বর্তমান যুগ দ্রুতগতির প্রযুক্তি আর জটিল ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের যুগ। তাই নিজের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে অন্যের ওপর নির্ভরতা কমাতে আর দেশের নিরাপত্তা বাড়াতে সামরিক ও বেসামরিক খাতের মধ্যে একটা মেলবন্ধন তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশ যখন অর্থনীতি আর প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এই উন্নতির পথে আরো দ্রুত হাঁটতে হলে বেসরকারি সংস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর প্রতিরক্ষা বিভাগকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন আর রাশিয়ার মতো দেশগুলো এই সামরিক ও বেসামরিক সহযোগিতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি’ (ডিএআরপিএ) সামরিক আর সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য অনেক নতুন প্রযুক্তি তৈরি করেছে। আজকের ইন্টারনেট বা জিপিএস তারই উদাহরণ। চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার নিরাপত্তা আর মহাকাশ গবেষণায় দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এর কারণ হলো তাদের সরকার সামরিক আর বেসামরিক খাতকে মিলিয়ে কাজ করার একটি শক্ত কাঠামো তৈরি করেছে।
সামরিক আর বেসামরিক খাত একসঙ্গে কাজ করলে প্রযুক্তির সুফল সাধারণ মানুষের জীবনেও ছড়িয়ে দেওয়া যায়। যেমন, চীনের সামরিক বাহিনী দ্রুত আর নিরাপদে ডেটা পাঠানোর উপায় খুঁজে বের করার গবেষণার ফলে ৫জি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা সহজ হয়েছে। একইভাবে, নাসা মহাকাশ ভ্রমণের জন্য হালকা আর কম শক্তি লাগে এমন জিনিস তৈরির গবেষণা করতে গিয়ে বিমান তৈরি আর নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে নতুন পথ দেখিয়েছে। এই উদাহরণ দ্বারা প্রমাণিত হয়, সরকার সাহায্য করলে সামরিক গবেষণা কীভাবে নতুন প্রযুক্তি তৈরি করতে পারে, যা দেশের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।
বাংলাদেশের জন্য, সামরিক আর বেসামরিক খাতকে মেলানো কোনো বিকল্প নয়, এটা এখন সময়ের দাবি। আমাদের দেশে শিল্প বাড়ছে, তথ্যপ্রযুক্তি খুব তাড়াতাড়ি উন্নতি করছে, আর সামরিক বাহিনীও আধুনিক হচ্ছে। তাই এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ অনেক দিক থেকে লাভবান হতে পারে। সামরিক আর সাধারণ প্রযুক্তির সমন্বয়ে নতুন অনেক কিছু তৈরি করা সম্ভব।
রোবোটিক্স, সাইবার নিরাপত্তা আর মহাকাশ তৈরির কম্পানিগুলো এমন জিনিস বানাতে পারে যা একই সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা আর ব্যবসা-বাণিজ্য উভয়কেই সাহায্য করে।
এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণা আর উন্নয়নের কাজে আরো বেশি করে যোগ দিতে হবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় অটোমেশন, ডেটা বিজ্ঞান আর জীবপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে, তারা প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করে নতুন কিছু তৈরি করতে পারে।
এতে শুধু আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই শক্তিশালী হবে না, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তির একটা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হবে। যে দেশ সামরিক আর বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক করতে পারবে, ভবিষ্যৎটা তাদের হাতেই থাকবে। বাংলাদেশ এখন এক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে এই সমন্বয়ের মাধ্যমে নিজেদের প্রযুক্তি সেক্টরটিকে নতুন করে গড়ার দারুণ সুযোগ রয়েছে।