আমদানি করা জ্বালানি তেল লুটপাটের এক উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীনে বিভিন্ন জ্বালানি বিপণন কোম্পানির ডিপো থেকে নানা কৌশলে চুরি হচ্ছে লাখ লাখ লিটার তেল। লরিতে বিশেষ চেম্বার বসিয়ে কার্যাদেশের অতিরিক্ত তেল ডিপো থেকে বের করে তা চোরাই পথে বিক্রি করে দিচ্ছে একটি চক্র। তেল চুরি হচ্ছে নদীপথেও। বস্তুত তেল চুরি হচ্ছে দুই পর্যায়ে। প্রথম পর্যায়ে বন্দরের মাদার ভেসেল থেকে ডিপোতে আনার সময়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ডিপো থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করার সময়। আর এ অপকর্ম চলে আসছে বছরের পর বছর। এ চুরির কারণে প্রতিবছর শত শত কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তবে এটি শুধু আর্থিক ক্ষতির বিষয় নয়, এ কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের বড় ধরনের আস্থাহীনতার কারণ হতে পারে। কাজেই এ লুটপাট প্রতিরোধে সরকারকে অবশ্যই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
তেল চুরির এ তৎপরতা দেশের জ্বালানি খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির একটি উদাহরণ। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ডিপোর ভেতরেই যদি এ ধরনের ‘তেলেসমাতি’ কাণ্ড ঘটে, তাহলে বুঝতে হবে সমস্যার মূল কোথায়। শর্ষের ভেতরেই বাসা বেঁধেছে ভূত। তেলের ট্যাংকের ধারণক্ষমতা নিয়ে জালিয়াতি, ট্যাংক লরির সক্ষমতা গোপন করা এবং বিপুল পরিমাণ তেলের হিসাবকে ‘সিস্টেম লস’ বা ‘কারিগরি ক্ষতি’ হিসাবে দেখানো-এসবই প্রমাণ করে এটি একটি সুসংগঠিত চক্রের কাজ। ডিপোর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় সিন্ডিকেট মিলেমিশে এ অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। জাহাজের নাবিক ও ডিপোর ওইসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গায়েব হয়ে যাচ্ছে শত শত কোটি টাকার তেল।
জ্বালানি তেল জাতীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তেল চুরি মানে দেশের প্রতিটি খাতের ওপর সরাসরি আঘাত। কাজেই এই লাগামহীন চুরি বন্ধে আর কালক্ষেপণ করা উচিত নয়। এ খাতের ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির রাশ টানতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তেল কোম্পানিগুলোকে অবিলম্বে অটোমেশন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোর জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন। তেলবাহী ট্যাংক লরিতে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ও ডিজিটাল লক স্থাপন করা যেতে পারে। তেল চুরি বন্ধ না হলে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক কাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।