জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার আগে প্রয়োজনীয় ক্ষৌরকর্ম করা, অর্থাৎ নখ কাটা, গোঁফ ছঁাটা, চুল কাটা ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা এবং জিলহজের চাঁদ ওঠার পর থেকে ১০ তারিখে কোরবানির পশু জবাইয়ের আগপর্যন্ত কোনো প্রকার ক্ষৌরকর্ম না করা ও কোরবানির পশু জবাইয়ের পর ওই দিনের মধ্যে ক্ষৌরকর্ম করা (অন্তত নখ কাটা) সুন্নত। এতে একটি কোরবানির সওয়াব পাওয়া যায়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা কোরবানি করবে, তারা যেন (এই ১০ দিন) চুল ও নখ না কাটে।’ (মুসলিম: ৫২৩৩, ইবনে মাজাহ, পৃষ্ঠা: ২২৭) ‘যার কোরবানি করার সামর্থ্য নাই, সে যেন এই দিন তার মাথার চুল, নখ, গোঁফ কেটে ফেলে এবং নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করে। এ-ই আল্লাহর নিকট তার কোরবানি।’ (আবুদাউদ, নাসায়ি, ত্বহাবি, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৩০৫)

জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত দিনে রোজা পালন করা, রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জিলহজের ১০ দিনের ইবাদত আল্লাহর কাছে অন্য দিনের ইবাদতের তুলনায় বেশি প্রিয়, ওই সময়ের প্রতিদিনের রোজা এক বছরের রোজার ন্যায় আর প্রতি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের ন্যায় মর্যাদাপূর্ণ।’ (তিরমিজি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১৫৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জিলহজের ১০ দিনের ইবাদত আল্লাহর কাছে অন্য দিনের ইবাদতের তুলনায় বেশি প্রিয়। ওই সময়ের প্রতিদিনের রোজা এক বছরের রোজার ন্যায় আর প্রতি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের ন্যায় মর্যাদাপূর্ণ।’

৯ জিলহজ তথা আরাফার দিন নফল রোজা রাখা বিশেষ সুন্নত আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী যে আল্লাহ তাআলা তার (রোজাদারের) বিগত এক বছরের ও আগামী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (তিরমিজি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১৫৭) তবে আরাফায় উপস্থিত হাজি সাহেবদের জন্য এই রোজা প্রযোজ্য নয়।

জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রতি ফরজ নামাজের পর একবার তাকবির বলা ওয়াজিব। পুরুষেরা স্বাভাবিক স্বরে আর নারীরা নিম্ন স্বরে তাকবির বলবেন, ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ (ইলাউস সুনান, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ১৪৮)

ইতিহাসে প্রথম কোরবানি করেন আদম (আ.)–এর পুত্রদ্বয় হাবিল ও কাবিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আদম (আ.)–এর পুত্রদ্বয়ের বৃত্তান্ত আপনি তাদের শোনান। যখন তারা উভয়ে কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হলো আর অন্যজনেরটা হলো না। অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকিনদের কোরবানি কবুল করেন।’ (সুরা-৫ মায়িদা, আয়াত: ২৭)

‘হজরত ইব্রাহিম (আ.) বললেন, “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একজন নেক সন্তান দান করুন।” অতঃপর আমি তঁাকে এক সহিষ্ণু পুত্রের সুসংবাদ দিলাম, অতঃপর সে যখন তার পিতার সঙ্গে কাজ করার বয়সে উপনীত হলো, তখন ইব্রাহিম (আ.) বললেন, “হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে তোমাকে আমি কোরবানি করছি, তোমার অভিমত কী?” সে বলল, “হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন, তা–ই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।” যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহিম (আ.) তঁার পুত্রকে কাত করে শোয়ালেন, তখন আমি তাঁকে ডাক দিয়ে বললাম, “হে ইব্রাহিম! আপনি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করলেন!” এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয় এটা ছিল এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাকে মুক্ত করলাম এক মহান কোরবানির বিনিময়ে। আমি এটা পরবর্তীদের স্মরণে রেখে দিলাম। ইব্রাহিম (আ.)–এর জন্য অভিবাদন! আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও শুভেচ্ছা।’ (সুরা-৩৭ ছফফাত, আয়াত: ১০০-১১০)

‘সকল সম্প্রদায়ের জন্য আমি কোরবানির বিধান দিয়েছি, তিনি (আল্লাহ) তাদের জীবনোপকরণস্বরূপ যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর ওপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’ (সুরা-২২ হজ, আয়াত: ৩৪)

‘হে নবী! (সা.) আপনি আপনার রবের উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’ (সুরা-১০৮ কাউছার, আয়াত: ২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারেকাছে না আসে।’ (ইবনে মাজাহ)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

সূত্র,প্রথম আলো