দেশের সার্বিক উন্নয়নে রেলের ভূমিকা অপরিসীম। পৃথিবীর জনবহুল দেশগুলোয় রেলপথ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। কিন্তু আমাদের দেশে রেলপথ সে স্থানটি দখল করতে পারছে না। যোগাযোগব্যবস্থার মধ্যে রেল সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হলেও সীমাহীন দুর্নীতির কারণে এ খাতটির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-আওয়ামী লীগ আমলের ১৫ বছরে রেলের উন্নয়নের নামে রীতিমতো ‘সাগরচুরি’ হয়েছে। বিশেষ করে সাত হাজার কোটি টাকার রোলিংস্টক (ইঞ্জিন কোচ ও যন্ত্রাংশ) কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। কয়েকজন মন্ত্রী ও রেল মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি চিহ্নিত চক্র নির্বিঘ্নে লুটে নিয়েছে মোটা অঙ্কের অর্থ। বিভিন্ন সময়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্ত এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সে সময় আওয়ামী সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় এদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা। আরও জানা গেছে, সাবেক তিন মন্ত্রী তো বটেই, স্বল্পসময়ের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেও কমিশনের টাকায় পকেট ভারী করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আশার কথা, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে সাবেক তিন রেলপথমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন নূরুল ইসলাম সুজন। তবে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে দুর্নীতির বরপুত্র হিসাবে পরিচিত সাবেক মন্ত্রী মুজিবুল হক ও জিল্লুল হাকিম। তবে মুজিবুল হকের পিএস গোলাম কিবরিয়া গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাবন্দি। এ বিষয়ে দুদক জানিয়েছে, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করেছে। অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। অনুসন্ধান টিমের প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

দেশের অধিকাংশ মানুষ সাধারণত আর্থিক দিক থেকে সাশ্রয়ী, নিশ্চিত ও নিরাপদ ভ্রমণের জন্য এবং যানজটের কবল থেকে রক্ষা পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে রেলে ভ্রমণ করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। লাগেজ বা মালামাল নিয়ে বাসে ভ্রমণের ঝক্কি-ঝামেলা তো আছেই, সড়কের চেয়ে রেলে দুর্ঘটনা অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় মানুষ রেলভ্রমণেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে বেশি। আমরা দেখেছি, প্রতিবছর রেলের বরাদ্দ বাড়লেও বাড়েনি ট্রেনের গতি এবং কাঙ্ক্ষিত সেবার মান। যারাই এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন, জনগণের কথা চিন্তা না করে অর্থ আত্মসাৎ করে নিজেদের পকেট ভারী করেছেন। উন্নয়নের পথে এমন দুর্নীতিপরায়ণ মানসিকতা যে বিরাট বাধা, তা বলাই বাহুল্য। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে রেল মন্ত্রণালয়সহ সব বিভাগে যেমন সৎ ও যোগ্য মানুষকে দায়িত্ব দিতে হবে, তেমনি যারা দুর্নীতির কুশীলব হিসাবে কাজ করেছে, তাদেরও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে নিতে হবে কঠোর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, দুর্নীতিসহ বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত হলেও এগুলোর সমাধানে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে অতীতে দেখা যায়নি। রেলের উন্নয়নে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও প্রকল্পগুলোর সুফল যেমন কার্যকরভাবে মেলেনি, তেমনি ব্যয়ের বিবেচনায় বাড়েনি সেবার মান। কাজেই এ অবস্থা থেকে উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

সূত্র, যুগান্তর