এম হুমায়ুন কবীর। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজেস ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনায় বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া, শুল্কযুদ্ধে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি, করণীয় নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনোজ দে

প্রথম আলো: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় দফা ক্ষমতা গ্রহণের পর যে ৬০টি দেশের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। প্রতিযোগী দেশ যেমন ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এরই মধ্যে চুক্তি করে ফেলেছে। ভারত, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন একটা চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে পড়ল?

এম হুমায়ুন কবীর: বরাবরের মতোই এবারও আমরা একটা দ্বিধাগ্রস্ত মনোভঙ্গি দেখতে পেলাম। দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকার একটা প্রবণতা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের আছে। আমার ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র এখন যে গুরুত্ব দিয়ে তার এই শুল্ক প্রকল্প নিয়ে সামনে এগোচ্ছে, আমরা ঠিক সেই গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টাকে দেখিনি। পত্রপত্রিকার খবরে দেখেছি, সরকারের একটা ধারণা ছিল, এটা এক বছর পিছিয়ে যাবে, আমরা সময় পাব; কাজেই অতটা গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এর প্রধান কারণ দুটি।

প্রথমত, দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকার কারণে উদ্যোগী হলাম কি হলাম না—এ রকম একটা দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করেছে। দ্বিতীয়ত, শুল্ক নিয়ে এবার যুক্তরাষ্ট্রের যে ভূকৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিটা আছে, সেটা আমরা সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারিনি। ফলে আমরা আমাদের মতো করেই পুরো বিষয়টাকে দেখেছি। কিন্তু আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির বাইরেও যে সারা বিশ্বে একটা বড় ধরনের আলোড়ন হচ্ছে, সে বিষয়টা আমরা আমাদের উপলব্ধিতে নিতে পারিনি। সেটা পারিনি বলেই মনে হচ্ছে, দর-কষাকষির জায়গায় আমরা খানিকটা পিছিয়ে পড়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। কিন্তু দর-কষাকষির কোন পর্যায়ে আমরা এখন আছি, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে আমরা আশা করি, উভয় পক্ষের কাছেই সন্তোষজনক হয়, এমন একটা ফলাফল হয়তো শেষ পর্যন্ত আমরা পাব।

প্রথম আলো: পাল্টা শুল্কের কথা বলা হলেও যুক্তরাষ্ট্র যে শর্ত দিয়েছে, তাতে বিষয়টি শুধু বাণিজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটা অনেকটা নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে এটা শোনা যাচ্ছে যে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমানো বা চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা, সমরাস্ত্র ও সামরিক সহায়তা কমানোর মতো কিছু শর্ত থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূরাজনীতির চ্যালেঞ্জটা কতটা জটিল হচ্ছে?

এম হুমায়ুন কবীর: বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জটা এখন খুব জটিল বলেই মনে হয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ক্ষমতায় আসার পর চীনকে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখছেন। তাঁর প্রথম মেয়াদে এবং বাইডেন প্রশাসনের আমলেও যুক্তরাষ্ট্র চীন সম্পর্কে একই ধারণা পোষণ করেছিল। তবে মনে হচ্ছে, এবার ট্রাম্প এই প্রকল্প নিয়ে সক্রিয়ভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। সেই কারণেই আমরা দেখছি, ট্রাম্প তাঁর শুল্কযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি বিষয় সামনে নিয়ে এসেছেন। সেটা হচ্ছে বর্তমান বিশ্বে যে বাণিজ্যিক কাঠামোটা আছে, সেটা তিনি বদলে ফেলতে চান। এর কারণ, ২০০১ সালে চীন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সদস্যপদ পায়।

২৫ বছর ধরে চীন উন্নয়নশীল দেশের ক্যাটাগরির মধ্য থেকে বিশ্ববাণিজ্যে বড় ধরনের একটা সুবিধা নিয়ে দেশটি তাদের বাণিজ্যের সম্প্রসারণ করেছে। কাজেই এখন যদি বাণিজ্যিক কাঠামোটা পরিবর্তন করে দেওয়া যায়, তাহলে চীন নিশ্চিতভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এত দিন ধরে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার আওতায় সবার জন্যই সমান সুযোগ ছিল। ট্রাম্প প্রশাসন যে শুল্ককাঠামো নিয়ে সামনে এগোচ্ছে, তাতে সেই সুযোগটা সবার জন্য সমান না–ও থাকতে পারে। আর চীন এত দিন ধরে যে সুবিধাটা পেয়ে এসেছে, সেটা থেকে তারা বঞ্চিত হবে।

ফলে অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক প্রকল্পের একটা মূল উদ্দেশ্য হলো চীনকে ঠেকানো বা অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে চীনকে আটকে দেওয়া। অর্থনৈতিকভাবে যদি চীনকে আটকে দেওয়া যায় বা চীনের অর্থনৈতিক গতিকে ধীরগতি করে দেওয়া যায়, তাহলে ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার জন্য চীনের যে সম্ভাবনাটা আছে, সেটা আটকে দেওয়া সম্ভব।

এই মুহূর্তে চীন বা যুক্তরাষ্ট্র বা ভারত কারও পক্ষে গিয়ে কাজ করার প্রয়োজন আমাদের নেই। আমার কাছে মনে হয় এই মুহূর্তে আমাদের সে সক্ষমতাও নেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের অবলম্বন হতে হবে দক্ষ কূটনীতি এবং প্রিভেন্টিভ কূটনীতি

প্রথম আলো: যুক্তরাষ্ট্র তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের সঙ্গেও তো বাংলাদেশকে যুক্ত করতে চায়...

এম হুমায়ুন কবীর: চীনকে আটকাতে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো–প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি করেছে। অতি সম্প্রতি তাইওয়ান নিয়ে আলাপ–আলোচনা হচ্ছে। সামনে যদি তাইওয়ান নিয়ে চীনের সঙ্গে কোনো যুদ্ধ হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তার বন্ধু কে হবে, তার সঙ্গে কে থাকবে, এগুলো নিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করছে। এই বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশ তাদের পক্ষে থাকুক।

এখন বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের যে ধরনের সামরিক সহযোগিতা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আছে, সেগুলো থেকে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে সরে আসুক, এটা যুক্তরাষ্ট্র চাইবে। যুক্তরাষ্ট্রের সেই চাওয়াটা খুব স্বাভাবিক। সে কারণেই ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, তার সঙ্গে বাংলাদেশের ওপর এই শুল্কঝড় ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত।

প্রথম আলো: যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশ কী করতে পারে?

এম হুমায়ুন কবীর: আমরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তির ব্যাপারে দর-কষাকষি করছি। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আমাদের অবস্থান তুলে ধরতে পারি। প্রথমত চীন যেসব জায়গায় বিনিয়োগ করে, সেসব জায়গায় কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ করে না। চীন প্রধানত অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করে। আমরা যদি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যুক্তি তুলে ধরি যে অবকাঠামোতে তোমাদের বিনিয়োগ নেই, এ খাতে আমরা কেন চীনা বিনিয়োগ নেব না। আমি আশা করি, যুক্তিসংগতভাবেই যুক্তরাষ্ট্র সেটা মেনে নেবে। দ্বিতীয়ত, আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি যে চীনের সঙ্গে আমরা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখলেও মার্কিনদের ভূকৌশলগত কোনো ক্ষতি হয়, তেমন কাজ বাংলাদেশ করবে না। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে শঙ্কা, সেটা কমিয়ে আনতে যুক্তি দিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারি।

প্রথম আলো: একটা নিরাপত্তা ফ্রেমওয়ার্কের প্রসঙ্গ আসছে। যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো সামরিক চুক্তি করতে চায়? বঙ্গোপসাগরের প্রবেশদ্বার হিসেবে ভূরাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মতো দেশের কোনো একটি জোটে অন্তর্ভুক্ত হওয়া কতটা বাস্তবসম্মত হবে? এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের করণীয় কী হবে?

এম হুমায়ুন কবীর: যুক্তরাষ্ট্র তার ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করেছে। আমরা ২০২৩ সালে ইন্দো–প্যাসিফিক আউটলুক ঘোষণা করেছি। তবে এখন যদি চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও বেশি তীব্র হয়, তাহলে বাংলাদেশ ক্রসফায়ারের মধ্যে পড়ার একটা আশঙ্কা থাকবে। সেই ক্ষেত্রে কূটনৈতিক দক্ষতা দিয়ে উভয় পক্ষের কাছ থেকে যতটা সমদূরত্ব বজায় রেখে থাকা যায়, সেই চেষ্টা আমাদের করতে হবে।

কারণ, এই মুহূর্তে চীন বা যুক্তরাষ্ট্র বা ভারত কারও পক্ষে গিয়ে কাজ করার প্রয়োজন আমাদের নেই। আমার কাছে মনে হয় এই মুহূর্তে আমাদের সে সক্ষমতাও নেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের অবলম্বন হতে হবে দক্ষ কূটনীতি এবং প্রিভেন্টিভ কূটনীতি। আগে থেকে সমস্যাগুলো যাতে বুঝতে পারা যায় এবং সেই সমস্যাগুলোকে দূরে রাখা যায়, সে জন্য কূটনৈতিক দক্ষতা ও সক্ষমতা আমাদের গড়ে তুলতে হবে। সেই কাজটা এখনই শুরু করতে হবে।

অর্থাৎ আমাদের এখন যে কূটনৈতিক কাঠামো আছে, তার পেছনে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, দায়বদ্ধতা বাড়াতে হবে। এখনকার প্রক্রিয়াগত কূটনীতির চেয়ে ফলাফলভিত্তিক কূটনীতির প্রতি আমাদের বেশি মনোযোগী হতে হবে। এখন আর স্থিতিস্থাপক ও রুটিন কূটনীতির সুযোগ নেই। কারণ, এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারত—এই তিন শক্তির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিন দিন তীব্র হচ্ছে। সেটা থেকে আমাদের নিজেদের রক্ষা করতে হলে কূটনৈতিক ব্যবস্থা ছাড়া এই মুহূর্তে আর কোনো অবলম্বন আমাদের কাছে নেই।

শুধু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাদার কূটনীতিক, প্রশাসন, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়—সব অংশীজনকে এই উপলব্ধির মধ্যে আনতে হবে যে বাংলাদেশের আশপাশে একটা ঝড় তৈরি হচ্ছে। সেই ঝড়ের মধ্যে আমরা কীভাবে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা করব এবং আমাদের উন্নয়ন প্রত্যাশাটাকে ধরে রাখব, সে বিষয়ে শুধু বাড়তি সতর্কতা নয়, বাড়তি সক্রিয়তাটাও জরুরি।

প্রথম আলো: অর্থনৈতিকভাবে চীন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। চীনের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য কমানোর শর্তের প্রসঙ্গটি আলোচিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিটা সামাল দিতে বাংলাদেশের সামনে করণীয় কী হতে পারে?

এম হুমায়ুন কবীর: এটা নিঃসন্দেহে জটিল ও কঠিন সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্র অথবা ভারত অথবা ইউরোপীয় ইউনিয়ন যার সঙ্গে আমরা আলাপ-আলোচনায় যাই না কেন, ঘুরেফিরে চীনের প্রসঙ্গ আসবেই। কারণ, চীনকে নিয়ে সবাই চিন্তিত। সবাই চীনকে নিয়ে একধরনের ভয়ের মধ্যে আছে। সে ক্ষেত্রে কোনো কোনো জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র অথবা ভারত অনুপস্থিত অথবা কোনো কোনো জায়গায় বাংলাদেশের প্রয়োজনের নিরিখে যুক্তরাষ্ট্র অথবা ভারতকে বা অন্য কাউকে আমরা পাই না, সে বিষয়গুলো আমাদের দিক থেকে পরিষ্কার করতে হবে। আমার ধারণা, যদি যুক্তিসংগতভাবে সেগুলো আমরা তাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারি, তাহলে আলোচনার ক্ষেত্রে আমরা অন্তত একটা পরিসর পাব। কারণ, নেগোসিয়েশন কিন্তু একধরনের যৌক্তিক সংলাপ। সে ক্ষেত্রে আমরা যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন করলে অন্য পক্ষ গ্রহণ করতে বাধ্য থাকে।

চীন আমাদের প্রতিবেশী, চীনের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক, চীন আমাদের আমদানির এক নম্বর উৎস। এ ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে আমাদের বিচ্ছেদ বা চীনের থেকে দূরে সরে যাওয়া আমাদের জন্য খুব কঠিন কাজ। বিষয়টা যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাতে হবে। একটা বিষয় হলো, চীনের সঙ্গে আমাদের আমদানি বাণিজ্যটা অনেক বড়, কিন্তু চীনের বিনিয়োগটা এখানে খুব বেশি নয়। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে বড় অংশীদার। কাজেই আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে শক্ত যুক্তি দিয়ে এ বিষয়টা বলতে পারি। ইতিমধ্যে জ্বালানিসহ নানা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বাড়ানো নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বলতে পারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আধিপত্য করছে। বাণিজ্য ওঠানামা করতে পারে, কিন্তু বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদি।

প্রথম আলো: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট করলে কোনো একটি দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে সেটা বাংলাদেশকে মানতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো কী?

এম হুমায়ুন কবীর: এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট থাকতে হবে যে আমরা কখনোই কোনো দেশের সঙ্গে সামরিক জোটের নীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা সবার সঙ্গেই বন্ধুত্ব বজায় রেখে চলি। কারও সঙ্গেই আমরা বৈরিতায় যেতে চাই না। আমাদের পরিষ্কারভাবে বলতে হবে, আমরা তোমাদের অবস্থানকে শ্রদ্ধা করি, কিন্তু তাতে আমরা অংশীদার হতে পারি না। কারণ, এটা আমাদের জাতীয় দীর্ঘমেয়াদি যে নীতিমালা, তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং রাজনৈতিকভাবেও সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। জন্মের পর থেকে বাংলাদেশ এ ধরনের সামরিক জোটে যায়নি। এখনো এ দেশের সাধারণ মানুষের কাছে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সামরিক জোটে যাওয়ার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হবে না।

প্রথম আলো: আমরা জানতে পারছি, মালয়েশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নন–ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট করলেও দেশটির সরকার চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলো জনগণকে নিয়মিত জানাচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের মতামতও নিচ্ছে তারা। আমাদের ক্ষেত্রে কেন ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে? এ ধরনের দর-কষাকষি করার জন্য কী ধরনের টিম করা প্রয়োজন মনে করেন?

এম হুমায়ুন কবীর: এখানে একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় আপৎকালীন ব্যবস্থার মাধ্যমে এই শুল্কযুদ্ধটা শুরু করেছে। তারা ন্যাশনাল ইমার্জেন্সির কথা বলেছে। এর অর্থ হচ্ছে তারা সব জাতীয় সক্ষমতাকে এখানে একত্র করেছে। কিন্তু আমাদের দিক থেকে কেবল শুল্কটাকেই দেখছি। আমরা কি যুক্তরাষ্ট্রের মতো জাতীয় পর্যায়ের কোনো উদ্যোগ নিয়েছি? যুক্তরাষ্ট্র কী কী উদ্দেশ্য নিয়ে শুল্কযুদ্ধ চালাচ্ছে, সেদিকে নজর দিলেই তো বোঝা উচিত আমাদের আসলে কী করা দরকার ছিল।

ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ আমাদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সে কারণে জাতীয় স্বার্থে যতগুলো অংশীদারকে এখানে সংযুক্ত করা দরকার, সব অংশীদারের সঙ্গে কথাবার্তা বলে আমাদের অবস্থানগুলো নির্ধারণ করা উচিত। সে কারণেই প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতিটা দেখা যাচ্ছে। আমি অনুরোধ করব, এখনো সময় আছে সরকারি পর্যায় থেকে এই জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়, কূটনীতিসংক্রান্ত বিষয়, বাণিজ্যসংক্রান্ত বিষয়সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা দরকার। নন–ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট হয়েছে ঠিক আছে, কিন্তু আমরা যদি আলোচনা আমাদের লোকদের সঙ্গে না করি, তাহলে আমরা আমাদের অবস্থানটা কী করে নির্ধারণ করব? দেশের মানুষ কী চায়, সেটা সরকার কীভাবে বুঝবে? ফলে সব অংশীদারকে নিয়েই দর-কষাকষি করার জন্য একটা শক্তিশালী টিম করা দরকার।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

এম হুমায়ুন কবীর: আপনাকেও ধন্যবাদ।

সূত্র, প্রথম আলো