জুলাই অভ্যুত্থানে প্রথম শহীদ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার নির্দেশদাতা ছিলেন পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে ৩০ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এই ৩০ জনের মধ্যে ৮ জন পুলিশ এবং অন্য ২২ জনের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রশাসনের কর্মকর্তা। এদের মধ্যে চারজন গ্রেফতার আছেন। আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকারের নিপীড়নকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বিবেচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার পর এ নিয়ে চতুর্থ কোনো মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হলো।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ১৬ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে হাতে লাঠি নিয়ে পুলিশের আক্রমণ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে আবু সাঈদ এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন। এ সময় পুলিশ খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন। সাঈদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে গুলি করার ভিডিও সেদিনই গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র-জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সেদিন থেকেই সারা দেশে তীব্র গতিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন থেকে সারা দেশে ডাকা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করা হয়। এর পরিণতিতে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়। পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেসময় নানা নাটকীয়তার পরও ময়নাতদন্তে বেরিয়ে আসে, পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের বুক ঝাঁজরা হয়ে গিয়েছিল। তার গলা থেকে ঊরু পর্যন্ত ছিল ছররা গুলির আঘাত। তবে হত্যাকাণ্ডের পর বিগত সরকারের চাপে আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট চাপ দিয়ে ছয়বার পরিবর্তন করাতে বাধ্য করা হয়। বলা বাহুল্য, পুলিশের সামনে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানের সাহসের বাতিঘর। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও পুলিশের সামনে এক হাতে লাঠি নিয়ে যেভাবে তিনি দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দিয়েছিলেন, এমন বীরত্ব কল্পনাকেও হার মানায়। কাউকে তিনি আক্রমণ করেননি; তবুও হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশ সরাসরি তাকে গুলি করে।
এদিকে এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। তাদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের গুলিতে সাঈদ মারা গেছেন; কিন্তু এর দায়ভার দেওয়া হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। সেক্ষেত্রে যদি সত্যিকার অর্থেই প্রশাসনের কারও সম্পৃক্ত না থাকে, তাহলে প্রমাণসাপেক্ষে এ দাবি খণ্ডানো উচিত। এ অবস্থায় লক্ষ রাখতে হবে, প্রকৃত দোষীরা যেন শাস্তির আওতা থেকে বের হয়ে যেতে না পারে। আমরা মনে করি, নির্দেশদাতা থেকে শুরু করে যারাই এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা জরুরি। ভুলে গেলে চলবে না, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মেধাবী ছাত্র আবু সাঈদ ও মুগ্ধরা জীবন দিয়ে আমাদের এনে দিয়েছেন নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ। এ অর্জন আমাদের রক্ষা করতেই হবে।