গত হপ্তা থেকে অদ্যাবধি হররোজ হট মিডিয়া ও কোল্ড মিডিয়াগুলোতে ঠাহর করলাম, যেদিকে আঁখি মেলি, সেদিকে শুধু সমর ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের ছড়াছড়ি। ভবিতব্যে ইন্দো-প্যাসিফিকের ধাক্কা এলে প্রচুর বিশেষজ্ঞ দেশ পাবে বলে অনুমান করি। যার যার আইডিওলজিক্যাল পজিশন থেকে নিরলস বিশ্লেষণ দিয়ে যাচ্ছেন, তবে সবচেয়ে বেশি দেখছি আইডিওলজিক্যাল বিশ্লেষণ। বোধ করি, আইডিওলজিক্যাল ইমবেসাইলিটির প্রোডাকশন দেশে খুবই ভালো হচ্ছে। যা হোক, লেখাটি লেখার আগে বিখ্যাত আমেরিকান ঔপন্যাসিক ও গল্পকার নাথানিয়েল হথোর্নের ইয়াং গুডম্যান ব্রাউন (১৮৩৫) ছোট গল্পটার কথা মনে পড়ে গেল। গল্পে দেখানো হচ্ছে গুডম্যান ব্রাউন, একজন সদ্য বিবাহিত পিউরিটান বা ধর্মভীরু যুবক, এক সন্ধ্যায় তার প্রিয় স্ত্রী ‘ফেইথ’কে বাসায় রেখে জঙ্গলের উদ্দেশে রওনা হন। ফেইথ তাকে যেতে মানা করেছিল, কিন্তু ব্রাউন জানান—এটা ‘শুধু এক রাতের জন্য’। এখানে ‘ফেইথ’ নামটি শুধু তার স্ত্রীর নাম নয়—তার আধ্যাত্মিক বিশ্বাস এবং নৈতিকতার প্রতীক হিসেবেও কাজ করে। জঙ্গলটি তার জন্য শুধু একটি জায়গা নয়—এটি তার আত্মার গভীরতম সন্দেহ, ভয় এবং কৌতূহলের ও প্রতীক বটে। ব্রাউনের যাত্রা একটি গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে, যেখানে বহু পরিচিত ও সম্মানিত মানুষ অংশ নিচ্ছে—যেমন তার ধর্মীয় শিক্ষক, গ্রামের ডিকন, এমনকি তার স্ত্রী ফেইথও। সে বিশ্বাস করতে পারে না, এই মানুষ যারা সারাজীবন ধর্ম, নৈতিকতা ও ঈশ্বরের কথা বলেছে, তারাই এখন অন্ধকারে শয়তানের উপাসনা করছে। এসব দেখে তার বিশ্বাস, নৈতিকতা ও আত্মার ভরসা একেবারে ভেঙে যায়। একপর্যায়ে ব্রাউন চিৎকার করে উঠে বলেন‘তোমরা সবাই ধর্মের কথা বলো, কিন্তু শয়তানের সঙ্গে হাত মেলাও! তবে আমি আর বিশ্বাস করব না কারো কথায়, আমি শুধু ঈশ্বরকেই ডাকব, যদি তিনিই সত্য হন।’ এই সংলাপটি শুধু একটি আবেগময় প্রতিক্রিয়া নয়—এটি এক সামাজিক আয়না—যেখানে ধর্মের মুখোশ খুলে পড়ে আর মানুষ সিদ্ধান্ত নেয়, সত্যের জন্য লড়তে হবে। এটি ধর্মীয় ভণ্ডামি উন্মোচনের পর আত্মার আর্জি ও আত্ম-উদ্ধার চেষ্টার প্রতীক। সে বুঝতে পারে, সমাজে যা দেখা যায়, তা সব সত্য নয়। এই গল্প আজকের বাংলাদেশের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে মিলে যায়, বিশেষ করে ইসরাইল-ইরান যুদ্ধ চলাকালে। বহু ধর্মীয় নেতা যাদের মানুষ শ্রদ্ধা করে, যারা ইসলামের নামে কথা বলেন, তারা ইরানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন, যখন ইরান ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান সমর্থক। তাদের বক্তব্যে ধর্মীয় ন্যায় নয়, বরং রাজনৈতিক সুবিধা, গোষ্ঠীগত বিদ্বেষ বা সৌদিঘেঁষা রাজনীতি প্রতিফলিত হচ্ছে। মানুষ যখন দেখে ধর্মের নামে অন্যায়কে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে, তখন বিশ্বাস নড়ে যায়, যেমন ব্রাউনের হয়েছিল। এই দ্বিচারিতা চোখে পড়ে আরো স্পষ্টভাবে যখন তারা ইসলামের ভাষা ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা ছড়ান অথচ মানবতার পক্ষে দাঁড়াতে ব্যর্থ হন। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণরা, তখন গুডম্যান ব্রাউনের মতো দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। গুডম্যান ব্রাউনের সেই জঙ্গলের রাত যেন আমাদের এখনকার দিনগুলো। আমরা চারপাশে দেখি বিশ্বাসঘাতকতা, ভণ্ডামি, আর নীতির নামে রাজনীতি। পাঠক খেয়াল করুন, ইরানে ভয়ংকরভাবে হামলা করেছে ইসরাইল। বাংলাদেশে যারা রাবাইয়ের মুরিদ আছেন। তারা প্রকাশ্যে ইসরাইলের সমর্থন করতে পারছেন না। কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে। সেটা মেটাচ্ছেন ইরানের দোষ খুঁজে আর বিরোধিতা করে। আর একটা শ্রেণি ধর্মগুরুর ছদ্মবেশ ধারণ করে মুসলমানদের পথভ্রষ্ট ও বিভাজিত করে যাচ্ছে। এই সম্প্রদায় খুব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে প্রোপাগান্ডা মেকানিজমের মাধ্যমে নিজ গোত্র, জাতি ও দেশের আওয়ামদের মধ্যে বিভাজনের বীজ বপন করছে। যার রেশ চলতে থাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। ইরান খুব খারাপ, শিয়া আকিদা খুব খারাপ, সাফাভিদ আমলে শিয়ারা সুন্নিদের কচুকাটা করেছে। এই ন্যারেটিভগুলো ঠিক এ সময়ে একদল তথা কথিত আলেমের মুখ থেকে ক্রমাগত নিঃসৃত হচ্ছে। এখন কি এসব কথা বলার উপযুক্ত সময়? অথচ ইতিহাস বলে, আব্বাসীয়রা উমাইয়াদের আর উমাইয়ারা আব্বাসীয়দের ও ভয়ংকর রূপে হত্যা করেছে, মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে, জীবন্ত মানুষকে কবরে পুঁতে দিয়েছে। আর ইসরাইল গাজায় কী করেছে ও করছে, আমেরিকা কী করছে, সৌদি আরব, আরব আমিরাত ইয়েমেনে কী করেছেÑএসব নিয়ে তারা কখনো কথা বলে না। সর্বোপরি একটি দেশের ওপর আরেকটা দেশের সাম্রাজ্যবাদী হীন উদ্দেশ্যধারী নিপীড়ন কি লিগ্যাল? আদতে তাদের এসব বয়ান ইসরাইলের মতো জায়নবাদী রাষ্ট্রকে সব হত্যার বৈধতা দিচ্ছে। কারণ ইসরাইলই প্রথম আক্রমণ করেছে, বাড়াবাড়িটা ইসরাইলের দিক থেকে হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন ইসরাইলই লঙ্ঘন করেছে, ইরান আত্মরক্ষা করছে মাত্র। ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর একমাত্র ইরানই ইসরাইলের বিরুদ্ধে জোরালো বাচনিক ও সামরিক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ইসরাইলবিরোধী গ্রুপগুলো লালনপালন ও পৃষ্ঠপোষকতা করছে ইরান। এ জন্য ইরান সরকার ও সে দেশের জনগণকে বিপুল ক্ষতি সহ্য করতে হয়েছে, হচ্ছে। আর আরব রাজা ও শাসকরা ক্ষমতায় থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্ত সমর্থন পাওয়ার লক্ষ্যে ইসরাইলের বিরোধিতা করা থেকে তো সরে এসেছেই, বরং ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং সমর্থন করার ধারণায় বশীভূত হয়ে আছে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইরানি জনগণের অনেক ত্যাগ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার জন্য ইসরাইলে নিন্দা করা ও ইরানের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ ন্যূনতম মানবীয় নৈতিকতার দাবি। সমগ্র পৃথিবীর শান্তিকামী ও বিবেকবান মানুষÑমুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে ইসরাইলি আগ্রাসনের নিন্দা করেছে এবং ইরানকে নৈতিক সমর্থন দিচ্ছে। ইরান ও ইসরাইল, দুদেশই যদি আমাদের শত্রু হয়ে থাকে, তবু ইরান আমাদের সমর্থন পাওয়ার যোগ্য। তাই আমি মনে করি, এ অন্যায় যুদ্ধে যেকোনো মুসলিমের উচিত নির্দ্বিধায় ইরানকে সমর্থন করা। এবার আসি ইসরাইলের আলাপে, ইসরাইল আরব বিশ্ব রুল করে ভীতির মাধ্যমে। শুধু আইরন ডোমকেই এমনভাবে কমব্যাট প্রুভেন হিসেবে দেখানো হয়েছে এবং ইসরাইলের ডিফেন্সিভ ক্যাপাসিটি এমনভাবে প্রচারিত হয়েছে, যেন অজেয়। খোদ প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও ট্রাম্প ঘোষণা দিলেন, যথাক্রমে স্টিল ডোম ও গোল্ডেন ডোম বানানোর। এসব ধারণা উৎপত্তি কিন্তু এই আইরন ডোম যেটা ফিলিস্তিন বা লেবানন থেকে ছোড়া রকেট প্রোজেক্টাইলগুলো ঠেকাতে খুবই ভালো পারফরম্যান্স করছিল। প্রশ্ন হলো, এই কমব্যাট প্রুভেনটা হয়েছে হামাস আর হিজবুল্লাহর খুব নিম্নমানের রকেট ও ড্রোন ইন্টারসেপশনের জন্য। আধুনিক প্রযুক্তির ম্যানুভারেবল মিসাইলের বিরুদ্ধে কার্যত এর ইফেক্টিভনেস প্রশ্নবিদ্ধ। ইসরাইল আঞ্চলিক হেজেমনি সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক সব আইন অমান্য করে ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠে আরব বিশ্বে একটা ন্যারেটিভ সৃষ্টি করতে পেরেছে যে, ইসরাইলের তাকাত আছে, যা খুশি তাই করার। ইসরাইলকে সমীহ করে চলার কারণ ঈর্ষণীয় ডিফেন্সিভ ক্যাপাসিটি; কিন্তু সেই সক্ষমতা এখন আর নেই। ইরান ঠিক সেই ন্যারেটিভ একেবারে চুরমার করে দিয়েছে। তাদের শ্লাঘা করার অ্যাপারেটাসগুলো ইরানের কাছে শেষ হয়েছে। ইসরাইলে গাজার প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। ইসরাইল স্বীকার করেছে, আইরন ডোমের ইন্টারসেপশন রেট ৬৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আগে ছিল ৯০ শতাংশ। এরো-৩, থাড, আইরন ডোম যদি ব্যর্থ হয়, তবে মনে হয় না বিশ্বে আর কোনো এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আছে, যেটা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারে। ইরানের মিলিটারি ডকট্রিন মূলত দূরপাল্লায় ইসরাইলকে টার্গেট করেই অফেন্সিভ ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করা হয়েছে, ফলে বিশাল মিসাইলের বহর রয়েছে ইরানের। ইরানের কি ক্ষতি হয়নি? অবশ্যই ইরানের ক্ষতি অনেক বেশি। দেশটি অনেক পিছিয়ে গেছে। যেহেতু তাদের ডিফেন্সিভ ক্যাপাসিটি দুর্বল এটা প্রত্যাশিতই ছিল। যেখানে রাশিয়া নিজ দেশে এয়ার সিকিউর করতে পারছে না ইউক্রেনের সঙ্গে, সেখানে ইরান পারবে এই আশা কখনোই করিনি, ইরান নিজেও তা জানে। তবে তারা এই ক্ষতি অ্যাফোর্ড করতে পারবে। তারা এটাও জানে যুদ্ধ শেষ হলে অর্থনৈতিক ক্ষতি চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের মাধ্যমে দ্রুতই পুষিয়ে নিতে পারবে। তারা লাক্সারি লাইফ ও লিড করে না ইসরাইলিদের মতো। কিন্তু ইসরাইলের রাজধানী কেঁপে ওঠা, স্টক এক্সচেঞ্জ, রিফাইনারি, মিলিটারি কমান্ড, ইনটেলিজেন্স হেড কোয়ার্টার উড়ে যাওয়া ঢের বড় খবর, কারণ এটি সাধারণ কল্পনায় কেউ আনেনি। ইরানে হামলায় ইসরাইলের ডিফেন্সিভ ক্যাপাসিটি ভয়ংকরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সেই সঙ্গে ভীতি ছড়ানোর মাধ্যমে ইসরাইল যেই আঞ্চলিক হেজেমনি গড়ে তুলেছিল, সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই যে ইসরাইল দুর্বল, এই ন্যারেটিভ সবার কাছে পরিষ্কার করে দিতে পারাটাই ইরানের বিরাট জয়। এটা প্রমাণ করতে পারাই বড় নিউজ যে, ইসরাইল দুর্ভেদ্য ও অজয় কিছু না। এ জন্যই দেশটি ছেড়ে স্রোতের মতো মানুষের পালানোর কোশেশ করাটাও ইরানের সফলতা এবং ইসরাইলের আঞ্চলিক হেজেমনি ধরে রাখার ক্ষেত্রে বড় হুমকি। এই পুরো বিষয়টি ইসরাইলের ক্ষেত্রে বুমেরাং হিসেবে আসবে বা আসতে পারে, সেটা দেখিয়ে দেওয়ার ফলে দীর্ঘ মেয়াদে ইসরাইল দারুণভাবে অস্তিত্বের সংকটে পড়বে। এই ন্যারেটিভের কারণেই ইসরাইল দুর্বল, এটা তারা প্রমাণ করতে দিতে চাইবে না। এ জন্যই মিডিয়ার ওপর এত কড়াকড়ি। ৩০ মাস পর্যন্ত জেল-জরিমানার ঘোষণা দিয়েছে, যারা ইরানের আঘাতের ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে দেবে তাদের বিরুদ্ধে। ইসরাইলের হেজেমনি ধরে রাখার জন্যই আমেরিকা প্রতিটি ডিফেন্স অ্যাসেট মধ্যপ্রাচ্যের মিত্র মুসলিম দেশগুলোর কাছে যেটা বিক্রি করে, ইসরাইলের কাছে তার থেকে উন্নত প্রযুক্তি আছে, সেটা নিশ্চিত করেই বিক্রি করে। ইরান সেই মাওকাগুলোয় হামলা করেছে, স্ট্র্যাটেজিক্যালি যে জায়গাগুলো খুব দরকারি, কমবেশি সেগুলোই ইরান করছে, করে যাচ্ছে। ইকোনমিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারে টার্গেটিং করে ধ্বংস করছে। এই সক্ষমতা ইসরাইলের প্রতিষ্ঠার পর থেকে কেউ করে দেখাতে পারেনি। আর এ জন্যই ইসরাইলের ক্ষতি অনেক বড় খবর, যার তুলনায় ইরানের ক্ষতি বেশি হলেও মস্ত বড় খবর না। যা হোক, ইসরাইল দীর্ঘকাল ধরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হলোকাস্টের কান্না দিয়ে তৈরি গল্পকথা, চলচ্চিত্র, শিল্পসাহিত্যের মোড়কে ঢেকে রেখেছিল, তাদের ১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিনে চালানো নাকবা গণহত্যার সত্য। ইন্টারনেট প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে পশ্চিমা তরুণ-তরুণীরা ইসরাইলি ন্যারেটিভ চ্যালেঞ্জ করলে তারা প্রথমবারের মতো ঝামেলার মুখে পড়ে। পশ্চিমের বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণীরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে। নরেন্দ্র মোদির সমর্থকরা এ সময় বেশি করে ইসরাইল সমর্থন দেখাতে স্থূল সব প্রোপাগান্ডা চালাতে থাকে। তাদের ফেইক ওয়েবসাইটগুলো ধরা পড়তে থাকে ইউরোপে। ওদিকে হলোকাস্ট থেকে বেঁচে আসা প্রবীণ, ইহুদি ধর্ম যাজক রাবাই ও ইহুদি তরুণ-তরুণীরা ফিলিস্তিনি গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলতে থাকেন। ঘাতক ইসরাইলের সমর্থকরা বিদ্বেষপ্রবণ ফুরিয়ে যাওয়া মানুষ হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করে। সম্প্রতি পরিবেশ আন্দোলন কর্মী গ্র্যাটা থুনবার্গ ও তার বন্ধুদের ফিলিস্তিনে ত্রাণ দিতে যাওয়ার ঘটনা; ইসরাইলি ন্যারেটিভের মিথ্যার প্রাসাদের ভিত নাড়িয়ে দেয়। বিশ্বের বিশেষত তরুণ জনগোষ্ঠীর কাছে খলনায়ক হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার হতাশা খুব সম্ভব ইসরাইলি ঘাতক নেতানিয়াহুকে মরণ কামড় দিতে প্রবৃত্ত করেছে। ঠিক যে রকম জিদ আমরা জুলাইয়ে ঘাতক শেখ হাসিনার মধ্যে দেখেছিলাম, সিঁদুর বিক্রেতা নরেন্দ্র মোদির কায়কারবারেও নজরে আসে। পরিশেষে বলা যায়, ইসরাইল আগের অবস্থায় ২০ বছরেও ফিরতে পারবে কি না সন্দেহ আছে। তাদের নানা ধরনের গবেষণার, ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, যা প্রায় ৩০ বছর বা বেশি সময় ধরে এনরিচ করেছে। সেগুলো ধূলিসাৎ। এর কোনো প্রিজার্ভ করা মাস্টার কপি নেই। মাত্র ২০ হাজার বর্গকিলোমিটারের দেশ। একসঙ্গে প্রতি বর্গকিলোমিটারের ওপর হামলা করা যায়। সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটা, ইসরাইলিরা যে ট্রমার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, সেটা এক যুগেও কাটবে বলে মনে হয় না, তারা সাইকোলজিক্যালি পেরালাইজড হয়ে যাচ্ছে, মানসিক রোগীর সংখ্যা হবে বেশুমার। কারণ তারা এপিকিউরিয়ান বা চার্বাকিয়ান জীবন চালনা করে। তাদের কাছে জীবন মানেই হেডোনিজম, ফুর্তি আর ভোগ, এর বাইরে তাদের জীবনে অন্য শিক্ষা নেই বললেই চলে। বোধ করি, ভবিষ্যতে ইসরাইলে অনেকেই ফিরবে না। যুদ্ধ শেষ হলে অনেকে একেবারেই আলবিদা জানাতে পারে। আর ইরান দাঁড়িয়ে থাকবে স্বমহিমায় বিশ্বমানবতার আদর্শ, স্পিরিট ও ওয়েস্টার্ন হেজেমনির বিরুদ্ধে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে। ইবনে আরাবি বলেন, নিজেকে পানি দিয়ে ভেজায়, সে কাপড় বদলায়। যে ঘাম দিয়ে ভেজায়, সে ভাগ্য বদলায়। আর যে রক্ত দিয়ে ভেজায়, সে ইতিহাস বদলায়। লেখক : সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক ফ্রাই ইউনিভার্সিটি বার্লিন, জার্মানি
Email: [email protected]