এক যুগের বেশি আগে পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছিল, তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়টি নতুন করে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুদক এ মামলাকে পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং একটি উচ্চপর্যায়ের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে। এরপর থেকেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগসংক্রান্ত অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার ভূমিকাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কার্যক্রম নিয়ে নতুন করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে সংস্থাটি। পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কার কী ভূমিকা ছিল, ইতোমধ্যে তার বিস্তারিত তথ্যও পাওয়া গেছে। সেগুলোর পর্যালোচনা শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা রয়েছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণে কানাডার প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনকে পরামর্শক নিয়োগে ঘুস লেনদেনের অভিযোগ তুলে ২০১২ সালে এ প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করেছিল বিশ্বব্যাংক। এ প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর বনানী থানায় মামলা করেন দুদকের একজন উপপরিচালক। মামলায় মোট সাতজনকে আসামি করা হয়। প্রধান আসামি ছিলেন তৎকালীন সেতু সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া। তাকে গ্রেফতার করে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান এবং আবার চাকরিতে ফিরে আসেন। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছিল ২০১৪ সাল। ‘দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগ’ এনে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করলে অন্য দাতা সংস্থাও এ সংস্থাকে অনুসরণ করে।

২০১৭ সালে এক সভায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়টি স্বীকার করেছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যাদের দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তারা আমার আত্মীয় হতে পারে না।’ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়টি জনসমক্ষে স্বীকার করার পরও তখন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এ দুর্নীতি নিয়ে কেন বিস্তারিত তদন্ত করেনি সে রহস্যও উদ্ঘাটিত হওয়া দরকার। জানা যায়, দুদকের নতুন তদন্তে কেউ দায়ী প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধেও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি আশাব্যঞ্জক। এ প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে কোনোরকম দুর্নীতি হয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। বস্তুত দেশের সব প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে কোনোরকম দুর্নীতি হয়েছে কিনা, তাও বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। এক্ষেত্রে কোনো অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেলে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।

পদ্মা সেতু