খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে ব্যাংক খাতের নানামুখী সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। সোমবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত কয়েক বছরের মতো ২০২৪ সালে বিশেষ সুবিধায় নবায়ন করা ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ পুনরায় খেলাপি হয়েছে। গত বছর ব্যাংক খাতে ৮৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিশেষ সুবিধা নিয়ে খেলাপিরা নবায়ন করেছিলেন। ওই বছর পর্যন্ত নবায়ন করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনরায় খেলাপি হয়েছে। গত বছর সরকার পরিবর্তনের আগে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের ঋণ বিশেষ ছাড়ে নবায়ন করা হয়েছিল। সেগুলোর কিস্তি পরিশোধ না করা হলেও ব্যাংক তা খেলাপি করেনি; নিয়মিত হিসাবেই রেখে দিয়েছিল। সরকার পতনের পর সেসব ঋণ খেলাপি হিসাবে দেখানো হয়েছে। এ কারণে নবায়ন করা ঋণ গত বছর বেশি খেলাপি হয়েছে।
বিশেষ ছাড়ে ২০২০ সালে মোট নবায়ন করা ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ওই বছর পুনরায় খেলাপি হয়েছিল ২৯ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে মোট নবায়ন করা ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪০১ কোটি টাকায়। ওই বছর পুনরায় খেলাপি হয়েছিল ৩২ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। ২০২২ সালে নবায়ন করা ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। পুনরায় খেলাপি হয়েছিল ৪১ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সালে মোট নবায়ন করা ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। ফের খেলাপি হয়েছিল ৫৪ হাজার ৬০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালে খেলাপি ঋণের স্থিতি যেমন বেড়েছে, তেমনই নবায়ন করা ঋণ পুনরায় খেলাপি হয়েছে বেশি মাত্রায়। নবায়ন করা ঋণ সবচেয়ে বেশি খেলাপি হয়েছে শিল্প খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের প্রবণতা বেড়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ও মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। এসব সংকটে ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। উল্লেখ্য, খেলাপি ঋণের অর্ধেকেরও বেশি রয়েছে শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকে।
খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে অস্বস্তির মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। বস্তুত খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি আর্থিক খাতের অন্যান্য সূচককেও নেতিবাচক ধারায় নিয়ে যায়। বিগত সরকারের আমলে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও ছাড় দেওয়া সত্ত্বেও খেলাপি ঋণ না কমে কেন অব্যাহতভাবে বেড়েছিল, তা খতিয়ে দেখে খেলাপি ঋণ আদায়ে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। অতীতে কোন বিবেচনায় বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তা জবাবদিহির আওতায় আনতে না পারলে আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। খেলাপি ঋণের বড় একটা অংশ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। তা ফেরত আনতে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীর্ষ ঋণখেলাপিদের সম্পদ জব্দ করতে হবে। খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতে দুরারোগ্য ব্যাধির রূপ নিয়েছে। কাজেই এ খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে যত দ্রুত সম্ভব সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে।