ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে, প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যে বৈঠক শেষে প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সন্তোষ প্রকাশ করতে পারেননি। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জানাননি। তিনি ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। আমরা ¯পষ্ট করেই বলেছি, ডিসেম্বরের যে কাট অফ টাইম, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন যদি না হয়, তাহলে দেশে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সামাজিক পরিস্থিতি, সেটা আরও খারাপের দিকে যাবে। সেটা তখন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। অন্যদিকে ৮ আগস্ট (২০২৪) শপথ গ্রহণ করা ড. ইউনূসের সরকার যে নির্বাচিত সরকার নয়, একথা সকলে জানার পরও আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। সামনে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের ম্যান্ডেটের প্রশ্নটিও। যেহেতু সরকার সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, ফলে কতটুকু সংস্কার করতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিস¤পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার অনির্বাচিত নয়। তাদের সমর্থনকারীদের কেউ কেউ জানতে চাইছেন, তাদের সরকার যে অনির্বাচিত কে বলেছে? গত ১২ এপ্রিল রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী মাজারে জুলাই কমিউনিটি অ্যালায়েন্স আয়োজিত গণমানুষের জাগ্রত জুলাই শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা যে অনির্বাচিত, এ কথা বললো কে? যারা নতুন বাংলাদেশের জন্য পরিবর্তন এনে দিয়েছে, তারাই রাষ্ট্র ও সরকার গঠন করেছে। কাজেই সরকারের দায়িত্ব হলো তাদের চাহিদা মেটানো। তার মতে, জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের রক্তের বিনিময়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, ফরিদা আখতারের এই মন্তব্যের ঠিক আগের দিন তার জীবনসঙ্গী ফরহাদ মজহার রাজধানীর মিরপুরে এক অনুষ্ঠানে বলেন, কমিউনিটি যখন দাঁড়িয়ে যায়, এলাকা যখন দাঁড়িয়ে যায়, তখনই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উন্মেষ ঘটে। ভোট দিয়ে হয় না, ভোটে লুটেরা মাফিয়া শ্রেণি আসে। এর আগে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো স¤পর্ক নেই। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের চর্চা। সেই চর্চার জন্য সরকার নির্বাচন করতে হয়। যখন জনগণের ইচ্ছা অভিপ্রায় ঘটে, তারা যখন জানে কী ধরনের রাষ্ট্র তারা কায়েম করতে চায়। রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারটা সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের সঙ্গে জড়িত।

এ ধরনের নির্বাচনী বিতর্ক ড. ইউনূস সরকারকে আরো বেশি লাইমলাইটে এনেছে। সম্প্রতি বিভিন্ন ব্যক্তি বলার চেষ্টা করছেন যে, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকা উচিত। এমনকি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও ১০ এপ্রিল সিলেটে গিয়ে বলেছেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রচেষ্টা বাড়ানো হয়েছে এবং আরও বাড়বে। রাস্তা থেকে মানুষ বলে যে, আপনারা আরও পাঁচ বছর থাকেন। তার এই বক্তব্যের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের বেশ মিল রয়েছে। গত ২৯ মার্চ নিজের ফেইসবুক ওয়ালে সারজিস লিখেছেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন স্টেটসম্যানকে পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের একটি নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়ার আকাক্সক্ষা আমার আজীবন থাকবে। সরকারের প্রেসসচিব তার ফেইসবুক পোস্টের বিভিন্ন বক্তব্যে ড. ইউনূসকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখার জন্য প্রমোট করছেন। আসলে ফরিদা, ফরহাদ, সারজিস, শফিকুল আলম, আসিফ নজরুল প্রমুখের কথাবার্তা ও ফেইসবুক পোস্ট পড়ে মনে হয়, এমনিতে নাচুনি বুড়ি তার উপরে ঢাকের বাড়ি।

বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতা গ্রহণ করলেই সেই সরকার নির্বাচিত, বৈধ বা সাংবিধানিক হয় না- একথা যেমন সত্য, তেমনি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে লুটেরা মাফিয়া শ্রেণি ক্ষমতায় আসে, এই যুক্তিতে নির্বাচনি ব্যবস্থা বাতিল করে দিতে হবে-এটাও অগ্রণযোগ্য। এজন্য ১৩ এপ্রিল (২০২৫) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে বলেছেন, উনারা নাকি নির্বাচিত হয়েছেন। কীভাবে? গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে উনাদের নির্বাচিত করেছে জনগণ? তাহলে এ দেশে নির্বাচন কমিশন আছে কেন? যদি গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন হয়, সেটা অবশ্যই এ দেশের মানুষের কামনা। কিন্তু একটা নির্বাচিত সরকারের বিকল্প তো আপনারা হতে পারেন না। আপনারা অবশ্যই অনির্বাচিত। সেটা প্রতিদিন আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে।

২.

প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন কেন জরুরি, এর পর্যালোচনা আবশ্যক। ১৬ এপ্রিল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি চিঠি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। তিনি লিখেছেন, দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দ্রুত করণীয় কিছু বিষয়ে মতামত ও পরামর্শ শীর্ষক চিঠিতে লেখা হয়েছে, অধ্যাপক ইউনূস ও তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা হলো, দ্রুত ফ্যাসিবাদী দল, তাদের দলীয় সরকার ও সহযোগীদের আইনের আওতায় এনে গণবিরোধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, দুর্নীতি ও লুটপাটের বিচার এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা, নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটানো এবং দ্রুত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া। অর্থাৎ নির্বাচন অনিশ্চিত হলে দেশ অস্থিতিশীল হতে পারে। বসবাসের শান্তিময় পরিবেশ নস্যাৎ হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। উপরন্তু দেশ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বঞ্চিত হবে, যা প্রতিদিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে নির্বাচন পিছালে ড. ইউনূসের ইমেজও সংকটে পতিত হবে। তার প্রতি সাধারণ মানুষের বিদ্বেষ বাড়বে, আস্থা তিরোহিত হবে। সাধারণ জনগণের দৃষ্টিতে ড. ইউনূস সরকারের একটি বড় অংশ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। ফলে জনরোষ থেকে বেঁচে সেইফ এক্সিট করতে হলে নির্বাচন দিতে হবে। এছাড়া কতগুলো সংস্কার আছে, যা নির্বাচিত সরকার ছাড়া সম্ভব নয়।

সংস্কার প্রসঙ্গে বিএনপির ৩১ দফার প্রস্তাব বারবারই সামনে এসেছে। পুলিশসহ দেশের প্রশাসনকে ফাংশনাল করার জন্য ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়া অতি জরুরি। প্রতিদিন অপরাধীদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রতিকার নেই; সর্বত্রই নিরাপত্তাহীনতায় মানুষকে জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে। জবাবদিহি না থাকায় শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সেক্টরে আওয়ামী লীগ আমলের দুর্নীতি বহাল তবিয়তে চলমান। এসব ক্ষেত্রে নির্বাচিত সরকার এলে দায়িত্ব পালনে বাধ্যবাধকতা থাকবে। আর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে শেখ হাসিনার মতো পরিণতি বরণ করতে হবে। অন্যদিকে ড. ইউনূস সরকারের প্রশ্রয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য সন্ত্রাস ঘটছে। মিথ্যা তথ্য প্রচারের কারণে সামাজিক জীবনে অস্থিরতা জন্মাচ্ছে। চরিত্র হনন করা হচ্ছে হরহামেশায়। দেশ গঠনে যাদের কাজ করার কথা তাদের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে জীবন অতিষ্ট করে তোলা হচ্ছে। ফলে সামাজিক অশান্তি জীবনকে অস্থির করে তুলেছে। অসংখ্য খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি অবারিতভাবে চলছে। সমন্বয়কসহ ছাত্র নেতৃবৃন্দ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। নতুন রাজনৈতিক দলসহ অনেক দলের নেতাকর্মীরা বেপরোয়া মনোভাবের পরিচয় দিচ্ছে। ড. ইউনূস সরকারের উচিত অনিয়ম প্রতিরোধে মনোযোগ দেওয়া, সংস্কারের গতি ত্বরান্বিত করা।

৩.

আগেই বলেছি ১৬ এপ্রিল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি টিম নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। নির্বাচন পেছানোর পাঁয়তারায় যারা স¤পৃক্ত তাদের প্রত্যাখ্যান করে অশুভ শক্তির অপতৎপরতা রোধের জন্য লিখিত পত্র দিয়েছেন। মনে রাখতে হবে, বর্তমান সরকারের মধ্যে একটি চক্র আছে যারা সংস্কারের নামে ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করতে চাচ্ছে। টিকে থাকার ষড়যন্ত্রে দায়িত্বশীল অনেক ব্যক্তি জড়িত। তাদের কথা ও কাজে তা ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না জেনেও, বিএনপি নির্বাচনে বিপুল ভোট পাবে জেনেও টালবাহানা করছে রোডম্যাপ ঘোষণার ক্ষেত্রে। লক্ষ করা গেছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সেদিনকার প্রেস বিফিংয়ের পর আইন উপদেষ্টা এবং প্রেসসচিব যেভাবে সাংবাদিকদের ডিক্টেট করছিলেন; গেশ্চার-পোশ্চারের কথা বলছিলেন তাতে মনে হলো তারাই সরকার চালাচ্ছেন। আসলে যে টোনে, যে আচরণে তারা নিজেদের জাহির করেছেন তা নিঃসন্দেহে ড. ইউনূসের ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ড. ইউনূসের কথার ভাষ্য পাল্টে যাচ্ছে তাদের উচ্চারণে। সমন্বয়হীনতা সরকারের বড় দুর্বলতা। সমন্বিতভাবে কাজ করছেন না ড. ইউনূসের সরকার। এ পরিস্থিতিতে সংস্কারের যেটুকুতে ঐকমত্য হবে, সেটা আগামী এক মাসের মধ্যে করা সম্ভব এবং সে হিসাবে এ বছরের ডিসেম্বরের আগে সংসদ নির্বাচন সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। অন্যদিকে বিজয় দিবসের (১৬/১২/২০২৪) দিন সকালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে দেশে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। নির্বাচন আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন ১৭/১২/২০২৪ তারিখে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যেকোনো সময় ভোট আয়োজন করতে প্রস্তুত আছে। জাতীয় নির্বাচনের জন্য আমরা প্রথম দিন থেকেই কাজ শুরু করেছি। জাতীয় নির্বাচনের জন্য যেসব প্রস্তুতির দরকার তার সবই আমাদের রয়েছে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচনের যে সময় ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেই অনুযায়ী নির্বাচন করতে আমরা স¤পূর্ণ প্রস্তুত।

এমতাবস্থায়, সবকিছু প্রস্তুত থাকলে নির্বাচন দিতে গড়িমসি কেন? এজন্য যত্রতত্র, যা-তা কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা ঠিক না। রাষ্ট্র পরিচালনার জায়গাটিকে আলাদা মহিমায় অভিষিক্ত করতে হবে। ‘ডিপস্টেট’ তত্ত্ব প্রয়োগ করা হচ্ছে ড. ইউনূস সরকারকে ব্যাখ্যা করার জন্য। রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি সমান্তরাল রাষ্ট্র, সমসাময়িক রাজনীতি বিজ্ঞানে একে ‘ডিপস্টেট’ নামে অভিহিত করা হয়। এ ধরনের রাষ্ট্রে পর্দার অন্তরালে একগুচ্ছ রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি সক্রিয় থাকে। যারা সংস্কারের নামে নির্বাচন প্রলম্বিত করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে বাজারে এসেছে নতুন ন্যারেটিভস। বিএনপির বিরুদ্ধে একের পর এক নোংরা অপরাজনৈতিক কৌশলে মেতেছে গুরুত্বহীন দলগুলো। এর পিছনে সব থেকে বড় কারণ বিএনপি নিজের দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রশ্নে আপসকামী নয়। অথচ, জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের জাল ছড়ানো হচ্ছে খুব সূক্ষ্মভাবে। ১/১১ এর সময় থেকে যে শক্তি দেশে রাজনৈতিক অপকৌশল করে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে এত বছর টিকিয়ে রেখেছিল নিজেদের দাস করে এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং এর শীর্ষ নেতৃত্বকে নিয়ে মেতেছিল নানান রকম নোংরা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে, সেই শক্তি আবারও পূর্বের চেয়ে অধিক পরিমাণে একটিভÑ এবার নতুন বাংলাদেশের বিনির্মাণে বিএনপিকে রুখে দিতে। কারণ, তারা জানেন যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কখনই কারো সাথে আপসের রাজনীতি করেননি। তাদের উত্তরসূরি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও করবেন না। সুতরাং ডিপস্টেট একের পর এক ন্যারেটিভ দিয়ে বিএনপিকে জনগণের মুখোমুখি করতে চায়। বিএনপি কোনদিন কারো তাবেদারি করে দেশ পরিচালনা করেনি, ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও করবে না। দেশের প্রশ্নে সর্বদা আপসহীন বিএনপি।

৪.

গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের ভূমিকা থাকলেও ক্রমান্বয়ে তারা অজনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পহেলা বৈশাখের সমাবেশে তাদের উপস্থিতি এটা প্রমাণ করে। তাদের সমাবেশে এখন মানুষের আগ্রহ নেই। দৃশ্যত ছাত্রদের রাজনৈতিক দল এখন কিংস পার্টি। সরকারের ছত্রছায়ায় তারা রাজনীতি করছে। অথচ তাদের দরকার লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করা। উচ্চশিক্ষা নেবার পর তারা রাজনীতিবিদ হতেই পারে। সেই লক্ষ্যে না থেকে সরকারে দায়িত্ব পালন করে আবার রাজনীতিতে স¤পৃক্ত থাকায় বিতর্ক জন্ম দিচ্ছে। এসব কর্মকা-ের দায়ভার ড. ইউনূসের কাঁধে পড়াটা স্বাভাবিক। বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা আছেন যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব। ডুয়েল সিটিজেনশিপ নিয়েও জনমনে প্রশ্ন জেগেছে। তারা আদৌ দেশের প্রতি মমত্ব নিয়ে কাজ করছেন কি? এসব সত্ত্বেও বিএনপি বারবার বর্তমান সরকারের উপর তাদের আস্থার কথা জানিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিএনপি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে এবং তাদের আকাক্সক্ষা পূরণে একটি টেকসই ক্ষেত্র তৈরির জন্য সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার ভার গ্রহণে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন জানিয়েছে এবং পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে ও সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।

এতদসত্ত্বেও বিএনপি রোডম্যাপ না পাওয়ায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। কারণ, ড. ইউনূস কতদিনে সংস্কার করবেন, তাও বলেননি। রাষ্ট্রের কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা দরকার তা ¯পষ্ট করেননি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭ দফা ও অন্যান্য দলের মতামত নিয়ে ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচির কথা বিএনপি সকলকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। অথচ, প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় আসিফ নজরুল বিএনপির সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে জানিয়েছেন। বলেছেন, ওনাদের দেখে হ্যাপি মনে হয়েছে। বিএনপির তরফ থেকে অসন্তুষ্ট বলার পরই এই বয়ান প্রমাণ করে উপদেষ্টারা একটা পক্ষ। বিএনপি ভিন্ন পক্ষ। সকলে মিলে যে সরকার পরিচালনার আকাক্সক্ষা ছিল তা আর কার্যকর নেই। বিভেদের জায়গাটা ¯পষ্ট হওয়ায় সরকারের ভেতরের একটা অংশের ক্ষমতা জবরদখল করে রাখার অশনি সংকেত পাওয়া যাচ্ছে।

৫.

বিভাজন-বিভেদ যাই থাকুক না কেন ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া সম্ভব এটি উপরের আলোচনা থেকে নিশ্চয় পরিষ্কার হয়েছে। সুস্থধারায় দেশকে আনতে হলে অতিশীঘ্রই নির্বাচন হতে হবে। জননিরাপত্তা বিধান করতে হলে দরকার সমন্বয়। কিন্তু সরকারের ভেতর স্যাবোটাজ করে নির্বাচন পিছিয়ে দিলে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। বাংলাদেশ একটি উদার গণতান্ত্রিক দেশ। বিএনপি মডারেট দল হিসেবে চায়, সুস্থধারায় দেশকে পরিচালনা করতে। কিন্তু যারা নির্বাচন চায় না, তাদের উদ্দেশ্য আসলে বিএনপি-বিরোধিতা, যারা নির্বাচন পিছানোর পক্ষে তারাও গণতান্ত্রিক আদর্শ লালন করে না। অন্যদিকে বিএনপি মনে করে, যে ভোটাধিকার থেকে বিগত সরকার দেশের মানুষকে বঞ্চিত রেখেছিল, যত দ্রুত সম্ভব সেই অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। আমরা মনে করি, নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. ইউনূস সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। বিশেষ কারো মুখের দিকে না চেয়ে দলমত নির্বিশেষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। ড. ইউনূস ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন করবেন বলে জনগণ একান্তভাবে প্রত্যাশা করে।

লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক, থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সূত্র, ইনকিলাব