সরকারি কোষাগার থেকে জনগণের অর্থ খরচ হবে আর তার কোনো হিসাব থাকবে না, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অথচ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের (বিআইজিএম) ক্ষেত্রে ঠিক এমনটাই ঘটছে। বছরের পর বছর শত শত কোটি টাকা অনুদান পেলেও প্রতিষ্ঠানটি তার খরচের কোনো বিস্তারিত হিসাব সরকারকে দিচ্ছে না। এটি কেবল আর্থিক অস্বচ্ছতার এক দৃষ্টান্তই নয়; বরং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহি লঙ্ঘনের গভীর সংকটেরও প্রতিফলন।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বিআইজিএম মূলত অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের একটি ‘পুনর্বাসনকেন্দ্রে’ পরিণত হয়েছে। যাঁরা একসময় সরকারের অংশ ছিলেন, তাঁরাই এখন সরকারি অর্থ নিয়ে সরকারের কাছেই জবাবদিহি এড়িয়ে যাচ্ছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বারবার চিঠি দিয়েও কোন আইন বা নীতিমালার ভিত্তিতে এ প্রতিষ্ঠান এত বিপুল অর্থ পাচ্ছে, তার স্পষ্ট জবাব মেলেনি। একটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হলেও মন্ত্রণালয়ের কাছে তাদের দায়বদ্ধতা নেই। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

বিআইজিএমের পরিচালক, যিনি নিজেই একজন সাবেক অর্থসচিব, অনুদানের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সংবাদকর্মীকে কক্ষ থেকে বের করে দেন। এই থেকেই বোঝা যায়, জবাবদিহির সংস্কৃতি সেখানে কতটা অনুপস্থিত। সরকারি টাকা জনগণের সম্পদ। এ সম্পদের অপচয় বা অস্বচ্ছ ব্যবহার যেকোনো রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। যখন দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অর্থের অভাবে ধুঁকছে, তখন একটি বেসরকারি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বিনা হিসাবে কোটি কোটি টাকা পাচ্ছে।

আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, বিআইজিএমের শীর্ষ পদগুলোতে সাবেক আমলাদের নিয়োগ এবং সেখানে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ। ফলে এটি কোনো পেশাদার গবেষণা বা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান না হয়ে, কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য বিশেষ সুবিধাভোগের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই পদ্ধতি শুধু নৈতিকতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে না; বরং দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায়ও একধরনের হতাশা তৈরি করে।

যেকোনো প্রতিষ্ঠান যখন সরকারি অনুদান গ্রহণ করে, তখন তার একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো ও স্বচ্ছ জবাবদিহি নিশ্চিত করা উচিত। বিআইজিএম যদি জনগণের অর্থে পরিচালিত হয়, তবে অবশ্যই তাদের প্রতিটি টাকার হিসাব জনগণের কাছে স্পষ্ট করতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে আর কোনো প্রতিষ্ঠান এভাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা না চালাতে পারে। অন্যথায় জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ এভাবেই অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার শিকার হতে থাকবে আর জবাবদিহির সংস্কৃতি ক্রমাগত দুর্বল হতে থাকবে।

বিআইজিএম যেভাবে চলছে, তাতে এমন প্রতিষ্ঠান চালু রাখা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। বিআইজিএমকে অবশ্যই একটি পেশাদার গবেষণা বা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

সূত্র, প্রথম আলো