দেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে স্থবিরতা লক্ষ করা যাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও গতি আনতে পারছে না অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, আসেনি সফলতাও। বৈদেশিক সহায়তানির্ভর প্রকল্পগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। এমন পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে কমতে পারে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যেই বৈদেশিক ঋণের অংশ কাটছাঁটের প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। বলা বাহুল্য, এটি কেবল আর্থিক ব্যবস্থাপনাই নয়, সামগ্রিক উন্নয়ন গতিপথের দুর্বলতাকেও প্রকটভাবে তুলে ধরে।
জানা যায়, চলতি এডিপিতে বৈদেশিক অর্থের বরাদ্দ ছিল ৮৬ হাজার কোটি টাকা। অথচ প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করতে পেরেছে মাত্র ৫ হাজার ৭৪ কোটি টাকা, যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় সর্বনিম্ন। সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হলো, সেতু, পানিসম্পদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং জননিরাপত্তা বিভাগসহ ৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এখন পর্যন্ত এক টাকাও খরচ করতে পারেনি। এক শতাংশের নিচে বাস্তবায়ন হার রয়েছে আরও ৮টি প্রতিষ্ঠানের। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় সরকারি কাঠামোয় প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা ও আন্তরিকতার অভাব কতটা গুরুতর।
সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণ হিসাবে ৫ আগস্টের পর প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদারদের পালিয়ে যাওয়া এবং নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়ার জটিলতাকে চিহ্নিত করেছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সমস্যা কেবল রাজনৈতিক পালাবদলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। দুর্বল প্রকল্প প্রণয়ন, কার্যকর তদারকির অভাব, পিআইসি/পিএসসি বৈঠক না হওয়া, জমি অধিগ্রহণে জটিলতা এবং ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালক বদলির মতো কাঠামোগত দুর্বলতাও এর কারণ। তাছাড়া বারবার বরাদ্দ কাটছাঁট করা দুর্বল বাস্তবায়ন সক্ষমতারই প্রমাণ দেয়, যা আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে বলে মনে করি আমরা।
এমন অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত, স্বল্পমেয়াদে হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে স্থায়িত্ব এনে এবং কার্যকর তদারকির মাধ্যমে উন্নয়নের চাকা সচল রাখা। মানসম্মত বাস্তবায়নই যদি লক্ষ্য হয়, তবে ২১ হাজার কোটি টাকার কাটছাঁটের শঙ্কা নয়, বরং দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে সেই লক্ষ্য অর্জনই হওয়া উচিত সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার।