বিচারের সেবা সহজলভ্য করতে উপজেলা পর্যায়ে আদালত সম্প্রসারণে সব রাজনৈতিক দলের একমত হওয়ার বিষয়টিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। সোমবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, দলগুলো উপজেলা পর্যায়ে পর্যায়ক্রমে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে একমত পোষণ করেছে। তবে দল ও জোটগুলো এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে। আলী রীয়াজ জানান, ছয়টি বিষয় বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো-১. জেলা সদরে অবস্থিত সদর উপজেলা আদালত জেলা জজকোর্টের সঙ্গে সংযুক্ত করা; ২. বিদ্যমান চৌকি আদালত ও উপজেলা আদালত প্রয়োজনীয় সংস্কার ও অবকাঠামো নির্মাণ করা; ৩. জেলা সদরের কাছাকাছি উপজেলায় নতুন আদালত স্থাপন না করা ও প্রয়োজনীয় জরিপ পরিচালনা করা; ৪. অবশিষ্ট উপজেলায় জনসংখ্যার ঘনত্ব, ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, যাতায়াতব্যবস্থা, দূরত্ব, অর্থনৈতিক অবস্থা ও মামলার সংখ্যা বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে আদালত স্থাপন করা; ৫. অধস্তন আদালতের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা; ৬. আইনগত সহায়তা কার্যক্রম উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা।
উল্লেখ্য, এর আগে উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনের সুপারিশ করেছিল বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। বলার অপেক্ষা রাখে না, উপজেলা পর্যায়ে আদালত সম্প্রসারিত হলে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে বিচারব্যবস্থা। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের পক্ষে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হওয়া দূরের কথা, জেলা পর্যায়ের জজকোর্টের চৌকাঠ মাড়ানোও তাদের জন্য অনেকটা অকল্পনীয় বিষয়। আদালতের দরজা পর্যন্ত পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাধাবিঘ্ন, দুর্ভোগ, দীর্ঘসূত্রতা, ব্যয়নির্বাহ, আইনি সহায়তা গ্রহণের সমস্যা ইত্যাদি সম্পর্কে সবাই অবহিত। তাই জরুরি প্রয়োজন না হলে অনেকে আদালতের আশ্রয় নিতে চান না। দ্বিতীয়ত, উচ্চ ও নিম্ন আদালতে মামলাজটের বিষয়টি সর্বজনবিদিত। বলা হয়, দেশের বিভিন্ন আদালতে ৪৫ লাখের বেশি মামলা বিচারাধীন। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজন আদালত ও বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি। মোট কথা, জনভোগান্তি হ্রাস করার জন্য প্রয়োজন নিম্ন আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ। একটি উপজেলায় কয়েক লাখ মানুষ বসবাস করে। তাই প্রতিটি উপজেলায় আদালত স্থাপনের বিষয়টি যৌক্তিক অবশ্যই। উপজেলা পর্যায়ে আদালতের সম্প্রসারণ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করি আমরা।