বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার স্থানীয় আদালতের (অধস্তন আদালত) নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এ অনুচ্ছেদে বিচারকর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগে দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি দান, ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিমকোর্টের ওপর ন্যস্ত থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে তা প্রয়োগ করবেন। যেহেতু রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর উপদেশ অনুযায়ী কাজ করেন, সেহেতু এক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের একটা কর্তৃত্ব থেকে গিয়েছিল। মঙ্গলবারের রায় পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমে উচ্চ ও অধস্তন আদালত নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্ট ফিরে পাবেন বলে মনে করছেন বিচারসংশ্লিষ্টরা। এর মধ্য দিয়ে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে মনে করেন তারা। সব মিলিয়ে হাইকোর্টের এ রায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য একটি মাইলফলক বলে বিবেচিত হবে।
বস্তুত এ রায়ের মাধ্যমে অধস্তন বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের করায়ত্ব এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত হলো। কারণ অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি ইত্যাদি এতদিন যেহেতু নির্বাহী বিভাগের করায়ত্বে ছিল, সেহেতু অধস্তন আদালতের বিচারকদের প্রচ্ছন্নভাবে হলেও একটা আশঙ্কা থাকত যে, তাদের দেওয়া সিদ্ধান্ত বা রায় যদি সরকারের সম্পূর্ণ মনঃপূত না হয়, তাহলে তাদের হয়তো বদলি করে দেওয়া হবে, অথবা পদোন্নতিতে বাধা সৃষ্টি করা হবে। এখন হাইকোর্টের এ রায়ের ফলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিমকোর্টের ওপর নির্ভর করবে; স্বাভাবিকভাবেই সুপ্রিমকোর্ট রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচারকদের মূল্যায়ন করবেন না। এতে বিচারকরা আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন। একই সঙ্গে অধস্তন আদালতের বিচার বিভাগের কর্মকর্তারাও ফিরে পাবেন তাদের আত্মমর্যাদা ও সম্মান।
সূত্র, যুগান্তর