‘উষ্ণায়নের কবলে সুন্দরবন : বিপন্নতার মুখে জীববৈচিত্র্য’ শিরোনামে একটি নিউজ কলকাতা থেকে সুনিত পাল ঢাকার একটি দৈনিকে পাঠিয়েছিলেন। সুনিত লিখেছিলেন- ‘‘সুন্দরবনকে বাঁচাতে ও পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা গড়ে তুলতে সম্প্রতি কৃত্রিম ‘বাঘ-কুমির’দের মিছিল দেখা গেল কলকাতার বুকে। সুন্দরবনের ঐতিহ্য রক্ষায় এই উদ্যোগ কতখানি বাস্তবমুখী তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। জলবায়ুর পরিবর্তনে সুন্দরবন বিপর্যস্ত। আইলার তাণ্ডবের পর নুন বিষের পাশাপাশি সুন্দরবন এলাকায় জলের তাপমাত্রাও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা। সুন্দরবনের বাসিন্দা ও সুন্দরবন গবেষক ধুর্জটি নস্করের বিবরণ অনুযায়ী, সুন্দরবনের নদ-নদী, খাঁড়ি ও মোহনায় জলের তাপমাত্রা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ১০ থেকে ১২ বছর অন্তর ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে বেড়ে চলেছে জলের তাপমাত্রা। এর ফলে বিপদের আশঙ্কা বাড়ছে সুন্দরবন উপকূলবাসীর। ভারতের কেন্দ্রীয় ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রকের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, সুন্দরবনের জলের তাপমাত্রা এখন পৌঁছে গিয়েছে গোটা বিশ্বের উষ্ণায়নের গড় হারের আট গুণের কাছে। এই হারে জলের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যাঞ্চল এবং তার জীববৈচিত্র্য ক্রমশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। ... ভৗগোলিক মানচিত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ মিলিয়ে মোট ১০ হাজার ২৩০ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত আছে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য। এর মধ্যে চার হাজার ২০০ বর্গকিলোমিটার পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে রয়েছে (বাকি ছয় হাজার ৩০ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে)। এ ছাড়া পাঁচ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার অংশজুড়ে বিভিন্ন দ্বীপে জনবসতি রয়েছে। ব্যাপক এবং বিস্তৃত এই সুন্দরবন অঞ্চলগুলোর জলে ও জঙ্গলে বহু প্রজাতির প্রাণীর বিচরণ। বর্তমানে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে সুন্দরবনের ছোট-বড় সব দ্বীপ ভাঙনের মুখে। ভাঙন ও পলি জমে যাওয়ার কারণে সুন্দরবন অঞ্চলের জল স্বচ্ছতা হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। পাশাপাশি সুন্দরবনের জল ও জঙ্গলের বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে উঠছে।’’

সুনিতের রিপোর্টটি বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়ছিল সন্ন্যাসি বাজারে মদন ময়রার দোকানের ম্যানেজার মনোরঞ্জন বাড়ৈ। মোরেলগঞ্জের আমতলিতে মনোরঞ্জনের বাড়ি। সেবার সিডরে তার ঘরবাড়ি ও বাগানের গাছপালা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের গ্রামের কয়েকঘর জেলে ও মওয়াল পরিবারের ১৫ জন নিখোঁজ হয়, মনে হয় তারা আর বেঁচে নেই। বলেশ্বর দিয়ে সিডর যখন সুন্দরবন অতিক্রম করে তখন মনোরঞ্জনরা রাতের খাবার খেয়ে ঘুমুতে যাবে। আর ঘুম! ঘণ্টাখানেকের মধ্যে প্রায় সব বাড়ি থেকে আর্তচিৎকার ভেসে আসতে লাগল। আকাশে মনে হলো আগুনের হল্কা ছোটাছুটি করছে। ঝড়ের সাথে পানির ঝাপটা, গাছপালা দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে যেন কোনো দৈত্য। ছোটভাই অমূল্যের পাঁচ মাসের শিশুটা তিনবার চিৎকার দিয়ে একদম থেমে গেল মনে হলো। ওর বউ সুহাসিনী বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছে। বৃদ্ধা ঠাকমা নীরব নিথর হয়ে গেলেন। এর পরের কথা মনোরঞ্জন মনে করতে পারে না। সিডর এমন একটি সময়ে এমনভাবে আক্রমণ শাণাবে ওরা ভাবতে পারেনি। সিডরের নিম্নচাপ নাকি শ্রীলঙ্কার সাগর থেকে উৎপত্তি এবং সেখান থেকেই শক্তি সঞ্চয় করে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে হতে শেষমেশ মনোরঞ্জনদের মোরেলগঞ্জ শরণখোলার পথ ধরল। নভেন্বর মাসের অর্ধেক তখন। মাঠে আধা পাকা ধান। সব শেষ। পরে পত্রিকায় পড়েছে শ্রীলঙ্কার সাগরে বসে ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ (সিংহলি ভাষায় যার অর্থ চোখ) প্রথম চোখ মেলল এবং বেছে নিলো বাংলাদেশের বলেশ্বরের পথ। ভাবখানা এরকম, ওই বছর এমনিতে পরপর দুই বড় বন্যায় বাংলাদেশের আমন ফসলের ৬৫ শতাংশ শেষ। বাকি ৩৫ শতাংশ ফসল যেসব এলাকায় তখনো ভালো ছিল অর্থাৎ যেসব এলাকায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি তেমন নেই বললেই চলে, সেসব এলাকার ওপর দিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কেন নিলো দানব সিডর! সে বছর বাংলাদেশের আমন ধানের সর্বনাশ পূর্ণ করতে? সেবার প্রায় ১৫ লাখ টন চাল আমদানি করতে হয় তার দেশকে। সিডর আর কী করেনি? সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চলকে বিপর্যস্ত করে, কত পরিবারকে সর্বস্বান্ত করে তারপর সে বাংলাদেশ পাড়ি দিলো। এই শালার সিডরকে পালি ওর নামে রিট মামলা জুড়ে দিলি হতো না? ওদের আমতলির মাতবর সেলিম হাওলাদার রেগেমেগে সেবার বলে ফেলল। সন্ন্যাসি স্টিমার ঘাটে রিলিফের বড় জাহাজ ভিড়লে সেলিম সাহেব তা দেখতে গিয়েছিল।

সুন্দরবন বিহারের জন্য অনেক দিন ধরেই চিন্তাভাবনা চলছিল আবদুল হাকিম ট্রাস্টের পক্ষ থেকে। বড় ছেলে মিজানের ঘরে মুজিবর সাহেবের ফুটফুটে নাতিন নুসাইবা। দু’মাস বয়স তার। স্টিমারে চড়ে দাদাবাড়ি এসেছে। ওর জন্য এবারের শীতে গেলবারের মতো দলবেঁধে সুন্দরবন বেড়ানো হয়নি। ‘আল্লাহ বাঁচালি নুসাইবা বড় হলি ওর মা আর ও পরে যাতি পারবানে’- এই কথা বলে এবার তার দাদা-দাদী, চাচা-চাচী ফুপুরা ট্রাস্টের পক্ষ থেকে একটু অন্যভাবে সুন্দরবন যেতে চায়। গন্তব্য তাদের কটকা ও কচিখালি। এবার শরণখোলার রায়েন্দা হয়ে সাউথখালির পর বগি দিয়ে সুন্দরবনের ভেতর ঢোকার পরিকল্পনা তাদের। পূর্ব বরিশালের পঁচিশ সদস্যের এই অভিযাত্রী দলটি সন্ন্যাসি স্টিমার ঘাট থেকে রওনা দিলো বেলার ২টায় ঠিক ভাটা শুরু হওয়ার পর। এম ভি মধুখালি লঞ্চের হেড সারেংকে মিজান জিজ্ঞেস করল,

‘কটকা যেতে কতক্ষণ লাগতে পারে?’

বদিউজ্জামান সারেংয়ের বাড়ি ওপারে মঠবাড়িয়ার মছুয়ায়। হরহামেশা লঞ্চ নিয়ে তার বনে যাতায়াত। দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে সে বলল-

‘সন্ন্যাসি ঘাট থে ঈয়া বনের ভেতর যাইতে ভোলা নদীর মুখথন পৌঁছতে প্রায় দুই গণ্টা লাগবে, হের পর সারারাত লাইগ্যা যাইবে অ্যানে। কটকা পছতে মোগো ভোর হইয়া যাইবে আনে।’

‘ভোর হয়ে যাবে? তাহলে যাওয়ার পথে বনের পুরো পথটাই রাতে পড়বে আর আমরা তো কিছুই দেখতে পারব না।’

‘ও মনু সন্ধ্যা হওয়ার আগেই তো বনে দুঘণ্টা পাবে আনে। আর রাইতের সুন্দরবন ভালাই দেখবআনে। আজ ভরা পূর্ণিমা না? জ্যোস্নার রাইতে বন বিবিরে দেখতে যা লাগবেআনে না? বাঘের চোখ জ্বলতে দেখবেআনে।’ সারেং আদি বরিশালের ভাষা আর খুলনার ভাষা মিলিয়ে মিশিয়ে বলে। আদি বাড়ি তার মঠবাড়িয়া হলেও ছোটবেলা থেকে সে খুলনায় মানুষ। মিজানের খাস বরিশালের ভাষা শুনতে বেশ ভালো লাগে। তার বউ সাদিয়ার বাপের বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া। সেখানকার ভাষা আবার আরেক রকম।

চিতলমারির মফেজ মিস্ত্রি লঞ্চের পার্টনার। সেও এই দলের সাথে যাচ্ছে সুন্দরবন। একটা মজার কথা শোনাল সে। ঘষিয়াখালির চ্যানেল চালু হওয়ার পর থেকে মোরেলগঞ্জ এলাকার পানকুচি নদীর পানি লোনা হওয়া শুরু করেছে। কচা নদীর মছুয়ার পারে পানি মিষ্টি আর মোরেলগঞ্জের পারের পানি লোনা। একই নদীতে দু’পারে দু’ধরনের পানি প্রবাহিত হচ্ছে বেশ মজার ব্যাপার বৈকি। কেন এমন? মফেজ মনে করে, মংলার পশুর নদী দিয়ে সমুদ্র থেকে আসা লোনা পানি ঠেকানো যাচ্ছে না, কারণ এর উজানের নদী খুলনার রূপসা ভৈরব বা মধুমতি দিন দিন কৃশকায় হয়ে পড়ছে। এদের ওপর থেকে পদ্মা ও এর শাখা নদী গড়াই দিয়ে মিষ্টি পানি খুব একটা জোরে নামছে না ফলে সমুদ্রের লোনা পানি উপরের দিকে উঠে আসছে। ঘষিয়া খাল দিয়ে সেই লোনা পানি মোরেলগঞ্জের পানকুচিতেও এসে যাচ্ছে। অন্য দিকে মোরেলগঞ্জের মোহনায় মিলিত হওয়া সন্ধ্যা কচা কিংবা অন্যান্য সব নদীর উৎস বিশাল ও বেগবান মেঘনা নদী। উজান থেকে পানি বিপুল পরিমাণে নামে; ফলে মিষ্টি পানির চাপ বেশি থাকে। লোনা পানি তাকে ভেদ করতে পারে না।

কটকায় তারা যখন পৌঁছাল তখন সকাল ৭টা। রাতে কুয়াশা থাকায় লঞ্চ মন দিয়ে চালানো যায়নি- তাই এই দেরি। সকাল ৭টাতেও কটকার মোহনা কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে বলে মনে হলো ছয়ফুলের। ওর ধারণা- বনের বানর ও পাখিরা প্রত্যুষে গাত্রোত্থান করে এবং ভোরে তাদের সাক্ষাৎ পাওয়া যাবে। এমন একটি আশাবাদ অন্যান্য যাত্রীর অনেকেরই থাকলেও কুয়াশা বাধ সাধল। কটকার চ্যানেলে বেশ কয়েকটি লঞ্চ নোঙর করে আছে। বছরের এ সময়টিতে সুন্দরবন পরিব্রাজে পর্যটকরা আসে দলবেঁধে।

সকাল ১০টায় সবাই রেডি। ইঞ্জিনচালিত ডিঙ্গি নৌকায় তারা বনের ভেতর ছোট খাল দিয়ে ঢুকবে।

‘সাইফুল তাড়াতাড়ি কর’ হাবিবর রহমান তাগাদা দেয়। বনের ভেতর ঘোরাফেরা দেখশোনায় ছাইফুলের আগ্রহ বেশি। গতবার তার করিৎকর্মা ভাবসাব ও ছোটাছুটি দেখে খুলনার ডা: হেলালি ওর নাম দিয়েছিল ছয়ফুল। বড় এক মজার ব্যাপার হয়েছিল গতবার। তারা যখন বনের ভেতর ছোট আইল দিয়ে হাঁটছিল তখন দলের সাথে বন বিভাগের পাহারাদাররা বলল, এই কিছুক্ষণ আগে এখান দিয়ে বাঘ পার হয়েছে এবং সে বাঘ কাছাকাছি আছে। গার্ডরা গন্ধ শুকে বাঘের চলাচল ঠাওর করতে পারে। এ কথা শুনে শোয়েব সাহেবের স্ত্রী জেসমিন আক্তার, যদিও তার বাপের আদি বাড়ি গোপালগঞ্জ, তিনিও ভীষণ ভয় পেলেন বলে মনে হলো।

‘চাচী ভয় পেয়েন না, আমি আছি’ হেলালি সাহস দেয়। ‘আমি শুধু ডাক্তার না, সুন্দরবনের বিশেষ বন্ধু আমাদি জায়গির মহলের খান সাহেব কমরউদ্দীন আহমেদের পোতা আর তা ছাড়া আমি রবীন্দ্র সঙ্গীতও গাই?’ হেলালির আরেক চাচী, বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা, সেলিমা বেগম বলে ওঠেন-

‘বাঘ কি রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনে আমাদের আলাদা খাতির করবে?’

‘বাঘ দেখলে দর্শকরা রাগপ্রধান গান গেয়েও পার পাবে না’ মুজিবর নিশ্চিত করল।

এসব কথা বার্তার মাঝখানেই সাইফুল চিৎকার দিয়ে উঠল

‘পাইছি পাইছি’...

‘কী সাইফুল?’ সবাই সমস্বরে জানতে চায়।

‘যে বাঘটা কিছুক্ষণ আগে এখান দে গেছে তার পায়ের খোঁজ পাইছি। এই দেখেন একদম টাটকা।’ সবাই দেখল নরম কাচা মাটির ওপর বাঘের পায়ের নখ পর্যন্ত ছাপ বোঝা যাচ্ছে। তারা বিশ্বাস করল এবং কিঞ্চিৎ ভয় পেল। ছাইফুল বাঘের পায়ের খোঁজ (গর্ত) ওয়ালা জায়গাটার চারিধার সুন্দর করে কেটে পুরো মাটির চাং তুলে আনল। বেশ মজার, সাহসের এবং সৃজনশীল কর্ম বটে। বাঘের পদচিহ্ন ইতিহাসের পাতায় থুক্কু জাদুঘরে সংরক্ষণের উদ্যোগ বলে মনে হতে পারে।

‘তার পায়ের ধূলি নেয়ার এ ধরনের উদ্যোগের জন্য স্বয়ং বাঘটিও বেজায় খুশি হবে’ দলের মেধাবী সদস্যা তানিয়া টিপ্পনী কেটে বলে উঠল। সে নর্থ-সাউথের বিবিএর গেলবারের ভ্যালেডিকটোরিয়ান।

তানিয়ার বোন বিথুন নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্ট ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী আবার আর্থ ক্লাবের সেক্রেটারি জেনারেল। সে শক্তিশালী ক্যামেরায় সূ²ভাবে বাঘ আর হরিণের পায়ের ছাপের ছবি তুলল। সাইফুল নৌকায় রেখে এলো সেই মাটি।

সেলিম হাওলাদার আরেক মজার প্রসঙ্গ সামনে আনলেন। ঢাকার সচিব সাহেব এবার আবদুল হাকিম একাডেমির ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এলে তার কাছে শুনেছেন সুন্দরবনে বাঘ হরিণ কুমির সবাই মিলে নাকি একটি সংগঠন গড়ে তুলেছে। নিজেদের অধিকার নিয়ে নিজেরা সোচ্চার হচ্ছে বনের পশু-পাখিরা। তারা কয়েকটি সম্মেলনও নাকি করেছে। রাতে টেলিফোনে তারা খুলনার মেয়রের সাথে কথা বলেছে।

তারা বনের ভেতর এবং সমুদ্রসৈকত সব ঘুরে সন্ধ্যার আগে লঞ্চে ফিরে এলো। কচিখালির উদ্দেশে এখন রওনা দেবে। সবাই টায়ার্ড। সেলিম হাওলাদার সবার আগে ঘুমিয়ে পড়েছেন। সেই সকাল থেকে সুন্দরবনের পশু-পাখিদের সমস্যা নিয়ে, তাদের নিজেদের কথা বলতে এগিয়ে আসার ব্যাপারটি তার মাথায় বেশ ঘুরপাক খাচ্ছিল। এই অবস্থায় সেলিম ঘুমিয়েই যেন জানতে পারলেন কটকায় ‘উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর এর প্রভাব’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক হবে আগামীকাল। সেই বাংলাদেশ বাঘ হরিণ কুমির (বাবাহকু) ফেডারেশনের উদ্যোগে। বাবাহকুর তথ্য বিভাগের প্রধান হরিণা হাপান এতে পৌরাহিত্য করবেন। সঞ্চালকের ভূমিকায় থাকবেন বিশিষ্ট প্রাণিবিজ্ঞানী পশ্চিমবঙ্গের নিখিল জঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের উপাচার্য মি. মাধামান হনুইনা। মি. মাধামান বানর ও হনুমান সম্প্রদায়ের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। গোলটেবিল বৈঠকে মূলত কোপেনহেগেনের জলবায়ু সম্মেলনে গৃহীত উষ্ণায়ন প্রশমন প্রস্তবাবলির ওপর প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করা হবে বলে প্রেসনোটে বলা হয়েছে। সেলিম প্রেসনোট থেকে আরো জানতে পারল আজ দুপুরে এখানে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এটিও বলা হয়েছে, এ গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে কটকা থেকে কোপেনহেগেনে কড়া প্রতিক্রিয়া প্রেরণ করা হবে। বলা হবে- শুধু কার্বন নিঃসরণে তথাকথিত ঐকমত্যে পৌঁছানোর প্রস্তাব নিলে হবে না, এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মাপকাঠিও স্থির করতে হবে এবং সিদ্ধান্ত অনুসরণে অপারগ দেশ ও অর্থনীতির বিরুদ্ধে স্যাংশনের মতো প্রতিবিধানমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

‘এই সেলিম বিড় বিড় করে কী শুধু হবে হবে করছিস? ডিনার করবিনে?’

‘অ্যাঁ!’ সেলিমের সাড়ে তিন কেজি ওজনের নাবালক ঘুমটা ছুটে গেল।

আগামী ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ হবে। বাজেটে উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর এর প্রভাব প্রশমনের জন্য নতুন করে কিছু বলা হবে কি না সে চিন্তার ঘোরের মধ্যে রয়েছে সবাই।

লেখক : সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান

সূত্র,নয়া দিগন্ত