চীনের পররাষ্ট্রনীতির গতিপথ দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক বাস্তববাদ থেকে দৃঢ় ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানে রূপান্তরিত হয়েছে।

বৈদেশিক নীতি সহজাতভাবে গতিশীল ও বিকশিত হয় পরিবর্তিত ভূ-রাজনীতি ও আঞ্চলিক ক্ষমতা পুনর্বিন্যাসের প্রতিক্রিয়া হিসেবে। রাষ্ট্রকে অবশ্যই জাতীয় স্বার্থ রক্ষা, কূটনৈতিক সুবিধা অনুকূল করা এবং নিরাপত্তার দুর্বলতা প্রশমিত করতে তাদের কৌশলগত অবস্থান পুনর্বিন্যাস করতে হয়।

চীন একটি বৃহৎ শক্তি এবং পাকিস্তানকে মাঝারি শক্তি ধরা হয়। চীন যখন বৈশ্বিক প্রভাব জোরদার করার জন্য তার অর্থনৈতিক উত্থানকে কাজে লাগিয়েছে, তখন পাকিস্তান আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং অর্থনৈতিক অপরিহার্যতা সুরক্ষিত করার জন্য কৌশলগত পুনর্বিন্যাসে জড়িত। চীনের পররাষ্ট্রনীতির গতিপথ দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক বাস্তববাদ থেকে দৃঢ় ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানে রূপান্তরিত হয়েছে।

এই বিবর্তনের জন্য চীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পর হার্ড-পাওয়ার অর্জনের চেয়ে অর্থনৈতিক সংহতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ, এফডিআই ও বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে আন্তঃনির্ভরশীলতার কৌশল গ্রহণ করে বহির্মুখী অর্থনীতিকে সহজতর করে। এই পদ্ধতিটি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) মতো প্রকল্পগুলোর ভিত্তি স্থাপন করে। চীন আঞ্চলিক অর্থনৈতিক স্থাপত্য জোরদার করেছে, আসিয়ান-চীন মুক্তবাণিজ্য চুক্তি এর উদাহরণ। দেশটি পশ্চিমা অর্থনৈতিক আধিপত্যের বিপরীতে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে।

২০১৩ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সূচনা। এটি ইউরেশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকাজুড়ে অবকাঠামোগত সংযোগ তৈরি করে সংশোধনবাদী শক্তি হিসেবে নিজের ভূমিকাকে সংহত করে। চীনের এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এবং সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের মতো পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন আর্থিক কাঠামোর পাল্টা শক্তি হিসেবে কাজ করছে যা মার্কিন নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক শাসন থেকে কৌশলগত বিচ্যুতি, একটি মোক্ষম আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক চাল। চীনের ভূরাজনৈতিক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই বিরোধী ফ্যাক্টর। সেটি মাথায় রেখেই চীন আন্তর্জাতিক বিষয়দি পরিচালনা করে।

মার্কিন নিয়ন্ত্রণ কৌশলের প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীন দক্ষিণ চীন সাগরে সামুদ্রিক সামরিকীকরণ অনুসরণ করছে, দ্বীপ-নির্মাণ এবং নৌ-দুর্গের মাধ্যমে আঞ্চলিক দাবি শক্তিশালী করেছে। চীন-রাশিয়ান সামরিক সহযোগিতা, যৌথ নৌ-মহড়া এবং কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তির ফলে মার্কিন একমেরুতা অমান্য করে বহুমেরুকরণের প্রতি চীনের প্রতিশ্রুতি বিভিন্ন দেশে প্রশংসা পেয়েছে। চীন কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে অর্থনৈতিক শক্তি কাজে লাগানোর একটি বাস্তব কৌশল কাজে লাগিয়েছে।

অন্যদিকে পাকিস্তান ভূ-রাজনৈতিক তরলতা নেভিগেট করে প্রধান বৈশ্বিক স্বার্থের সঙ্গমস্থলে অবস্থিত একটি মধ্যম শক্তি হিসেবে ঐতিহাসিকভাবে কৌশলগত অভিযোজন ক্ষমতা দেখিয়েছে। তার বৈদেশিক নীতিকে ক্ষমতার রূপান্তরের সাথে সমন্বয় করেছে।

এই অভিযোজনযোগ্যতা এভাবেও ব্যাখ্যা করা যায়, আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত প্রত্যাহারের পরে, প্রেসলার সংশোধনীর অধীনে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে পাকিস্তান কূটনৈতিক বিচ্ছেদের মুখোমুখি হলে ইসলামাবাদ প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে চীনের উপর নির্ভরতাকে আরো গভীর করে তোলে। পাকিস্তান অর্থনৈতিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে ইরান, তুরস্ক এবং মধ্যএশীয় প্রজাতন্ত্রের সাথে সম্পর্ক জোরদার করে বিকল্প প্রান্তিকীকরণ করতে সক্ষম হয়। সন্ত্রাসবাদবিরোধী সহযোগিতার বিনিময়ে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা পেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির মিত্র হওয়ার জন্য তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করে। তবে ড্রোন হামলা ও ভারত-মার্কিন উত্তেজনা প্রান্তিককরণ পাকিস্তানকে চীন ও রাশিয়ার সাথে অংশীদারিত্ব জোরদার করতে বাধ্য করে। পাকিস্তান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে উপসাগরীয় কূটনীতিতে দক্ষতা দেখাতে সক্ষম হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়ায় পাকিস্তান চীনকে তার প্রধান কৌশলগত অংশীদার হিসেবে গ্রহণ করে। দেশটি কূটনৈতিক তৎপরতায়ও বৈচিত্র্য আনতে সক্ষম হয়। তুরস্ক, রাশিয়া ও মধ্য এশিয়ার সাথে সম্পর্ক জোরদার করে ক্রমবর্ধমান বহুমেরু বিশ্বে এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা তৈরি করতে পেরেছে। সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শক্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে মধ্যম শক্তির কৌশল প্রতিফলিত হয়েছে পাকিস্তানের এই সমন্বয়ে। তুলনামূলক বিশ্লেষণে চীনের বৈদেশিক নীতিতে আধিপত্যবাদী উপাদান থাকলেও অর্থনৈতিক রাষ্ট্রনৈপুণ্য ও সামরিক দৃঢ়তাকে তার বৈশ্বিক মর্যাদা সংহত করার জন্য ব্যবহার করতে পারা বৈশ্বিক রাজনীতিতে বড় অর্জন। ভূ-রাজনৈতিক প্রবাহের যুগে অভিযোজিত কূটনীতির প্রয়োজনীয়তা প্রদর্শন করে উভয় রাষ্ট্রই প্রমাণ দেয়, কীভাবে বৈদেশিক নীতি বিকশিত শক্তি কনফিগারেশনের ওপর নির্ভরশীল।

চীন-পাকিস্তান অভিযোজনে ভারত খুব উদ্বিগ্ন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক বিরোধ রয়েছে। বিশেষ করে কাশ্মির ইস্যু তাদের ঐতিহ্যগত প্রতিদ্ব›দ্বীতে পরিণত করেছে। চীন ও পাকিস্তান বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে সিপিইসির সাথে কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে যা তাদের সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ভারত চীন-পাকিস্তান জোট নিয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। ভারতের উদ্বেগের কারণও রয়েছে।

নিরাপত্তা উদ্বেগ : চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে ব্যাপক সামরিক সহযোগিতা বর্তমান। ২০২৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়, পাকিস্তান চীনা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করেছিল। ভারত উদ্বিগ্ন যে, ভবিষ্যতে কোনো সংঘর্ষে চীনের অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র পাকিস্তানকে আরো শক্ত অবস্থান নিয়ে যাবে এবং সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের ভারতের প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলবে। চীনের সাথে ভারতের সীমান্তবিরোধ রয়েছে। ভারত ও চীনের মধ্যে সামরিক সঙ্ঘাত হলে পাকিস্তান চীনের সাথে জোটবদ্ধ হতে পারে। এটি ভারতের সামরিক সম্পদের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করবে এবং সামরিক কৌশলগত বিন্যাস ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

অর্থনৈতিক উদ্বেগ : সিপিইসি পাকিস্তান শাসিত কাশ্মিরের গিলগিট-বালটিস্তান অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গেছে, অঞ্চলটি ভারতও দাবি করে। ভারত সিপিইসির বিরোধিতা করে, এটিকে তার আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে দেখে। উপরন্তু, সিপিইসির উন্নয়ন পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে বলে ভারত মনে করে। চীন ও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি ও অন্যান্য খাতে বিস্তৃত হয়েছে। চীনের সহায়তায় পাকিস্তানের অর্থনীতি বিকশিত হওয়ার সাথে সাথে দক্ষিণ এশিয়ায় তার প্রভাব বাড়বে যা এই অঞ্চলে ভারতের অর্থনৈতিক আধিপত্যের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ : ঐতিহাসিকভাবে ভারত নিজেকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রভাবশালী শক্তি মনে করে। তবে, চীনের গভীর সহযোগিতা পাকিস্তানকে আরো শক্তিশালী করেছে, যা ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেশটিকে আরো বলীয়ান করেছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব ক্ষুণœ করছে, তার ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করছে। চীন-পাকিস্তান সহযোগিতার ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব বাড়ছে। ভারতের আশঙ্কা করে, তার ঐতিহ্যবাহী প্রভাববলয়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আরো অনুপ্রবেশের জন্য চীন পাকিস্তানের সাথে তার সম্পর্ককে কাজে লাগাবে।

কূটনৈতিক উদ্বেগ : চীন-পাকিস্তান জোট ভারতের কূটনৈতিক কৌশলকে প্রভাবিত করেছে। ভারত ঐতিহ্যগতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মতো প্রধান শক্তির সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে। তবে চীন-পাকিস্তান জোট শক্তিশালী হওয়ায় ভারত তার কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হয়েছে। কূটনৈতিক কৌশলের জটিলতা বাড়িয়ে ভারতকে এখন তার স্বার্থ রক্ষার জন্য চীন ও পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ককে আরো সতর্কতার সাথে পরিচালনা করতে হচ্ছে। ভারত বিশ্বাস করে, চীন-পাকিস্তান জোট অন্যান্য দেশকে ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে তাদের অবস্থান সামঞ্জস্য করতে পরিচালিত করতে পারে, সম্ভবত ভারতের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন হ্রাস করতে পারে। যেমন- চলতি বছরের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় চীন উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শন ও উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছিল। ভারতের উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল যে, চীনের অবস্থান অন্যান্য দেশকে প্রভাবিত করে ভারতের বিরুদ্ধে জনমত এবং কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে।

পারমাণবিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ : চীন পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে পারমাণবিক চুল্লি, সমৃদ্ধকরণ প্রযুক্তি, হেভি ওয়াটার প্রকল্প এবং অন্যান্য পারমাণবিক পণ্য ও পরিষেবা সরবরাহসহ উল্লেখযোগ্য সহায়তা দিয়েছে। এতে পাকিস্তানের পারমাণবিক বিকাশ ত্বরান্বিত হয়েছে, পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার হয়েছে। পাকিস্তানের পারমাণবিক অগ্রগতি দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়াতে, আঞ্চলিক পারমাণবিক নিরাপত্তা অস্থিতিশীল করতে এবং পারমাণবিক সঙ্ঘাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে ভারত এখন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সাথে সামরিক সহযোগিতা জোরদারের চেষ্টা করছে। নৌ-সক্ষমতা বাড়ানো এবং ভারত মহাসাগরে চীনের প্রভাব প্রতিহত করতে মালাবার মহড়ার মতো যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সাথে তার সামরিক সম্পর্ক আরো গভীর করছে। আত্মরক্ষার সক্ষমতা বাড়াতে প্রতিরক্ষা শিল্পে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে ভারত। যেমন- দেশীয় যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্রের বিকাশ ত্বরান্বিত করেছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত সিপিইসি সম্পর্কিত ‘সার্বভৌমত্বের বিষয়গুলো’ তুলে ধরছে, চীন-পাকিস্তান সহযোগিতা বন্ধে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি ও সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে। এদিকে, ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় তার প্রভাব জোরদার করতে এবং চীন-পাকিস্তান জোটের প্রভাব প্রশমিত করতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরো গতিশীল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

চীন ও পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, সামরিক সহযোগিতা ও আঞ্চলিক সংযোগের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আঞ্চলিক সুরক্ষার চ্যালেঞ্জ পরিচালনার জন্য বহুমুখী পদ্ধতির বিকাশ করেছে। তাদের সহযোগিতা অভিন্ন কৌশলগত স্বার্থ, বিশেষ করে সিপিইসির কার্যক্রম বৃহত্তর আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা তৈরি করেছে। উভয় দেশই সন্ত্রাসবাদের অভিন্ন হুমকির সম্মুখীন, যার মধ্যে রয়েছে সিপিইসি প্রকল্পগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা গোষ্ঠী এবং পাকিস্তানে অবস্থানরত চীনা নাগরিক। বিশ্লেষকরা উইঘুর বিচ্ছিন্নতাবাদ, টিটিপি-তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান এবং বেলুচ জঙ্গিদের প্রসঙ্গ তুলেছে। চীন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে সামরিক প্রশিক্ষণ, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও যৌথ অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তানকে তার সন্ত্রাসবিরোধী ক্ষমতা জোরদার করতে সহায়তা করছে। এই অংশীদারিত্ব এখন চীনের গেøাবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে, যা আঞ্চলিক সুরক্ষা ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় সামাজিক পরিবেশকে অনুকূল করার উপর জোর দিয়েছে।

সামরিক ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব চীন-পাকিস্তান সম্পর্ককে প্রায়ই টেকসই বন্ধুত্ব হিসেবে বর্ণনা করা হয়, যা থেকে গভীর সামরিক সহযোগিতার ভিত্তি প্রকাশ পায়। এর মধ্যে রয়েছে- যৌথ মহড়া, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি হস্তান্তর ও আঞ্চলিক ফোরামে কূটনৈতিক সংহতি। সময়ের সাথে সাথে, তাদের সামরিক সম্পর্ক মৌলিক কৌশলগত সহযোগিতা থেকে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্বে বিকশিত হয়েছে যা প্রচলিত এবং অ-প্রথাগত উভয় নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলা করেছে। এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে চরমপন্থার আবেদন হ্রাস করে স্থিতিশীল শক্তি হিসেবেও কাজ করছে। উভয় দেশই সাংহাই সহযোগিতা সংস্থায় সক্রিয়, যা মধ্যএশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সাথে বৃহত্তর আঞ্চলিক সুরক্ষা সহযোগিতা এবং সংহতকরণের জন্য একটি প্ল্যাটফর্মে কাজ করে। চীন-পাকিস্তান নিরাপত্তা সম্পর্ক এখন তার নিজস্ব স্বতন্ত্র গতিশীলতার সাথে কাজ করছে, যা ভারত ফ্যাক্টর থেকে স্বাধীন ও ভিন্ন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার

সূত্র, নয়া দিগন্ত