বাজারে ইলিশ এখন সোনার হরিণ। উচ্চমূল্যের কারণে এটি এখন মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে। খুচরা বাজারে বড় সাইজের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকা বা তারও ওপরে। এমন পরিস্থিতিতে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ১২.৫ ডলার বা ১ হাজার ৫২৫ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে দেশের সাধারণ মানুষ হতাশ হবে, এটাই স্বাভাবিক। এদিকে ভরা মৌসুমেও নদী-সাগরে ইলিশ নেই বললেই চলে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতে ইলিশ গেলে দেশের বাজারে এ মাছের দাম মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে-এমনটাই বলছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। বরিশাল ইলিশ মোকামের একজন ব্যবসায়ী যুগান্তরকে বলেছেন, মৌসুমে মোকামে যেখানে ২-৩ হাজার টন ইলিশ আসে, সেখানে এবার দিনে ১০০ টনও আসছে না। এ তথ্য থেকেই স্পষ্ট দেশে ইলিশের সংকট কতটা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে রপ্তানিকারকরা ইলিশ সংগ্রহে নামলে দেশের বাজারে ইলিশের সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করবে। তখন দেশের বাজারে আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হবে ইলিশ।
দেশের মানুষ কষ্টে থাকলেও সরকার প্রতিবছর দুর্গাপূজায় ভারতের জন্য ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিচ্ছে, তাও তুলনামূলকভাবে কম দামে। এতে মানুষের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, যখন দেশে জেলে ও ভোক্তা উভয়ই মহাসংকটে, তখন প্রতিবেশী দেশকে খুশি করার জন্য এতটা ছাড় কেন? জনগণ মনে করছে, সরকারের এমন পদক্ষেপে দেশের মানুষের প্রয়োজন উপেক্ষিত হয়েছে। আমরা মনে করি, সরকারকে আগে দেশের মানুষের পাতে ইলিশ ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে, তারপর রপ্তানির চিন্তা করতে হবে। তাছাড়া দেশের মানুষের ইলিশের চাহিদা পূরণ করা না হলে মানুষ কিছুটা হলেও অপুষ্টির শিকার হবে, যার প্রভাব পড়বে জনশক্তি সৃষ্টির ওপর।
কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষায় প্রতিবেশী দেশের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের মানুষের স্বার্থকে অগ্রাধিকার ও যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। রাষ্ট্রের প্রথম দায়িত্ব নিজ দেশের নাগরিকের স্বার্থ রক্ষা করা। দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণে না এনে, জনগণের পাতে ইলিশ না তুলে, বিদেশে রপ্তানি কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না।
জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে ইলিশের উৎপাদন কমছে। নিষিদ্ধ জাল ও বিদেশি ট্রলারের অবাধ শিকারের কারণেও ইলিশ আহরণ কমছে। যারা ইলিশ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সেই জেলেরা পর্যাপ্ত ইলিশ না পাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেক পরিবারে একবেলা খাবারও জোটে না। এদিকে চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে ইলিশের বাজার এখন অনেকটা অস্থির। কাজেই ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এ মাছ দেশের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে। পরিবেশগত হুমকিসহ বেশকিছু সমস্যার সমাধানে নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ। চাঁদাবাজির কারণে সব ধরনের নিত্যপণ্যের বাজার এখন অস্থির। কাজেই চাঁদাবাজি রোধেও সরকারকে কঠোর হতে হবে।