শেষ পর্যন্ত বিষয়টির একটি হিল্লে হলো। সরকারের উচ্চতর পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে না, বিলম্বিত করা হবে না। পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৬ সালেই স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশের গোষ্ঠীতে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে। অথচ একদিন আগেই সরকারের উচ্চ মহল থেকে বলা হয়েছিল, উত্তরণের এ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক চলছিল, কেউ কেউ চাইছিলেন যে উত্তরণ প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হোক, কেউ কেউ অবশ্য পূর্বনির্ধারিত সময়েই উত্তরণের পক্ষে ছিলেন। যা-ই হোক, সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এখন একটি পরিষ্কার পথরেখা পাওয়া গেল—আগামী বছরই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে উন্নয়নশীল দেশে।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ বিষয়টি নিয়ে এত হৈচৈ কেন? হৈচৈয়ের দুটো কারণ আছে। এক. এমনতর উত্তরণ একটি স্বল্পোন্নত দেশের জন্য সম্মানজনক ও মর্যাদামূলক। একটি দেশের উন্নয়ন পথযাত্রায় এ দুটোরই একটা মূল্য আছে। দুই. উত্তরণের পর একটি স্বল্পোন্নত দেশ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অনেক সুযোগ-সুবিধা হারায়। সেগুলো সম্পর্কে পূর্বপ্রস্তুতি না থাকলে একটি দেশ উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বিপদে পড়তে পারে। ১৯৭১ সালে প্রথম স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা করা হয়। মনে রাখা দরকার, স্বল্পোন্নত দেশগুলোও উন্নয়নশীল দেশ, তবে তাদের সক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম বিধায় একটি বিভাজন করে তাদের জন্য একটি আলাদা গোষ্ঠী করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে ৪৪টি স্বল্পোন্নত দেশ আছে, যার বেশির ভাগই আফ্রিকায়। বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালে স্বল্পোন্নত দেশভুক্ত হয়।

পরবর্তী বিষয় হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি কীভাবে নির্ধারিত হয়? এক্ষেত্রে দুটো ধাপ আছে—সুপারিশ ও অনুমোদন। উত্তরণের বিষয়টি সুপারিশ করেন উন্নয়ন নীতিমালা বিষয়ে জাতিসংঘের পর্ষদটি তিনটে সূচকের ভিত্তিতে: মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং জলবায়ু ও অর্থনৈতিক নাজুকতা। যেকোনো দুটো সূচকে যোগ্যতা অর্জন করতে হয়, কিংবা মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ করতে হয়। বলা দরকার, এ মানদণ্ড সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বদলায়। উপর্যুক্ত উন্নয়ন নীতিমালা পর্ষদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিষদের সম্মতি নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের বিষয়টি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করে। প্রতি তিন বছর পরপর স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ত্রিবার্ষিক মূল্যায়ন করা হয়। এ পর্যন্ত গত পাঁচ দশকে মোট আটটি দেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। এর মধ্যে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভুটান ও মালদ্বীপও রয়েছে। ২০২৬ সালে উত্তরণের তালিকায় বাংলাদেশ ভিন্ন লাওস ও নেপালও আছে।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ সম্পর্কে দুটো বিষয় পরিষ্কার করা দরকার। প্রথমত, একটি দেশের উত্তরণ বিলম্বীকরণ নির্ধারণ করে জাতিসংঘ এবং কখনো কখনো একটি দেশের বিশেষভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে উত্তরণ প্রক্রিয়াটি জাতিসংঘ বিলম্বিত করতে পারে। যেমন, ভানুয়াতু কিংবা কিরিবাতির মতো প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর উত্তরণ প্রক্রিয়া তাদের পরিবেশগত উচ্চ নাজুকতার কারণে বেশ কয়েকবার পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। যদিও নেপাল ২০১৫ সালেই উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছিল, কিন্তু দেশটি প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের কারণে তাদের উত্তরণ প্রক্রিয়া ২০২১ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশ ২০১৮ সালেই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের তিনটে সূচকেই সক্ষমতা অর্জন করেছিল। ২০২১ সালের ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নেও এ অর্জন অক্ষুণ্ন ছিল। তখন ভাবা হয়েছিল যে ২০২৪ সালেই বাংলাদেশের উত্তরণ সুপারিশকৃত হবে। কিন্তু সে সময়ে কভিড-১৯-এর কারণে উত্তরণ-সুপারিশটি দুই বছর পিছিয়ে ২০২৬ সালের নভেম্বরে করা হবে বলে নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে উত্তরণ বিলম্বীকরণের চাপ মূলত আসছিল দেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাত থেকে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিদেশে পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে নানা সুযোগ-সুবিধা পায়; যেমন, শুল্কমুক্ত রফতানি, নানা শর্ত-নমনীয়তা, রফতানি সাহায্য ইত্যাদি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ ঘটলে বাংলাদেশের এসব সুযোগ-সুবিধা চলে যাবে। সুতরাং এক অর্থে তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যই পোশাক শিল্প খাত এমনতর দাবি জানিয়েছিল। সেই সঙ্গে অনেকেই বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশের স্তর থেকে উন্নয়নশীল স্তরে উন্নীত হলে বাংলাদেশ অন্যান্য সুযোগও হারাবে—যেমন, অনুদান সাহায্য, অত্যন্ত কম সুদহারে ঋণ পাওয়ার সুযোগ, ঋণ ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে শর্তের শিথিলতা, প্রায় শূন্য বা অত্যন্ত কম শুল্কে বিশ্ববাজারে রফতানির সুযোগ ইত্যাদি। এতে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করছেন যে এমন একটি কাঠামোতে বাংলাদেশের বর্তমান নাজুক অর্থনীতি আরো ভঙ্গুর হয়ে পড়বে।

কিন্তু এ প্রসঙ্গে বলা দরকার যে উত্তরণ বিলম্বিত করলে বাংলাদেশকে ভাবমূর্তিমূলক ও রাজনৈতিক মূল্য দিতে হতো। বাংলাদেশের অর্থনীতির ব্যাপ্তি এবং উত্তরণ নির্ণায়কে দেশটির সক্ষমতার মানের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের উত্তরণ রণের অনুরোধটি যৌক্তিক হতো না ও জাতিসংঘও এ রকমের অনুরোধ অনুমোদন করতে পারত না। বরং এ রকম অনুরোধে বিশ্ব চালচিত্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হতো। আঞ্চলিক প্রেক্ষিতেও এটা খুব সুখকর হতো না। নেপাল ও লাওস জোরেশোরে তাদের ২০২৬ সালে উত্তরণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং দেশ দুটো রণের কথা ভাবছে না। ২০২৩ সালে ভুটানের উত্তরণ ঘটেছে একেবারে কোনো রকমের রণের আবেদন ব্যতীত। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের উত্তরণ- রণের আবেদন আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা খর্ব করত। দেশের অভ্যন্তরেও এটিকে বাংলাদেশের একটি পরাজয় হিসেবেই দেখা হতো, যার রাজনৈতিক মাত্রিকতা বহুবিধ।

আসলে এখন বাংলাদেশের জন্য প্রাসঙ্গিক ও কার্যকর প্রশ্ন হচ্ছে যে ২০২৬ সালের উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ কী সব ব্যবস্থা নিতে পারে যাতে উত্তরণ প্রক্রিয়াটি নিপাট হয়, উত্তরণোত্তর অন্তরায়গুলো কাটিয়ে উঠা যায়? মনে রাখা দরকার, এ অন্তরায়গুলো শুধু দেশজ কিংবা কাঠামোগত নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতির চালচিত্র বদলে গেলেও এসব অন্তরায় নবরূপে আবির্ভূত হতে পারে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য এবং শুল্ক কাঠামোতে সাম্প্রতিক পরিবর্তনের ফলে উত্তরণ প্রক্রিয়ায় অপেক্ষমাণ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সুতরাং বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে প্রাজ্ঞ কাজটি হচ্ছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য যথাযথ ও সময়োপযোগী প্রস্তুতি নেয়া।

স্মর্তব্য যে, বাংলাদেশ এরই মধ্যে একটি নিপাট উত্তরণ কৌশল প্রণয়ন করেছে। সাতটি উপপর্ষদের অত্যন্ত বাস্তবসম্মত প্রস্তাবের ভিত্তিতে তৈরি এ কৌশল প্রস্তাব এখন বাংলাদেশ জাতীয় উত্তরণ পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। এ উত্তরণ কৌশলের পরিপ্রেক্ষিতে দুটো কথা বলা প্রয়োজন। এক. এ কৌশল বাস্তবায়নের জন্য একটি সংঘবদ্ধ কর্মকাণ্ড দরকার হবে, যার জন্য নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক নেতৃত্ব প্রয়োজন হবে। দুই. এর জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও কাঠামোগত পরিবর্তন অত্যাবশ্যকীয়। এ প্রেক্ষাপটে কতগুলো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

প্রথমত, আমাদের বাণিজ্যনীতিগুলো, বিশেষত প্রণোদনা কাঠামো ও আমদানি শুল্ক কাঠামো উত্তরণ-সম্পৃক্ত বৈশ্বিক দায়বদ্ধতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কিনা, তা নিরীক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। আমাদেরকে সুবিধাভিত্তিক প্রতিযেগিতা থেকে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা-ভিত্তিক প্রতিযোগিতার দিকে যেতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো গোষ্ঠী ও কানাডার মতো দেশ রাজি হয়েছে যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কাতার থেকে সদ্য উত্তরিত দেশগুলোকে আরো তিন বছরের জন্য একই রকমের সুবিধা দেয়া হবে, যা তারা উত্তরণ-পূর্ববর্তী সময়ে পেত।এ সুবিধা কী করে পাওয়া যায় এবং কার্যকর করা যায়, তা বাংলাদেশকে নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে।

তৃতীয়ত, এটা পরিষ্কার যে বৈশ্বিক বাণিজ্য এবং প্রতিযোগিতার কাঠামো দ্রুত বদলাচ্ছে। এ বদল বাংলাদেশের উত্তরণ সমস্যাগুলোকে আরো ঘনীভূত করবে। সেই সঙ্গে ওপরে উল্লেখিত বাড়তি তিন বছরের জন্য দেয় সুবিধা শেষে আরোপিত শর্তগুলো কঠিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব বাণিজ্য, শ্রমমান ও শ্রমিকের অধিকার বিষয়গুলো বিশ্ববাণিজ্যে আরো বড় করে দেখা দেবে। এসব সামগ্রিক পরিবর্তিত অবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় চিন্তা-ভাবনা এবং প্রস্তুতি বাংলাদেশে এখন থেকেই প্রয়োজন।

চতুর্থত, আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির চালচিত্র কীভাবে বদলায় এবং উত্তরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নির্ণায়কগুলো কীভাবে পরিবর্তিত হয়, সেদিকে নজর রাখা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করা দরকার। এর জন্য একদিকে যেমন অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে, তেমনি অন্যদিকে মনোযোগ দিতে হবে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও আর্থিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করার দিকে। একটি বিশেষ জায়গায় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বড় দরকার এবং সেটা হচ্ছে তথ্য ও উপাত্তের ক্ষেত্রে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে সরকারি উপাত্ত এত বেশি অতিরঞ্জিত এবং প্রভাবিত হয়েছে যে সেগুলো বস্তুনিষ্ঠতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এ প্রবণতা বন্ধ করে অবস্থার পরিবর্তনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়, সেই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক দৃশ্যমানতা এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করাও বড় জরুরি।

পঞ্চমত, বাংলাদেশকে তার রফতানি প্রতিযোগিতার অবস্থানকে আরো উন্নীত করতে হবে এবং সেই সঙ্গে আমাদের অর্থনীতির আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক সম্পৃক্ততাকে জোরদার করতে হবে। বাণিজ্য সহযোগিতা এবং জোটবদ্ধতা উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য। এটা না করলে বাংলাদেশের রফতানি শেষ পর্যন্ত হয়তো বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত দেশগুলোতে যাবে না, যেখানে ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম বা কম্বোডিয়ার রফতানি সেসব দেশে যাবে। এতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ষষ্ঠত, বাংলাদেশসহ বহু স্বল্পোন্নত দেশ এখনো কভিড-১৯ কিংবা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি—না অর্থনীতির দিক দিয়ে, না সামাজিক দিক দিয়ে। তাদের অর্থনীতি নানান নাজুকতা ও ভঙ্গুরতা নিয়ে এখনো যথেষ্ট দুর্বল। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ সেই বৈরী প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রিকতা যোগ করেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সমস্যা একটি বিশেষ বিষয়। সব মিলিয়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, শ্লথ প্রবৃদ্ধি এবং সম্পদের অপ্রতুলতা উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জন্য সমস্যার নতুন ব্যাপ্তি তৈরি করতে পারে। সে ব্যাপারে সচেতনতা প্রয়োজন।

সপ্তমত, স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে উন্নত বিশ্বে সেবাপণ্য রফতানি এখনো অত্যন্ত সীমিত। উন্নত বিশ্ব সেখানে বহু বাধা-নিষেধ এখনো বহাল রেখেছে। শ্রমমান, পরিবেশমান ইত্যাদি নানা ছলছুতায় তারা তাদের সেবাপণ্যের বাজার স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে রুদ্ধ করে রেখেছে। বাংলাদেশও এর ব্যত্যয় নয়। এর পরিমার্জনা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে নতুন একগুচ্ছ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিধান এবং ব্যবস্থা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

সবকিছুর নিরিখে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হচ্ছে কত দ্রুত বাংলাদেশ নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবে উত্তরণ-পরবর্তী অবস্থার সঙ্গে মোকাবেলা করার জন্য। সময় বেশি নেই, কিন্তু কাজ রয়েছে অনেক। কাজটি দুরূহ সন্দেহ নেই, তবে শক্ত অঙ্গীকার নিয়ে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সবাই মিলে যৌথভাবে চেষ্টা করলে কাজটি অসম্ভব, এমনটি বলা যাবে না।

সেলিম জাহান: ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

সূত্র, বণিক বার্তা