প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ কীসের বিনিময়ে আরাকানকে এই সুবিধা দিতে যাচ্ছে? ‘শর্ত’গুলো কী রকম? এসব বিষয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল কতটা অবগত, সে প্রশ্ন আছে। রোহিঙ্গা নেতৃত্বকেও এ বিষয়ে যুক্ত করার প্রয়োজন আছে।

এটি ইতোমধ্যে স্পষ্ট, আরাকানের ৮০-৯০ ভাগ এলাকা আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। আবার তাদের নিয়ন্ত্রণ যত বাড়ছে, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আগমনও তত অব্যাহত। দৈনিক সমকালের প্রতিবেদনেও এটি স্পষ্ট, প্রতিদিন রোহিঙ্গারা আসছে। এ অবস্থায় আরাকানে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা এবং সেখানে তাদের ফেরত পাঠানোর ‘শর্ত’ বাংলাদেশের দিক থেকে মানবিক করিডোরের প্রধান শর্ত হওয়াই স্বাভাবিক। তবে আরাকান আর্মি এ বিষয়ে কতটা আন্তরিকতার সঙ্গে রাজি হবে, সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। সেখানে রাখাইনদের মধ্যে রোহিঙ্গাবিরোধী মনোভাব বেশ প্রবল।

আরাকানের ভেতরে ‘মানবিক ত্রাণ’ হস্তান্তর ও বিলি বণ্টনে রাখাইন ও রোহিঙ্গা– উভয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা যুক্ত থাকবে কিনা, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়টি নিশ্চয়ই জাতিসংঘকে বলবে। কারণ, ত্রাণের পুরোটা রাখাইনদের হাতে গেলে সেটি অন্যায্য হবে। আবার এ রকম পণ্য স্থানান্তরে নেপিদো সরকারেরও সম্মতি প্রয়োজন। কারণ, মানবিক করিডোরের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রশ্ন রয়েছে। নেপিদোর সরকার এবং আরাকান আর্মির মধ্যে যে রকম সংঘাত বেধে আছে, তাতে ‘মানবিক করিডোরে’র জন্য তৃতীয় কারও অভিভাবকসুলভ (গ্যারান্টার) উপস্থিতিও দরকার, যার মিয়ানমারের বিভিন্ন পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে। জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের এ বিষয়ে বিশেষভাবে চীনের সঙ্গে কথা বলার আবশ্যকতা রয়েছে।

মানবিক করিডোরের কার্যক্রমে ‘নো-ফ্লাই জোনে’র আচ্ছাদন থাকবে কিনা এবং এই করিডোরের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের হাতে দেওয়া হবে কিনা, সেসবও প্রসঙ্গ হিসেবে আসতে পারে। এ রকম বিষয় নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি করিডোর প্রশ্নে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিও প্রয়োজন। বর্তমান সরকার জনসমর্থিত হলেও অনির্বাচিত ও সাময়িক সময়ের সরকার। আন্তঃদেশীয় করিডোর এত বেশি স্পর্শকাতর একটি বিষয় যে তাতে সামরিক ও নিরাপত্তা প্রশ্নও যুক্ত। বিশ্বের সর্বত্র যুদ্ধক্ষেত্রে ‘মানবিক ত্রাণ’ শেষমেশ সামরিক তাৎপর্য নিয়ে হাজির হয়ে যায়।

ফলে প্রস্তাবিত এই উদ্যোগে বাংলাদেশের স্বার্থ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে সেটি দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই হবে না। যেহেতু এখন দেশে পার্লামেন্ট নেই, সে কারণে এ বিষয়টি প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এবং তাদের সম্মতির আলোকে হওয়া প্রয়োজন।

সূত্র, সমকাল