সিলেটে অবৈধ পাথর উত্তোলনের ঘটনা যখন সারা দেশে উদ্বেগ ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে, তখন বেরিয়ে এসেছে একই অঞ্চলে অবাধে বালু লুটের তথ্য। শুক্রবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে পিয়াইন নদী থেকে প্রশাসনকে উপেক্ষা করেই ২ কোটির বেশি ঘনফুট বালু লুট করে বিক্রি করছে বালুখেকোরা, যার বাজারমূল্য ৭০ কোটি টাকার বেশি। এখনো রাতের আঁধারে নদীতে ইজারাবহির্ভূত স্টিলবডির নৌকা দিয়ে নিয়মিত চলছে বালু লুট। জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালীরা শ্যালো ও পরিবেশবিধ্বংসী বোমা মেশিন ব্যবহার করে অবাধে বালু উত্তোলন করার ফলে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আশ্রয়ণ প্রকল্প, বসতবাড়ি, ফসলি জমি এবং রাস্তাঘাটসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং সরকার হারাচ্ছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব।

বালু লুটের যে ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে, তা শুধু স্থানীয় সমস্যা নয়, বরং এটি আমাদের পরিবেশ, সম্পদ এবং আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার ওপর এক বিরাট আঘাতও বটে। পরিবেশের ক্ষতি করে কোটি কোটি টাকার বালু প্রকাশ্যে লুট হচ্ছে, অথচ প্রশাসন নীরব। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই নীরবতা শুধু প্রশ্নবিদ্ধই নয়, বরং প্রভাবশালী বালুখেকোদের অপকর্মকে যেন আরও উৎসাহিত করছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, এই অবৈধ কার্যকলাপের সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতিকরা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। আমরা মনে করি, যখন রাজনৈতিক পরিচয়ে অপরাধের সুরক্ষা মেলে, তখন আইনের শাসন মুখ থুবড়ে পড়ে। গত বছরও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। তখন প্রশাসন বালু জব্দ করে নামমাত্র মূল্যে নিলামে বিক্রি করে দেয়, যা কার্যত বালু লুটেরাদেরই সুবিধা করে দিয়েছিল। এ বছরও একই ধরনের পরিকল্পনা চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনাগুলোই প্রমাণ করে, এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে শুধু স্থানীয় প্রভাবশালীরাই নয়, বরং প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তিও জড়িত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া বা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা এই সন্দেহকে আরও জোরালো করে।

বলা বাহুল্য, প্রাকৃতিক সম্পদ এভাবে লুট হতে দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। একটি দেশ যখন তার সম্পদ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তখন তার উন্নয়নের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। কোম্পানীগঞ্জের এ ঘটনা একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় : যদি এখনই এই বালু লুটেরাদের লাগাম টেনে ধরা না হয়, তাহলে এর পরিণতি আরও ভয়াবহ হবে। শুধু কিছু বালু জব্দ করে বা দায়সারা তদন্তের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হবে না। প্রয়োজন এই সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। উপজেলা প্রশাসনের উচিত অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করা এবং জব্দ বালু বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব নিশ্চিত করা। পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সরকার এ বিষয়ে কঠোর হবে এবং পিয়াইন নদীকে ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষা করবে, এটাই প্রত্যাশা। অন্যথায়, একদিন এই নদী তার অস্তিত্ব হারাবে আর এর সঙ্গে হারিয়ে যাবে আশপাশের মানুষের জীবন ও জীবিকাও।

সূত্র, যুগান্তর