বাংলাদেশ রেলওয়ে আবারও যাত্রীভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে, তবে এবার কৌশলটি ভিন্ন। সরাসরি ভাড়া না বাড়িয়ে ‘পন্টেজ চার্জ’ নামে একটি নতুন মাশুল আরোপের মাধ্যমে যাত্রীদের পকেট থেকে বাড়তি টাকা আদায়ের চেষ্টা চলছে। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের এ প্রস্তাব যদি কার্যকর হয়, তাহলে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কক্সবাজারসহ অন্তত আটটি রুটে যাত্রীদের ১৫ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বেশি খরচ করতে হবে। এ পদক্ষেপ যাত্রীদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়াবে, এতে কমতে পারে রেলযাত্রীও।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান সামাল দিতেই এ ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ। কিন্তু লোকসানের মূল কারণ কি যাত্রীভাড়া কম হওয়া, নাকি রেলওয়ের অভ্যন্তরীণ অদক্ষতা ও অনিয়ম? কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইনের মতে, রেলওয়ের প্রকল্প ব্যয়, পরিচালন ব্যয় এবং রাজস্ব আয়ের প্রক্রিয়ায় কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই; বরং নানা ধরনের অনিয়ম ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় রেলওয়েকে লোকসানের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ২০০৫ সালে যেখানে ১ টাকা আয়ের বিপরীতে ১ টাকা ৪৬ পয়সা ব্যয় হতো, বর্তমানে সেই লোকসানের পরিমাণ আরও অনেক বেড়েছে।
এ পরিস্থিতিতে পন্টেজ চার্জ প্রবর্তন করা একটি অবৈজ্ঞানিক ও অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত। রেলওয়ের যুক্তি অনুযায়ী, ১০০ মিটার বা তার বেশি দৈর্ঘ্যের সেতু পার হলে প্রতি কিলোমিটার আড়াই কিলোমিটার হিসেবে ধরা হবে। এটি একটি অদ্ভুত হিসাব, যা কাগজ-কলমে পথের দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি মাশুল আদায় করার একটি কৌশল মাত্র।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে রেল খাতে উন্নয়নের নামে বিপুল অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগেরও শেষ নেই। এসব অপকর্মের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছি কি? এমন অনেক রেললাইন ও রেলস্টেশন করা হয়েছে, প্রতিদিনই যেখানে লোকসান দিতে হচ্ছে। এখন এর দায় কি যাত্রীদেরই নিতে হবে? রেল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল, টিকিটের দাম বাড়ানোর পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ সংস্কারের দিকে মনোযোগ দেওয়া। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো, প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়াকে আরও আধুনিক ও দুর্নীতিমুক্ত করা।
সরকারের উচিত, রেলওয়ের এ প্রস্তাবে অনুমোদন না দেওয়া এবং রেলওয়েকে তাদের লোকসানের প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করে সমাধানের জন্য চাপ দেওয়া। জনগণের করের টাকায় চলা একটি জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রেলওয়ের প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা, তাঁদের ওপর বাড়তি অর্থনৈতিক বোঝা চাপানো নয়।