আমাদের দেশে বর্তমানে অর্থের সম্পৃক্ততায় বিভিন্ন ধরনের যে জুয়াখেলা হয়; তা এক দিকে অনৈতিক, অন্য দিকে দেশের সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী। তাই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আবশ্যিক কর্তব্য এ ধরনের জুয়াখেলা যেন কোনোভাবে চলতে না পারে সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা। কিন্তু এরা যথাযথভাবে সচেষ্ট নয় বলে দুর্বল আইনের নামমাত্র সাজার ফাঁকফোকর গলিয়ে আজ দেশের সর্বত্র অনেকটা বাধাহীনভাবে জুয়াখেলা চলছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের মৌল নীতিগুলোর অন্যতম একটি- জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা। জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতায় হানিকর এমন সব কাজ সংবিধানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জুয়াখেলা একটি অনৈতিক কাজ। এ বিষয়ে সংবিধানে বলা হয়েছে- জুয়াখেলা নিরোধে রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
জুয়া বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- তাস দিয়ে জুয়াখেলা, ঘোড়দৌড়ের বাজির মাধ্যমে জুয়াখেলা, ক্রিকেট, ফুটবল প্রভৃতি খেলায় কোন দল জিতবে এ নিয়ে বাজি ধরা, ক্যাসিনোতে বিভিন্ন ধরনের জুয়াখেলা, হাউজির মাধ্যমে জুয়াখেলা, অনলাইনে জুয়াখেলা প্রভৃতি। উপরোক্ত সবধরনের জুয়াখেলা আমাদের সংবিধান এবং দেশের প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ; কিন্তু বাস্তবতা হলো- রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের কার্যকর ও উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেয়ায় জুয়াখেলা অনেকটা বাধাহীনভাবে চলছে।
রাজধানী শহর ঢাকায় যেসব অভিজাত ক্লাব রয়েছে; এর প্রতিটিতে তাসের মাধ্যমে জুয়াখেলা চলে। আবার কোনো কোনোটিতে হাউজির মাধ্যমেও জুয়াখেলা চলে। বিভিন্ন জেলা শহরে সরকারি-বেসরকারি যেসব ক্লাব রয়েছে, এগুলোর প্রতিটিতে তাসের মাধ্যমে জুয়াখেলা চালু রয়েছে।
স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান রেসকোর্স নামে পরিচিত ছিল। সে সময় উদ্যানটিতে প্রতি রোববার ঘোড়দৌড়ের মাধ্যমে জুয়াখেলা হতো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী ঘোড়দৌড়ের জুয়াখেলা বন্ধে ওই সময়কার রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা বলিষ্ঠ অবদান রাখেন। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও আগ্রহে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে জুয়াখেলা অনৈতিক বিধায় এর প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হতে বলা হয়।
দেশের সর্বত্র বর্তমানে অপ্রতিরোধ্যভাবে তাসের জুয়াখেলার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। সমাজের উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে সব শ্রেণিপেশার বিপুলসংখ্যক মানুষ জুয়াখেলায় জড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে বাসা-বাড়ি, হোটেল, মেস, ছাত্রাবাস, ডরমিটরি প্রভৃতি ছাড়াও হাঁটে-মাঠে-ঘাটে ও নির্জন স্থানে জুয়াখেলার আসর বসতে দেখা যাচ্ছে। এমনকি রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, বাজার, বাস, লঞ্চ, স্টিমার প্রভৃতির অভ্যন্তরে জুয়াখেলা চলে। গ্রামাঞ্চলে দেখা যায়, অনেকে জুয়াখেলায় মত্ত থেকে সময় কাটায়।
যারা জুয়াখেলে বা জুয়ায় বাজি ধরে তাদের জুয়াড়ি বলা হয়। জুয়াড়ি তিন ধরনের। এর একটি উচ্চবিত্ত। এদের অর্থকড়ির অভাব নেই। এরা জুয়াখেলে লাখ টাকা জিতলে বা হারলে এর কোনোটি তাদের আর্থিক ভিত প্রভাবিত করে না। এসব উচ্চবিত্ত জুয়াখেলাকে সময় কাটানোর একটি উপলক্ষ হিসেবে ব্যবহার করেন। আর অন্য দুই শ্রেণীর একটি অভ্যাসগতভাবে জুয়াড়ি আর অন্যটি মাঝে মধ্যে বিশেষত ছুটির দিন ও অবসর সময়ে জুয়া খেলে। অভ্যাসগত জুয়াড়িরা পকেটে টাকা আছে কি নেই তা নিয়ে মাথা ঘামায় না। এরা একবার জুয়াখেলায় বসে ক্রমাগতভাবে হারতে থাকলেও দেখা যায় অন্য জুয়াড়িদের থেকে ধারকর্জ করেও খেলা অব্যাহত রাখে। জুয়াখেলায় হার-জিত থাকায় উভয়টি সমন্বয় করলে দেখা যায়, অধিকাংশের হারের পাল্লা ভারী।
অভ্যাসগত জুয়াড়িদের অনেকে জুয়া খেলতে গিয়ে ভিটে-মাটিহারা হয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে, এমন নজির প্রচুর। অভ্যাসগত জুয়াড়িদের মধ্যে অনেকে হেরে যখন শূন্য পকেটে ঘরে ফেরে তখন স্ত্রীর ওপর চড়াও হতে দেখা যায়। এদের মধ্যে একটি অন্ধবিশ্বাস কাজ করে তারা খেলায় মত্ত থাকাকালীন স্ত্রীর অভিশাপে হারের ঘটনা ঘটেছে। আর তাই ঘরে ফিরে স্ত্রীকে উত্তম মধ্যম দিয়ে হারের মনোব্যথা হালকা করার চেষ্টা করে। প্রসঙ্গত, অভ্যাসগত জুয়াড়িদের খেলায় মত্ত থাকার বিষয়টি সম্পর্কে তাদের স্ত্রীদের সম্যক ধারণা থাকে।
ছুটির দিন ও অবসর সময়ে যারা জুয়া খেলে এদের অনেকে শখের বসে এটি করে। এদের মধ্যে সমাজের সব শ্রেণিপেশার মানুষ রয়েছে। এ ধরনের জুয়াড়িরা হারের মধ্য দিয়ে বড় অঙ্কের অর্থ খোয়ালে তাদের মাসের অবশিষ্ট অংশ ধারকর্জ করে চলতে হয়।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রাবাসগুলোতে একশ্রেণীর শিক্ষার্থীর মধ্যে জুয়া খেলার নেশা এত ব্যাপক যে, তারা সারা রাত জুয়া খেলে দিনের বেশির ভাগ বেলা পর্যন্ত ঘুমায়। আর এভাবে দেখা যায়, ক্লাসে উপস্থিত হওয়া ও পড়ালেখার চেয়ে জুয়া খেলার প্রতি তাদের বেশি আগ্রহ। মেসে বসবাসকারী কিছু ছাত্রের মধ্যেও প্রবণতাটি লক্ষ করা যায়।
বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিন্ন পেশায় বিপুলসংখ্যক শ্রমজীবী রয়েছেন। এসব শ্রমজীবী মেস বা বস্তি বা নিম্নভাড়ার বসতবাড়িতে থাকেন। শ্রমজীবী মানুষেরও একটি অংশ এমনভাবে জুয়া খেলার সাথে জড়িয়ে পড়েছে যে, নিজ নিজ কাজ শেষে পছন্দের স্থানে এরা জুয়াখেলায় মত্ত হন।
জুয়া খেলায় যিনি জেতেন তিনি খেলা ভেদে যে অঙ্কের টাকা ভিত্তি ধরে খেলাটি পরিচালিত হয়; কমপক্ষে তার দ্বিগুণ অথবা কয়েক গুণ বেশি অর্থ পেয়ে থাকেন। আর যারা হারে তাদের ব্যয়ের সম্পূর্ণ অর্থ খোয়া যায়।
জুয়াখেলা ইসলামে পাপ হিসেবে গণ্য। একজন ঈমানদার মুসলিম সবসময় নিজেকে জুয়াখেলা থেকে দূরে রাখতে সচেষ্ট থাকেন। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৯২ শতাংশের মতো মানুষ মুসলিম। জুয়াখেলা ইসলামে নিষিদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধানে এর নিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ থাকায় ও দেশের প্রচলিত আইনে খেলাটি শাস্তিযোগ্য হওয়ায় খেলাটিকে দেশের কোনো স্থানে চলতে দেয়ার সুযোগ নেই। সাধারণত কেউ সময় কাটানোর জন্য অর্থের সম্পৃক্ততা ছাড়া নিছক বিনোদনের উদ্দেশ্যে তাস খেললে সেটি জুয়ার পর্যায়ে পড়ে না। এ ধরনের তাসখেলা সাধারণত পারিবারিক পরিমণ্ডলে এবং বনভোজন, ভ্রমণ প্রভৃতিতে থাকাকালীন হয়ে থাকে।
জুয়াকে আরবিতে ‘আল-মায়সির’ বলা হয়। এমন খেলাকে আল-মায়সির বলা হয় যা লাভ-ক্ষতির সাথে সম্পৃক্ত থাকে। অর্থাৎ যার মধ্যে লাভ-ক্ষতির কোনোটি স্পষ্ট নয়। ইসলামে জুয়া ও বাজি স্পষ্টত হারাম হিসেবে ঘোষণা রয়েছে। পবিত্র কুরআনে মদ ও জুয়াকে ঘৃণ্য বস্তু এবং শয়তানের কাজ বলা হয়েছে। এগুলো থেকে দূরে থাকার আদেশ দেয়া হয়েছে। মদ-জুয়ার মাধ্যমে পরস্পর শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। এগুলোর মাধ্যমে শয়তান মানুষকে নামাজ ও আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ রাখে। জুয়া সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন- ‘হে মুমিনরা! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্যনির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, তাহলে তোমরা সফলকাম হতে পারবে। শয়তান তো মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায় এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ আদায়ে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না।’ (সূরা মায়িদা : ৯০-৯১)
বিগত কয়েক বছর ধরে দেখা যায়, ঢাকা ও বিভাগীয় জেলা শহরগুলোতে কিছু অভিজাত ক্লাব ও ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট ক্লাবে হাউজির নামে এবং ক্যাসিনোতে ব্যবহৃত উপকরণের সাহায্যে জুয়াখেলা চলে আসছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে রাজধানী ঢাকা শহরে কিছু ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট ক্লাব থেকে ক্যাসিনোতে ব্যবহৃত উপকরণ জব্দ করা হয়। পরে এর হোতাদের নগণ্যসংখ্যককে গ্রেফতারের পর হেফাজতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিত্ত-বৈভবের সন্ধান মেলে। এসব ব্যক্তির পরিচয় উদঘাটনে দেখা যায়, এরা রাজনীতিসংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী। এদের পেছনে রাজনীতিসংশ্লিষ্ট আরো প্রভাবশালী কারা জড়িত তা উদঘাটন জরুরি। তা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিকে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বিভিন্ন ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট ক্লাবে এ খেলা চলে আসছিল- এর রহস্য উন্মোচন অত্যাবশ্যক।
উপমহাদেশ ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৬৭ সালে দ্য পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট প্রণীত হয়। ইংরেজি গ্যাম্বলিং শব্দটির প্রতিশব্দ গেমিং। উভয় শব্দের বাংলা অর্থ জুয়া। উল্লিখিত আইনটিতে গ্যাম্বলিং বা গেমিংয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- জুয়া নির্ধারিত দিন নির্ধারিত স্থানে অনুমোদিত ব্যক্তি পরিচালিত ঘোড়দৌড় ছাড়া বাজি বা পণকে অন্তর্ভুক্ত করে। আইনটির ৩ নম্বর ধারায় সাধারণ জুয়ার আড্ডা বসে এমন স্থানের মালিক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত বা রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত ব্যক্তির দণ্ডের বিষয়ে বলা হয়েছে- এরূপ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনূর্ধ্ব তিন মাসের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন অথবা অনূর্ধ্ব ২০০ টাকার অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আইনটির ৪ নম্বর ধারায় এরূপ স্থানে জুয়াখেলারত অবস্থায় অথবা খেলার জন্য উপস্থিত ব্যক্তিদের দণ্ডের বিষয়ে বলা হয়েছে- এমন কাজের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি অনূর্ধ্ব এক মাসের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন অথবা অনূর্ধ্ব ১০০ টাকার অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬-এর ৯২ নম্বর ধারায় সড়ক বা উন্মুক্ত স্থানে জুয়াখেলার দণ্ডের বিষয়ে বলা হয়েছে- এরূপ স্থানে কেউ জুয়া খেলতে জড়ো হলে বা জুয়াখেলারত অবস্থায় থাকলে তার অনধিক ১০০ টাকা অর্থদণ্ড হবে।
দ্য পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট, ১৮৬৭ পুরো বাংলাদেশে কার্যকর হলেও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬-এর কার্যকারিতা শুধু ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। অনুরূপভাবে ঢাকার মতো অপরাপর যেসব শহরকে মেট্রোপলিটন শহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সেসব মেট্রোপলিটন শহরের জন্য অনুরূপ আইন কার্যকর করা হলে সেসব শহরের ক্ষেত্রেও দ্য পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট, ১৮৬৭ কার্যকারিতা প্রয়োগের সুযোগ রহিত হয়ে যায়।
আমাদের মূল দণ্ড আইন দণ্ডবিধি একটি সাধারণ আইন। অন্য দিকে দ্য পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট, ১৮৬৭ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ এবং অপরাপর মেট্রোপলিটন শহরসংশ্লিষ্ট আইন বিশেষ আইন। সচরাচর বিশেষ আইন সাধারণ আইনের ওপর প্রাধান্য পায়। আমাদের দণ্ডবিধি জুয়াখেলা বা এর সাথে সংশ্লিষ্টতার অপরাধ বিষয়ে নিশ্চুপ। আর তাই দণ্ডবিধিতে জুয়াখেলাকে অথবা এর সাথে সংশ্লিষ্টতাকে শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে কি হয়নি এমন বিতর্ক অপ্রাসঙ্গিক।
সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানে বলা আছে- সংবিধান ও আইন মেনে চলা দেশের প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। সংবিধানে জুয়াখেলা নিরোধে রাষ্ট্রের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের উল্লেখ রয়েছে। এ বিষয়ে যথাযথ ও কার্যকর আইন প্রণয়ন করে সবধরনের জুয়াখেলা, এর সাথে সংশ্লিষ্টতা এবং এ খেলায় ব্যবহৃত উপকরণ আমদানি ও উৎপাদন নিষিদ্ধ করে এর ব্যত্যয়ে কঠোর সাজার বিধান রেখে আইনপ্রণয়ন অত্যাবশ্যক ছিল; কিন্তু দেশ ও জাতির দুর্ভাগ্য যে, সংবিধান কার্যকর হওয়া পরবর্তী ৫৩ বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও সম্প্রতি সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ রহিত করে ২১ মে ২০২৫ জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে অনলাইনে জুয়াখেলাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন দেখার বিষয় প্রণীত অধ্যাদেশ লক্ষ্য পূরণে কতটুকু সক্ষম।
আমাদের দেশে বর্তমানে অর্থের সম্পৃক্ততায় বিভিন্ন ধরনের যে জুয়াখেলা হয়; তা এক দিকে অনৈতিক, অন্য দিকে দেশের সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী। তাই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আবশ্যিক কর্তব্য এ ধরনের জুয়াখেলা যেন কোনোভাবে চলতে না পারে সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা। কিন্তু এরা যথাযথভাবে সচেষ্ট নয় বলে দুর্বল আইনের নামমাত্র সাজার ফাঁকফোকর গলিয়ে আজ দেশের সর্বত্র অনেকটা বাধাহীনভাবে জুয়াখেলা চলছে।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক