চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন সেবার ট্যারিফ বা মাশুল এক লাফে গড়ে ৪১ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সেবাপ্রার্থী ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, কার্যত বন্দরের হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণের বোঝা কমাতে কর্তৃপক্ষ অস্বাভাবিক মাশুল ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত প্রস্তাবনায় মাশুল বৃদ্ধির গোপন রহস্য বেরিয়ে এসেছে; যা হলো, বন্দরের মাতারবাড়ী চ্যানেল তৈরির বিপরীতে জাইকা থেকে নেওয়া ঋণসহ বিভিন্ন প্রকল্পের দায়দেনা পরিশোধ ও অপারেশনাল ব্যয় সামাল দিতেই বন্দরের মাশুল বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন, ঋণের বোঝার খেসারত ব্যবসায়ীরা কেন দেবেন? তাছাড়া বন্দরের সেবার মান না বাড়িয়েই মাশুল এক লাফে ৪১ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব অস্বাভাবিক ও সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশই হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এ বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-খাদ্যশস্য, সার, জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, সিমেন্ট, কয়লা, চিনি, লবণ প্রভৃতি। আর রপ্তানি করা হয় তৈরি পোশাক, পাট, পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, চা, হিমায়িত পণ্য প্রভৃতি। অর্থাৎ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি নির্ভর করে এ বন্দরের ওপর। বন্দরের সেবার মাশুল বৃদ্ধি করা হলে স্বভাবতই এর প্রভাব পড়বে এসব পণ্যের দামে। একদিকে ভোগ্যপণ্য ও কাঁচামালের আমদানি খরচ বাড়বে, যা শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা ভোক্তার কাছ থেকেই আদায় করবেন। ফলে দেশে মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়বে। অন্যদিকে রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে বাড়বে পণ্য পরিবহণের খরচ, যার ফলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় রপ্তানিকারকরা পিছিয়ে পড়তে পারেন। অর্থাৎ মাশুল বৃদ্ধির কারণে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা তো বটেই, ক্ষতিগ্রস্ত হবে জনসাধারণও।

জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমান যে মাশুল রয়েছে, তাতে বন্দর লোকসানে নেই। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ বন্দর ২ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা ব্যয়ের বিপরীতে আয় করেছে ৫ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ মুনাফা ২ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। এত টাকা মুনাফা করার পরও কেন এভাবে মাশুল বৃদ্ধি করা হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বস্তুত কোনো বিবেচনাতেই চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল বাড়ানো যৌক্তিক হবে না। ভুলে গেলে চলবে না, চট্টগ্রাম বন্দর একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বন্দর কর্তৃপক্ষের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে বন্দর কর্তৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গীকার হলো ন্যূনতম খরচে এবং সবচেয়ে কম সময়ে সেবা প্রদান করা। তাছাড়া দেশের অর্থনীতিতে এমনিতেই এক ধরনের স্থবিরতা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের সেবার মাশুল বৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে তা দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসাবে দেখা দেবে। কাজেই মাশুল বৃদ্ধির উদ্যোগ থেকে কর্তৃপক্ষ সরে আসবে, এটাই প্রত্যাশা।

সূত্র, যুগান্তর