সারা বিশ্বে রোগ প্রতিরোধ, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা প্রচার এবং স্বাস্থ্যসেবার ন্যায্য অ্যাক্সেস নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমগ্র জনসংখ্যার স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং উন্নতির জন্য জনস্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট কিনুন

বাংলাদেশ সুজলা সুফলা নদী মার্তৃক দেশ। এদেশের মানুষ সত্যিই পূর্বে অতি স্বাচ্ছন্দময় জীবন যাপন করত। গোলা ভরা ধান আর গোয়াল ভরা গরু এর অর্থ এদেশের মানুষ পুষ্টি সমৃদ্ধ জাতি ছিল। পুষ্টির কোনো অভাব ছিল না গ্রাম প্রধান এই সবুজ মাতৃভুমির।

কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে দিন তত পরিবর্তিত হচ্ছে। আমরা যখন ছোট ছিলাম বা ৭০/৮০ ডায়াবেটিকস রোগটি অত্যন্ত আভিজাত্যের রোগ ছিল। এই রোগটি যেমন তেমন মানুষের হতো না। রোগটি হতো বিশেষ অভিজাত শ্রেণির যারা নেহায়েত উন্নত জীবন যাপনে অভ্যস্ত। বর্তমানে রোগটি গরীব-ধনী, অভিজাত-অনাভিজাত সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

পূর্বে শোনা যেত যক্ষা হলে রক্ষা নেই, ক্যন্সারের এনসার নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে এটাও ঠিক ১০/২০/৫০ গ্রামে তখন ক্যান্সারের রোগী পাওয়া বড়ই ভার ছিল। যা এখন ঘরে ঘরে। যক্ষার হাত হতে মানুষকে কিছুটা রক্ষা করেছে যে বিষয়টি তার মধ্যে অন্যতম টিকা এবং জনসচেতনতা যা জনস্বাস্থ্য শিক্ষার একটি প্রায়োগিক ব্যবস্থাপনা।

জনস্বাস্থ্য হলো রোগ প্রতিরোধ, জীবন দীর্ঘায়িত করা এবং সমাজ, সংস্থা, সম্প্রদায় এবং ব্যক্তিদের সংগঠিত প্রচেষ্টার বৈজ্ঞানিক শৈল্পিক সমন্বয়। এটি একটি বিস্তৃত এবং বহুমুখী ক্ষেত্র যা স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক যেমন মহামারীবিদ্যা, জৈব পরিসংখ্যান, পরিবেশগত স্বাস্থ্য, সামাজিক ও আচরণগত বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য নীতি ও ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্য যোগাযোগকে অন্তর্ভূক্ত করে।ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট কিনুন

স্বাস্থ্যসেবায় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সুযোগগুলোকে কাজে লাগিয়ে সমাজের সুস্থতা নিশ্চিতকরণ সম্ভব হবে জনস্বাস্থ্যে শিক্ষার দ্বারা। পুষ্টির গুরুত্ব অনুসারে জনগণের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন সাধনে জনস্বাস্থ্য শিক্ষা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জনস্বাস্থ্যের গুরুত্বকে প্রধান্য দেখিয়ে এটি বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বৈষম্য হ্রাস করণে মূল চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করে। কারণ এটি মানুষ এবং সম্প্রদায়কে সচেতন এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরির করে ।

সকল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য চাহিদা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা, বিশেষ করে যারা দুর্বল, প্রান্তিক অথবা সুবিধাবঞ্চিত তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করাই জনস্বাস্থ্যের লক্ষ্য।

ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট কিনুন

টিকাদান, স্যানিটেশন, রোগ নজরদারি, প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা, স্বাস্থ্য প্রচার এবং স্বাস্থ্য শিক্ষার মতো জনস্বাস্থ্য হস্তক্ষেপগুলো সংক্রামক এবং অ-সংক্রামক রোগ, আঘাত এবং প্রতিবন্ধকতার বোঝা প্রতিরোধ বা হ্রাস করতে পারে। এভাবেই জনস্বাস্থ্য জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং উন্নত করে। দেশ ও অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে জনস্বাস্থ্য। মহামারী, জৈব সন্ত্রাস বা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো উদীয়মান এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য হুমকির প্রতি সাড়া দেয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য অপরিহার্য। তাই জনস্বাস্থ্য বিশ্বব্যাপী ইমার্জিং এবং রি ইমার্জিং সকল স্বাস্থ্য হুমকির প্রতি যথাযথভাবে সাড়া দেয়। এটি ব্যক্তি এবং সম্প্রদায়কে জ্ঞান, দক্ষতা এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করার সুযোগ প্রদান করে।

ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট কিনুন

বাংলাদেশে একটি বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় জনসংখ্যা রয়েছে, যারা বিভিন্ন স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্যের একটি দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস থাকলেও তা কুসংস্কার মুক্ত নয়। প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে এখানে স্বাস্থ্যবিধি, স্যানিটেশন এবং প্রতিরোধ অনুশীলন করা হতো অনেকটা কনভেনশনাল পদ্ধতিতে। বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্যও সময়ের সাথে আশানুরূপ তেমন কোনো বিকাশ ঘটেনি। ঔপনিবেশিক, স্বাধীনতা-পরবর্তী এবং সমসাময়িক সময় বিশ্বব্যাপী ও জাতীয় প্রেক্ষাপট দ্বারা তা গভীরভাবে অনুমেয়। বিশ্বের সকল উন্নত দেশে জনস্বাস্থ্য যেভাবে বিকশিত হয়েছে, বাংলাদেশে তা সম্পূর্ণভাবে তা অনুপস্থিত। এর মূল কারণ হতে পারে জনস্বাস্থ্যে যথাযথ শিক্ষা ও গবেষণার অভাব এবং অন্যান্য খাতের তুলনায় জনস্বাস্থকে গুরুত্ব অনুসারে মূল্যায়নের অভাব। অথচ প্রয়োজন ছিল ক্রমান্নত শিক্ষা, উদ্ভাবন এবং পরিবর্তিত স্বাস্থ্য চাহিদা ও প্রেক্ষাপটের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া। যে কাজটি সম্ভব হতো কোনো জনস্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে। এদেশে এখন পর্যন্ত তা হয়ে উঠেনি। জনস্বাস্থ্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে প্রয়োজন মানসম্মত উন্নত বিশ্বব্যিালয়। তবে এখন পর্যন্ত এক্ষেত্রে যে প্রতিষ্ঠানটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে তার নাম জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) মহাখালী ঢাকা।ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট কিনুন

নিপসম কর্তৃক প্রদত্ত স্পেশালাইজড মাস্টার অফ পাবলিক হেলথ (MPH) প্রোগ্রামের মতো প্রোগ্রাম দেশে বিরল। নিপসম দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় জনস্বাস্থ্য এবং মানব উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান, যা একটি বিস্তৃত এবং আন্তঃবিষয়ক পাঠ্যক্রম, একটি বৈচিত্র্যময় এবং অভিজ্ঞ অনুষদ, একটি প্রাণবন্ত ও সহায়ক শিক্ষার পরিবেশ প্রদান করে। যার গতিশীলতা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর একটি সময়ের দাবি।

সারা বিশ্বে রোগ প্রতিরোধ, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা প্রচার এবং স্বাস্থ্যসেবার ন্যায্য অ্যাক্সেস নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমগ্র জনসংখ্যার স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং উন্নতির জন্য জনস্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন বৃহত্তর সামাজিক কারণগুলো মোকাবেলায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যার ফলে দীর্ঘ আয়ু হয়, স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় হ্রাস পায় এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট কিনুন

এমনি করে জনস্বাস্থ্যের প্রকৃত সুবিধা সাধারন মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রয়োজন আরো উন্নত মানের ল্যাব ফ্যাসিলিটি এবং দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ। যে কাজটি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান নিপসম। এখন সময়ের দাবি এই স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটিকে স্পেশালাইজড বিশ্ববিদ্যালয় অর্থ্যৎ পাবলিক হেলথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করণের। যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সকল সমস্যার যথাযোগ্য বিজ্ঞান ভিত্তিক সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এদেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সুস্থাতা নিশ্চিত কল্পে একটি উপভোগ্য জীবন উপহার দিতে সক্ষম হবে।

লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান

ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট কিনুন

কীটতত্ত্ব বিভাগ

জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম)

মহাখালী, ঢাকা।

সূত্র, নয়া দিগন্ত