আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে-এমন ঘোষণার পর চতুর্মুখী অপতৎপরতা শুরু হতে দেখা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পাশে গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের সব শক্তিকে শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে বলে মনে করছেন সিনিয়র রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনরা। তাদের উদ্বেগ, ক্ষমতা ও স্বার্থের দ্বন্দ্বে নিজেরা বিভেদে জড়িয়ে পড়লে বিপদ অনিবার্য।

আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলগুলোর মধ্যে কিছু রাজনৈতিক কৌশল কিংবা মতপার্থক্য থাকতে পারে; কিন্তু এ বিভেদ প্রকট হলে তা দেশের ভবিষ্যতের জন্য আশঙ্কার বিষয় বৈকি। ভুলে গেলে চলবে না, গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের লক্ষ্য শুধু ফ্যাসিস্ট রেজিমের পতনই ছিল না, দেশকে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনাও ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য।

এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বিজয়ের দুদিন পর বিশ্বনন্দিত বাঙালি, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। এ সরকার আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণে কিছু সংস্কার কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান ও তার দোসরদের বিচার প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।

ঠিক এমন এক অবস্থায় পারস্পরিক সন্দেহ, বিভেদ, এমনকি বিদ্বেষও ছড়িয়ে পড়তে দেখছি আমরা। এ পরিস্থিতিতে অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর ঐক্য ফিরিয়ে আনা না গেলে সরকারের পক্ষে নিজ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া যে কঠিন হয়ে পড়বে, তা বলাই বাহুল্য। রাজনৈতিক দলগুলো যদি জাতির বৃহত্তর স্বার্থে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করতে না পারে, তাহলে আগামীতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করাও কঠিন হয়ে পড়বে।

আর নির্বাচন যদি সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভবও হয়, নির্বাচিত সরকারের পক্ষে ভালোভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। তাই আমাদের ভবিষ্যৎটা ভাবতে হবে গভীরভাবে। দেশসেবকদের ক্ষমতায় যাওয়াই যদি একমাত্র আরাধ্য হয়, তাহলে ক্ষমতাটাই ভোগ করা যাবে, রাষ্ট্রের কোনো উন্নতি হবে না।

আমরা মনে করি, বড় দল হিসাবে এক্ষেত্রে বিএনপির দায়িত্ব ও কর্তব্য বেশি। এ দলের নেতৃত্বকে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে। নবগঠিত এনসিপিও এদেশের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এনসিপি, জামায়াত এবং বামপন্থিসহ অন্য দলগুলো এ সংকটকালে ‘দলের চেয়ে দেশ বড়’ দর্শনে বিশ্বাসী হয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে, এটা এখন সবারই প্রত্যাশা। আমরা সবাই চাই, প্রয়োজনীয় সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচিত সরকারের নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাবে।

দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং জনগণ ও সম্পদের নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো মতভিন্নতার অবকাশ নেই। এগুলো অভিন্ন স্বার্থের বিষয়। এক্ষেত্রে কোনো রূপরেখা বা পরিকল্পনার প্রয়োজন হয় না। এসব প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দৃঢ় অবস্থান ধরে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে সতর্ক থাকতে হবে, দেশে যেন এমন কোনো অবস্থার সৃষ্টি না হয়, যা থেকে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়।

সূত্র, যুগান্তর