স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা যদি সৎ হন, তাদের অধীনস্থ কর্মচারীরাও সৎ হবেন। তারা তখন কোনো কাজে নয়ছয় করতে পারবেন না।
দেশে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন ইউনিট যেমন- ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন রয়েছে। এসব ইউনিট অতিপ্রয়োজনীয় নাগরিক পরিষেবা দিয়ে থাকে; কিন্তু স্থানীয় সরকারের এসব ইউনিটের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে জনসাধারণের। এর মধ্যে স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে নিচের দিকের ইউনিট ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের অন্ত নেই।
সবার জানা, জন্মনিবন্ধন কত জরুরি একটি সনদ। এটি ছাড়া কোনো নাগরিক এখন রাষ্ট্রীয় অনেক জরুরি কাজ করতে পারেন না। এটি প্রদান করে থাকে স্থানীয় সরকারের ইউনিটগুলো। গ্রামীণ জনপদে জন্মনিবন্ধন সনদ পরিষেবা পেতে ইউনিয়ন পরিষদের দ্বারস্থ হতে হয়; কিন্তু অতিপ্রয়োজনী এই জন্মসনদ পেতে সাধারণ মানুষকে পোহাতে হয় দুর্ভোগ।
এমনি একটি অভিযোগ প্রকাশ পেয়েছে সহযোগী এক দৈনিকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধির প্রতিবেদনে। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার চর ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন তৈরি করে ‘বাণিজ্য’ চালিয়ে যাচ্ছেন।
জন্মনিবন্ধন করার ক্ষেত্রে নাগরিক যে ইউনিয়নের বাসিন্দা সেখান থেকে তা নিতে হয়- এটা বিধান। সরকারি এ নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চর ইসলামপুর ইউপি সচিব অবৈধ পন্থায় অন্য ইউনিয়নের লোকজনকেও জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে অর্থবাণিজ্য করে যাচ্ছেন।
এটি শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার চর ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চিত্র নয়। বাস্তবতা হলো- এমন অনিয়ম-দুর্নীতি খুঁজলে সারা দেশের স্থানীয় সরকার ইউনিটগুলোর মধ্যে কম-বেশি পাওয়া যাবে। আসলে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে স্থানীয় সরকারগুলো নাগরিক পরিষেবা দেয়ার ক্ষেত্রে যত না আগ্রহী তার চেয়ে বেশি আগ্রহী কিভাবে নয়ছয় করে জনগণের পকেট থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়া যায়। দীর্ঘ দিন ধরে এমন অবস্থা বিরাজ করছে। পরিণতিতে তৃণমূলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মর্যাদা এখন মানুষের কাছে তলানিতে এসে ঠেকেছে। এর কারণ, আমাদের দেশে সুশাসনের বড় অভাব। অথচ দেশের সবাই সুশাসন চায়।
সুশাসন মানে, জনগণের শাসন। সুশাসন থাকলে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব; কিন্তু পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার গত সাড়ে ১৫ বছরে সর্বত্র উচ্চমাত্রায় দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গত কারণে ফ্যাসিবাদ-উত্তর এখন সরকারকে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দেয়া জরুরি। তাহলে কেউ অনিয়ম-দুর্নীতি করে অবৈধ অর্থ উপার্জন করতে পারেন না। তখন ইউপি সচিবের স্বাক্ষর জাল করার প্রশ্ন উঠবে না। তাই জনগণের ভোগান্তি কমাতে সুশাসনের বিকল্প নেই। সবাই চাই দেশে জনমুখী শাসন কায়েম করা হোক। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা যদি সৎ হন, তাদের অধীনস্থ কর্মচারীরাও সৎ হবেন। তারা তখন কোনো কাজে নয়ছয় করতে পারবেন না।