বিশ্বব্যাপী চীনের উত্থানের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে এ অঞ্চলে চীনের বিরুদ্ধে একটি প্রভাবশালী দেশ হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে। বাণিজ্যিক মিত্র থেকে ধীরে ধীরে ভারত পরিণত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রতিরক্ষা অংশীদারে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ভারত প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত শত্রু রাশিয়ার পাশে দাঁড়ায়। এরপর চীন ও রাশিয়ার নেতৃত্বে ব্রিক্সের পতাকাতলে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নতুন বহুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগের ক্ষেত্রেও সামনের সারিতে অবস্থান নেয় ভারত।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত ভারত বিভিন্ন ক্ষেত্রে একের পর এক যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে কিন্তু সবই নীরবে হজম করেছে বাইডেন প্রশাসন। তবে ভারতের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের ৫০ শতাংশ শুল্ক ঘোষণার মাধ্যমে এটি এখন পরিষ্কার, ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের ভারত নীতির ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে। আর এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়াসহ পুরো এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে সূচনা হতে চলছে নতুন এক অধ্যায়।
দক্ষিণ এশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে হোয়াইট হাউসের নীতির বড় ধরনের পরিবর্তন এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান। ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম দফায় ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের দিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দিলেন। ট্রাম্পের এ ঘোষণা ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের কৌশলগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
কানাডা, ইউরোপসহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিত্র দেশের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ আর ভারতের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপট এক নয়। অন্যান্য মিত্র দেশের বিরুদ্ধে উচ্চ শুল্ক আরোপের মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং নিজস্ব শিল্পের বিকাশ। কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করেছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে। আর এটাই হলো শুল্কযুদ্ধের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক।
৩০ জুলাই এবং ৬ আগস্ট দুই দফায় ভারতের বিরুদ্ধে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্টভাবে বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার কারণে এই শুল্ক আরোপ করা হলো।
শুল্ক আরোপের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ তার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা যেসব মন্তব্য করেছেন, তা ভারতকে সম্পূর্ণরূপে ধসিয়ে দিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ভারতের অর্থনীতি মৃত। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ভারত আমাদের শতভাগ বন্ধু দেশ নয়। হোয়াইট হাউস ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার বলেছেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ভারত চীনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত একটি দেশ, যা আমাদের কাছে বিস্ময়কর।
স্টিফেন মিলারের এ মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে চীনকে মোকাবিলার জন্য। কিন্তু সেই ভারতই এখন চীনের সঙ্গে মিলে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কিনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ আর প্রক্সিযুদ্ধ অকার্যকর করে দিচ্ছে। তাই ৭ আগস্ট বিবিসির এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে যথার্থই মন্তব্য কর হয়েছে ‘ভারত এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্ত মিত্র নয়’।
ওয়াশিংটন শুধু যে ভারত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তাই নয়, একই সঙ্গে তারা নতুন করে সম্পর্ক জোরদার করছে ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তানের সঙ্গে। ওয়াশিংটন দীর্ঘকাল ধরে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চললেও এ ক্ষেত্রে হোয়াইট হাউসের পাল্লা সবসময়ই ভারতের দিকে ভারী ছিল। কিন্তু এবার এটি পরিষ্কার, ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দেশ এখন পাকিস্তান। জুনে পাকিস্তান সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল জেনারেল অসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে ডিনার পার্টিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিরল সম্মানে ভূষিত করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মাত্র দুই মাসের মধ্যে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে আবার রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যান জেনারেল অসিম মুনির।
এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ বেশ কয়েকজন জেনারেলের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা করেন। শুধু তাই নয়, ভারতের বন্ধুদেশ আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে ভারতের বিরুদ্ধে পারমাণবিক হামলার হুমকি পর্যন্ত দিলেন, যা নিয়ে আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভারত ২০২১ সালে রাশিয়া থেকে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেমের প্রথম ডেলিভারি গ্রহণ করে। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন অনেক হুমকির পরও ভারতের বিরুদ্ধে এ জন্য কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। অথচ ২০১৯ সালে একই মিসাইল তুরস্ক রাশিয়া থেকে সংগ্রহের কারণে ২০২০ সালে ডিসেম্বরে ওয়াশিংটন আঙ্কারার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তুরস্ককে বের করে দেয় আলোচিত এফ-৩৫ নামক ফিফথ জেনারেশন ফাইটার জেট প্রকল্প থেকে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা বিভিন্ন মিত্র দেশ মিলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন অবরোধ আরোপ করে। এর ফলে ইউরোপসহ আন্তর্জাতিক বাজারে বন্ধ হয়ে যায় রাশিয়ার জ্বালানি তেল ও গ্যাস বিক্রি। এ অবস্থায় রাশিয়া আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় ২৭ শতাংশ কম দামে জ্বালানি তেল বিক্রির ঘোষণা দেয়। এ সুযোগ লুফে নেয় ভারত ও চীন।
ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তর জ্বালানি তেল আমদানিকারক দেশ এবং এ জ্বালানি তেল মূলত সে আমদানি করত মধ্যপ্রাচ্য থেকে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ভারতের প্রধান জ্বালানি সরবরাহকারী দেশে পরিণত হয় রাশিয়া। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ভারত যেখানে রাশিয়া থেকে বছরে মাত্র দুই বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি পণ্য আমদানি করত, সেখানে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ভারত বছরে রাশিয়া থেকে ৩২ বিলিয়ন ডলারের বেশি জ্বালানি তেল আমদানি করেছে।
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চীন এবং ভারত রাশিয়া থেকে এভাবে জ্বালানি তেল কেনার কারণে অকার্যকর হয়ে পড়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা। শুধু তাই নয়; বরং যুদ্ধের মধ্যেই তেল বিক্রি বাবদ রেকর্ড আয় করে রাশিয়া এবং টিকে যায় দেশটির অর্থনীতি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের উদ্দেশ্য ছিল তার সামরিক ও অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলা। কিন্তু সে পরিকল্পনা মূলত বানচাল হয়ে যায় চীন ও ভারতের কারণে। বাইডেন প্রশাসন বারবার অভিযোগ করে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনার মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধে সরাসরি রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছে এবং রাশিয়াকে সহায়তা করছে।
শুধু তাই নয়, ভারত রাশিয়া থেকে সস্তায় জ্বালানি কিনে তা রিফাইন করে উচ্চ দামে বিক্রি করে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও বাইডেন প্রশাসন ভারতের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়নি। বরং উল্টো ভারতকে সঙ্গে নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে চারদেশীয় মৃতপ্রায় জোট কোয়াডকে আবার জাগিয়ে তোলার উদ্যোগ নেয় বাইডেন প্রশাসন।
ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চীন ও ভারতকে সঙ্গে নিয়ে নতুন একটি বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। নতুন এ বিশ্বব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী ডলারকেন্দ্রিক যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে মাল্টিপোলার বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলা। এ জন্য ব্রিক্স সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ উদ্যোগে তখন ব্যাপক সাড়া পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী সব দেশ রাশিয়া-চীনের নেতৃত্বে আসার জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে যায়। এমনকি সৌদি আরব পর্যন্ত ব্রিক্সে যোগ দেওয়ার আবেদন করে বসে। ব্রিক্সের অধীনে ডলারের বিকল্প নতুন একটি একক মুদ্রা চালুরও কার্যক্রম শুরু হয় বেশ জোরেশোরে। নতুন উদ্যমে চালু করা হয় ব্রিক্স ব্যাংক নামে পরিচিত সাংহাইভিত্তিক নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।
ভারত, রাশিয়া ও চীন নিজেদের মধ্যে ডলারের পরিবর্তে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন শুরু করে। এর আগে সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চীনের রাতারাতি উত্থান, গ্লোবাল সাউথের পক্ষে চীন রাশিয়ার অবস্থান ও চীনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিল ওয়াশিংটন। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী চীন-রাশিয়ার নেতৃত্বে ব্রিক্সের পতাকাতলে নতুন ব্লক তৈরির ব্যাপক তোড়জোড়ে নতুন করে দুশ্চিন্তায় ফেলে ওয়াশিংটনকে। তারা বাধ্য হয় নড়েচড়ে বসতে এবং ২০২৩ সালে বাইডেন প্রশাসন আয়োজন করে সামিট ফর ডেমোক্রেসি। এর লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্রের নামে চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা ব্লক তৈরি করা। অনেক বিশ্লেষক তখন বাইডেন প্রশাসনের এ উদ্যোগকে চীন রাশিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় স্নায়ুযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক যাত্রা হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
অন্যদিকে গত জুলাইয়ে ব্রাজিলে ব্রিক্স শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রিক্সকে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু ঘোষণা করেন এবং ব্রিক্সের সব সদস্য দেশের বিরুদ্ধে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন।
দীর্ঘ স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর পুতিনের নেতৃত্ব রাশিয়া আবার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয় মাত্র ২০ বছরের মধ্যে। অন্যদিকে চীন আবির্ভূত হয় যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরেক শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। শুধু তাই যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর বন্ধুত্ব যখন ক্রমে গভীর থেকে গভীর হয়ে ‘নো-লিমিটস ফ্রেন্ডশিপ’ রূপ নেয়, তখন তা বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের বিরুদ্ধে বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখা দেয়।
এ অবস্থায় যে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র এতকাল ধরে চীনের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে, সেই ভারত যখন চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কাজে জড়িয়ে পড়ে, তখন এর পরিণতি যা হওয়ার তাই হলো। ভারতকে মৃত ঘোষণা করা হলো হোয়াইট হাউস থেকে।
গত ৬ মে মধ্যরাতে পাকিস্তানে আগ্রাসন চালিয়ে পুরো বিশ্বের কাছে ভারত নিজেকে একটি খেলো রাষ্ট্রে পরিণত করে। পুরো বিশ্ব দেখল সামরিক দিক দিয়ে ভারত আসলে একটি পেপার টাইগার বা কাগুজে বাঘ মাত্র। পাকিস্তানের মতো দেশের বিরুদ্ধে প্রচলিত যুদ্ধে যে ভারত এভাবে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় মুখ থুবড়ে পড়ে, সেই ভারতকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কি করবে চীনের মতো শক্তির বিরুদ্ধে?
তা ছাড়া ষড়যন্ত্র, আধিপত্যবাদ আর শোষণমূলক পররাষ্ট্রনীতির কারণে ভারত তার প্রতিবেশী সবগুলো দেশকে ভারতবিরোধী দুর্গে পরিণত করেছে। ভারতের এই পরিণতি ওয়াশিংটনের অজানা নয় এবং তাদের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের মোহভঙ্গ হতে সময় লাগেনি।
লেখক : সহকারী সম্পাদক, আমার দেশ