বাংলাদেশের জন্য উঠতি বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ-পরিস্থিতিতে টিকে থাকা কিংবা অধিকতর যোগ্যতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মতো উপযুক্ত ও দক্ষ জনবলের যেমন প্রয়োজন, তেমনি টেকসই ও লাগসই প্রযুক্তি প্রয়োগ ও সমন্বয়ে দক্ষ জনবলের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তার সাথে প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকুশলতা। এই প্রয়োজনীয়তার বিপরীতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার গুণগত মান কমে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন সম্প্রসারণমূলক কর্মকাণ্ডে নতুন যেসব চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে, সেসবের মোকাবেলার মতো উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে।

বিভাগীয় শহরের উপকণ্ঠে মাত্র কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অপপ্রয়াস অনুসন্ধান এবং ঘটনার আদ্যোপান্ত উদ্ধারে গিয়ে দেখা গেল স্রেফ তিলকে তাল বানানোর খেয়ালি প্রয়াসে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির উন্নতি তো দূরের কথা, এর অস্তিত্বই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। উৎস সামান্যই- একটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা কালচারাল জলসা করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি ও বাজেট অনুমোদন চায়। আসন্ন সেমিস্টারের ভর্তি পরীক্ষার সময়ে স্বল্পপরিসর ক্যাম্পাসে শুধু একটি ফ্যাকাল্টির ফাংশনের ফাংশনাল দিক-দক্ষিণা নিয়ে কর্তৃপক্ষের মতামতের মহড়ায় শিক্ষকদের পারস্পরিক অন্তর্দ্বন্দ্ব অনুপ্রবেশ করে। শিক্ষার্থীদের ক্ষেপিয়ে তুলতে সে ঠাণ্ডাযুদ্ধ প্রথমে সমর পরে মহাসমরে পরিণত হয়। শিক্ষার্থীরা যে ছয় দফা দাবি পেশ করে তার মধ্যে ওই কালচারাল অনুষ্ঠানের কোনো কথা না থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বী শিক্ষকদের চরিত্র হরণের ফর্দ তুলে ধরে কিছু শিক্ষক প্রশাসককে বহিষ্কারের দাবি তোলা হয় এবং প্রকারান্তরে একপর্যায়ে স্বয়ং ভিসির ক্যাম্পাস ত্যাগের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। কর্তৃপক্ষের দোষ-গুণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রশাসনিক অদক্ষতা কমবেশি থাকতেই পারে; কিন্তু তার প্রতিকার প্রার্থনায় শিক্ষার্থীদের ক্ষেপিয়ে বা ব্যবহার করে তথাকথিত মব জাস্টিসের নামে মেধাবী শিক্ষার্থী, বরেণ্য শিক্ষকমণ্ডলী এবং স্বার্থান্বেষী কর্র্তৃপক্ষের এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াসকে আত্মহননের কোন ক্যাটাগরিতে ফেলা হবে, সেই ভাবনার পুরোটাই বিব্রতকর।

বাংলাদেশের জাতীয় নেতৃত্ব যখন জুলাই বিপ্লবের পর গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশ্নে গোটা দেশবাসীকে ঐকমত্যের ভাববন্ধনে আবদ্ধ করতে চাইছেন, উন্নয়ন সম্ভাবনাসমৃদ্ধ সমাজে সে চিন্তাচেতনার বিকাশ ও প্রয়াস প্রচেষ্টার পরিবেশ আজ কোন পর্যায়ে? শোষণ বঞ্চনা ও বণ্টন বৈষম্যের ঔপনিবেশিক ও স্বৈরশাসনের জাঁতাকল থেকে মুক্তির সংগ্রামে নতুন বাংলাদেশের বিজয় লাভের বার্ষিকীতে এই প্রশ্ন এই বিবেচনা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক প্রতীয়মান হয়।

একটি ভালো সঙ্গীত সৃষ্টিতে গীতিকার সুরকার গায়ক ও বাদ্যযন্ত্রীর সমন্বিত প্রয়াস যেমন অপরিহার্য, তেমনি দেশ বা সংসারের সামষ্টিক অর্থনীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাও সব পক্ষের সহযোগিতা ছাড়া সুচারুরূপে সম্পাদন সম্ভব নয়। দূরের ও কাছের ভূ-রাজনীতির ভায়রা ভাইদের শ্যেন দৃষ্টি এড়িয়ে মাড়িয়ে শিল্প ও বাণিজ্য ব্যবস্থাপনার বেলায় সব পক্ষের সমন্বিত ও পরিশীলিত প্রয়াস প্রচেষ্টাই সাফল্যের চাবিকাঠি। এই মুহূর্তে অন্যতম জরুরি মানবসম্পদ উন্নয়ন। মানবসম্পদ উন্নয়নের দ্বারা দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়াও সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়াসে সুসমন্বয়ের আবশ্যকতা অপরিহার্য। স্থান কাল পাত্রের পর্যায় ও অবস্থান ভেদে উন্নয়ন ও উৎপাদনে সবাইকে একাত্মবোধের মূল্যবোধে উজ্জীবিত করাও গণতন্ত্রসহ সামগ্রিক সামষ্টিক ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম উপায় ও উপলক্ষ।

বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নকামী কল্যাণ অর্থনীতিতে সব পক্ষকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন এবং সব প্রয়াস প্রচেষ্টায় সমন্বয়ের মাধ্যমে সার্বিক উদ্দেশ্য অর্জনের অভিপ্রায়ে অয়োময় প্রত্যয়দীপ্ত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টির আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। একজন কর্মচারীর পারিতোষিক তার সম্পাদিত কাজের পরিমাণ বা পারদর্শিতা অনুযায়ী না হয়ে কিংবা কাজের সফলতা-ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব বিবেচনায় না এনে যদি দিতে হয় অর্থাৎ কাজ না করেও সে যদি বেতন পেতে পারে, কিংবা তাকে বেতন দেয়া হয় তাহলে দক্ষতা অর্জনের প্রত্যাশা আর দায়িত্ববোধের বিকাশভাবনা মাঠে মারা যাবেই। এ ধরনের ব্যর্থতার বজরা ভারী হতে থাকলেই যেকোনো উৎপাদনব্যবস্থা কিংবা উন্নয়ন প্রয়াস ভর্তুকির পরাশ্রয়ে যেতে বাধ্য। দারিদ্র্যপীড়িত জনবহুল কোনো দেশে পাবলিক সেক্টর বেকার ও অকর্মণ্যদের জন্য যদি অভয়ারণ্য কিংবা কল্যাণরাষ্ট্রের প্রতিভূ হিসেবে কাজ করে তাহলে সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। যদি উপযুক্ত কর্মক্ষমতা অর্জন ও প্রয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করে বিপুল জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে পরিণত করা না যায়, তাহলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যৎসামান্য বরাদ্দ ও বিনিয়োগও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। চাকরিকে সোনার হরিণ বানানোর কারণে সে চাকরি পাওয়া এবং রাখার জন্য অস্বাভাবিক দলাদলি ও দেনদরবার স্বাভাবিক। দায়-দায়িত্বহীন চাকরি পাওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় থাকার ফলে নিজ উদ্যোগে স্বনির্ভর হওয়ার আগ্রহেও অনীহা চলে আসে। মানবসম্পদ অপচয়ের এর চেয়ে বড় নজির আর হতে পারে না। দরিদ্রতম পরিবেশে যেখানে শ্রেণী নির্বিশেষে সবার কঠোর পরিশ্রম, কৃচ্ছ্্রতা সাধন ও আত্মত্যাগ আবশ্যক সেখানে সহজে ও বিনা ক্লেশে কিভাবে অর্থ উপার্জন সম্ভব সে দিকেই ঝোঁক বেশি হওয়াটা সুস্থতার লক্ষণ নয়। ট্রেড ইউনিয়ন নির্বাচনে প্রার্থীর পরিচয়ে যে অঢেল অর্থব্যয় চলে তা যেন এমন এক বিনিয়োগ যা অবৈধভাবে অধিক উসুলের সুযোগ থাকে বলেই। শোষক আর পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় বঞ্চিত নিপীড়িত শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থ উদ্ধারে নিবেদিত চিত্ত হওয়ার বদলে ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্ব নিজেরাই যখন উৎপাদনবিমুখ আর শ্রমিক স্বার্থ উদ্ধারের পরিবর্তে আত্মস্বার্থ উদ্ধারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে শোষণের প্রতিভূ বনে যায় তখন দেখা যায়, যাদের তারা প্রতিনিধিত্ব করছে তাদেরই তারা প্রথম ও প্রধান প্রতিপক্ষ। প্রচণ্ড স্ববিরোধী এই পরিবেশ পরিস্থিতিতে উৎপাদন, উন্নয়ন তথা গণতান্ত্রিক উন্নয়ন সবই বালখিল্যতায় পর্যবসিত হয়।

মানুষের দায়িত্ববোধের দ্বারা কর্তব্যকর্ম সুচারুরূপে সম্পাদনের মাধ্যমে সমাজ সমৃদ্ধি লাভ করে। আবার এই মানুষের দায়িত্বহীনতার কারণে সমাজের সমূহ ক্ষতি সাধিত হয়। মানবসম্পদ না হয়ে সমস্যায় পরিণত হলে সমাজের অগ্রগতি তো দূরের কথা, সমাজ মুখথুবড়ে পড়তে বাধ্য। মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি সভ্যতার বিবর্তনে সহায়তা হয়। মানুষের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ, সহিংস সন্ত্রাসী কার্যকলাপ কিংবা যুদ্ধ এবং মারণাস্ত্রের ব্যবহারে মানুষের ধ্বংস অনিবার্য হয়ে ওঠে। মানবতার জয়গান মানুষই রচনা করে আবার মানবভাগ্যে যত দুর্গতি তার স্রষ্টাও সে। মানুষের সৃজনশীলতা, তার সৌন্দর্যজ্ঞান, পরস্পরকে সম্মান ও সমীহ করার আদর্শ অবলম্বন করে সমাজ এগিয়ে চলে। পরমতসহিষ্ণুতা আর অন্যের অধিকার ও দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার মাধ্যমে সমাজে বসবাস করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অন্যের অন্যায় অনিয়মের নজির টেনে নিজেদের অপকর্মের দৃষ্টান্ত ব্যাখ্যার বাতাবরণে ঢাকার মতো আত্মঘাতী ও প্রবঞ্চনার পথ পরিহার করেই বরং সবার সহযোগিতা ও সমন্বিত উদ্যোগের আবহ সৃষ্টি করতে পারলে সমাজ নিরাপদ ও বসবাসযোগ্য হয়ে ওঠে।

সমাজবিজ্ঞানীরা তাই মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে দেশ জাতি রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত সাব্যস্ত করে থাকেন। সমাজের উন্নতি, অগ্রগতি ও কল্যাণ সৃষ্টিতে মানুষের সার্বিক উন্নতি অপরিহার্য শর্ত। আগে সমাজ না আগে মানুষ- এ বিতর্ক সর্বজনীন। মানুষ ছাড়া মনুষ্য সমাজের প্রত্যাশা বাতুলতামাত্র। সুতরাং একেকটি মানুষের উন্নতি সবার উন্নতি, সমাজের উন্নতি।

এ প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে নজর দিতে হবে, সচেতন, সক্রিয় হতে হবে, সমন্বয় হতে হবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে সামষ্টিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার কাজে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে নানান শিল্প উদ্যোগে এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের অর্থনীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। দেশটি কৃষি এবং ট্রেডিং-নির্ভরতা থেকে ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে অগ্রসরমান। বাংলাদেশ জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ একটি দেশ। সে কারণে স্বাভাবিকভাবেই দেশের কর্মক্ষম জনগণকে কর্মকুশল দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার অনিবার্যতা মাহেন্দ্রক্ষণে উপনীত। কেননা, ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ সৃজনশীল কর্মক্ষম জনসমষ্টির আওতায় চলে এসেছে, যা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট নামে পরিচিত। সনাতন শর্তানুযায়ী ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট মূলত তিন দশক পর্যন্ত সৃজনশীল এবং উন্নয়ন অভিসারী অভিযাত্রায় থাকে। ইতোমধ্যে তার এক দশকের বেশি সময় চলে গেছে, সামনে আরো দেড় দুই দশক বাকি আছে। এই সময়ের মধ্যে বিদ্যমান কর্মোপযোগীদেরকে উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত করতে না পারলে বা তাদেরকে উপযুক্ত কর্ম সম্পাদনে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে না পারলে কিংবা তাদের জন্য উপযুক্ত কাজ এবং পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারলে তারা অলসতায় শয়তানের কর্মশালায় যোগ দিতে পারে কিংবা অকর্মণ্যতায় হতাশায় নিমজ্জিত হতে পারে, যে পরিস্থিতিতে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ডিজাস্টারে পরিণত হতে পারে। কেননা, সমাজে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়ে গেলে উৎপাদনশীলতায় বা জিডিপিতে তাদের অবদান বঞ্চিত হয় দেশ এবং তারা নিজেরাই নিজেদের, পরিবারের ও দেশের জন্য বোঝা বা বিপদের বা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর সেই ক্ষতির ধকল কাটিয়ে উঠতে জাতির জন্য প্রয়োজন হবে প্রচুর সময় এবং এর জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দিতে হবে বিশেষ মাশুল।

বিগত ৫৪ বছরে বাংলাদেশের বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা জনগণকে বিশেষ করে যুবসমাজকে পর্যাপ্ত যথাযথ দক্ষ জনসম্পদ বা প্রশিক্ষিত লোকবল হিসেবে গড়ে তুলতে পারেনি। যার জন্য এ দেশ থেকে বিদেশে যাচ্ছে অদক্ষ শ্রমিক আর বিদেশের দক্ষ জনবল এ দেশের মধ্য ও উচ্চতর পদগুলোতে বেশি বেতনে নিয়োজিত হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রচুর বিশ্ববিদ্যালয় সমাপনকারী ডিগ্রিধারী শিক্ষিতের সংখ্যা বেড়েছে; কিন্তু তাদেরকে দেশের উদীয়মান শিল্পে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগযোগ্য হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে না। স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজের সেই বিখ্যাত চরণের মতো-Water water everywhere nor any drop to drink. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় ও বাণিজ্য অনুষদের এক গবেষণায় বাংলাদেশী কর্মী ও ব্যবস্থাপক পর্যায়ের জনসম্পদের মধ্যে চিহ্নিত সীমাবদ্ধতাগুলোর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো- উৎপাদন কিংবা সেবা খাতে করিৎকর্মা হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করা বা উপস্থাপন বা তুলে ধরার মতো প্রযোজ্য প্রয়োগিক ভাষা ও জ্ঞানের অভাব; সৃজনশীল তথা উদ্ভাবনী শক্তি প্রকাশে, প্রয়োগে সংশয়, সঙ্কোচ তথা অপরাগতা; প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কর্মদক্ষতা বা কার্যকর জ্ঞানের অভাব; উপযুক্ত বাজার সৃষ্টি বা খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ, নিষ্ঠা ও দক্ষতার অভাব; বাজারজাতকরণে নৈপুণ্য, দক্ষতা, আগ্রহ ও তৎপরতায় ঘাটতি; বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবস্থাপনায় অপটু; ক্রয়-বিক্রয় পরিচালনায় পরিবেশনে, উপস্থাপনে, নেগোশিয়েশনে নিষ্ঠার অভাব; সূক্ষ্ম ও জটিল বিষয়াদি ও ঝুঁকি বিশ্লেষণ এবং সেসব মোকাবেলা তথা সমাধানের পথ পরিক্রমায় সাহস এবং প্রজ্ঞার অভাব; লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রায়োগিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা; ব্যবসায়-বাণিজ্য বিনিয়োগ উৎপাদন ক্ষেত্রে উদ্যম ও উদ্যোগকে টেকসইকরণে নিষ্ঠার অপ্রতুলতা।

এটি এখন অনস্বীকার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, বাংলাদেশী তরুণ উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপকদের মধ্যে নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিচ্ছে, ক্ষেত্রবিশেষে দুর্বলতা, প্রায়োগিক জ্ঞানের নিম্নগামিতা, প্রশিক্ষণ এবং অধিক শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহের অভাব, সৃজনশীল পৃষ্ঠপোষকতা দানের ঘাটতি বা কমতি রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য উঠতি বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ-পরিস্থিতিতে টিকে থাকা কিংবা অধিকতর যোগ্যতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মতো উপযুক্ত ও দক্ষ জনবলের যেমন প্রয়োজন, তেমনি টেকসই ও লাগসই প্রযুক্তি প্রয়োগ ও সমন্বয়ে দক্ষ জনবলের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তার সাথে প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকুশলতা। এই প্রয়োজনীয়তার বিপরীতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার গুণগত মান কমে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন সম্প্রসারণমূলক কর্মকাণ্ডে নতুন যেসব চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে, সেসবের মোকাবেলার মতো উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। দেশে উপযুক্ত পরিবেশ প্রণোদনা সৃষ্টিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অদক্ষতা-অক্ষমতার জন্য বিদেশে শিক্ষিত দক্ষ উদ্যোক্তারা দেশে ফিরতে চাচ্ছে না। দেশ উদ্যোক্তা ও মেধাশূন্য হয়ে যাচ্ছে।

লেখক : সাবেক সচিব এবং এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান

সূত্র, প্রথম আলো