাতে চেয়েছেন, ডলার অর্জনের জন্য প্রতিটি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করতে আগ্রহী, তাই বাণিজ্যযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি অনন্য দর-কষাকষির অবস্থান রয়েছে। ট্রাম্পের প্রথম বাণিজ্যযুদ্ধ ব্যর্থ হয়েছিল, কারণ চীন, মেক্সিকো ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোয় রপ্তানি বৃদ্ধি করেছিল, যা পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করত। সুতরাং, সব দেশের ওপর শুল্ক সম্প্রসারণ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুল্ককে দর-কষাকষির সুবিধা তৈরির একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে দেখছেন। সহজেই অনুমান করা যায়, পারস্পরিক শুল্কের একটি ধারাবাহিক প্রয়োগের পর, ইউরোপ ও চীনের মতো বাণিজ্য অংশীদাররা শুল্কহ্রাসের বিনিময়ে কোনো ধরনের মুদ্রা চুক্তির জন্য আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে।
এখানেই মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন মাস্টারপ্ল্যানের চূড়ান্ত পর্যায়—মার-এ-লাগো চুক্তি (Mar-a-Lago Accord)। এই মার-এ-লাগো চুক্তি ১৯৪৪ সালের ব্রেটন উডস চুক্তি বা ১৯৮৫ সালের প্লাজা চুক্তির মতো ঐতিহাসিক তাৎপর্য লাভ করতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনে যোগ দেওয়ার পর মিরান এই মার-এ-লাগো চুক্তি নিয়ে তুলনামূলকভাবে নীরবতা অবলম্বন করেছেন। তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যদি ডলার বাণিজ্যের ভারসাম্য বজায় রাখতে দুর্বল হতে পারত, তাহলে তাদের বাণিজ্য ঘাটতি পূরণের জন্য বর্তমানের মতো এত সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো না। সে ক্ষেত্রে, শুল্ক ও অন্যান্য নীতিগত ব্যবস্থাগুলো যে সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য তৈরি করা হয়েছে, সেগুলোর আর প্রয়োজন হতো না, কারণ মার্কিন রপ্তানি বিশ্ববাজারে আরো প্রতিযোগিতামূলক হতো। তবে চূড়ান্ত লক্ষ্য এখনো ডলারকে রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে টিকিয়ে রেখে তার মান দুর্বল করা। তার গবেষণাপত্রে মিরান রিজার্ভ মুদ্রা ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ব্যবহার ফি নেওয়ার মতো কিছু অপ্রচলিত বিকল্পের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মনে হয় না যে, তারা এই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বিকল্পগুলো বেছে নেবে। পরিবর্তে মার-এ-লাগো চুক্তি অনেকটা ব্রেটন উডস সিস্টেমের মতোই হবে, শুধু স্বর্ণের সঙ্গে সংযোগ ছাড়া। এই নতুন বিশ্বব্যবস্থায়, সবুজ তালিকাভুক্ত দেশগুলো ডলারের সঙ্গে তাদের মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করে এমন একটি চুক্তি করবে, যেখানে যখনই ডলারের মান খুব বেশি বাড়বে, তারা তাদের মুদ্রার মান তার বিপরীতে বাড়িয়ে দেবে। বিনিময়ে, তারা বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে প্রবেশাধিকার, নিরাপত্তা সুবিধা এবং মার্কিন ডলার ব্যবস্থায় সহজ প্রবেশাধিকার লাভ করবে। কিন্তু ব্রেটন উডসের বিপরীতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত দেশগুলোকে সেই নিরাপত্তার জন্য মূল্য পরিশোধ করতে বলবে, যা তাদের কার্যত সামন্ত রাষ্ট্রে পরিণত করবে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থা মূলত সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের একটি জটিল জাল। ট্রাম্প বিশ্বের এই আন্তঃসংযোগগুলোকে আমেরিকান জনগণের স্বার্থে পুনর্বিন্যাস করতে চান। যদি মুদ্রা চুক্তি সম্ভব হয়, তবে শুল্কের হার অনেক কমিয়ে আনা হতে পারে। যদি পর্যাপ্তসংখ্যক দেশ নতুন মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন বিশ্বব্যবস্থায় সবুজ তালিকাভুক্ত দেশ হিসেবে যোগ দেয় এবং তাদের মুদ্রার বিনিময় হার মার্কিন ডলারের সঙ্গে নির্ধারণ করে, তবে একই সঙ্গে ডলারের রিজার্ভ মুদ্রার মর্যাদা বজায় রেখে ট্রাম্প তার দুর্বল ডলারের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন, যা তাত্ত্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে আবার শিল্পায়নে সাহায্য করতে পারে। তবে অবশ্যই, এর সবকিছুই নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্র নতুন মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় দেশগুলোকে সবুজ তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য কতটা আকর্ষণীয় প্রস্তাব দিতে পারে তার ওপর। কিন্তু স্বেচ্ছায় ডলারের তুলনায় নিজেদের মুদ্রার মান বাড়ানো এবং অর্থ প্রদানের শর্তে মার্কিন নিরাপত্তার ওপর নির্ভর করা দেশগুলোকে কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের অধীনস্থ করে। অতীতে অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ব্রেটন উডস চুক্তি এবং ১৯৮৫ সালের রেগানের প্লাজা চুক্তির সঙ্গে আবদ্ধ ছিল। কিন্তু যখন কোনো দেশ নিজের স্বাক্ষরিত বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করে অথবা সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ইউরোপীয় মিত্রদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল দখলের হুমকি দেয়, তখন কীভাবে আশা করা যায়, অন্য দেশগুলো নতুন মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাব্যবস্থায় যোগ দিতে আগ্রহী হবে? যদি কোনো দেশ শেষ পর্যন্ত এই নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যোগ না দেয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রকে রিজার্ভ মুদ্রার মর্যাদা এবং এর সঙ্গে আসা সম্পদ ও ক্ষমতা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে, নতুবা ডলার ও তার ক্ষমতা বজায় রাখতে অন্য দেশের উৎপাদন ক্ষমতার ওপর নির্ভর করতে হবে।
লেখক : মো. আন নাজমুস সাকিব খান , পিএইচডি গবেষক, ইনস্টিটিউট অব এনার্জি কনভার্সন, চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেস, গুয়াংজু