হজ বিশ্বমুসলিম ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ইসলামী মহাসম্মেলন। পবিত্র কাবাগৃহকে কেন্দ্র করে মহান প্রভুর সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে সামর্থ্যবান সচ্ছল মুসলমান হৃদয়পূর্ণ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও আবেগজড়িত চিত্তে মক্কায় উপস্থিত হন এবং হজের আহকামগুলো সম্পাদন করেন।
হাজার বছরের আত্মনিবেদনের মাধ্যমে সূচিত হয়েছে হজ ও জিয়ারতের সুবিশাল প্রেক্ষাপট। তাই এ মহৎ কাজে বের হওয়ার প্রাক্কালে বায়তুল্লাহর মেহমানদের কিছু আবশ্যকীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়।
হজ পালনের প্রথম শর্ত হলো নিয়তের পরিশুদ্ধতা। অর্থাৎ আপনি একমাত্র আল্লাহর উদ্দশে হজ পালনের নিয়ত করেছেন। প্রতিটি আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার ক্ষেত্রে নিয়তের পরিশুদ্ধতা একান্ত প্রয়োজন। বিশুদ্ধ মনে আল্লাহর জন্য হজ করার নিয়ত মনেপ্রাণে গ্রহণ করে হজের প্রস্তুতি শুরু করা আবশ্যক। রাসুল (সা.) বলেছেন, আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল (বুখারি: ১)।
পরিশুদ্ধ নিয়তের পর আপনার প্রাথমিক প্রস্তুতি দরকার। হজে গমনকারী প্রথমত প্রাক-নিবন্ধন, পাসপোর্ট, ভিসা কার্যক্রম, মেডিকেল চেকআপ, টিকা গ্রহণ, পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রভৃতি কাজ সম্পন্ন করবেন।
হজে গমনের আগে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। এ ছাড়া তিনি স্বীয় কর্মস্থল বা নিয়মিত ব্যস্ততা থেকে প্রায় দুই মাসের জন্য অবসর নেবেন, যেন তাঁর অনুপস্থিতিতে পরিবার-পরিজনসহ কর্মস্থলে তাঁর অভাববোধ কোনো ব্যত্যয় সৃষ্টি না করে। এর পর দরকার হজ সফরের পাথেয় সংগ্রহ করা।
হজের সফরকালীন প্রায় ৫০ দিনের জন্য প্রয়োজনীয় পাথেয় সঙ্গে রাখতে হবে। যেমন– আবশ্যকীয় পোশাক, দুই সেট ইহরামের কাপড়, ওষুধ, ব্যাগ, লাগেজ, জুতা, স্যান্ডেল, মিসওয়াক, সাবান, নেল কাটার, আয়না, চিরুনি, তায়াম্মুমের সামগ্রী, নারীদের ক্ষেত্রে হিজাব-নিকাব প্রভৃতি প্রস্তুত রাখতে হবে। আবার এটাও খেয়াল রাখতে হবে, অতিরিক্ত জিনিসপত্র নিতে গিয়ে যাতে সমস্যার সৃষ্টি না হয়।
হজে আর্থিক ব্যয়ের ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ ক্ষেত্রে বেশ অর্থের দরকার পড়ে। সুতরাং পূর্বপ্রস্তুতি থাকা অত্যাবশ্যক। সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী এজেন্সির মাধ্যমে সব বিষয়ে অবগত হবেন ও একটি প্রশিক্ষণে অংশ নেবেন। তিনি মক্কা-মদিনায় হোটেল ভাড়া, খাবার ব্যবস্থাপনা, কোরবানির প্রস্তুতি সম্পর্কে জেনে নেবেন এবং তার জন্য পরিমাণমতো সৌদি রিয়াল সংগ্রহ করবেন।
হজের নিয়মকানুন জেনে নেওয়া জরুরি। হজ-সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট মাসআলা-মাসায়েল ভালোভাবে বুঝে নেবেন। মুআল্লিমের সাক্ষাতের আশায় বসে না থেকে হজের ফরজ, ওয়াজিব, নফল হুকুম-আহকাম, মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে পূর্বজ্ঞান থাকা দরকার। এ ছাড়া তিনি জিয়ারত, মর্যাদাপূর্ণ স্থান ও তৎস্থানে পালনীয় আমলগুলো সম্পর্কে অবগত থাকবেন। তিনি এ বিষয়ে মাতৃভাষায় লিখিত বই-পুস্তিকা সঙ্গে নিতে পারেন।
মুমিন অন্তরে পবিত্র মক্কা-মদিনা জান্নাতুল বাকি-মুয়াল্লা, বদর-উহুদ প্রান্তরের প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ আবহমানকাল থেকে চলে আসছে, তার পূর্ণতা পায় হজ আদায়ের মাধ্যমে। হজযাত্রী নিজ গৃহ থেকে বের হয়ে হজ ক্যাম্প, বিমানবন্দর, মক্কা-মদিনা, আরাফাহ-মিনা-মুজদালিফা সফর করবেন। সেখান থেকে তাওয়াফ, সায়ি কোরবানি, জিয়ারা সম্পন্ন শেষে নিজ বাড়িতে সহি সালামতে ফেরার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর তাওফিক চাইবেন। তাঁর কৃত হজ যেন ‘হজ্জে মাবরুর’ হিসেবে আল্লাহতায়ালা কবুল করেন– কায়মনোবাক্যে সে দোয়া করতে থাকবেন। ইনশাআল্লাহ, উল্লিখিত নিয়ম ও প্রয়োজনীয়তা মাথায় রাখলে হজ পালনকালে তেমন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে না।
মুহাম্মদ ফয়েজুল্লাহ: অধ্যক্ষ, বসুরহাট ইসলামিয়া কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসা,
কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী
সূত্র, সমকাল