বাংলাদেশের নেতিবাচক জনমনস্তত্ত্বের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি সংযোগ আছে। এই দল সম্পর্কে সব অভিযোগ ছাপিয়ে একটি বৈশিষ্ট্য এই যে, এরা আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও চালচলনে একটু উগ্র। ফ্যাসিবাদ, নাজিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের যে অভিযোগটি হরহামেশাই এদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়, আসলে এটা তাদের মজ্জাগত। এদেশের বামরা কথাবার্তায় তাত্ত্বিক এবং ডানরা আদর্শিক। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগাররা উগ্র। ১৯৬৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগকে সরাসরি দেখার ও বোঝার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা রয়েছে। অতিমাত্রিক রাজনীতি-সচেতন এই দেশের একজন সচেতন কিশোর হিসেবে সেই অভিজ্ঞতা অভাবিত হলেও অসম্ভব নয়। চায়ের পেয়ালায় ঝড় তোলার বাগ্ধারা বাস্তব দেখেছি চায়ের আড্ডায়। সেখানে আওয়ামীরা যখন হেরে যেতেন বাকচাতুর্যে, তখন তারা হাতা গুটাতেন। কখনো কখনো হামলা করতেন। ১৯৬৬ সাল থেকে অর্থাৎ ছয় দফা ঘোষণার পর থেকে আওয়ামী লীগ ক্রমেই জনপ্রিয় হতে থাকে। সেইসঙ্গে বাম ধারার তাত্ত্বিক রাজনীতি ও ডান ধারার আদর্শিক রাজনীতি ক্রমহ্রাসমান হতে থাকে। ১৯৭০ সাল নাগাদ আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রখর ও প্রবল হতে থাকে। ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এই নিকৃষ্ট মানসিকতা তাদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দান করে। ভোটকেন্দ্রে তাদের স্বাভাবিক জনপ্রিয়তা অস্বাভাবিকতায় পৌঁছে। স্বাধীনতার পরপর সত্যিই দেশটি যখন তাদের দ্বারা শাসিত হতে থাকে, তখন প্রকাশ্যভাবে তাদের এই অস্বাভাবিক ফ্যাসিবাদী ও নাজিবাদী আচরণ স্বাভাবিকভাবেই জনগণকে ক্ষুব্ধ করে। অন্য কাউকে গ্রহণ করার, সহ্য করার ও ধারণ করার মানসিকতা তাদের কখনোই ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের পরপর অবাঙালি তথা বিহারি জনগোষ্ঠীর প্রতি তাদের নির্মম আচরণ গোটা বিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি করে। আজকের মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের ইতিহাস খুঁড়লে সেই মর্মান্তিকতার প্রমাণ মিলবে। সে সময়ের লাল বাহিনী, নীল বাহিনী ও সবুজ বাহিনী গোটা দেশে লুটপাট ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে তাদের মনোভাবটি ছিল এমন যে, একজন বিরোধী সদস্যকেও তারা নির্বাচিত হতে দেবে না। তাদের অধীনে যত নির্বাচনই অনুষ্ঠিত হয়েছে কোনোটিতেই তারা স্বাভাবিক আচরণ করেনি। এভাবেই চিহ্নিত হয়েছে ‘ভোটারবিহীন নির্বাচন’—নিশীথ রাতের ভোট ও ডামি ভোট। কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। নেকড়ে তার গায়ের ছাপ যেমন পরিবর্তন করতে পারে না, তেমনি স্বভাবও না। যে দুর্ভাগ্যজনক নির্বাচন দিয়ে ’৭৫-এর পরে তাদের রাজনীতিতে আবার আগমন, সেটা ছিল ১৯৯৬ সালের নির্বাচন। এ সময় ছলেবলে-কলেকৌশলে জাতীয়তাবাদী শক্তি ও ইসলামি শক্তিকে তারা বিভক্ত করতে সক্ষম হয়। নাহলে বাংলাদেশের মাটিতে চিরকালের জন্য তাদের কবর হয়ে যেত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি কষ্টকর অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে বিজয় কখনোই স্বাভাবিক, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ছিল না। জনগণ কখনোই ব্যালটের মাধ্যমে তাদের বিজয় দান করেনি। সবটাই ছিল জোর-জবরদস্তিমূলক, সবটাই ছিল ষড়যন্ত্রমূলক। প্রতারণা ও মিথ্যাচারের সংমিশ্রণ ছিল সেগুলো। এগুলো গোপন কোনো কথা নয়। এদেশের লোকেরা ৫০ বছর ধরে তাদের এই অপকর্মগুলো প্রত্যক্ষ করেছে। তাই যদি সত্যি হয়, তাহলে ২০২৪ সালের বিপ্লব-পরবর্তী এই সময়ে আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো ও সিভিল সোসাইটি আওয়ামী তর্জন-গর্জনে কেন তটস্থ? প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৬ জুলাই বলেছেন, ‘পতিত শক্তি গন্ডগোল লাগিয়ে নির্বাচনের আয়োজন ভন্ডুল করার চেষ্টা করছে। এ অপচেষ্টাকে প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ ১৪টি দল ও জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। ড. ইউনূস আরো বলেন, অভ্যুত্থানের সব শক্তি মিলে একটি সুন্দর নির্বাচন করতে না পারলে এই মস্ত বড় সুযোগ আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। পরাজিত শক্তি যখনই সুযোগ পাচ্ছে, তখনই নানারকম গন্ডগোল সৃষ্টি করছে। এসব করে তারা দেশের স্বাভাবিক অগ্রযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। রাজনৈতিক দল এবং এর নেতৃত্ব প্রায়ই অনুরূপ মনোভাব ব্যক্ত করে আসছে। বিশেষ করে গোপালগঞ্জের ঘটনা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে গণঅসন্তোষ প্রকাশের সুযোগে আওয়ামী সংশ্লিষ্টতার কারণে রাজনৈতিক নেতারা এমন মন্তব্য করছেন। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী ও লেখক তথা সিভিল সোসাইটির সদস্যরাও এ রকম আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
প্রকৃতপক্ষে জনগণই একটি রাজনৈতিক দলের ভিত্তি। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা, আন্দোলন-সংগ্রাম এবং জনগণমুখী কর্মসূচি ও কর্মধারার মাঝেই বেঁচে থাকে। উপনিবেশ-উত্তর এই তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের উৎস উপনিবেশবাদবিরোধী আন্দোলন। এদেশে মুসলিম লীগ ১৯৩৫ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত জনপ্রিয়তায় ও নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল অপ্রতিরোধ্য। ১৯৫৪ সালে জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ আচরণ করতে না পারার কারণে ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি ঘটে। পাকিস্তানি শাসক এলিট এবং সেনাবাহিনীর অন্যায্য ও অসম আচরণে বাংলাদেশের জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পাকিস্তানপন্থি যেকোনো রাজনৈতিক দল আর জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ যে গরিষ্ঠতা অর্জন করে, স্বাধীনতা অর্জিত হলে সেই প্রয়োজনীয়তা, জনপ্রিয়তা ও কার্যকারিতা হ্রাস পায়। ১৯৭৩ সালে জনপ্রিয়তায় ধস সত্ত্বেও শুধু গায়ের জোরে তারা ক্ষমতায় থেকে যায়। নির্বাচন যখন গণআকাঙ্ক্ষার তথা জনরুষ্টতার জবাব দিতে ব্যর্থ হয়, তখন একটি রক্তাক্ত ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে তাদের পরিসমাপ্তি ঘটে। ১৯৯০ সালে দেশের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে অনেকেই ভেবেছিল, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসবে। কিন্তু তাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তি বিজয় লাভ করে। আওয়ামী লীগ যে কখনোই জনগণের সমর্থন বা নির্বাচনের মাধ্যমে জয়লাভ করেনি বা করতে পারেনি, এই নির্বাচন তার একটি প্রকৃষ্ট প্রমাণ। ’৭৫-এর ২১ বছর পর যে বিভাজনের মাধ্যমে ও প্রতারণার মাধ্যমে তারা ক্ষমতাসীন হয়েছিল, তার কথা আগেই বলেছি। ১/১১-র কারসাজি, অবশেষে ২০০৮ সালে যে তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করে, তাও সত্য নয়। লন্ডনের দ্য ইকোনমিস্টের ভাষায়, ভারতীয় কৌশল ও বস্তা বস্তা ভারতীয় টাকা ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার কারণ (ওই নির্বাচন সম্পর্কে প্রামাণ্য প্রতিবেদনের জন্য আমার দেশ-খ্যাত মাহমুদুর রহমান এবং দেশের বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইয়াহইয়া আক্তারের গবেষণানির্ভর গ্রন্থ দুটো দেখতে পারেন)। সুতরাং নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের স্বাভাবিক সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে তারা জয়লাভ করবে—এটি একটি অসম্ভব ও আজগুবি তথ্য। এমনকি সমানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিতে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে তাদের ভোটার অনুপাতে বিপুলসংখ্যক আসন লাভ করবে বলে রাজনৈতিক নেতারা যে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, তা বাস্তবসম্মত নয়। তাহলে আমরা কি আমাদের জন্য কল্পিত শত্রুর ছবি আঁকছি না?
এখন এই দেশে এই সময়ে আওয়ামী লীগ হচ্ছে একটি ঘৃণিত দল। জনগণের নিরঙ্কুশ অংশ এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে বিতর্ক ও বিভ্রান্তিতে লিপ্ত হলেও আওয়ামী লীগের উত্থানের বিরুদ্ধে সবাই একাট্টা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা গোটা ছাত্রসমাজ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এখনো কঠিনভাবে ঐক্যবদ্ধ। তারা ভালো করেই বোঝে কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনায় যদি আওয়ামী লীগ দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন হয়, তাহলে তার অর্থ হচ্ছে এই নতুন প্রজন্মের অনিবার্য মৃত্যু। অনেকেই উত্তর বাড়ির দিকে ইঙ্গিত করেন। তারা যদি তাদের অনুগত হতো, তাহলে তাকে পলায়ন করতে হতো না। তাদের অবশেষ সেখানে অবশিষ্ট থাকতে পারে, কিন্তু সেটি অলীক। সেনাবাহিনী প্রধান অবশ্যই সেদিন জনগণের নাড়ির টান অনুভব করেছিলেন। সেজন্য শেষ হাসিটি তারাই হেসেছিলেন। বাংলাদেশে আওয়ামী সমর্থনের যে পরিসংখ্যানটি দেওয়া হয়, তা এখন আর ক্রিয়াশীল নেই। রাজনৈতিক দলের সমর্থন জোয়ার-ভাটার মতো। কোনো কোনো ইস্যুতে বা পরিবেশ-পরিস্থিতিতে তাদের সমর্থন তুঙ্গে পৌঁছাতে পারে, আবার একটি কারণ বা ইস্যুতে তাদের জনপ্রিয়তা হিমাঙ্কেও পৌঁছাতে পারে। এর পরও আওয়ামী সমর্থক হিসেবে যে গোষ্ঠী আসবে, তারা শক্তিহীন, প্রভাবহীন ও সাধারণ জনগণের অনুগ্রহপুষ্ট হবে। ভবিষ্যতে নির্বাচন কিংবা কোনো ইস্যুতে যদি তারা পাঁয়তারা কষে, তাহলে পরে আবারও হিংসার আগুন জ্বলে উঠবে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি কখনোই ধ্বংসপ্রাপ্ত হতো না যদি না শেখ হাসিনা ঘৃণা-উদ্রেকমূলক বিবৃতি দিতেন। আবার যদি এ রকম কোনো ঘৃণার প্রকাশ ঘটে, তাহলে পরে টুঙ্গিপাড়াও আক্রান্ত হতে পারে—এ রকম আশঙ্কা করে মানুষ। অনেকে ফর্মুলা দেন, জাতীয় পার্টি বা অনুরূপ কোনো দলের ওপর ভর করে তারা নির্বাচনী বৈতরণী পার হবেন। মানুষ তো এত বোকা নয়। জাতীয় পার্টির যে অংশই তাদের কাঁধে চড়াবে, তাদের কাঁধ ভেঙে যাবে। জনগণের শক্তিই শেষ কথা।
ভারতের বিশ্বস্ত মিত্র হিসেবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা-তদবির হয়তো তারা করবে। ২০২৪-পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিব্রত করার কোনো কৌশলই ভারত বাকি রাখেনি। সংখ্যালঘিষ্ঠ কার্ড, পুশ ইন, বাণিজ্য বিধিনিষেধ ও সীমান্তে হত্যা এর প্রমাণ। ভবিষ্যতে তাদের এ পরিকল্পনা আরো শাখা-প্রশাখা মেলতে পারে। পার্বত্য অঞ্চলে সেই সময়ের শান্তি বাহিনীর অশান্তি সৃষ্টির মতো পাঁয়তারা লক্ষণীয়। সেইসঙ্গে তারা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচনে বিজয়ী সম্ভাব্য রাজনৈতিক দল বিএনপি অথবা জামায়াতে ইসলামী তথা ইসলামি জোটকে ভয়ভীতি ও লোভলালসা দিয়ে আত্মস্থ করার চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এখন এতটাই পরিপক্ব এবং অনড় যে তাদের হজম করা অসম্ভব। তবে ভবিষ্যতে যে সরকারই আসুক, তাদের অতি সতর্কতার সঙ্গে সম্পর্ক নির্ণয় করতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনতামূলক মিত্রতার পর একজন জিয়াউর রহমান দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন—কীভাবে আত্মমর্যাদায় বলিষ্ঠ হলে সমমর্যাদা নিশ্চিত হয়।
অনেকে আইনগতভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করার কথা বলেন। আওয়ামী লীগকে বেআইনি ঘোষণার আইনগত বৈধতার প্রশ্ন তোলেন। সেখানে বেআইনিকরণের প্রশ্নে মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলেন। তার উত্তর একটিই—যারা এসব অধিকার অস্বীকার করেছে, কায়দাকানুন করে মানুষের অধিকার হরণ করেছে এবং স্ব-নাগরিকদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তারা আদৌ ওই অধিকার ফিরে পেতে পারে কি না? জনগণের চাপে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের অধিকার স্থগিত করেছে। মানবাধিকারের স্বার্থে ও গণতন্ত্রের নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই নির্বাচনের আগে তাদের বেআইনি ঘোষণা করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেউ কেউ প্রতিবেশী ও পাশ্চাত্যের দোহাই দিতে চান। আওয়ামী লীগের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্মম ইতিহাস তুলে ধরে এর জবাব দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো জনগণের প্রতিরোধ। আগামী নির্বাচনে ইউনিয়ন কাউন্সিল থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে তাদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, কঠিন না হলে তাদের অভ্যন্তরীণ ও বহিস্থ শক্তির মোকাবিলা করা সহজ হবে না। বর্তমান আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ প্রতিবেশী ও বহিস্থ প্রচারণা দ্বারা বিভ্রান্ত। আওয়ামী ও প্রতিবেশী প্রতারণামূলক প্রচারের প্রতিবাদে অবশ্যই গণমাধ্যমকে এবং দেশের সুশীল সমাজকে সক্রিয় হতে হবে। আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত ভোট কে বা কারা পাবেন বা নেবেন—এটি নিয়ে একটি প্রচ্ছন্ন প্রতিযোগিতার কথা আড়ালে-আবডালে শোনা যায়। দেশের প্রধান দল বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা টাকার বিনিময়ে তাদের বৈধতা দিচ্ছেন। সংবাদপত্রে এ ধরনের অনেক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা অতিশয় ক্ষমাশীল হয়ে তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। দুটো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে যদি এ কৌশল নেয়া হয়, তাহলে তা হবে আত্মঘাতী। তাদের প্রতি আমাদের কঠিন ও কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে হবে। কালের কপোলতলে তারা ক্রমে ক্রমে হারিয়ে যাবে। নতুন দল করে হলেও তারা নানা নামে নানা ধামে প্রকাশিত হতে চাইবে; কিন্তু সময় কাউকে ক্ষমা করে না। আওয়ামী লীগ আর কখনোই কোনোভাবে বাংলাদেশের ক্ষমতায় ফিরে আসবে না; তাহলে ’২৪-এর রক্তপাত বৃথা যাবে। আমরা আবারও স্বৈরতন্ত্রের অধীনে অধীনতামূলক মিত্রতায় আবদ্ধ হবো। আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আবারও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে—এ প্রত্যাশা কেউ করে না।