আপনি ঠিক বলেছেন। এখন আমাদের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। অতীতে উৎপাদন ছিল খুবই কম। আমরা যখন সাত কোটি বা সাড়ে সাত কোটি মানুষ ছিলাম, তখনো আমাদের অনেক মানুষ অনাহারে ভুগত।

ড. এএসএম সাইফুল্লাহ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের (ইএসআরএম) বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক। এর আগে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ সায়েন্স অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মেরিন সায়েন্স বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিষয়ে জার্মানি ও ফিলিপাইনস থেকে এমএস করেন। তিনি মেরিন অ্যান্ড ফ্রেশ ওয়াটার ইকোসিস্টেম বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব পুত্রা মালয়েশিয়া থেকে ডক্টরেট করেন। পাশাপাশি সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল ল (দিল্লি) থেকে পরিবেশ আইনের ওপরও ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। দেশের কৃষি উৎপাদন ও পরিবেশ-প্রকৃতিতে এর প্রভাব নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আল ফাতাহ মামুন

একটা সময় আমাদের কৃষি উৎপাদনের পরিমাণ কম ছিল, কিন্তু যা হতো পুরোটাই নিরাপদ ছিল। এখন আমাদের শস্য ও মৎস্য উৎপাদনের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। কিছু কিছু পণ্যে বৈশ্বিক অবস্থানেও আমাদের জায়গা হয়েছে। কিন্তু নিরাপদ প্রশ্নে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। এ বিষয়ে আপনার ভাবনা কী?

আপনি ঠিক বলেছেন। এখন আমাদের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। অতীতে উৎপাদন ছিল খুবই কম। আমরা যখন সাত কোটি বা সাড়ে সাত কোটি মানুষ ছিলাম, তখনো আমাদের অনেক মানুষ অনাহারে ভুগত। তখন খাদ্যের অভাব ছিল প্রকট। বিশেষ করে স্বাধীনতার আগে ও পরের সময়টায় অনেক মানুষ দুর্ভিক্ষে না খেয়ে মারা যেত। তখন আমাদের জনসংখ্যা কম ছিল, খাদ্যেরও অভাব ছিল। এমন পরিস্থিতিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সবুজ বিপ্লবের ধারণা এল। বিশেষজ্ঞরা বললেন, মানুষ বাড়ছে উৎপাদনের পরিমাণও বাড়াতে হবে। বিশেষ করে ’৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে অনেক মানুষ খাদ্যাভাবে মারা যাওয়ার পর সরকার কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে মনোযোগ দিল। আমাদের মনে আছে, ’৭৯-৮০ সালের দিকে স্বনির্ভর গ্রাম, সমবায় কৃষির ধারণা ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তখনই ইরি ধানের উৎপাদন শুরু হয়। এর আগে মানুষ বছরে একবার ধান উৎপাদন করত। আমাদের খাদ্যনিরাপত্তায় ইরি ধান একটি বিরাট মাইলফলক বলব। পাশাপাশি এ সময় উচ্চফলনশীল জাতের ধান আবাদ এ সময়ই শুরু হয়। উচ্চফলনশীল ধানের জন্য ইন্টেনসিভ কেয়ারের প্রয়োজন হয়। ইন্টেনসিভ কেয়ার মানে হলো ফসলে পরিমিত সার দিতে হবে। কীটনাশক দিতে হবে। যেহেতু এগুলো নতুন প্রজাতি, আমাদের স্থানীয় পোকামাকড়ের আক্রমণ তাদের জন্য সহনশীল ছিল না। অর্থাৎ পোকামাকড়ের আক্রমণে এসব ধান দ্রুত নষ্ট হয়ে যেত। ফসলকে পোকামাকড় থেকে বাঁচাতে শুরু হলো পেস্টিসাইড প্রয়োগ।

কৃষিতে কোন ধরনের কীটনাশক দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হচ্ছে?

এর আগে পেস্টিসাইড প্রয়োগ হতো মশা মারার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া প্রশমনের জন্য। সত্তরের দশক বা কাছাকাছি সময় ম্যালেরিয়ার খুব প্রকোপ ছিল। ম্যালেরিয়া মূলত মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। মশা নিধনের জন্য আমরা ডিডিটি (ডাইক্লোরো-ডাইফিনাইল-ট্রাইক্লোরোইথেন) পাউডার ব্যবহার শুরু করলাম। ডিডিটি একটি অর্গানোক্লোরিন পেস্টিসাইড। এ শ্রেণীর কীটনাশক সাধারণত পরিবেশেও দীর্ঘস্থায়ী হয়। এর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি পানিতে দ্রবীভূত হয় না এবং বায়োঅ্যাকিউমুলেটিভ অর্থাৎ জীবদেহের চর্বিতে জমে থাকে। ইংরেজিতে বলা হয় ‘লাইপোফিলিক’, অর্থ চর্বিপ্রেমী। আমরা যখন ডিডিটি দিয়ে মশা নিধন শুরু করলাম, তখন বুঝতে পারিনি এটা প্রকৃতিতে এত দীর্ঘস্থায়ী হবে। আমরা স্প্রে করা শুরু করলাম এবং মশা মরতে থাকল। ওই সময় কৃষকদের এত জ্ঞান ছিল না। তারা দেখল উফশী জাতীয় ধানে পোকার আক্রমণ হচ্ছে। ডিডিটি প্রয়োগের ফলে পোকামাকড় সব মরে যাচ্ছে। ফসল নিরাপদ থাকছে। মশা মারা আর পোকা মারার জন্য প্রয়োগ করা ডিডিটি আমাদের পানি-মাটিতে দীর্ঘ সময়ের জন্য মিশে গেল। এনড্রিন, এলড্রিন, ডাইএলড্রিন এগুলোও অর্গানোক্লোরিন পেস্টিসাইড। কৃষকরা জমিতে প্রয়োগ করলেন। এসব মাটি, পানি, ধান চাল হয়ে মানবদেহে ঢোকা শুরু করে। মানবদেহে ঢুকে এটা চর্বিতে জমা হয়। ভয়াবহ কথা হলো, আমরা শুধু কৃষিতে নয় বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণের জন্য এ পেস্টিসাইডগুলো ব্যবহার শুরু করলাম। যেমন শুঁটকি মাছ পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচানোর জন্য ডিডিটি দেয়া হয়। সে মাছ খাওয়ার মাধ্যমে মানবদেহে কীটনাশকগুলো জমা হতে থাকে।

উন্নত বিশ্ব যখন অর্গানোক্লোরিন নিষিদ্ধ করল, বাংলাদেশ সেই সিদ্ধান্ত নিতে বেশ দেরি করে ফেলে। এই বিলম্ব এবং নিষিদ্ধ হওয়ার পরও কৃষকদের মধ্যে এর ব্যবহার চালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা আমাদের কৃষি, মাটি ও উপকূলীয় পরিবেশের ওপর ঠিক কী ধরনের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত তৈরি করেছে?

পরবর্তী সময় উন্নত বিশ্ব যখন দেখল এসব কীটনাশক মারাত্মকভাবে পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্য শেষ করে দিচ্ছে তখন তারা এটা নিষিদ্ধ করে দিল। ততদিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার হয়ে গেল। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে আরো দেরি হয়ে গেল। আমার যতটুকু মনে পড়ে সত্তর দশকের শেষের দিকে এটা বাংলাদেশে নিষদ্ধ করা হয়। এর আগে প্রচুর পরিমাণে এটা আমদানি করা হয়েছিল। নিষিদ্ধ করা হলেও বাজার, কৃষক এবং মজুদদারদের কাছে বিপুল পরিমাণে থেকে যায়। পরবর্তী সময় নিষিদ্ধ জানা সত্ত্বেও কৃষকরা এটা ব্যবহার করেন। যেহেতু এটার রেজাল্ট তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়। স্প্রে করার সঙ্গে সঙ্গে পামরি পোকা, মাজরা পোকা মারা যায়। কীটনাশক প্রয়োগের পাশাপাশি কৃষকরা ফলন বাড়ানোর জন্য সার প্রয়োগ শুরু করেন। আমাদের কৃষকরা জানেন না কী পরিমাণ জমিতে কতটুকু সার প্রয়োগ করতে হয়। তারা জানেন সার দিলেই ফলন ভালো হবে। অতিরিক্ত যে সার দেয়া হলো তা উদ্ভিদ গ্রহণ করেনি। সেটা মাটি ও পানিতে গিয়ে মাটির উর্বরতা এবং পানির দূষণ করল। এভাবে অব্যবহৃত অতিরিক্ত কীটনাশক ও সারের বড় অংশ নদী হয়ে চলে গিয়েছে আমাদের উপকূলীয় এলাকায়। উপকূলীয় এলাকার মাটি-পানিও প্রচণ্ড রকম দূষিত হলো।

অর্গানোক্লোরিন কীটনাশক নিষিদ্ধের পর বাজারে নতুন প্রজন্মের কীটনাশক যেমন অর্গানো ফসফরাস এবং কার্বামেট এসেছে। উৎপাদনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এগুলো কি আমাদের কৃষির টেকসই সমাধান দিয়েছে, নাকি প্রাকৃতিক খাদ্য-শৃঙ্খলকে ভেঙে দিয়ে এমন একটি দুষ্টচক্র তৈরি করেছে যেখান থেকে বেরোনোর পথই প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে?

অর্গানোক্লোরিন কীটনাশক প্রয়োগ নিষিদ্ধ হলেও আমাদের উৎপাদন বাড়ানোর দাবি কিন্তু বন্ধ হয়নি। ওই সময় আমাদের মানুষ ছিল সাড়ে সাত কোটি। এখন সরকারি হিসাবেই আমরা ১৮ কোটি। সাড়ে সাত কোটি মানুষ যখন ছিল, তখন আমাদের খাদ্যের অভাব ছিল। এখন আমাদের জনসংখ্যা প্রায় আড়াই গুণ বেশি, কিন্তু আমাদের খাদ্যের অভাব তেমন নেই। উৎপাদনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য নতুন কীটনাশক বাজারে এল। অর্গানো ফসফরাস, কার্বামেট এগুলোর ব্যবহার শুরু হয়। এগুলোও কৃষকরা সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে না পারায় এর ক্ষতিকর প্রভাব পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আমরা পামরি পোকা মেরেছি, পামরি পোকার খাদক ব্যাঙও প্রকৃতি হারাতে শুরু করেছে। ব্যাঙ কমার আরেকটা কারণ হলো ’৮০-এর দশকে বাংলাদেশ থেকে ব্যাঙের পা রফতানি হতো। তখন একটা ব্যাঙের পা ১ ডলারে বিক্রি হতো। বাংলাদেশের মানুষের কাছে এটা অনেক টাকা। মানুষ পাগলের মতো ব্যাঙ ধরা শুরু করল। ব্যাঙ কমে গেলে পামরি পোকা বেড়ে যায়। প্রকৃতির খাদ্য-শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা খুবই সাজানো। যখনই আমরা এটাকে এলোমেলো করে ফেলি তখন প্রকৃতিও আমাদের নানাভাবে ভোগান্তিতে ফেলে দেয়। পামরি পোকার আক্রমণ বেড়ে গেলে ফসল ব্যাপক আকারে নষ্ট হতে থাকে। পামরি পোকা মারতে হবে, পেস্টিসাইডের ব্যবহার আরো বাড়ল। যে পোকা ব্যাঙ খেয়ে কমাত, পাখি খেয়ে কমাত, এখন সেটা ক্ষতিকর পেস্টিসাইড দিয়ে মারতে হচ্ছে। ওই পেস্টিসাইডের কারণে প্রকৃতিতে টিকে থাকা অল্প কিছু ব্যাঙ মরল, পাখি মরল, মাছ মরল, সাপ মরল, শামুক হারিয়ে গেল। আমরা মারতে চেয়েছি পোকা, কিন্তু মরে গেছে অনেক প্রাণী। এর পরিসংখ্যান কিন্তু সেভাবে করা হয়নি। আমরা হঠাৎ দেখছি ব্যাঙ নেই, সাপ নেই, গুঁইসাপ নেই—এগুলোর সঙ্গে পেস্টিসাইডের সম্পর্ক রয়েছে।

এক সময়ের ‘নিরাপদ’ কীটনাশক যদি পরবর্তী সময় ‘নিষিদ্ধ’ রাসায়নিকে পরিণত হয়, তাহলে এ অন্তহীন রাসায়নিক পরিবর্তনের খেলা থেকে বেরিয়ে এসে কৃষি বাস্তুতন্ত্রকে বাঁচানোর পথ কী? আমরা কি কেবল এক রাসায়নিকের বদলে আরেকটিতে ঝুঁকছি না?

মূল সমস্যা হলো আমরা অল্প জায়গায় বেশি উৎপাদন করতে যাচ্ছি। যখনই আমরা অল্প জায়গায় বেশি উৎপাদন করতে যাই, তখনই মাটির ওপর, ফসলের ওপর একটা চাপ সৃষ্টি হয়। তাকে আমি জোর করে উর্বরতা বাড়াচ্ছি। এতে তার যে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলে। এতে যে ক্ষতি হয়েছে, এখন আমরা কিন্তু সার আর কীটনাশক থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না। এখন তাকে এসব দিতেই হবে। যেমন আমরা অসুস্থ হলে ওষুধ ধরে ফেলি, ওষুধ কিন্তু একেবারে ছাড়া যায় না। আমাদের মাটি, পানি এখন ওসব না ফেলে তার যে ফলন সেটা ফলাতে পারে না। যদিও আমরা বলে থাকি এখন আর ক্ষতিকর পেস্টিসাইড ব্যবহার করি না। কিন্তু এখন যেটা নিরাপদ জেনে ব্যবহার করছি, অদূর ভবিষ্যতে হয়তো দেখা যাবে এটাই পরিবেশের জন্য এক বিরাট ক্ষতি বয়ে এনেছে। কে জানে হয়তো আমরা বলব এটাও নিষিদ্ধ করে দাও। আরো সহনশীল কীটনাশক আনো। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে আমাদের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হয়েছে, আমাদের জনস্বাস্থ্য, প্রকৃতির স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতি করেছি।

একদিকে রাসায়নিক কৃষির বিষে আমাদের মাটি ও জনস্বাস্থ্য বিপর্যস্ত, অন্যদিকে অর্গানিক বা নিরাপদ কৃষির উৎপাদন বিপুল জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে অক্ষম। এ উভয় সংকট থেকে বেরিয়ে এসে খাদ্যনিরাপত্তা ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার মধ্যে সমন্বয় সাধনের বাস্তবসম্মত পথ কী?

আমাদের বিদ্যমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে গেলে অর্গানিক ফার্মিং দিয়ে সম্ভব নয়, আমরা যতই বলি এটা দুরূহ ব্যাপার। অনেক ব্যয়বহুলও। উন্নত বিশ্বে অর্গানিক ফার্মিংয়ে উৎপাদিত পণ্য আর সাধারণ ফার্মিংয়ে উৎপাদিত পণ্যের দামের ফারাক অনেক। অর্গানিক পণ্যের দাম অনেক বেশি। আমাদের সে সামর্থ্য কি আছে? কয়জন মানুষের আছে? আর যে পরিমাণ উৎপাদন হবে তা দিয়ে ১৮ কোটি মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হবে না। উৎপাদন ও প্রকৃতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখাই এ সমস্যার একমাত্র সমাধান। ধীরে ধীরে আমরা পেস্টিসাইডের ব্যবহার কমাতে পারি। পেস্ট কন্ট্রোল যদি ন্যাচারাল পদ্ধতিতে করতে পারি তাহলে কীটনাশকের ব্যবহার কমবে। যেসব পোকামাকড় দমনের জন্য কীটনাশক দেয়া হয় সেগুলো প্রাকৃতিকভাবেও দমন করা যায়। ব্যাঙ বাড়ানো যেতে পারে। পাখি বাড়ানো যেতে পারে। অথবা আমরা আলোর ফাঁদ তৈরি করতে পারি। সেখানে পোকা গিয়ে মারা যাবে। এ যে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে যদি আমরা ঢুকতে পারি, তাহলে চলমান বিপর্যয় থেকে আমরা বেরোতে পারব।

রাসায়নিক কৃষির বিষে আমাদের সামনে কেমন ঝুঁকি রয়েছে?

পেটের ক্ষুধা মেটাতে প্রকৃতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছি, কিন্তু এর বিপরীতে আরো বড় সমস্যা আমাদের সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। জটিল রোগ, প্রাকৃতিক সমস্যা আমাদের বেঁচে থাকাকে জটিল করে তুলছে। আমরা হয়তো বেঁচে আছি, কিন্তু ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা বেঁচে থাকছি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটা আরো আশঙ্কাজনক। প্রসঙ্গক্রমে বলি, অনেক আগে আমরা একটা গবেষণায় পেয়েছি, শুঁটকি মাছকে পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচাতে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। এ শুঁটকি মাছ যারা খায়, তাদের শরীরে স্বাভাবিকভাবেই কীটনাশক পাওয়া যায়। কিন্তু ভয়ংকর কথা হলো, মায়ের দুধেও কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে, যা শিশুর শরীরে ঢুকছে। তার মানে হলো, এসব স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আমরা যেমন হিরোশিমা-নাগাসাকির কথা বলি। সে সময়ের তেজস্ক্রিয়তার কারণে এখনো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয়রা। অর্গানোক্লোরিন পেস্টিসাইডের কারণেও যে ক্ষতি হয়ে গেছে তার ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

সূত্র, বণিক বার্তা