ক্রমবর্ধমান যানজট ও বিশৃঙ্খলা কমিয়ে আনতে রাজধানীতে অটো ও ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে সিটি কর্পোরেশন, ডিএমপিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। বিশেষত গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো এলাকায় কূনৈতিক জোন, বিনিয়োগকারি বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের অফিস, দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী ও কূটনীতিকদের যাতায়াত বেশি থাকায় চলাচল মসৃণ করতে যানজটমুক্ত রাখা জরুরি। তবে অটোরিকশা চালকদের বেপরোয়া চলাচলের কারণে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা বন্ধে উদ্যোগ নিলে গত সোমবার সকাল থেকে অটোচালকরা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ করে তা-ব সৃষ্টি করে। তাদের আচরণ ও কর্মকা- সাধারণ অটো বা রিকশা চালকদের মতো ছিল না। তাদের সহিংস আচরণ ছিল, পতিত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী নেতাকর্মীদের মতো। হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় তা-ব সৃষ্টির সময় কেউ ছবি বা ভিডিও ধারন করতে গেলে তারা তাদের উপর চড়াও হয়েছে। এমনকি, কয়েকজন প্যাডেল চালিত রিকশা চালককে মারধর করে তাদের রিকশাসহ ব্রিজের উপর থেকে লেকের পানিতে ফেলে দেয়া হয়েছে। মোটরসাইকেল চালক এবং পথচারীরাও তাদের হাতে হেনস্তা ও ধাওয়ার শিকার হয়েছে। দুপুরের পর পুলিশ ও সেনাসদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার আগ পর্যন্ত বনানী ১১ নম্বরের সড়কে অটোচালকরা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। তাদের আচরণ ছিল সন্ত্রাসীদের মতো।
গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে নানা ইস্যুতে সরকারকে অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন সেক্টরের শ্রমিক ও কর্মরতদের দিয়ে আন্দোলনের নামে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। গত বছরের আগস্টে শাহবাগে অটো ও প্যাডেলচালিত রিকশা চালকরা খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করিয়ে সড়ক অবরোধ করে। সেটা যে ছিল, আওয়ামী ষড়যন্ত্রের অংশ, তা ছাত্র-জনতা বুঝতে পেরে রুখে দিয়েছিল। এছাড়া ছাত্র-জনতার প্ররিরোধের মুখে অন্যান্য ষড়যন্ত্রমূলক আন্দোলন ব্যর্থ হয়। পতিত স্বৈরাচারের দোসররা ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত রেখেছে। ভারতে বসে শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। পলাতক অবস্থায় থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অরাজকতা সৃষ্টি করে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত রাখার অপচেষ্টা করছে। বনানীতে অটো রিকশা চালকদের তা-ব তারই অংশ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। তারা সাধারণ কোনো শ্রমজীবী চালক নয়। তারা পালিয়ে থাকা ও ছদ্মবেশী ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়া কিছু নয়। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার কয়েকটি স্থানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিলে এসব ছদ্মবেশী অটোচালক অংশ নিয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। গুলশান- বনানীতে রিকশা ও অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ নতুন কিছু নয়। যানজট নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সেখানে নিয়ম রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর অন্যান্য এলাকাসহ বনানী-গুলশান এলাকায় অস্বাভাবিক হারে অটো রিকশার সংক্যা বেড়ে গেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী যারা অটোচালকের ছদ্মবেশে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিৎ এদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়া।
সড়কে অটোচালকদের সংঘবদ্ধ তা-ব সৃষ্টির ঘটনা পরিকল্পিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বিগত সরকার রাজনৈতিক কারণে এবং দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যবসা ও চাঁদাবাজির স্বার্থ রক্ষায় অনিবন্ধিত অটো ও ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি। সে সময় অটোরিকশা নিষিদ্ধে আদালতের রায় উপেক্ষা করা হয়েছে। গত নভেম্বরে প্যাডেল চালিত রিকশাচালকদের একটি সংগঠন ঢাকায় অবৈধ, অনিবন্ধিত ও নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের দাবিতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিল। রিটের শুনানি শেষে আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের প্রেক্ষিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালনায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আদেশ দেয়া হয়। আদালতের এ রায় অদূরদর্শী বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। এর ফলে সব সড়কে অটোচালকদের প্রতাপ ও বেপরোয়া আচরণ বেড়ে গেছে। সড়কে অরাজকতা সৃষ্টি করে চলেছে। একইভাবে আওয়ামী লীগের ষড়ন্ত্রমূলক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করছে। তাদের এ ধরনের আচরণে সাধারণ মানুষের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে, এরা রিকশালীগে পরিণত হয়েছে। এসব অটোচালক দেশবিরোধী এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিরোধী। বনানীতে অটো চালকদের তা-বের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিৎ, এদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা। এছাড়া রাজধানীর সকল সড়কে অটো চালকদের নিযন্ত্রণ করা। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। অটোরিকশা চালানোর নামে পতিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে, তা বরদাশত করা যায় না। তাদের শক্ত হাতে দমন ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।